ডান হাতে টিকার প্রথম ডোজ, দ্বিতীয়টা কোন হাতে নেব?

টিকা নিতে অনেকের অস্বস্তি হয়। ইনজেকশনটা কাজ করে ফোবিয়ার মতো। নানা প্রশ্ন হয়তো মাথায় ঘোরে। ব্যথা লাগবে কি না, টিকা নেওয়ার পর জ্বর হবে কি না ইত্যাদি। কিন্তু তবু বাধ্য হয়ে অনেক সময় টিকা নিতে হয়। করোনা মহামারির সময় যেমন বাধ্য হয়েই সবাইকে টিকা নিতে হয়েছে। তা-ও আবার একটা নয়, একাধিক। আর এর থেকেই বিজ্ঞানীদের মাথায় একটা প্রশ্ন এসেছে, দ্বিতীয় টিকা বা বুস্টার ডোজটা কোন হাতে নেওয়া উচিত? প্রথমটা যে হাতে নিয়েছিলাম, সেই হাতেই নাকি অন্য হাতে?

বিষয়টা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। সেই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেল’ জার্নালে। চলো, সেই গবেষণার বিষয় সহজে বুঝে নিই। তাহলে বুঝতে পারবে, বারবার এক হাতে টিকা নেওয়া ভালো নাকি খারাপ।

এই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদের শরীরের ভেতরের একটা ব্যবস্থার কথা জানতে হবে। আমাদের শরীরে শত শত ‘লসিকাগ্রন্থি’ আছে। শব্দটা নতুন শুনতে পারো অনেকে। তবে আপাতত শুধু মনে রাখো, এগুলোকে তোমার শরীরের নিজস্ব ট্রেনিং ক্যাম্প। এখানে তোমার শরীরের কোষগুলো শত্রুর বিরুদ্ধে ট্রেনিং নেয়। শত্রু কারা?

যখন বাইরে থেকে কোনো রোগজীবাণু শরীরে ঢোকে, তখন এই ট্রেনিং ক্যাম্পগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই ক্যাম্পে শরীরের নিজস্ব সৈনিক, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ কোষগুলো প্রশিক্ষণ নেয়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কিছু গবেষক ইঁদুর এবং ৩০ জন মানুষের ওপর একটি ছোট্ট গবেষণা করে দেখতে চেয়েছেন, টিকার ডোজ একই হাতে নিলে কী হয়, আর ভিন্ন হাতে নিলে কী হয়। আর তাতেই বেরিয়ে এসেছে কিছু দারুণ তথ্য।

আরও পড়ুন

তোমাকে যখন প্রথম টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছিল, তখন তোমার নির্দিষ্ট একটি হাতের কাছাকাছি থাকা ট্রেনিং ক্যাম্প বা লসিকাগ্রন্থি সতর্ক হয়ে গেছে। সে তার সবচেয়ে দক্ষ কিছু সৈনিককেও চিনতে শিখেছে। এদের মধ্যে একদল হলো ‘ম্যাক্রোফেজ’। এরা অনেকটা পাহারাদারের মতো। শত্রুকে ধরে ফেলে এবং বাকিদের শত্রু সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। আরেক দল হলো ‘মেমোরি বি সেল’। এদের স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর। এরা একবার শত্রুকে চিনে রাখলে আর ভোলে না। প্রথম ডোজের পর এই বিশেষ সৈনিকেরা ওই নির্দিষ্ট ট্রেনিং ক্যাম্পেই ঘাঁটি গেড়ে বসে। তারা অপেক্ষায় থাকে, যদি আবার শত্রু ফিরে আসে!

এখন, তুমি যখন দ্বিতীয় টিকা বা বুস্টার ডোজটি ঠিক ওই একই হাতে নিয়েছ (ধরে নিচ্ছি, তুমি একই হাতে দুটি টিকা নিয়েছ), তখন কী ঘটল? টিকার উপাদানটি সরাসরি সেই প্রস্তুত ট্রেনিং ক্যাম্পে পৌঁছাল। সেখানে আগে থেকেই পাহারাদার (ম্যাক্রোফেজ) এবং স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন সৈনিকেরা (মেমোরি বি সেল) প্রস্তুত ছিল। ওরা সঙ্গে সঙ্গে শত্রুকে চিনে ফেলল এবং খুব দ্রুত ও কার্যকরভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে দিল।

আরও পড়ুন

কিন্তু যদি বুস্টার ডোজটি অন্য হাতে নিতে, তাহলে শরীরের অন্য প্রান্তের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প নতুনভাবে সবকিছু শুরু করত। সেখানে পাহারাদার ও সৈনিকদের সবকিছু শুরু থেকে শিখতে হয়। ফলে কার্যকর সুরক্ষা তৈরি হতে একটু বেশি সময় লেগে যেত।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা দুটি ডোজ একই হাতে নিয়েছিলেন, তাঁদের শরীরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাস ঠেকানোর মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে। এমনকি কোভিডের ডেলটা বা অমিক্রনের মতো শক্তিশালী ধরনগুলোর বিরুদ্ধেও সেগুলো দ্রুত সুরক্ষা পেয়েছে।

তবে যাঁরা দুই হাতে টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদেরও খুব বেশি সমস্যা হয়নি। এক মাসের মধ্যে উভয় দলের (একই হাত ও ভিন্ন হাত) অ্যান্টিবডির পরিমাণ প্রায় সমান হয়ে গেছে। তবে এখানে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। মহামারির সময়ে এক মাস কিন্তু অনেক সময়। একই হাতে টিকা নেওয়ার কারণে যদি এক মাস আগে থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাই করা উচিত। এতে একটা বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত সুরক্ষাবলয় তৈরি হবে।

আরও পড়ুন
যাঁরা দুটি ডোজ একই হাতে নিয়েছিলেন, তাঁদের শরীরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাস ঠেকানোর মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে
ছবি: পেক্সেলস

তার মানে কি যাঁরা ভিন্ন ভিন্ন হাতে টিকা নিয়েছেন, তাঁরা ভুল করেছেন? একদমই না! গবেষকেরা আশ্বস্ত করে বলেছেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই। দেরিতে হলেও আপনার শরীর ঠিকই সুরক্ষা তৈরি করে নিয়েছে।

এরপর যদি আবার কখনো পরপর দুটি টিকা নিয়ে হয়, তাহলে এই ছোট্ট তথ্যটি মাথায় রাখতে পারো। হয়তো এই সামান্য একটি সিদ্ধান্তই তোমাকে কয়েক সপ্তাহ আগেই সুরক্ষিত করে তুলবে!

সূত্র: পপুলার সায়েন্স

আরও পড়ুন