আইনস্টাইন ঠিকই বলেছিলেন, মঙ্গলগ্রহে সময় সত্যিই দ্রুত চলে
মহাকাশ নিয়ে নানা রকম রহস্য আমরা জানি। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন একটি তথ্য পেয়েছেন যা আবারও প্রমাণ করে দিল আলবার্ট আইনস্টাইনের কথা ঠিক ছিল। তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বলেছিল যে সময় সব জায়গায় এক রকমে চলে না। গ্রহের মহাকর্ষ এবং গতির ওপর নির্ভর করে সময়ের গতি একটু বদলে যায়। আর সেই তত্ত্বই সত্যি প্রমাণিত হলো মঙ্গলগ্রহে।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মঙ্গলগ্রহে সময় পৃথিবীর তুলনায় সামান্য দ্রুত চলে। যদি একই ধরনের অত্যন্ত নিখুঁত ঘড়ি মঙ্গলগ্রহ এবং পৃথিবীতে রাখা হয়, তাহলে একদিন পর দেখা যাবে মঙ্গলগ্রহের ঘড়ি এগিয়ে গেছে। পার্থক্য খুবই ছোট, মাত্র চারশো সাতাত্তর মাইক্রোসেকেন্ডের মতো। যদিও এই সময় আমাদের চোখে ধরা পড়ে না, কিন্তু মহাকাশ গবেষণার জন্য তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এটা কেন হয় তা বোঝার জন্য আইনস্টাইনের কথায় ফিরে যেতে হয়। তিনি বলেছিলেন, যেখানে মহাকর্ষ বেশি, সেখানে সময় একটু ধীরে চলে। আর যেখানে মহাকর্ষ কম, সেখানে সময় তুলনামূলক দ্রুত চলে। পৃথিবীর মহাকর্ষ মঙ্গলগ্রহের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। মঙ্গলগ্রহে মহাকর্ষ প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ। তাই সেখানে সময় অল্প হলেও দ্রুত টিক টিক করে এগিয়ে যায়।
এর ওপর আরেক প্রভাব কাজ করে মঙ্গলগ্রহের অদ্ভুত কক্ষপথ। মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথ পুরোপুরি গোল নয়, কিছুটা লম্বাটে। ফলে বছরের বিভিন্ন সময়ে গ্রহটি সূর্যের কখনো কাছে যায়, কখনো দূরে যায়। এই কারণে মঙ্গলের ঘড়ির গতি বছরে কয়েকশো মাইক্রোসেকেন্ড এদিক ওদিক হয়।
এই ছোট পার্থক্যও ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনে বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ যখন পৃথিবী আর মঙ্গলগ্রহের মধ্যে মহাকাশযান চলবে, যখন রোভার, স্যাটেলাইট আর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, তখন সময়ের এই অতি ক্ষুদ্র পার্থক্যও হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। এমনকি ভবিষ্যতে যদি সৌরজগত জুড়ে ইন্টারনেট বানানো হয়, তাহলে সময়কে একদম নিখুঁতভাবে মিলিয়ে নেওয়া লাগবে। আর এই গবেষণাই সেই ভিত্তি তৈরি করছে।
আইনস্টাইনের শত বছর পুরোনো ধারণা তাই আবার নতুন করে সত্যি হয়ে দাঁড়াল। সময়কে আমরা যতই সহজ মনে করি, মহাবিশ্বে তার আচরণ আসলে অনেক বেশি রহস্যময়। মঙ্গলগ্রহে সময়ের এই দ্রুত চলা সেই রহস্যেরই আরেকটি ছোট জানালা খুলে দিল।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স