নেগেটিভ ছবির নাকের ডটে ১৫ সেকেন্ড তাকিয়ে সাদা জায়গায় তাকালে কেন রঙিন ছবি দেখা যায়

ফেসবুকে প্রায়ই এমন একটি মজার অপটিক্যাল ইলিউশন দেখা যায়। একটি নেগেটিভ ছবি, যার নাকের ডটে ১৫ সেকেন্ড একটানা তাকিয়ে থাকতে বলা হয়। এরপর যখন সাদা কোনো পৃষ্ঠে বা দেয়ালে তাকানো হয়, তখন আশ্চর্যজনকভাবে সেই নেগেটিভ ছবিটি রঙিন বা পজিটিভ ছবিতে রূপান্তরিত হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু কেন এমন হয়?

ইন্সটাগ্রাম থেকে নেওয়া স্ক্রিনশন

যখন আমরা একটি নেগেটিভ ছবির নাকের ডটে ১৫ সেকেন্ড একটানা তাকিয়ে থাকি এবং তারপর সাদা কোনো জায়গায় চোখ রাখি, তখন ছবিটি রঙিন বা পজিটিভ দেখায়। এর কারণ হলো আমাদের চোখের এক বিশেষ প্রক্রিয়া, যাকে ‘নেগেটিভ আফটারইমেজ’ বলে। আমাদের চোখে থাকা রং শনাক্তকারী কোনো কোষ যখন দীর্ঘক্ষণ ধরে একটি নির্দিষ্ট রঙের দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন সেগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এরপর যখন সাদা পৃষ্ঠে তাকানো হয়, তখন ক্লান্ত কোষগুলো ভালোভাবে সাড়া দিতে পারে না; ফলে মস্তিষ্ক সেই নির্দিষ্ট রঙের বিপরীত রংটি অনুভব করে। মনে রাখতে হবে, সাদা রঙের মধ্যে সব মৌলিক রং থাকে। যদি নেগেটিভে লাল থাকে, তবে সবুজ দেখা যাবে। হলুদ থাকলে নীল দেখা যাবে। এভাবেই মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়ার কারণে আমরা নেগেটিভ ছবিটিকে রঙিন বা পজিটিভ রূপে দেখতে পাই।

অনেক সময় আমাদের মস্তিষ্ক চোখ থেকে পাওয়া তথ্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। এই ভুল ব্যাখ্যাকেই বলা হয় অপটিক্যাল ইলিউশন বা দৃষ্টিবিভ্রম।

অপটিক্যাল ইলিউশন বা দৃষ্টিবিভ্রম আসলে আমাদের চোখ বা দৃষ্টিশক্তির কোনো ত্রুটি বা সমস্যা নয়। আসলে এটি আমাদের মস্তিষ্ক ও চোখের মধ্যে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের এক জটিল মিথস্ক্রিয়া। যখন আমরা কোনো কিছু দেখি, আমাদের চোখ কেবল চারপাশের আলোর রশ্মি সংগ্রহ করে মস্তিষ্কে পাঠায়। আসল খেলাটা শুরু হয় এরপরই। মস্তিষ্ক সেই প্রাথমিক তথ্যগুলোকে ব্যাখ্যা করে, সাজিয়ে নেয় এবং সেগুলোকে একটি অর্থপূর্ণ ছবিতে রূপান্তরিত করে। যখন এই প্রক্রিয়ায় কোনো কারণে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়, তখনই আমাদের অপটিক্যাল ইলিউশন বা দৃষ্টিবিভ্রম হয়।

আমাদের মস্তিষ্ক খুব দ্রুত আর দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করে। সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ না করে, এটি প্রায়শই কিছু পরিচিত প্যাটার্ন বা ‘শর্টকাট’ ব্যবহার করে সিদ্ধান্তে আসে। যেমন, মস্তিষ্ক অসমাপ্ত রেখা বা আকৃতি দেখলে সেগুলোকে সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করে অথবা পরিচিত বস্তুর আকার ও দূরত্ব অনুমান করে নেয়। যখন কোনো ছবি বা নকশা মস্তিষ্কের এই সহজাত প্রবণতাগুলোকে বিভ্রান্ত করে, তখন আমরা ভিন্ন কিছু দেখি, যা বাস্তবে নেই।

ছবি: উইকিপিডিয়া

যেমনটা দেখা যায় এই ইলিউশনে। এখানে দেখা যাচ্ছে, একটা রেললাইনের ওপর দুটি নীল রেখা রয়েছে। প্রশ্ন হলো, কোন রেখাটা ছোট আর কোনটা বড়? যে কেউ সহজেই প্রশ্নের উত্তর দেবে, ওপরেরটা বড় আর নিচেরটা ছোট। এবার যদি বলি দুটো একই মাপের, বিশ্বাস হবে? কথাটা ঠিক কি না দেখতে একটা কলম বা কাঠি দিয়ে মেপে দেখা যেতে পারে। মাপলে দেখা যাবে দুটো একই মাপের। এমনটা দেখায় কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক রেললাইনের সঙ্গে নীল কাঠিকে তুলনা করে এর আকার মেপেছে।

এই রকম আরও হাজারো ইলিউশন আছে। গুগলে সার্চ করলে বা ইউটিউবে পাওয়া যায়। যেমন আরেকটি পরীক্ষার কথা বলতে পারি। ছবিটিকে প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে বর্গ A ও বর্গ B দুটি ভিন্ন রঙের। কিন্তু আসলে এরা একই রঙের। এই কথাটা বিশ্বাস করা কঠিন। এটা প্রমাণের জন্য আমাদের পরের ছবিটি দেখতে পারি। বর্গের চারপাশের রং ও ছায়ার প্রভাব আমাদের মস্তিষ্ককে ভুল বোঝায়।

১ / ২
ছবি: উইকিপিডিয়া

বৃত্তের এই ছবিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হবে, সব বৃত্ত একটি অপরটির বিপরীতে ঘুরছে। এই ইলিউশনটা হয় বৃত্তের অবস্থান আর রঙের কারণে।

ছবি: উইকিপিডিয়া

এই ইলিউশনের নাম মোশন-ইনডিউসড ব্লাইন্ডনেস। এটা একধরনের দৃষ্টিবিভ্রম, যেখানে চারপাশে চলমান কোনো কিছুর দিকে মনোযোগ দিলে আমাদের চোখের সামনে থাকা স্থির বস্তুগুলো হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি ঘটে; কারণ, মস্তিষ্ক চলমান দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে স্থির বস্তুকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে দৃষ্টি থেকে বাদ দেয়। যখন গতি বন্ধ হয় বা চোখ সরানো হয়, তখন বস্তুটি আবার দৃশ্যমান হয়। এটি মস্তিষ্কের তথ্য ফিল্টারিং করার একটি উদাহরণ।

ছবি: উইকিপিডিয়া

বলতে হবে ছবিটা কিসের? খরগোশ না হাঁসের। এই ইলিউশনের নাম র‍্যাবিট-ডাক ইলিউশন। ছবিটার একই বস্তুকে মস্তিষ্ক দুটি ভিন্ন বস্তুর বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখায়। তুমি একবারে শুধু একটি ছবিই পরিষ্কারভাবে দেখতে পারবে।

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

আরও পড়ুন