আইসবার্গকে বাংলায় বলে হিমশৈল। অ্যান্টার্কটিক উপকূলের বিশাল হিমবাহ থেকে ভেঙে যাওয়া বরফের বড় খণ্ড এই আইসবার্গ। এগুলো সমুদ্রে স্রোতে ভেসে বেড়ায়। বিভিন্ন আকার ও আকৃতির আইসবার্গ দেখা যায়। ছোট গাড়ির আকারের থেকে শুরু করে বিশাল ভবন আকারেরও হতে পারে আইসবার্গ। তবে বিশ্বের বৃহত্তম আইসবার্গ বৃহত্তর লন্ডনের আয়তনের দ্বিগুণের বেশি। বিজ্ঞানীরা এই আইসবার্গের নাম দিয়েছেন ‘এ২৩এ’।
এই বিশাল বরফখণ্ডটি কয়েক সপ্তাহ অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে আটকা থাকার পর আবার স্রোতের সঙ্গে গতিশীল হয়ে সাগরে ভাসতে শুরু করেছে। পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটের তোলা ছবি থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে। হিমবাহটি প্রায় ৪০০ মিটার পুরু। নাসার তথ্য মতে, ‘এ২৩এ’ এর আয়তন প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল। ২০২০ সাল থেকে এটি নড়াচড়া শুরু হয়। পরে বাতাস এবং স্রোতের কারণে এটির গতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।
এটি একসময় অ্যান্টার্কটিকার বিশাল ফিলচনার-রোন আইস শেলফের অংশ ছিল। ১৯৮৬ সালে, এটি ভেঙে পরে ওয়েডেল সাগরের তলদেশে তলিয়ে যায়। ২০২২ সালে আইসবার্গটি আবার ভেসে ওঠে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে এটি। এই গলনে বরফের ভার কমতে শুরু করে। যার ফলে আইসবার্গটি পুনরায় ভেসে ওঠে। স্রোতে এটি আবারও চলতে শুরু করেছে। এখন ওয়েডেল সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে (বিএএস) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, আইসবার্গটি প্রতিদিন প্রায় ৩০ মাইল বেগে চলছে। দক্ষিণ জর্জিয়ার আইসবার্গ অ্যালির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) একজন মুখপাত্রের মতে, ‘এই বিশাল বরফখণ্ড (আইসবার্গ) যদি উপ-অ্যান্টার্কটিক দ্বীপগুলোর যেকোনোটির কাছাকাছি যায়, তাহলে সেখানকার বন্য প্রাণীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এটি বর্তমানে দক্ষিণ অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই অবস্থান অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের অগ্রভাগ থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার বা ৪৩০ মাইল উত্তর-পূর্বে। তবে বিজ্ঞানীরা এটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত নন। কারণ, এই বিশাল আইসবার্গ ভবিষ্যতে গলে যেতে পারে, ছোট ছোট টুকরাতে ভেঙে যেতে পারে অথবা সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যেতে পারে। কেননা, আগের বৃহত্তম আইসবার্গ ‘এ৭৬’ ২০২১ সালের মে মাসে ওয়েডেল সাগরের বরফের পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। কিন্তু পরে তা তিনটি টুকরা হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর ভাঙা টুকরাগুলো এখনো ওয়েডেল সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে।
আইসবার্গকে জাহাজের জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এদের পানির নিচের অংশ প্রায়ই দৃশ্যমান হয় না। যার ফলে জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। টাইটানিক দুর্ঘটনার কথা আমরা সবাই জানি, যেখানে একটি বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এই বিখ্যাত জাহাজটি ডুবে যায়।
‘এ২৩এ’ আইসবার্গ গবেষণার জন্য অনন্য সুযোগ দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ও ভবিষ্যতে জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব অধ্যয়ন করতে আইসবার্গ গবেষকেরা স্যাটেলাইট, ড্রোন এবং জাহাজের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই গবেষণা আইসবার্গের আচরণ এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ুতে এর প্রভাব সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ দেয়। আইসবার্গ থেকে সংগৃহীত তথ্য জলবায়ু পরিবর্তনে মেরু অঞ্চলের অবস্থার পূর্বাভাস দেওয়া মডেলগুলোকে আরও সহায়তা করবে বলে আশা করেন গবেষকেরা।
সূত্র: বিবিসি ও আর্থ জার্নাল