দুধের রং কেন সাদা
দুধ হলো শিশুর জন্য সবচেয়ে দরকারি খাবার। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই তরল খাবার শুধু শিশুর জন্য না, সবার শরীরের জন্যই প্রয়োজনীয়। স্বাদের দিক থেকেও দুধ খেতে অসাধারণ। দুধ চা, কফি, কেক বা পায়েস—সবকিছুতেই দুধ অপরিহার্য।
গরু, মহিষ বা ছাগল খায় মূলত সবুজ ঘাস, খড় আর শাকপাতা। তবু সেই সবুজ খাদ্য খেয়েও দুধের রং কেন সব সময় সাদা? কেন কখনো সবুজ বা বাদামি হয় না? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে জাগে। এর উত্তর লুকিয়ে আছে দুধের ভেতরের সূক্ষ্ম বিজ্ঞানেই। এখানে চলে অণু, আলো ও প্রোটিনের এক চমকপ্রদ খেলা। চলুন, জেনে নিই দুধ কেন সাদা হয় :
বিজ্ঞান কী বলে
দুধের প্রধান উপাদান হলো পানি। এর সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় থাকে চর্বি, প্রোটিন ও প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনিকেই আমরা ল্যাকটোজ নামে চিনি।
দুধে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনগুলোর একটি হলো কেসিন (Casein)। গরুর দুধে মোট প্রোটিনের প্রায় ৮০ শতাংশই কেসিন। কেসিন হলো একধরনের ফসফোপ্রোটিন, অর্থাৎ এতে ফসফরাস থাকে। এই ফসফরাসের সাহায্যেই তৈরি হয় মাইসেল (Micelles)। এই মাইসেলগুলো হলো খুব ছোট ছোট অণুর গুচ্ছ।
মাইসেলগুলো দুধের ভেতরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে আলো দুধের মধ্যে প্রবেশ করলে মাইসেলগুলো আলোর সবগুলো রং প্রায় সমানভাবে ছড়িয়ে দেয় (light scattering)। কোনো নির্দিষ্ট রং আলাদা করে শোষিত না হওয়ায় সব রং একসঙ্গে প্রতিফলিত হয়, আর মানুষের চোখে দুধ সাদা দেখায়।
এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘রেলি স্ক্যাটারিং’ (Rayleigh scattering)। একই প্রক্রিয়ার কারণেই দিনের বেলা আকাশ নীল দেখায়।
পানির প্রভাব
দুধে পানি মেশালে অনেক সময় দুধকে দেখতে আরও বেশি সাদা মনে হয়। বাস্তবে এতে দুধের স্বাভাবিক রং হালকা ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কারণ পানি যোগ করা হলে দুধের ভেতরে থাকা কেসিন মাইসেল কণার ঘনত্ব কমে যায়। এর ফলে আলোর বিচ্ছুরণ আগের মতো তীব্র না হয়ে তুলনামূলকভাবে আরও সমান ও বিস্তৃতভাবে ঘটে। এই পরিবর্তিত আলোক-আচরণের কারণেই দুধকে বেশি সাদা বা উজ্জ্বল বলে মনে হয়।
গরুর দুধ কেন হালকা হলুদ?
অনেক সময় দেখা যায় গরুর দুধ পুরো সাদা না হয়ে হলদেটে। এর পেছনে দুধের গঠনগত কারণ কাজ করে। গরুর দুধ তুলনামূলকভাবে হালকা বা পাতলা প্রকৃতির হওয়ায় এতে চর্বি ও কেসিনের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। ফলে আলোর বিচ্ছুরণও তুলনামূলকভাবে কম তীব্র হয়। এর পাশাপাশি গরুর দুধে থাকে বিটা ক্যারোটিন নামের একটি প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ। এটি একধরনের ক্যারোটিনয়েড। এই ক্যারোটিনয়েড অনেক ফল ও সবজিতেও পাওয়া যায়। এই রঞ্জক পদার্থটি মহিষের দুধে থাকে না, এ কারণেই মহিষের দুধ গরুর দুধের মতো হলুদাভ দেখায় না।
ক্যারোটিনয়েডের সঙ্গে অ্যানাটোর (annatto) মতো অন্যান্য প্রাকৃতিক রঙিন উপাদান মিলেই গরুর দুধ ও দুধজাত কিছু খাবারে হালকা হলুদ আভা তৈরি করে।
সূত্র : এমএসএন, স্লিপ ডট কম