প্রকৃতির সবচেয়ে দুর্লভ রং কোনটি

নীলই হলো রঙের রাজালাইভ সায়েন্স

রংধনুর আছে সাত রং। ফুল বাগানে গেলে আবার দেখা যায় হাজারো রঙের মেলা। আমাদের চারপাশে প্রকৃতি যেন রঙের এক বিশাল সমাহার! লাল, নীল, সবুজ, হলুদসহ কত শত রং! এতসব রঙের মধ্যে এমন একটি রং আছে, যা প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া ভীষণ কঠিন? আজ সেই দুর্লভ আর রহস্যময় রং নিয়েই আমাদের আলোচনা।

সবচেয়ে দুর্লভ রং নিয়ে জানার আগে বুঝতে হবে, প্রকৃতি কীভাবে রং তৈরি করে? গাছপালা বা পশু-পাখিরা নিজেদের রঙিন করে তুলতে পারে। একটা লাল গোলাপকে আমরা কেন লাল দেখি? কারণ, গোলাপের পাপড়ির ভেতর পিগমেন্ট নামে এক রাসায়নিক পদার্থ আছে। এই পিগমেন্ট সূর্যের আলোর সব রং শুষে নেয়, শুধু লাল রংটাকে ছাড়া। আমাদের চোখে সেই লাল রংটা এসে পড়লেই আমরা গোলাপটাকে লাল দেখি। গাছের পাতার ক্লোরোফিল ঠিক এভাবেই সবুজ রং ছাড়া বাকি সব শুষে নেয়, তাই গাছের পাতা সবুজ দেখায়।

আরও পড়ুন
সবচেয়ে দুর্লভ রং বেগুনি
লাইভ সায়েন্স

তবে প্রকৃতির রং তৈরির আরেকটা জাদুকরী উপায় আছে! এখানে কোনো রং ব্যবহার হয় না। যেমন ময়ূরের পেখম। ওদের পেখম কেমন রঙিন, তাই না? কিন্তু আসলে ওদের পাখনা বর্ণহীন! ওদের পাখনার ওপর আনুবীক্ষণিক পর্যায়ে এত সূক্ষ্ম আর জটিল নকশা করা থাকে যে, সূর্যের আলো সেখানে পড়লে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই আলোর ছড়ানোর খেলার কারণেই আমরা নীল বা অন্য ঝলমলে রং দেখতে পাই। একে বলে গাঠনিক বর্ণ বা স্ট্রাকচারাল কালার।

এবার আসা যাক নীল রঙের কথায়। প্রাণী জগতে নীল রং কিন্তু বেশ দুর্লভ। কেন জানো? কারণ, গাছপালা তাদের খাবার তৈরির জন্য অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষণের জন্য সূর্যের উচ্চ-শক্তির নীল আলোটাকে ব্যবহার করে। তাই তারা নীল আলোকে ফিরিয়ে না দিয়ে শুষে নেয়। আর যেহেতু অনেক প্রাণী গাছপালা খেয়েই তাদের শরীরের রং তৈরি করে, তাই প্রাণীদের জগতেও নীল রঞ্জক পদার্থ খুব একটা দেখা যায় না। পৃথিবীতে ১০টির মধ্যে ১টিরও কম ফুলে দেখা যায় নীল রং।

আরও পড়ুন
অনেক প্রাণীর গায়ে আমরা সুন্দর নীল রং দেখি
লাইভ সায়েন্স

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গাঠনিক বর্ণের জগতে নীলই হলো রাজা! কারণ, উচ্চ-শক্তির নীল আলো খুব সহজেই সূক্ষ্ম নকশায় ধাক্কা খেয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ব্লু মরফো প্রজাপতি বা অনেক পাখির পালকে আমরা এত সুন্দর নীল রং দেখি। যদিও ওদের শরীরে নীল রঙের কোনো রাসায়নিকই নেই!

অন্যদিকে, লাল রঙের পিগমেন্ট প্রকৃতিতে খুব সহজলভ্য। কারণ, গাছপালা লাল আলোকে ততটা ব্যবহার করে না। কিন্তু গাঠনিক বর্ণ হিসেবে লাল রং প্রায় দেখাই যায় না। কারণ কম-শক্তির লাল আলোকে ছড়িয়ে দেওয়া খুব কঠিন।

তাহলে সবচেয়ে দুর্লভ রং কোনটি? পিগমেন্ট আর গাঠনিক বর্ণের হিসেবে প্রকৃতির সবচেয়ে দুর্লভ রং বেগুনি! আমাদের চোখে দেখা আলোর মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ-শক্তির তরঙ্গ বেগুনি রঙয়ের। এ কারণে পিগমেন্ট হিসেবেও একে খুঁজে পাওয়া কঠিন, আবার গাঠনিক বর্ণ হিসেবে তৈরি করাও খুব শক্ত। বাঘ, সিংহ বা মানুষের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেগুনি রঙের রঞ্জক পদার্থ তৈরি করতে পারে না। তাই এই রংটা খুঁজে পাওয়া কঠিন। শুধু কিছু বিশেষ পাখি, পোকামাকড় আর সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে এই রং দেখা যায়।

আরও পড়ুন

প্রকৃতির এই দুর্লভ রঙের কয়েকটি প্রাণির সঙ্গে এবার পরিচিত হওয়া যাক। পাখিদের মধ্যে আছে আফ্রিকার বেগুনি পিঠের স্টারলিং (Violet-backed Starling)। পুরুষ পাখিটির পিঠের দিকটা ধাতব বেগুনি, যা সূর্যের আলোতে ঝলমল করে। আরও আছে বেগুনি হানি ক্রিপার (Purple Honeycreeper) এবং ইম্পেরিয়াল অ্যামাজন টিয়া (Imperial Amazon Parrot)। এই ইম্পেরিয়াল অ্যামাজন টিয়া কিন্তু শুধু ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ডমিনিকা নামে একটি ছোট্ট দেশেই পাওয়া যায়। এটি এখন বিপন্ন একটি প্রজাতি।

পোকামাকড়ের জগতে আছে ইউরোপের পার্পল এম্পেরর প্রজাপতি (Purple Emperor Butterfly)। এই প্রজাপতির ডানায় কিন্তু কোনো বেগুনি রং নেই! আলোর কোণের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর ডানাকে কখনো গাঢ় বাদামী আবার কখনো উজ্জ্বল বেগুনি দেখায়।

আর সাগরের গভীরে গেলে দেখা মিলবে বেগুনি সি-স্টার (Purple Sea Star) বা বেগুনি সমুদ্র শামুকের (Purple Sea Slug)। বেগুনি সি-স্টার তার শিকারকে বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে এবং নিজের পাকস্থলী বের করে এনে শিকারের ওপর ফেলে তাকে হজম করে! কী অদ্ভুত, তাই না?

সূত্র: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ ম্যাগাজিন, রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স ও আইইউসিএন রেড লিস্ট

আরও পড়ুন