বন্যার পানিতে যে বিপদ লুকিয়ে থাকে
বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেছে। তবে বৃষ্টি শেষ হয়নি। এই লেখা প্রকাশ হওয়ার দিন দেশে চার বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিসের সূত্রে এমনই জানা গেছে।
বৃষ্টি হলে আমাদের এখানে একটা উৎসবের ভাব আসে। অনেক জায়গায় পানি জমে যায়। সমস্যা হলো, যখন ভারী বৃষ্টি হয় এবং পানি নামতে পারে না, তখন দেখা দেয় বন্যা বা জলাবদ্ধতা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত বন্যা হয়।
বন্যার পানি দেখতে পরিষ্কার মনে হলেও এই পানিতে মিশে থাকে বিপদ। কী কী বিপদ আছে, তা নিয়ে এই লেখা। প্রথমত, বন্যা হলে এমন জায়গায় পানি ওঠে, যেখানে কখনো পানি থাকে না। সুয়ারেজ বা মানুষের মলমূত্র পানির সঙ্গে মেশে। অন্যান্য ভয়ানক পদার্থেও ভরা থাকে বন্যার পানি। এই পানি তোমার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
এমনিতেই বন্যা হলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। খাবার পানির অভাব দেখা দেয়। দ্রুত রাস্তাঘাট ডুবে যায়। নদীর পানি উপচে লোকালয়ে চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ছয় ইঞ্চি দ্রুত প্রবাহিত পানি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ভাসিয়ে নিতে পারে। এক ফুট পানিতেই বেশিরভাগ গাড়ি ভেসে যেতে পারে। এই নিয়ে কিশোর আলোতে আমরা লিখেছি, ঘুরে দাঁড়াও, ডুবে যেও না।
তবে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি ছাড়াও বন্যার পানিতে প্রায়ই পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, শিল্প-রাসায়নিক এবং অন্যান্য অনেক ক্ষতিকর পদার্থ মিশে থাকে। এটাই মূল বিপদ।
বন্যার পানিতে কী থাকে?
প্রশ্নটা হতে পারে, বন্যার পানিতে কী থাকে না? চারপাশ যেহেতু পানিতে ভেসে যায়, ফলে মাটিতে বা ভূমিতে যা থাকে, তাই মেশে বন্যার পানিতে। কীটনাশক মেশে ফলের ক্ষেত থেকে। বিষাক্ত পদার্থ, পেট্রোলিয়াম বা তোমার কল্পনায় আসে এমন সবকিছু মিলেই আমাদের চারপাশে থাকে বন্যার পানি। বলতে পারো এটি এক বিষাক্ত মিশ্রণ। শত শত ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস এই পানিকে দূষিত করতে পারে। তাই বন্যার পানি পেলেই এতে সাঁতার কাটতে নেমে যাওয়া বা এতে হাঁটাহাঁটি করা নিরাপদ না, বরং বিপজ্জনক।
বিশেষ করে বৃষ্টি বা ঝড়ের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা বেশি বিপজ্জনক থাকে। ভারী বৃষ্টি বর্জ্য পদার্থ ধুয়ে আনে। পানির সঙ্গে আসে রোগ-জীবাণু।
বন্যার দূষিত পানির সংস্পর্শে এলে সম্ভাব্য কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এর মধ্যে ই. কোলাই থেকে তৈরি হওয়া পেটের রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা ত্বকের মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সবসময় সম্ভব হলে বন্যার পানি এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেন। শুধু বন্যার পানি যেন মুখে না যায় সেটি নিশ্চিত করাই যথেষ্ট না। চোখে বা কানেও যেন এই পানি না প্রবেশ করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি একটি পোকামাকড়ের কামড় বা একটু ক্ষত তৈরি হলে এর মধ্য দিয়ে জীবাণু রক্তে প্রবেশ করতে পারে।
বন্যার পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলেও তুমি আহত হতে পারো। পানির নিচে লুকানো আবর্জনা বা ধ্বংসাবশেষ থাকতে পারে। এমনকি খোলা ম্যানহোল থাকতে পারে। নোংরা পানি তো আছেই, বিদ্যুতের তার ছিড়ে পানিতে বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঘটনাও আমাদের দেশে কম ঘটেনি, বিদ্যুতের শক বা জীবনহানীর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বন্যায় আক্রান্ত এলাকা বা পানি জমে থাকা রাস্তাগুলোতে সাবধানতা খুব জরুরি। বন্যাপ্রবণ এলাকায় বাসায় অন্তত পাঁচ দিনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রাখাও বন্যা থেকে বাঁচার একটি পদ্ধতি। খাবার মজুত থাকলে তোমাদের পানির মধ্যে বাইরে যেতে হবে না।
পানি নেমে যাওয়ার পর যে বিপদ থাকে
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই সব ঠিক হয়ে যায় না। পানি নেমে গেলেও পড়ে থাকে গাছপালা, ঘড়বাড়ি এবং ধ্বংসাবশেষ। জিনসটা অনেকটা এরকম কল্পনা করতে পারো, তোমার পুরো এলাকায় কেউ যদি নোংরা বর্জ্য স্প্রে করে যায়, তবে যেমন হবে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারপাশটা তেমনই থাকে।
এসময় ঘরের মধ্যে ছত্রাক জন্ম নিতে পারে। বয়স্ক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে এসব ছত্রাক। বন্যার পর বাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে যদি কেউ বুকে চাপ বা কাশি অনুভব করে, তবে বুঝতে হবে হয়ত ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। এ সময় কাজ থামিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে।
এ সময় পানি পান করা, দাঁত ব্রাশ করা, হাতমুখ ধোয়া, থালা-বাসন ও শাকসবজি ধোয়ার সময় বোতলজাত বা ফোটানো পানি ব্যবহার করতে হবে। বন্যায় মশা ভেসে গেলেও সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহ পর এরা ফিরে আসে। জমে থাকা পানির জায়গাগুলো এরা তখন প্রজননক্ষেত্রে পরিণত করে। তাই বন্যার পরে চারপাশের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে পারো। আর বাইরে বের হলে লম্বা হাতার পোশাক পড়তে ভুলো না।