শিশুরা কীভাবে এত দ্রুত শেখে
কখনো কি ভেবে দেখেছ, কীভাবে ছোট বাচ্চারা এত তাড়াতাড়ি কথা বলা, হাঁটা বা দৌড়ানো শিখে ফেলে? একদিন দেখা যায় এরা হেলেদুলে হাঁটছে, কিছুদিন পরেই দৌড়ে বেড়াচ্ছে! ওদের ভাষা শেখাও মজার। কয়েক দিন আগে ‘গিগি-গাগা’ বলছিল, হঠাৎ করেই পুরো বাক্য বলতে শুরু করে দিল!
প্রশ্ন হলো, শিশুরা কীভাবে এত দ্রুত শেখে? এর গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো মস্তিষ্কের নমনীয়তা (নিউরোপ্লাস্টিসিটি)। শিশুদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন জিনিস শিখে নিতে পারে। যদি ভুল হয়ও, সেটিও তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারে। নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন শব্দ, নতুন জায়গা—সবকিছু থেকে শিশুদের মস্তিষ্ক শিখে নিতে ব্যস্ত থাকে। জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই শেখার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে।
শিশুরা ভাষাও শিখতে পারে অনেক দ্রুত। কারণ, ছোটবেলা থেকেই ওরা আশপাশের শব্দ, কথা বলার ধরন আর ভাষার ছন্দ শোনে। শুনতে শুনতে শিখে ফেলে। এ জন্য শিশুরা সহজে একাধিক ভাষা শিখতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্মের পর শিশুরা বিশ্বের যেকোনো ভাষার শব্দ শুনে আলাদা করতে পারে, যা বড়রা পারে না।
শুধু ভাষা নয়, অন্যান্য জিনিসও শিশুরা দ্রুত শিখতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যখন শিশুদের কোনো ছবি বা কাজ শেখানো হয়, তখন ওদের মস্তিষ্কে গ্যাবা বা গামা-অ্যামিনোবিউটারিক অ্যাসিড নামে একধরনের রাসায়নিক উপাদান বেড়ে যায়। এটি মস্তিষ্ককে খুব বেশি উত্তেজিত না হতে দিয়ে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং নতুন শেখা বিষয়গুলোকে মস্তিষ্কে জমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বড়দের ক্ষেত্রে এটা হয় না। ছোটদের হয় বলে ছোটরা দ্রুত এবং সহজে শিখতে পারে।
তবে মনে রাখবে, শিশুরা যেন ভালোভাবে শিখতে পারে সে জন্য তাদের ভালোবাসা, সহায়তা এবং সময় প্রয়োজন। শিশুরা যদি সঠিকভাবে খেলা, গল্প এবং নতুন কিছু দেখার সুযোগ পায়, তাহলে এরা আরও আনন্দ নিয়ে শিখতে পারে। ছোটবেলা থেকে বই পড়া বা গল্প শোনানো শিশুর মস্তিষ্কে ভালো প্রভাব ফেলে। এতে ভাষার প্রতি ভালোবাসা জন্মায় এবং শেখার ইচ্ছা বেড়ে যায়।
জন্ম থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সময়কে বলা হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় শেখার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময়ে শিশুরা আনন্দ আর খেলাধুলার মধ্য দিয়ে চারপাশের দুনিয়া বোঝার চেষ্টা করে। তাই বড়রা যদি ধীরে ধীরে তাদের শেখার সুযোগ দেয়, তাহলে শিশুরা আনন্দের মধ্য দিয়ে শেখে এবং নতুন কিছু জানার আগ্রহ আরও বাড়ে।
তাই শিশুদের জন্য শেখা মানেই মজা, খেলা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন দুনিয়ায় পা রাখা!
সূত্র: লাইভ সায়েন্স