অরিগ্যামি বানিয়ে কিশোর জিতল ৩০ লাখ টাকা
১৪ বছর বয়সের কিশোরেরা কাগজ দিয়ে বড়জোর বিমান বা নৌকা বানায়। বন্ধুরা মিলে সেগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতা করে, কার প্লেন বেশি দূরে গেল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাইলস উ নামের ছেলেটি অন্য ধাতুতে গড়া। সে কাগজ দিয়ে এমন এক অরিগ্যামি প্যাটার্ন তৈরি করেছে, যা নিজের ওজনের চেয়ে ১০ হাজার গুণ বেশি ভার সহ্য করতে পারে! এটাও কিন্তু কাগজ দিয়েই বানানো হয়েছে। আর এ জন্য ছেলেটি পেয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
মাইলস ছয় বছর ধরে শখের বশে অরিগ্যামি বানাত। পশুপাখিসহ নানা ধরনের জিনিস বানাত সে। কিন্তু তার মাথায় সত্যিকারের বুদ্ধিটা আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর দেখে। ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল আর হারিকেন হেলেনের ধ্বংসলীলা তাকে ভাবিয়ে তোলে। সে দেখল, দুর্যোগের সময় যে তাঁবু বা শেল্টারগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে বড় সমস্যা আছে। ওগুলো হয়তো মজবুত, কিন্তু অনেক ভারী। আবার যেগুলো হালকা, সেগুলো বেশিক্ষণ টেকে না। মাইলস চাইল এমন কিছু বানাতে, যা একাধারে মজবুত, আবার ভাঁজ করে পকেটে নিয়ে ঘোরার মতো হালকাও হবে।
মাইলস তার প্রজেক্টের জন্য বেছে নেয় মিউরা-ওরি নামে এক বিশেষ জাপানি অরিগ্যামি কৌশল। এই ভাঁজের বিশেষত্ব হলো, একে খুব ছোট করে গুটিয়ে রাখা যায়, আবার বড় করে ফেলা যায় এক টানেই। কিন্তু এটা কি মানুষের ভার সইতে পারবে? এটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
মাইলস মোট ৫৪টি ভিন্ন ভিন্ন মডেল বানাল। সে কাগজের পুরুত্ব, ভাঁজের কোণ এবং আকৃতি পরিবর্তন করে ১০৮ বার পরীক্ষা চালাল। প্রথমে ঘরের সব বই তাতে চাপিয়ে দেখল, কাগজ ভাঙে না। এরপর সে তার মা–বাবাকে দিয়ে ব্যায়াম করার ভারী জিনিস আনিয়ে একের পর এক পরীক্ষা চালাল।
মাইলসের ধারণা ছিল, ভারী কাগজ হয়তো বেশি ওজন নিতে পারবে। কিন্তু ফলাফল দেখে সে নিজেই অবাক! দেখা গেল, সাধারণ ফটোকপির কাগজ দিয়ে বানানো ভাঁজই সবচেয়ে শক্তিশালী।
মাইলসের বানানো এই বিশেষ অরিগ্যামি স্ট্রাকচারটি নিজের ওজনের ১০ হাজার গুণ ভার বহন করতে পারে। ব্যাপারটা কতটা অবিশ্বাস্য, তা বোঝাতে মাইলস একটা দারুণ উদাহরণ দিয়েছে। সে বলেছে, ‘কাগজ দিয়ে বানানো একটা সাধারণ ট্যাক্সি ক্যাবের কথা ভাবুন। আমার এই অরিগ্যামির অনুপাতে হিসাব করলে, ওই একটা ট্যাক্সি একাই ৪ হাজার হাতির ওজন ধরে রাখতে পারবে!’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত থার্মো ফিশার সায়েন্টিফিক জুনিয়র ইনোভেটরস চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়েছিল প্রায় ২ হাজার প্রতিযোগী। সেখান থেকে বাছাই করে সেরা ৩০ জনকে ফাইনালে ডাকা হয়। বিচারকেরা শুধু মাইলসের প্রজেক্ট দেখেই মুগ্ধ হননি, কঠিন সব চ্যালেঞ্জে তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেখেও অবাক হয়েছেন। সোসাইটি ফর সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী মায়া আজমেরা বলেন, ‘মাইলস শুধু অসাধারণ প্রজেক্টই বানায়নি, সে একজন লিডার হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছে।’
পুরস্কারের ৩০ লাখ টাকা মাইলস নিজের ভবিষ্যতের পড়াশোনার জন্য রেখে দিয়েছে। তবে তার আসল স্বপ্ন আরও বড়। সে এখন এই অরিগ্যামি মডেল দিয়ে সত্যিকারের ইমার্জেন্সি শেল্টার বা তাঁবু বানাতে চায়, যা ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরহারা মানুষকে আশ্রয় দেবে। কাগজের সামান্য একটা ভাঁজ যে হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে, ১৪ বছরের মাইলস সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল!
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার