একখণ্ড মেঘের ওজন কত
আদি অন্ত হারিয়ে ফেলে
সাদা কালো আসন মেলে
পড়ে আছে আকাশটা খোশ-খেয়ালি,
আমরা যে সব রাশি রাশি
মেঘের পুঞ্জ ভেসে আসি।
রবি ঠাকুরও মেঘ নিয়ে কাব্য করেছেন। তুমিও নিশ্চয় দেখেছ, আকাশে মেঘের পুঞ্জ ভেসে ভেসে এক দেশ থেকে আরেক দেশে উড়ে চলে। আচ্ছা, এই প্রশ্ন কি কখনো মাথায় এসেছে, মেঘ কি হালকা না ভারী? আসলে মেঘের ওজন কত?
মেঘের ওজন নির্ধারণ করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এটি শুরু হয় মেঘের আকার নির্ধারণ করার মাধ্যমে। মেঘ মূলত পানি, জলীয় বাষ্প এবং কখনো কখনো বরফকণার মিশ্রণে গঠিত। মেঘের এই উপাদানগুলোর কারণে এর ওজন নির্ভর করে।
মেঘ কী দিয়ে তৈরি?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে চারপাশের বাতাসে অদৃশ্য জলীয় বাষ্প থাকে। যখন সেই জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে তরল পানির ছোট ছোট কণায় বা কঠিন বরফকণায় রূপান্তরিত হয়, তখন দৃশ্যমান মেঘ তৈরি হয়। অর্থাৎ, মেঘ গঠিত হয় বিভিন্ন অবস্থায় থাকা পানির কণার মাধ্যমে। আর এই পানিই মূলত মেঘের ওজনের জন্য দায়ী।
এ ছাড়া মনে রেখো বাতাসের তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে পানির ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়। তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পানির অণুগুলো একে অপরের কাছাকাছি সরে আসে বা দূরে সরে যায়। ফলে এক গ্যালন পানিতে কতগুলো অণু থাকবে, তা পরিবর্তিত হয় এবং সেই অনুযায়ী এক গ্যালন পানির ওজনও কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণ একটি মেঘে কত পানি থাকতে পারে?
মেঘে পানির পরিমাণ হিসাব করা হয় অনুমানের ওপর নির্ভর করে। ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির কিউমুলাস মানে, স্তূপ মেঘ আরকি। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সাধারণত সমান হয়। মনে করি, কোনো মেঘ ১,০০০ মিটার লম্বা, ১,০০০ মিটার চওড়া ও ১,০০০ মিটার উঁচু হয়, তাহলে এর মোট আয়তন হবে : আয়তন = দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা
= ১,০০০x ১,০০০x ১,০০০
= ১,০০০,০০০,০০০ ঘন মিটার
আর প্রতি ঘন মিটারে মেঘে থাকা পানির ওজন প্রায় ০.৫ গ্রাম। তাহলে, মোট পানি হবে :
১,০০০,০০০,০০০ ঘন মিটার x ০.৫ (গ্রাম/ঘন মিটার) = ৫০০,০০০,০০০ গ্রাম।
বা ৫০০ মিলিয়ন গ্রাম।
একে এখন আমরা টনে রূপান্তর করে নিতে পারি। এটা নিশ্চয় তোমরা পারো? তারপরও বলে দিচ্ছি।
৫০০ মিলিয়ন গ্রাম = ৫,০০০০০ কেজি (১০০০ গ্রামে ১ কেজি)।
এখন কেজিকে টনে রূপান্তর করা যাক (১,০০০ কেজিতে ১ টন) : ৫,০০,০০০ ÷ ১,০০০ = ৫০০ টন।
তাহলে, একটা মাঝারি আকারের মেঘের ওজন প্রায় ৫০০ টন। অর্থাৎ, এটি প্রায় ১০০টি বড় হাতির ওজনের সমান!
মেঘের পানির গ্যালনে হিসাব করতে পারো
১ কেজি = ২.২ পাউন্ড।
৫,০০,০০০ কেজি × ২.২ = ১১,০০,০০০ পাউন্ড।
প্রতি গ্যালনের ওজন :
সিআরসি হ্যান্ডবুক অব কেমিস্ট্রি অ্যান্ড ফিজিক্স বই থেকে জানা যায়, ১ গ্যালন পানির ওজন তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে ৭.৯৯ থেকে ৮.৩৪ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
আমরা ৮.৩৪ পাউন্ড ব্যবহার করব।
১১,০০,০০০ ÷ ৮.৩৪ = ১,৩১,৮৯৪ (গ্যালন)।
অর্থাৎ, একটি সাধারণ মেঘে প্রায় ১,৩১,৮৯৪ গ্যালন পানি থাকতে পারে।
এত ভারী মেঘ কীভাবে ভাসে?
মেঘে থাকা পানির কণাগুলো এত ক্ষুদ্র যে বাতাসের সামান্য গতিতেও ভেসে থাকতে পারে। তবে, যদি কণাগুলো এক হয়ে বড় হয়ে যায়, তখন তারা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।
সূত্র: লাইব্রেরি অব কংগ্রেস