পৃথিবী ঘুরে ঘরে ফিরছেন কার্ল বুশবি, সাতাশ বছরের হাঁটার অভিযান শেষ

দুই চাকার ঠেলা নিয়ে কার্ল বুশবি হেঁটে বেড়িয়েছেন পুরো পৃথিবীকার্ল বুশবির ফেসবুক থেকে

ব্রিটিশ অভিযাত্রী কার্ল বুশবি এক অদ্ভুত ধরনের মানুষ। অদম্য জেদ আর স্বপ্ন তাঁকে এমন এক পথে নিয়ে গেছে, যেটা ইতিহাসে এর আগে কেউ করেনি। তিনি সংকল্প করেছিলেন, নিজের দুই পায়ে হেঁটে পৃথিবী ঘুরবেন। কোন গাড়ি নয়, কোন নৌকা নয়, কোন বিমান নয়। শুধু হাঁটা। সে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন তিনি চিলির দক্ষিণে পুন্টা আরেনাস নামের একটি শহরে। আর আজ, সাতাশ বছর পরে, তিনি প্রায় বাড়ির দরজায় পৌঁছে গেছেন।

কার্ল এই দীর্ঘ প্রকল্পের নাম দিয়েছিলেন গোলায়েথ এক্সপেডিশন। নামের সঙ্গে অভিযানটির চরিত্র মিলে যায় বেশ। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে গিয়ে তাকে পার হতে হয়েছে মরুভূমি, পাহাড়, বরফে জমে থাকা নদী, প্রচণ্ড শীত, গরম, এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। কখনো পথ ছিল প্রাণঘাতী, কখনো ছিল অন্তহীন। কিন্তু তিনি থামেননি। তার নিজের নিয়মও ছিল কঠোর। কোন মোটরচালিত বাহনে উঠবেন না। যেদিন থামবেন, সেদিনের শেষ পদক্ষেপ থেকে পরদিন আবার হাঁটা শুরু করতে হবে।

আরও পড়ুন

এই লম্বা যাত্রায় তিনি পেরিয়েছেন পঁচিশটির বেশি দেশ। হাঁটাহাঁটি মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কিলোমিটার। পথ যত কঠিনই হোক, মানুষের সহানুভূতি তাঁকে বারবার শক্তি দিয়েছে। কোনো গ্রামে পৌঁছে তিনি কারো বাড়িতে পানি খেয়েছেন, কেউ তাকে খাবার দিয়েছে, কেউ তাকে রাতের ঘুমানোর জায়গা দিয়েছে। তিনি পরে বলেছেন, পৃথিবীর পথ যত দীর্ঘই হোক, মানুষের মমতা তার চেয়েও বড়।

এখন তার অবস্থান ইউরোপের হাঙ্গেরি। সেখান থেকে তার বাড়ি ইংল্যান্ডের হাল শহর আর বেশি দূরে নয়। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার বাকি। এত দীর্ঘ যাত্রার পর এখন তিনি পৌঁছে যাচ্ছেন সমাপ্তির একেবারে কাছে। তিনি আশা করছেন ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে বাড়িতে ফিরে যাবেন।

আরও পড়ুন

এই দীর্ঘ প্রয়াস একসময় তাকে ভয়ও দেখায়। এতদিন ধরে একটি লক্ষ্য ছিল সামনে। যখন সেই লক্ষ্য পূর্ণ হবে, তখন জীবন আবার নতুন করে কোন দিকে যাবে, সেটি নিয়ে তিনি ভাবেন। তবুও তিনি জানেন, সাতাশ বছরের অভিযানের শেষ মুহূর্তগুলোই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

কার্ল বুশবির গল্প বলে, লক্ষ্য যদি সত্যিই স্পষ্ট থাকে এবং মন শক্ত হয়, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পথও হাঁটা সম্ভব।

সূত্র: নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম

আরও পড়ুন