পিরিয়ডে কতটা রক্তক্ষরণ স্বাভাবিক

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যদি পিরিয়ড হয়, তাতেও কিন্তু সব মিলিয়ে বেশিই হচ্ছে রক্তক্ষরণছবি: পেক্সেলস

পিরিয়ডের সময়কার রক্তক্ষরণ একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। নির্দিষ্ট সময় পরপর এই রক্তক্ষরণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ঠিক কতটা রক্তক্ষরণ স্বাভাবিক, তা জানা খুব জরুরি। অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

কত দিন পরপর পিরিয়ড হচ্ছে এবং কত দিন ধরে কী পরিমাণ রক্ত যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যদি পিরিয়ড হয়, তাতেও কিন্তু সব মিলিয়ে বেশিই হচ্ছে রক্তক্ষরণ। এমন সব জরুরি বিষয়ে জানালেন ঢাকার কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. নূরুন নাহার।

কখন পিরিয়ড শুরু হয়

সাধারণত ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী কিশোরীর প্রথমবার পিরিয়ড হয়। তবে ৯ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত যেকোনো বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়া স্বাভাবিক। ৯ বছরের আগে পিরিয়ড শুরু হওয়া কিংবা ১৬ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও পিরিয়ড শুরু না হওয়া কোনো অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।

আরও পড়ুন

কত দিন পরপর পিরিয়ড হয়

২১ থেকে ৩৫ দিন পরপর পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক। অর্থাৎ একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে আবার পিরিয়ড শুরু হবে। যদি কারও ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পর পিরিয়ড হয়, তাহলে তা অস্বাভাবিক বলেই ধরে নিতে হবে।

কতটা রক্ত যায়

পিরিয়ডের সময় তিন থেকে চার দিন রক্ত যায়। তবে ছয় থেকে সাত দিন পর্যন্তও রক্ত যেতে পারে কারও কারও। পিরিয়ডের প্রথম কয়েক দিন কিংবা শেষ কয়েক দিন রক্তপাত একটু কম হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে কয়েক ফোঁটা রক্ত যেতে পারে পিরিয়ড শুরু হওয়ার দশম দিন পর্যন্তও। এটা স্বাভাবিক। তবে পিরিয়ডের মূল রক্তক্ষরণ যদি সাত দিনের বেশি থাকে, তা অস্বাভাবিক।

পিরিয়ডের সময় ২৪ ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫ বার স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানোর প্রয়োজন হতে পারে। অর্থাৎ গড়পড়তা আকারের ৪–৫টি স্যানিটারি ন্যাপকিন মোটামুটি ভিজে যেতে পারে সারা দিনে। এর চেয়ে কম রক্তক্ষরণ হলে ক্ষতি নেই। তবে বেশি হলেই মুশকিল। বিশেষত কারও যদি দু–এক ঘণ্টার মধ্যেই একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন পুরো ভিজে যেতে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

খেয়াল রেখো, অল্প রক্ত গেলেও একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনোই ছয় ঘণ্টার বেশি সময় রাখতে নেই। তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। আর পিরিয়ডের প্রতিটি দিনে খুবই কম রক্ত যাওয়াটাও কিন্তু অস্বাভাবিক হতে পারে।

আরও পড়ুন

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বোঝার আরও উপায়

পিরিয়ডের সময় মাঝেমধ্যে রক্তের চাকা যেতে পারে। তাতে ক্ষতি নেই। তবে ছোট ছোট চাকার পরিমাণ যদি বেশি হয় কিংবা অল্প পরিমাণেই যদি বড় আকারের চাকা যায়, তাহলে তা অধিক রক্তক্ষরণ বোঝাতে পারে। প্রশ্ন হলো, রক্তের চাকার আকার ছোট বা বড় বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়! মোটামুটি এক ইঞ্চির বেশি আকারের হলে সেটিকে বড় চাকা ধরে নিতে পারো।

সঠিকভাবে ন্যাপকিন ব্যবহার করলেও যদি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পোশাকে রক্ত লেগে যায়, তাহলে এটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

বেশি বা কম রক্ত গেলে কী ক্ষতি

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত গেলে কিংবা ২১ দিনের আগেই আবার পিরিয়ড শুরু হলে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে সহজেই। এমন হলে অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করতে পারো তুমি। মনোযোগের ঘাটতিও হতে পারে। রক্তস্বল্পতার ঝুঁকিও থাকে। রক্তস্বল্পতায় ভুগলে ফ্যাকাশে দেখাতে পারে, অল্পতেই হাঁপিয়ে পড়া বা বুক ধড়ফড় করার মতো সমস্যা হতে পারে। আয়রনের ঘাটতির কোনো উপসর্গ দেখা দিলে কিংবা মাথা ঘোরালে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হরমোনজনিত সমস্যা কিংবা অন্য যে সমস্যার জন্য রক্ত বেশি বা কম যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করা জরুরি। নইলে সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

আরও পড়ুন