পড়তে বসলেই কেন ঘুম আসে

পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট টেবিল ও চেয়ার ব্যবহার করবে

পড়ার টেবিলে বসতে না বসতেই হঠাৎ চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে। অনেক সময় তো বই খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ি। চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে। তোমারও কি প্রায়ই এমনটা হয়? চিন্তার কোনো কারণ নেই, এ অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পড়ার সময় আমরা কেন ঘুমিয়ে পড়ি? কী করলে এই ঘুম থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব?

পড়ার সময় ঘুম আসার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। যখন আমরা কোনো কাজ করি, হাঁটাচলা বা কথা বলি, তখন আমাদের সিমপ্যাথেটিক সিস্টেম সক্রিয় থাকে, যা আমাদের শরীরকে সচল রাখে। কিন্তু যখন আমরা পড়তে বসি, আমাদের শরীর স্থির ও শান্ত থাকে। এ অবস্থায় প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সিস্টেমের মূল কাজ হলো শরীরকে বিশ্রাম ও হজমের জন্য প্রস্তুত করা। ফলে, শরীর ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করে এবং মস্তিষ্কে ঘুমের সংকেত পাঠাতে থাকে। যার ফলে ঘুম আসে।

তুমি কোথায় পড়তে বসেছ, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিছানায় শুয়ে বা আরামদায়ক চেয়ারে বসে পড়লে শরীর সহজেই ঘুমের জন্য সংকেত পেতে শুরু করে।

পড়া একটি মানসিক পরিশ্রমের কাজ। প্রতিটি শব্দ পড়ার পর আমাদের মস্তিষ্ক সেগুলোকে একত্র করে অর্থ বোঝে। শুধু তা–ই নয়, শব্দগুলো থেকে মস্তিষ্কে নানা ছবি ও দৃশ্যকল্প তৈরি হয়। এটি অনেকটা আমাদের মাথার ভেতরেই একটি সিনেমা তৈরি করার মতো। তাই প্রতিটি শব্দ, বাক্য ও অনুচ্ছেদ বোঝার জন্য মস্তিষ্ককে প্রচুর শক্তি ব্যয় করতে হয়। যখন আমরা একটানা পড়ি, তখন মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্রাম চায়। এই ক্লান্তি থেকেই ঘুম আসে।

আরও পড়ুন

আমাদের মস্তিষ্কে সারা দিন ধরে একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়, যার নাম অ্যাডেনোসিন (Adenosine)। পদার্থটি মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে শান্ত করে এবং স্নায়ুগুলোকে দুর্বল করে ঘুমকে উৎসাহিত করে। সারা দিন ধরে আমরা যখন বিভিন্ন কাজ করি, তখন এটি জমা হতে থাকে। পড়ার সময় যেহেতু আমরা সাধারণত স্থির হয়ে বসে থাকি। তাই অ্যাডেনোসিনের প্রভাব সহজেই আমাদের শরীরে অনুভূত হয় এবং ঘুম পায়।

পড়তে বসার আগে খুব বেশি ভারী খাবার খাবে না

পড়ার সময় আমাদের চোখ স্থির থাকে না; বরং পৃষ্ঠাজুড়ে দ্রুত ঘোরাফেরা করে। এ কাজ করার জন্য আমাদের চোখের পেশিগুলোয় একধরনের চাপ পড়ে। ক্রমাগত চোখের পেশি ব্যবহারের ফলে চোখ ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং বিশ্রাম চায়। যখন একদিকে মস্তিষ্ক এবং অন্যদিকে চোখ—দুটিই বিশ্রাম চায়, তখন ঘুমিয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক।

দীর্ঘ সময় টানা না পড়ে প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট পর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য বিরতি নেওয়া জরুরি। এই বিরতির সময় একটু হেঁটে নেওয়া কিংবা চোখে পানির ঝাপটা দিতে পারো।

তুমি কোথায় পড়তে বসেছ, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিছানায় শুয়ে বা আরামদায়ক চেয়ারে বসে পড়লে শরীর সহজেই ঘুমের জন্য সংকেত পেতে শুরু করে। একই সঙ্গে যদি ঘরের আলো কম থাকে বা পরিবেশ খুব নীরব হয়, তবে তা ঘুমানোর পরিবেশ তৈরি করে। মস্তিষ্ক তখন মনে করে, এটি ঘুমানোর সময়। এই সময়গুলোয় ঘুম পায়।

আরও পড়ুন

এখন এই ঘুম যেন পড়ার সময় না আসে, এর জন্য কী করতে পারো তুমি? প্রথমে কখনোই বিছানায় বসে পড়বে না। পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট টেবিল ও চেয়ার ব্যবহার করবে। খেয়াল রাখবে, পড়ার জায়গাটা যেন আরামদায়ক না হয়। বই পড়তে বসার সময় পর্যাপ্ত আলোয় পড়া প্রয়োজন। এটি তোমার মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে। এতে ঘুমের অনুভূতি কমিয়ে দেবে।

তুমি কোথায় পড়তে বসেছ, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ

দীর্ঘ সময় টানা না পড়ে প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট পর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য বিরতি নেওয়া জরুরি। এই বিরতির সময় একটু হেঁটে নেওয়া কিংবা চোখে পানির ঝাপটা দিতে পারো। এ কাজগুলো তোমার মস্তিষ্ককে আবার সচল করে পড়ার জন্য প্রস্তুত করবে।

পড়তে বসার আগে খুব বেশি ভারী খাবার খাবে না। ভারী খাবার হজম করতে বেশি শক্তি লাগে, যা শরীরকে অলস করে তোলে। দিনের বেলা ঘুম আসার সবচেয়ে বড় কারণ হলো রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন। রাতে ভালো করে ঘুমালে দিনের বেলা ঘুম আসার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। সুতরাং পড়তে বসলে যে ঘুম আসে, এর পেছনে তোমার অলসতার থেকে এই কারণগুলো দায়ী।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, উইকিহাও, বুক রিওট

আরও পড়ুন