ট্রেনের মতো প্লেনের সিটগুলো মুখোমুখি হয় না কেন
তুমি কি কখনো ট্রেনে চড়েছ? ট্রেনে চড়লে দেখবে, কিছু সিট সামনের দিকে মুখ করা, আবার কিছু সিট পেছনের দিকে। সামনাসামনি বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে ট্রেনে যাওয়া যায়। কিন্তু প্লেনে উঠলে দেখবে, প্রায় সব সিট একদিকে মুখ করে সাজানো। ঠিক যেন ক্লাসরুমের বেঞ্চ! কিন্তু কেন এমনটা হয়? প্লেনে কেনো ট্রেনের মতো মুখোমুখি সিট থাকে না?
সবচেয়ে বড় কারণ হলো নিরাপত্তা। প্লেন বানানোর সময় প্রকৌশলীরা সবার আগে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন। আর সব সিট একদিকে মুখ করে রাখার পেছনে নিরাপত্তার দুটি বড় কারণ আছে।
প্রথমত, ধরো প্লেনে কোনো জরুরি অবস্থা হলো, আর সবাইকে দ্রুত বের হতে হলো। সব যাত্রী যদি একই দিকে মুখ করে বসে থাকে, তাহলে হুড়োহুড়ি কম হয়, ধাক্কাধাক্কি ছাড়াই সবাই সহজে সারিবদ্ধভাবে বের হতে পারে। কিন্তু সিটগুলো যদি মুখোমুখি থাকে, তাহলে নামার সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাই দ্রুত ও শান্তভাবে বেরিয়ে আসার জন্য সিট একদিকে রাখাই সবচেয়ে ভালো।
দ্বিতীয় কারণটা আরও মজার। প্লেন যখন রানওয়ে ধরে তীব্র গতিতে ছুটে গিয়ে আকাশে উড়তে শুরু করে, তখন আমরা স্বাভাবিকভাবেই পেছনের দিকে হেলে পড়ি। তখন সিটের সঙ্গে পিঠ একদম লেগে থাকে। সিটগুলো শুধু সামনের দিকে মুখ করা থাকলে এই চাপটা পিঠে এবং শরীরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এটা অনেক বেশি নিরাপদ। কিন্তু তুমি যদি উল্টো দিকে মুখ করে বসে থাকতে, তাহলে পুরো চাপটা এসে পড়ত তোমার বুকের ওপর থাকা সিটবেল্টে। এতে আরাম তো লাগতই না, উল্টো বিপদ হতে পারত।
আরেকটা বড় কারণ হলো, জায়গা বাঁচানো এবং খরচ কমানো। সব সিট একদিকে মুখ করে রাখলে একটা প্লেনের ভেতরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যাত্রী বসানো যায়। ফলে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোর খরচ বাঁচে, আর টিকিটের দামও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্লাসরুমে যেমন একদিকে মুখ করে বেঞ্চ সাজালে বেশি ছাত্রছাত্রী বসতে পারে, এটাও অনেকটা সে রকমই।
এ ছাড়া, পেছনের দিকে মুখ করা সিট তৈরি করতে হলে সেগুলোকে আরও অনেক বেশি মজবুত ও ভারী করে বানাতে হয়। কারণ, জরুরি অবতরণের সময় সামনের ধাক্কা সামলানোর জন্য এদের অতিরিক্ত শক্তিশালী হওয়া দরকার। আর প্লেন যত ভারী হবে, তার জ্বালানিও তত বেশি পুড়বে। তাই হালকা সিট ব্যবহার করে জ্বালানি বাঁচানোও একটা বড় উদ্দেশ্য।
তবে তুমি যদি কখনো প্লেনের বিজনেস ক্লাস বা ফার্স্ট ক্লাসে যাও, সেখানে কিছু সিট উল্টো দিকে মুখ করা দেখতে পারো। কারণ, সেখানে আরাম আর গোপনীয়তাই আসল। যাত্রী কম থাকায় তারা জায়গা নিয়ে অতটা ভাবেন। আর টাকা থাকলে ওপরের ওসব সমস্যাও মিটিয়ে ফেলা যায়!
আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, আমাদের অনেকেরই কিন্তু উল্টো দিকে মুখ করে চললে মাথা ঘোরে বা বমি বমি ভাব হয়। এটাকে বলে ‘মোশন সিকনেস’। প্লেনের নির্মাতারা চান, যাত্রীরা যেন আরামে ভ্রমণ করতে পারে। তাই বেশির ভাগ যাত্রীর সুবিধার কথা ভেবেই ইকোনমি ক্লাসের (যেখানে বেশির ভাগ মানুষ বসে) সব সিট সামনের দিকে মুখ করে রাখা হয়। কিন্তু ট্রেনে যেহেতু টেক-অফের ব্যাপার নেই, তাই দুই দিকে মুখ করে বসতে পারে।
সূত্র: ইন্টারেস্টিং জুনিয়র ম্যাগাজিন