কাঠবিড়ালি কীভাবে নিজের লুকিয়ে রাখা বাদাম পরে খুঁজে পায়

বাদামের জন্য 'পাগল' কাঠবিড়ালিছবি: লাইভ সায়েন্স থেকে

শরৎকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে কাঠবিড়ালিদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। শীতের দিনগুলোর জন্য খাবার জমিয়ে রাখতে এরা মাটিতে গর্ত করে বাদাম আর বীজ লুকিয়ে রাখে। এ সময় কাঠবিড়ালিরা খাবার জমানোর কাজে খুব ব্যস্ত থাকে যাতে শীতকালে খাদ্যের অভাব না হয়। এ কারণেই এদের এত ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। কখনো গাছের গোড়ায়, কখনো ঝোপের আড়ালে, আবার কখনোবা ঘাস-পাতার নিচে এরা গুপ্তধনের মতো হাজার হাজার বাদাম ও বীজ মজুত করে।

কিন্তু একটা ছোট্ট প্রাণীর পক্ষে হাজার হাজার লুকানো জায়গার সঠিক অবস্থান মনে রাখা কি সহজ কথা? আমরা তো দরকারি কোনো কাগজ বা জিনিস কোথায় রেখেছিলাম দরকারের সময় সেটি ভুলে যাই। অথচ কাঠবিড়ালিরা কী করে এত নিখুঁতভাবে এদের লুকিয়ে রাখা প্রতিটি বাদাম শীতের সময় খুঁজে বের করে?

এ প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের প্রথমে জানতে হবে, কাঠবিড়ালিরা কীভাবে খাবার লুকিয়ে রাখে। যেসব প্রাণী শীতকালে টিকে থাকার জন্য খাদ্য জমায় এরা সাধারণত দুটি উপায় ব্যবহার করে। এক, এরা ‘মজুত করে’, অর্থাৎ সব খাবার এক জায়গায় রাখে। দুই, এরা ‘ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে’, অর্থাৎ খাবারগুলো বিভিন্ন স্থানে ভাগ করে লুকায়। বেশির ভাগ কাঠবিড়ালি প্রজাতিই দ্বিতীয় কৌশলটি ব্যবহার করে, অর্থাৎ এরা এদের বাদাম ও বীজগুলো বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখে। এ কারণেই এদের এত ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

গবেষকেরা মনে করেন, এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার কৌশলটির একটি খুব বড় সুবিধা আছে। কাঠবিড়ালিরা খুব বুদ্ধি খাটিয়ে কাজটি করে। যদি এরা সব খাবার এক জায়গায় মজুত করত, তাহলে অন্য কোনো কাঠবিড়ালি, ইঁদুর বা পাখি কোনোভাবে সেই জায়গা একবার খুঁজে পেলে একবারে সব খাবার চুরি করে নেবে।

কিন্তু খাবারগুলো বিভিন্ন ছোট ছোট জায়গায় লুকিয়ে রাখলে সেই ঝুঁকি অনেক কমে যায়। কারণ, যদি কেউ একটি জায়গা খুঁজেও পায় তবু অন্য জায়গাগুলোর লুকানো খাবারগুলো নিরাপদ থেকে যায়। বলা যায় এটি কাঠবিড়ালিদের নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি স্মার্ট কৌশল।

রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গবেষকেরা দেখিয়েছেন, কাঠবিড়ালিরা এদের লুকিয়ে রাখা বাদামগুলো খুব বুদ্ধি করে সাজিয়ে রাখে। এরা বাদামের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা জায়গায় পুঁতে রাখে।

আরও পড়ুন

এই সাজিয়ে রাখার পদ্ধতিটিকে বিজ্ঞানীরা ‘চাঙ্কিং’ বলেন। সহজ ভাষায়, এই কৌশল কাঠবিড়ালিদের তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে। ঠিক যেমন আমরা আমাদের কিচেন ক্যাবিনেটে জিনিসপত্র যেমন, মসলা এক জায়গায়, চাল অন্য জায়গায় সাজিয়ে রাখি, তেমন।

ফলে কাঠবিড়ালিরা শীতকালে যখন বাদাম দরকার হয়, তখন খুব সহজে মনে করতে পারে যে কোন ধরনের বাদামটি ঠিক কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে। অর্থাৎ এরা শুধু লুকিয়ে রাখে না, রীতিমতো কৌশল খাটিয়ে গুদামজাত করে। এ প্রক্রিয়ায় এক মৌসুমে প্রায় তিন হাজার পর্যন্ত বাদাম পুঁতে রাখতে পারে এরা।

দীর্ঘদিন ধরে মানুষ বিশ্বাস করত, কাঠবিড়ালিরা এদের লুকানো খাবার খুঁজে পেতে মূলত ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে। এটি সত্যি যে গন্ধের কিছুটা ভূমিকা আছে। তবে আধুনিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, স্মৃতিশক্তির ভূমিকা এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দেয়। ওই গবেষণায় দেখা যায়, একাধিক ধূসর কাঠবিড়ালি যখন খুব কাছাকাছি এদের খাবার লুকিয়ে রাখে, তবু এরা নিজেদের লুকানো জায়গার সঠিক অবস্থান মনে রাখতে পারে এবং সেখানে ঠিক ফিরে আসে।

আরও পড়ুন

পরবর্তী অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠবিড়ালিদের স্থানিক স্মৃতিশক্তি (Spatial Memory) খুবই শক্তিশালী। এ স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করে এরা এদের চারপাশের পরিবেশের একটি মানচিত্র তৈরি করে। এ মানচিত্রের সাহায্যেই এরা খাবার খুঁজে বের করে। কারণ, কিছু বিশেষ প্রজাতি বরফের নিচে চাপা পরে থাকে বাদাম খুঁজে বের করে শীতকালে। তখন শুধু গন্ধ শুঁকে খাবার খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় নয়। গবেষকেরাও মনে করেন, কাঠবিড়ালিরা ঘ্রাণশক্তির পাশাপাশি এদের খাবার মজুতের জায়গাটা মনেও রাখে আশপাশের পরিবেশের দৃশ্য বা সংকেতগুলো দেখে।

সূত্র: লাইভসায়েন্স, পপুলার সায়েন্স

আরও পড়ুন