১২ বছর বয়স থেকে ফোন ব্যবহার করলে কী ক্ষতি
একসময় ফোন মানে ছিল শুধু কল করা বা মেসেজ পাঠানো। এখন স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে শিশুর হাতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় যন্ত্র। এর ভেতরে আছে গেমস, ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া। এত এত উপাদান আছে, দিনের ২৪ ঘণ্টাই ফোনে কাটিয়ে দেওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু এই প্রযুক্তির সহজলভ্যতা শিশুদের শরীর ও মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, শিশুদের জন্য ফোন হতে পারে বিপদের কারণ।
পেডিয়াট্রিকস জার্নালে প্রকাশিত একটি বড় গবেষণা বলছে, যেসব শিশু ১২ বছর বয়সেই স্মার্টফোনের মালিক হয়, তাদের মধ্যে ঘুম কমে যাওয়া, স্থূলতা বাড়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, কোন বয়সে ফোনটি হাতে এসেছে, সেটিও ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করছে। বয়স যত কম, ঝুঁকি তত বেশি। প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ করে বাড়ছে ঝুঁকি।
গবেষণাটির প্রধান লেখক ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেন’স হসপিটালের শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. রান বারজিলাই। তিনি বলেছেন, ‘অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন শিশুদের হাতে ফোন তুলে দেওয়ার বয়স যতটা সম্ভব পেছানো দরকার। কিন্তু এটা বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলে, আমরা সেটা দেখতে চেয়েছিলাম।’
এর পেছনে রয়েছে এই চিকিৎসকের ব্যক্তিগত কারণও। তাঁর নিজের ৯ বছরের সন্তান এখন ফোন চাইছে। এটা শুধু তাঁর সন্তানের জন্য সত্য নয়, এ বয়সী সব শিশুর জন্য অভিভাবকদের বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে।
১০ হাজারের বেশি শিশুর ওপর দীর্ঘ গবেষণা
গবেষক দলটি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, বার্কলে ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি। তাঁরা ‘অ্যাডোলেসেন্ট ব্রেইন কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট স্টাডি’র ১০ হাজার ৫০০-এরও বেশি শিশুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন, যাদের বয়স ৯ থেকে ১৬ বছর। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত এই তথ্য দেখিয়েছে, ফোনের মালিকানা এবং প্রথম ফোন হাতে পাওয়া বয়স কীভাবে স্বাস্থ্য সমস্যাকে প্রভাবিত করছে।
তাদের হিসাব বলছে, ১২ বছর বয়সী যেসব শিশু স্মার্টফোনের মালিক, তাদের বিষণ্নতার ঝুঁকি ১ দশমিক ৩ গুণ, স্থূলতার ঝুঁকি ১ দশমিক ৪ গুণ এবং অপর্যাপ্ত ঘুমের ঝুঁকি ১ দশমিক ৬ গুণ বেশি।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, কেউ যদি ১৩ বছর বয়সে এসেও প্রথমবার ফোন হাতে পায়, যাদের আগের বছর বা ১২ বছর বয়সে ফোন ছিল না, তাদের মধ্যেও ঘুম কমে যাওয়া ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি দেখা গেছে। গবেষকেরা বলছেন, বয়স এক বছর কম হলে ঝুঁকির হার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফোন হাতে পাওয়ার পরে ঝুঁকি শুরু হতে পারে এমনকি চার বছর বয়স থেকেও।
অভিভাবকেরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন
গবেষণার ফল নিয়ে এই গবেষক দলের প্রধান ড. বারজিলাই নিজেকেও চিন্তিত। তিনি বলেছেন, ‘গবেষণা এই বিরূপ প্রভাবগুলোর কারণ প্রমাণ করে না, কিন্তু সংযোগটি খুবই স্পষ্ট। আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে অভিভাবকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এই তথ্যগুলো যথেষ্ট।’
তবে বারজিলাই কাউকে দোষ দিচ্ছেন না। তাঁর নিজের বড় দুই সন্তানও ১২ বছরের আগেই স্মার্টফোন পেয়েছে। তিনি বরং বলছেন, ফোন যেমন ঝুঁকি বাড়ায়, তেমনি সংযোগ ও তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধাও এনে দেয়। তাই সমাধান হলো সঠিক নিয়ম।
ড. বারজিলাইয়ের মতে, ‘শিশুদের রাতে বেডরুম বা ঘুমানোর ঘরে ফোন নিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি অবশ্যই এমন সব কাজে অংশ নিতে হবে, যেখানে ফোন নেই। যেমন খেলাধুলা করা, বই পড়া, বাইরে সময় কাটানো ইত্যাদি।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতেও কড়াকড়ি
গবেষণার সময় যুক্তরাষ্ট্রে দাবি উঠেছিল, স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্কুল চলাকালে স্মার্টফোন ব্যাগ থেকে বের করতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, গবেষণা বলছে, স্কুল চলাকালে কিশোরেরা দিনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ফোনে কাটায়। কিছু স্কুলে ফোন নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ড. বারজিলাই বাবা হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর ৯ বছরের সন্তান এখনই ফোনের মালিক হচ্ছে না।
সূত্র: এবিসি নিউজ