বাওবাবগাছের সঙ্গে কেন দৈত্যের তুলনা দেওয়া হয়
মনে করো, তুমি কোনো মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ। হঠাৎ একটি গাছ তোমার দিকে তেড়ে এল। কী মনে হবে? রূপকথার কোনো দৈত্য? ভয় পাবে না? কী করবে, ঠিক বুঝে উঠতে পারবে না নিশ্চয়ই।
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তোমার দিকে তেড়ে আসার মতো কোনো গাছ না থাকলেও, দৈত্যের মতো দেখতে বিস্ময়কর এক গাছ কিন্তু আছে। প্রথম দেখায় গাছটিকে তোমার সত্যিই দানব বলে মনে হতে পারে।
দানবাকৃতির এই গাছের নাম বাওবাব। আফ্রিকার শুষ্ক অঞ্চলে, বিশেষ করে মাদাগাস্কারে বাওবাবগাছ বেশি দেখা যায়। ধারণা করা হয় যে বাওবাবগাছের বয়স আনুমানিক কয়েক হাজার বছর। এই গাছকে ঘিরে আছে নানা মিথ আর লোকগাঁথা। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটা। মাদাগাস্কারে বাওবাবগাছের ছয়টি প্রজাতি আছে। সেখানকার মানুষেরা গাছগুলোকে ডাকে টি পট বাওবাব। এই গাছের আছে নানা আঞ্চলিক নাম। যেমন বব, বোবোয়া, বোতল গাছ, উল্টানো গাছ ইত্যাদি। আরবিতে আবার এই গাছ বু-হিবাব নামে পরিচিত, যার অর্থ বীজযুক্ত গাছ।
বাওবাবকে বিস্ময়কর বা দৈত্যাকার গাছ বলা হয় মূলত এর আকৃতি ও উচ্চতার কারণে। এর উচ্চতা প্রায় ৭৫ ফুট পর্যন্ত হয়। আর দূর থেকে দেখলে হঠাৎ মনে হবে, গাছটিকে যেন উপড়ে পুঁতে রাখা হয়েছে। এমনটা মনে হওয়ার কারণ, এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা ছাতার মতো।
বছরে ৯ মাসের বেশি সময় ধরে এই গাছে কোনো পাতা থাকে না। তখন গাছগুলো দেখলে মৃত মনে হয়।
বাওবাবগাছের বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এই গাছ কাণ্ডে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার লিটার পানি ধরে রাখতে পারে। এ কারণে এই গাছকে জীবন দানকারী গাছ বলা হয়ে থাকে। তুমি তো জানো, জীবন মানে পানি।
বাওবাবগাছে ফুল ও ফল হয়। লাল, সাদা, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের ফুলে ভরে ওঠে বাওবাবগাছ। এই গাছের ফল খায় স্থানীয় মানুষ। পাতা থেকে তৈরি হয় চাটনি। এর ফল থেকে পানীয় তৈরি করা হয়। পাতা দিয়ে তৈরি হয় ওষুধ।
এই গাছের গুড়ি এত বড় হয়, যেখানে মানুষ অনায়াস বসবাস করতে পারে। মরুভূমির ঝড়ে এই গাছের গুড়িতে মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। থাকে। এই গাছের গুণের বুঝি শেষ নেই। এর বাকল দিয়ে বানানো হয় পোশাক ও শক্ত দড়ি।
এখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গাছগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের বেশ প্রভাব পড়ছে। ২০০৫ সাল থেকে প্রাচীনতম যেসব গাছ ছিল, তার ৯টি এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই গাছ হারিয়ে গেলে ধ্বংস হয়ে যাবে প্রাকৃতিক এই বিস্ময়।