ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চোখে ভবিষ্যতের সেরা ১০ দক্ষতা

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে হবেছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীটাকে একটা বিশাল ভিডিও গেমের মতো ভাবলে কেমন হয়? ভাবো, এই গেমটা প্রতিদিন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত আসছে নতুন নতুন লেভেল। সেসব লেভেল জিততে হলে তোমার কিছু স্পেশাল পাওয়ার বা দক্ষতা লাগবে। পৃথিবীতে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে হলেও লাগবে সেরকম কিছু দক্ষতা। কি সেই দক্ষতা? ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে ১০টি দক্ষতার কথা, যেগুলো তোমাকে সবার থেকে এগিয়ে রাখবে। চলো, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

১. গভীরভাবে ভাবার শক্তি

ভাবো, তুমি শার্লক হোমসের মতো একজন গোয়েন্দা। তোমার কাজ হলো অনেক তথ্যের ভেতর থেকে আসল রহস্য খুঁজে বের করা। চারপাশের সবকিছুকে খুব ভালোভাবে দেখা, বিশ্লেষণ করা এবং সেখান থেকে নতুন কিছু তৈরি করা। এই দক্ষতা তোমাকে আবিষ্কারের পথে এগিয়ে দেবে। গণিতের কঠিন অঙ্ক সমাধান করাও এরই উদাহরণ। তুমি যখন গণিতের একটা কঠিন অঙ্ক সমাধান করো, তখন নিজের অজান্তে হলেও অঙ্কের তথ্যগুলো দেখে, নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বের করে নতুনভাবে সমাধান করছ। এটাই হলো ভবিষ্যতের সবচেয়ে দরকারী দক্ষতা।

আরও পড়ুন

২. শেখার আগ্রহ

আজ যে মোবাইল সবচেয়ে আধুনিক, কাল সেটা পুরোনো হয়ে যাবে। পৃথিবীটাও এভাবে বদলে যাচ্ছে। তাই সবসময় নতুন কিছু শেখার জন্য প্রস্তুত থাকা জরুরি। ঠিক যেমন নতুন গেম খেলার সময় নিয়মগুলো তুমি আনন্দের সঙ্গে শিখে ফেলো। শেখার ইচ্ছা থাকলেই এগিয়ে থাকা যায়। যে শিখতে ভালোবাসে, সেই তো আসল বিজয়ী! একটি ছোট গাছ যেভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়ে ওঠে, সেভাবে জ্ঞানও প্রতিনিয়ত বাড়াতে হবে।

৩. জটিল সমস্যার সমাধান

ধাঁধা ও পাজল মাথা খাটিয়ে সমাধান করতে হবে
ছবি: দ্য নিউ ইয়র্কার

কখনো অনেকগুলো টুকরো মিলিয়ে একটা বড় পাজল মিলিয়েছ? কিংবা একটা কঠিন ধাঁধার উত্তর খুঁজেছ? ভবিষ্যতের সমস্যাগুলোও হবে ওই রকম জটিল পাজলের মতো। যারা মাথা খাটিয়ে, অনেক দিক ভেবে সেসব সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তাদের কদরই হবে সবচেয়ে বেশি। মনে করো, তোমার স্কুলে একসঙ্গে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে ক্লাসরুম ভিজে গেছে, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। এরকম জটিল পরিস্থিতিতে সব সমস্যা একসঙ্গে কীভাবে সমাধান করবে, সেটাই হলো জটিল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা।

আরও পড়ুন

৪. যুক্তি দিয়ে ভাবা

কেউ কিছু বললেই সেটা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস না করে বরং প্রশ্ন করা। কেন এটা হলো? এটা কি আসলেই সত্যি?। কোনো কিছু ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়াই হলো এই দক্ষতা। এটা তোমাকে সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে। তোমরা যখন ফেসবুকে পোস্ট দেখ, তখন এই দক্ষতা কাজে লাগে। পোস্টের তথ্যটা কি সত্যি নাকি আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে? এভাবে চিন্তা করতে পারলেই তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

৫. সৃজনশীলতার শক্তি

তোমার মাথায় কি নতুন নতুন গল্প আসে? তুমি কি আঁকতে বা নতুন কিছু বানাতে ভালোবাসো? এটাই সৃজনশীলতা। নিজের মতো করে একেবারেই নতুন কিছু ভাবা বা তৈরি করা। এর সঙ্গে লাগবে উদ্যোগ। কেউ কিছু বলার আগেই নিজে থেকে কোনো ভালো কাজ শুরু করে দেওয়াটাই হলো উদ্যোগ। এই দুটি গুণ তোমাকে সবার থেকে আলাদা করে তুলবে।

আরও পড়ুন

৬. নেতৃত্বের গুণ

ক্রিকেটে খেলার মাঠে ক্যাপ্টেন কী করে? সে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে খেলে, উৎসাহ দেয়। এটাই নেতৃত্ব। মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া, তাদের কথা শোনা এবং সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে একটা লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাই লিডারশিপ। তোমরা যদি দলগতভাবে কোনো প্রজেক্ট করো, তখন এই দক্ষতা কাজে লাগবে।

৭. প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার

ভালো কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানাটাও একটা বড় দক্ষতা।
ছবি: এআই

মোবাইল, কম্পিউটার এখন আমাদের জীবনের অংশ। শুধু গেম খেলা বা ভিডিও দেখার জন্য নয়, এগুলোকে পড়াশোনা বা অন্য ভালো কাজে ব্যবহার করতে জানাটাও একটা বড় দক্ষতা। প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করছে, সেদিকে খেয়াল রাখাও খুব জরুরি। 

আরও পড়ুন

৮. নতুন প্রযুক্তি বানানো

অন্যের বানানো অ্যাপ বা গেম তো আমরা সবাই ব্যবহার করি। কিন্তু তুমি যদি নিজেই একটা অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা গেম বানাতে পারো, তাহলে কেমন হয়? প্রোগ্রামিং আর টেকনোলজি ডিজাইন শিখলে তুমিও পারবে নতুন প্রযুক্তি তৈরি করতে। হয়তো তুমিই একদিন তৈরি করবে নতুন একটি অ্যাপ বা গেম! সেটা হতে পারে স্কুলের নোট রাখার অ্যাপ।

৯. মানসিক শক্তি

সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে আমরা সবাই পড়ে যাই। কিন্তু পড়ে গিয়ে বসে না থেকে আবার চেষ্টা করি। এটাই হলো ধৈর্য। পরীক্ষার আগে একটু চিন্তা হয়, তাই না? সেই চাপ সামলে ঠান্ডা মাথায় কাজ করাটাও একটা বড় দক্ষতা। আবার কোনো পরিকল্পনা বদলে গেলে ঘাবড়ে না গিয়ে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলাই হলো মানসিক শক্তি। এই দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তুমি যেকোনো বাধা অতিক্রম করতে পারবে। হাল ছেড়ে দেবে না, বরং নতুন পথ খুঁজে নেবে।

আরও পড়ুন

১০. যুক্তি দিয়ে ভাবা ও নতুন ধারণা তৈরি

এই দক্ষতাটি হলো একসঙ্গে কয়েকটি গুণের মিশ্রণ। কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য যুক্তি দিয়ে ধাপে ধাপে ভাবা, আবার সেই সঙ্গে নতুন নতুন ধারণা তৈরি করা। যুক্তি আর কল্পনা মিলিয়েই সেরা সমাধান খুঁজে বের করা যায়। একজন আবিষ্কারক কীভাবে নতুন কিছু আবিষ্কার করেন? যুক্তি দিয়ে চিন্তা করেন, আবার কল্পনা দিয়ে দেখেন স্বপ্ন। এই দুটি মিলে তৈরি হয় অসাধারণ সব আবিষ্কার।

কেন এই দক্ষতাগুলো জরুরি

ভাবছ, এতসব দক্ষতা দিয়ে কী হবে? আসলে এগুলোই তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করবে। তুমি যখন বড় হবে, তখন এমন অনেক কাজ আসবে যা আজ আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এই দক্ষতাগুলো জানা থাকলে তুমি যেকোনো নতুন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবে। ভালো চাকরি পাবে, নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারবে। আর সবাই এমনটা করলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হবে। সেই সুন্দর পৃথিবীর কারিগর হবে তুমি।

কীভাবে এই দক্ষতা অর্জন করবে

এটাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এতসব গুণ কীভাবে অর্জন করবে! এই দক্ষতাগুলো অর্জন করা কিন্তু কঠিন কিছু নয়। তুমি চাইলে এখন থেকেই শুরু করতে পারো। প্রথমত, প্রশ্ন করো। যা কিছু দেখবে, তা নিয়ে বড়দের প্রশ্ন করো, তাঁদের কাছে জানতে চাও। বই পড়ো। গল্পের বই, বিজ্ঞানের বই; যা ভালো লাগে, পড়ো। তারপর দলবেঁধে কাজ করো। বন্ধুদের সঙ্গে মিলে কোনো প্রজেক্ট বা খেলার আয়োজন করো। ওদের সঙ্গে মিলে নতুন কিছু বানাও। তবে ভুল হতে পারে বলে ভয় পেও না। ভুল করাও শেখার একটা অংশ। ভুল থেকেই আমরা সবচেয়ে ভালো শিখতে পারি। এভাবে চালিয়ে যাও, দেখবে তুমিই ভবিষ্যতের সুপারহিরো!

সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও চেঞ্জ কাল্টিভেটরস

আরও পড়ুন