শীতকালে বেশি ঘুম পায় কেন
শীত এলেই অনেকেরই সকালে ঘুম আর ভাঙতে চায় না। বিছানা ছাড়তে কষ্ট হয়। স্কুল বা কাজে যেতে চোখ জড়িয়ে আসে। এটা কি শুধু আলস্য, নাকি এর পেছনে আছে শরীরের ভেতরের কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ? সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শীতে আমাদের শরীর সত্যিই বেশি ঘুম চাইতে পারে।
জার্মানির বিজ্ঞানীরা ঘুম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একটি মজার বিষয় লক্ষ করেছেন। বার্লিনের সেন্ট হেডউইগ হাসপাতালের ক্লিনিক ফর স্লিপ অ্যান্ড ক্রোনোমেডিসিনে করা এই গবেষণায় দেখা যায়, মানুষ যদি অ্যালার্ম ছাড়া ঘুমাতে পারে, তাহলে শীতের অন্ধকার ও ঠান্ডা মাসগুলোতে তারা স্বাভাবিকভাবেই বেশি সময় ঘুমায়। অর্থাৎ, শরীর নিজেই তখন বেশি বিশ্রাম নিতে চায়।
গবেষকদের মতে, এ কারণেই শীতকালে স্কুলের সময়সূচি বা অফিসের কাজের সময় একটু বদলানো হলে উপকার হতে পারে। সামান্য বেশি ঘুম মানুষকে কম ক্লান্ত করে। এতে বেশি মনোযোগ ও সুস্থ থাকা যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, শীতেই কেন বেশি ঘুম দরকার?
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ঘুমের ভেতরের গঠনটা বুঝতে হবে। ঘুমের দুটি প্রধান ধাপ আছে, নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা এনরেম এবং র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা রেম। রেম ঘুম হলো সবচেয়ে গভীর ও আরামদায়ক ঘুমের স্তর। সাধারণত এই সময়েই আমরা স্বপ্ন দেখি, আর মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি বিশ্রাম পায়।
গবেষকেরা বলছেন, শীতকালে আমাদের শরীরে রেম ঘুমের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। আর এই অতিরিক্ত রেম ঘুম পাওয়ার জন্য মোট ঘুমের সময়ও একটু বাড়ানো দরকার হয়। না হলে শরীর প্রয়োজনীয় বিশ্রামটা ঠিকঠাক পায় না।
এ পরিবর্তনের মূল কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের সার্কাডিয়ান রিদমে। যাকে সহজভাবে বলা যায় শরীরের ঘড়ি। এই ঘড়িই ঠিক করে দেয় কখন আমাদের ঘুম আসবে, কখন জেগে উঠব। আলো-আঁধার, দিন-রাতের দৈর্ঘ্য—সবকিছুর সঙ্গে এই ঘড়ির গভীর সম্পর্ক আছে। শীতে দিন ছোট হয়, অন্ধকার বেশি থাকে, আর শরীর সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়।
নতুন এই গবেষণা বলছে, আমাদের শরীর যেমন ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের সময় বদলায়। তেমনি আমাদের জীবনযাপনও একটু বদলানো উচিত। ঘুমের সময়, ঘুমের দৈর্ঘ্য—সবকিছুই শীতের প্রয়োজন অনুযায়ী সামান্য সমন্বয় করলে শরীর উপকার পায়।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ড. ডিটার কুনজ মনে করেন, সমাজেরও এ বিষয়ে ভাবা দরকার। তাঁর মতে, ‘ঘুমের অভ্যাস, সময় ও দৈর্ঘ্য ঋতুভেদে বদলানো উচিত। স্কুল ও কর্মস্থলের সময়সূচিও শীতের ঘুমের চাহিদা অনুযায়ী সামঞ্জস্য করা যেতে পারে।’
মজার ব্যাপার হলো, এই প্রভাব শুধু গ্রাম বা নিরিবিলি এলাকায় নয়, বড় শহরেও দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা আগে ভাবতেন, শহরের উজ্জ্বল স্ট্রিটলাইট, শব্দদূষণ আর কৃত্রিম আলো হয়তো শরীরকে বিভ্রান্ত করে। শীতের অনুভূতিই থাকে না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সেসবের মধ্যেও শরীরের ঘড়ি ঠিকই শীত টের পায়।
যদিও এ গবেষণার বেশির ভাগ তথ্য এসেছে যাঁদের ঘুমের সমস্যা আছে, তাঁদের থেকে। তবু বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। শীতে একটু বেশি ঘুম পেলে মন ভালো থাকে, ক্লান্তি কমে, শেখা ও মনোযোগ দেওয়াও সহজ হয়।
তাই শীতের সকালে তোমার যদি একটু বেশি ঘুম পায়, নিজেকে অলস মনে করবে না। হতে পারে প্রাকৃতিক কারণেই তোমার বেশি ঘুম হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি