আইসক্রিম খেলে কী ক্ষতি

মাঝেমধ্যে আইসক্রিম খাওয়া যেতেই পারেমডেল আফরাহ্‌, ছবি: সুমন ইউসুফ

প্রচণ্ড গরমে শান্তি এনে দিতে পারে এক কাপ ঠান্ডা আইসক্রিম। দোকানের ফ্রিজ খুললেই নানা রঙের, নানা স্বাদের আইসক্রিমের দেখা মেলে। ভ্যানিলা, চকলেট, স্ট্রবেরি, মিক্সড ফ্রুট, কুকিজ অ্যান্ড ক্রিম—কত স্বাদের আইসক্রিম। দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু যখনই তুমি বড়দের সামনে আইসক্রিম খেতে যাবে, অমনি কেউ না কেউ তাতে বাগড়া দেবে। হয়তো বড় কেউ বলে বসবে, আইসক্রিম খাস না, ঠান্ডা লেগে যাবে। ওতে তো চিনি আর ফ্যাট গিজগিজ করছে। এগুলো খেলে হজমে সমস্যা হয়। যাঁরা একটু স্বাস্থ্যসচেতন বা যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা হয়তো বলবেন, আইসক্রিম খেয়ে খেয়ে ডায়াবেটিসটা বাড়িয়ে ফেলবি। ফলে মন চাইলেও এমন স্বাদের খাবারে সব সময় হাতটা দেওয়া যায় না।

কিন্তু আজ তোমাদের একটা দারুণ খবর দিই। একেবারে মন ভালো করা খবর। আইসক্রিম মানেই খারাপ—এ ধারণাটাই পুরোপুরি ঠিক নয়। বরং নিয়ম মেনে আইসক্রিম খেলে কিছু উপকারও পাওয়া যায়। না না, অবিশ্বাস কোরো না। কথাটা কিন্তু আমার নয়, চিকিৎসক আর পুষ্টিবিদেরাই গবেষণা করে তথ্যটা জানিয়েছেন।

জানো তো, আমাদের শরীরের হাড় ও দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম খুব দরকারি। প্রতিদিন পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম না পেলে হাড় দুর্বল হতে পারে, ভেঙে পড়তে পারে দাঁত। এক কাপ আইসক্রিম খেলে ১৫ শতাংশের বেশি ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। যদিও আইসক্রিমের ব্র্যান্ডভেদে কিছু পার্থক্য থাকে, তবু এটা নেহাত কম নয়।

আরও মজার কথা হলো প্রতিটি সাধারণ আইসক্রিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ঠিক এতটুকু প্রোটিন পাওয়া যায় একটি সেদ্ধ ডিমে। ২৮ গ্রাম কাঠবাদাম খেলেও তুমি এই পরিমাণ প্রোটিন পাবে। প্রোটিন মানেই তো শরীর গঠনের মূল উপাদান। মানে হাড়, পেশি, চুল-নখ সবই তো প্রোটিন দিয়ে তৈরি। বুঝতেই পারছ, প্রোটিন আমাদের জন্য কত দরকারি।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বড়রা অনেক সময় মিষ্টি খেতে চান, কিন্তু খাওয়ার সাহস করে উঠতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাঝেমধ্যে এক কাপ আইসক্রিম খাওয়া ক্ষতিকর নয়। বরং এতে থাকা চর্বি ও প্রোটিন একসঙ্গে চিনিকে একটু ধীরে রক্তে মেশাতে সাহায্য করে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেন বয়স্ক ব্যক্তিরা আইসক্রিম খেতে যাবেন না।

আরেকটা সাবধানী কথা আছে। খোলা বাজারের আইসক্রিমে নানা ধরনের উপাদান থাকে, যেমন ধরো কৃত্রিম রং, ফ্লেভার, স্ট্যাবিলাইজার ইত্যাদি। এগুলো কিন্তু শরীরের জন্য ভালো নয়। এ জন্য অনেকে কিন্তু বাড়িতেই আইসক্রিম বানিয়ে খায়।

তা অবশ্য খারাপ নয়। দুধ, ফল, বাদাম দিয়ে ঘরেই বানানো যায় স্বাস্থ্যকর আইসক্রিম। কিন্তু মুশকিল হলো, যতই পুষ্টিকর হোক না কেন, অনেক সময় স্বাদ ঠিক জমে না। বাজারের আইসক্রিমের মতো স্বাদ হয় না ঘরের আইসক্রিমে। তাই বাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আইসক্রিম একটু চেখে দেখতেই পারো।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব খাবার পেটের জন্য নয়। কিছু খাবার মন খুশি করার জন্যও দরকার। তাই সব দিক ভেবে, সপ্তাহে এক দিন আইসক্রিম খাওয়াতে দোষ নেই। ধরো, শুক্রবার। ছুটির দিন। সবাই মিলে টিভি দেখলে, গল্প করে আইসক্রিম খেলে—এই মুহূর্তটাই তো অসাধারণ।

তবে মনে রেখো, ‘মাঝেমধ্যে’ যেন ‘প্রতিদিন’ না হয়ে যায়। মানে মাঝেমধ্যে আইসক্রিম খাওয়ার কথা বলেছি বলে এই লেখা মা–বাবাকে দেখিয়ে প্রতিদিন আইসক্রিম খেয়ো না যেন। কারণ, অতিরিক্ত চিনি আর চর্বি কিন্তু শরীরের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর।

তোমাদের আরেকটা ভুল ধারণা ভেঙে দিই। অনেকে গরমের দিনে আইসক্রিম খায় শরীর ঠান্ডা করার জন্য। আইসক্রিম খেলে প্রথমে ঠান্ডা লাগে সত্যি, কিন্তু এর কারণ ভিন্ন। আসলে আমাদের মুখের ভেতরের কিছু বিশেষ জায়গা এই ঠান্ডা বুঝতে পারে। ঠান্ডা কোনো কিছু আমাদের মুখে গেলে সেই জায়গাগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায় যে কিছু ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তাই শুরুতে ঠান্ডা লাগে। কিন্তু আইসক্রিমের মধ্যে অনেক ফ্যাট (চর্বি) আর চিনি থাকে। যখন আমাদের শরীর এই ফ্যাট হজম করতে শুরু করে, তখন অনেকটা তাপ তৈরি হয়। অন্য খাবারের তুলনায় ফ্যাট হজম করলে শরীর বেশি গরম হয়। তাই প্রথমে আইসক্রিম ঠান্ডা লাগলেও, যখন এটা হজম হতে শুরু করে, তখন শরীর গরম হতে থাকে। গরমের দিনে আইসক্রিম খেলে বাইরের গরম আর ভেতরের তৈরি হওয়া গরম মিলে আরও বেশি গরম লাগে। তাই গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা করার জন্য আইসক্রিম না খাওয়াই ভালো। বরং যখন শরীর ঠান্ডা থাকে বা আরামে থাকো, তখন আইসক্রিম খাওয়া ভালো।

সূত্র: ইয়াহু ডটকম ও টাইমস নাউ ডটকম

আরও পড়ুন