ব্রিটেনের সমুদ্রে হঠাৎ এত অক্টোপাস কেন

অক্টোপাস

সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ব্রিটেনের উপকূলে ভেসে আসছে বিপুল পরিমাণ অক্টোপাস। শুনতে খানিকটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে এই সমুদ্রে সত্যিই অক্টোপাসের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।

আট পাওয়ালা বিস্ময়কর প্রাণী অক্টোপাস। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ডেভন আর কর্নওয়ালের উপকূলে ডুবুরিদের ক্যামেরায় প্রচুর ধরা পড়ছে এরা। দেখা যাচ্ছে, সবুজ-নীল গভীর পানিতে একের পর এক অক্টোপাস ছুটে চলছে। রং বদলাচ্ছে, কখনো শৈবালের মতো নিজেকে লুকিয়ে ফেলছে। এই ব্যতিক্রমী ঘটনাকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের বন্য প্রাণী সংস্থা দ্য ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টস ২০২৫ সালকে ঘোষণা করেছে ‘ইয়ার অব দ্য ব্লুমিং অক্টোপাস’।

সংস্থাটির বার্ষিক সামুদ্রিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, চলতি গ্রীষ্মে ব্রিটিশ জলসীমায় অক্টোপাসের সংখ্যা ১৯৫০ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ‘ব্লুম’ নামে পরিচিত। যখন কোনো একটি প্রজাতির সংখ্যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন তাকে বলে ব্লুম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনে বড় কারণ উষ্ণ শীতকাল। এর পেছনে আছে জলবায়ু পরিবর্তন।

শুধু স্বেচ্ছাসেবকেরা এটি দেখেছেন এমন না, সরকারি পরিসংখ্যানও একই তথ্য দিচ্ছে। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে যুক্তরাজ্যের জলসীমা থেকে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১ হাজার ২০০ টনের বেশি অক্টোপাস, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। ২০২১ সালের পর থেকে মাত্র একবারই ২০০ টনের বেশি অক্টোপাস ধরা পড়েছিল। অথচ এবার সেই সংখ্যাই কয়েক গুণ ছাড়িয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

সবচেয়ে বেশি অক্টোপাস দেখা গেছে ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলজুড়ে, বিশেষ করে ডেভন ও কর্নওয়াল এলাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের বেশির ভাগ অক্টোপাস ভালগারিস প্রজাতির। এদের সাধারণত ভূমধ্যসাগরের উষ্ণ পানিতে বেশি দেখা যায়। কর্নওয়াল ও ডেভনের এক উপকূলীয় অংশে ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টসের স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের তুলনায় সেখানে অক্টোপাস দেখার ঘটনা বেড়েছে ১ হাজার ৫০০ শতাংশেরও বেশি।

এটি যতটা বিস্ময় আর আনন্দের, ততটাই অনিশ্চয়তার। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, এই বৃদ্ধি স্থায়ী হবে, নাকি এটি একটি সাময়িক চক্রের অংশ। যদি এটি সাময়িক চক্র হয়, তবে আগামী বছরগুলোতে অক্টোপাসের সংখ্যা আবার স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসতে পারে।

তবু এর প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে। অক্টোপাসের প্রধান খাদ্য লবস্টার, কাঁকড়া আর স্ক্যালপের মতো শামুক-ঝিনুকজাতীয় প্রাণী। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টস সতর্ক করে বলছে, যদি অক্টোপাসের সংখ্যা দীর্ঘ মেয়াদে বেশি থাকে, তাহলে মাছ ধরা আর মানুষের খাদ্যাভ্যাস, দুটোই বদলাতে হতে পারে।

আরও পড়ুন

সরকারি তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এখানে কাঁকড়া কমেছে। তবে লবস্টার, ক্রফিশ আর স্ক্যালপের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল।

অক্টোপাসের বেড়ে যাওয়ার খবরের পাশাপাশি ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আরও কিছু খবর। যেমন ওয়েলসের পেমব্রোকশায়ারের স্কোমার দ্বীপে এ বছর রেকর্ড ৪৬ হাজার পাফিন পাখি গণনা করা হয়েছে। আবার আইল অব মাক দ্বীপে সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে আক্রমণাত্মক বাদামি ইঁদুর সরিয়ে দেওয়ার পর সেখানেও কালো-সাদা এই আকর্ষণীয় পাখি ফিরে এসেছে।

কিন্তু বছরের শুরু আর শেষে এই সমুদ্রে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। গত মার্চে উত্তর সাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ ও একটি কনটেইনার জাহাজের সংঘর্ষে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক রেজিনের দানা ছড়িয়ে পড়েছিল। আর নভেম্বর মাসে সাসেক্সের একটি পানি শোধনাগার থেকে প্রায় সাড়ে চার টন বায়ো-বিডস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল ব্রিটেনের সমুদ্রের জন্য এক অদ্ভুত বছর।

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন