মাছ পানির নিচে শ্বাস নিতে পারে, মানুষ কেন পারে না

মাছ পানির নিচে শ্বাস নিতে পারলেও মানুষ পারে নাছবি এআই দিয়ে তৈরি

ছোটবেলায় অনেকেই হয়তো মনে মনে চেয়েছি, যদি মাছের মতো পানির নিচে সাঁতার কাটতে পারতাম! তাহলে সাগরের গভীরের জগৎ কেমন, তা নিজের চোখেই দেখতে পেতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের শরীরের গঠন এমন না যে আমরা মাছের মতো পানির নিচে নিশ্বাস নেব। তবে আমরা আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে ডুবোজাহাজ বা সিলিন্ডার দিয়ে পানির নিচে ঠিকই যেতে পারি। তবে মাছের মতো সেখানে থাকতে পারি না। চলো জানি, মাছ কেন পানির নিচে শ্বাস নিতে পারে, আমরা কেন পারি না।

পৃথিবীর সব প্রাণীরই বেঁচে থাকার জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রয়োজন হয়। আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং কার্বন ডাই–অক্সাইড ত্যাগ করি। এই অক্সিজেন আমাদের শরীরে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। কোষের ক্ষুদ্র মাইটোকন্ড্রিয়া বা কোষের পাওয়ার হাউসে এই অক্সিজেন ব্যবহার হয়। এ প্রক্রিয়া আছে বলেই আমাদের দেহের সব কার্যক্রম সচল থাকে। যদিও সব প্রাণীর শ্বাস নেওয়ার মূল প্রক্রিয়াটা একই। কিন্তু প্রাণীভেদে অক্সিজেন গ্রহণের পদ্ধতি আলাদা হতে পারে।

আরও পড়ুন
এই লড়াকু মাছের বিশেষ অঙ্গ থাকে বায়ু থেকে শ্বাস নেওয়ার জন্য
ছবি: গেটি ইমেজেস

মানুষের মতো মাছেরও বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আমরা আমাদের ফুসফুসের মাধ্যমে বাতাস থেকে খুব সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করি। মাছ ফুলকা নামের অঙ্গের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়। ফুলকাগুলো মাছের মাথার পাশে থাকে। কিন্তু মাছের জন্য কাজটি কঠিন। কারণ, এদের পানির মধ্য থেকে অক্সিজেন নিতে হয়। বাতাসের তুলনায় পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কম। এ জন্য মাছেরা বারবার মুখ খোলে ও বন্ধ করে পানি মুখের ভেতরে নেয়। আর সেই পানির ভেতর থাকা অল্প অক্সিজেন ফুলকা দিয়ে গ্রহণ করে। অনেকটা ফিল্টার করে নেওয়ার মতো।

মাছ মুখ দিয়ে যে পানি গ্রহণ করে, সেই পানি গলার দুই পাশে থাকা ফুলকা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ফুলকায় পালকের মতো দেখতে অসংখ্য সূক্ষ্ম অংশ থাকে। অনেকটা জালের মতো কাজ করে ফুলকা। এই সূক্ষ্ম তন্তুগুলোর পৃষ্ঠে এত পরিমাণে রক্তনালি থাকে, যা মানুষের ফুসফুসের চেয়ে বেশি। এই অসংখ্য রক্তনালিই পানির মধ্যে থাকা সামান্য পরিমাণে থাকা অক্সিজেনও শুষে নিতে পারে। একই সঙ্গে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মাছের শরীর থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্য কার্বন ডাই–অক্সাইড পুনরায় পানিতে চলে যায়। মাছ ফুলকা দিয়েই কার্বন ডাই–অক্সাইড ছেড়ে দেয়। অনেকটা আমাদের শরীরের বাতাস ফিল্টার করার মতো। মাছের এই ফিল্টার ব্যবস্থা শুধু পানিতে কাজ করে।

আরও পড়ুন

আমরা পানির নিচে শ্বাস নিতে পারি না। কারণ, আমাদের ফুসফুস শুধু বাতাস থেকে অক্সিজেন নেওয়ার জন্য তৈরি। আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির তথ্য অনুসারে, ফুলকা অনেকটা একটি সূক্ষ্ম ছাঁকনির মতো কাজ করে, যা পানির মধ্য থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ অক্সিজেন বের করে নিতে পারে। এভাবে মাছ দিব্যি বেঁচে থাকে।

মানুষের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় মাছেরা বেঁচে থাকার জন্য অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে। তাই এদের অক্সিজেনেরও কম প্রয়োজন হয়। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মাছের হতে পারে মারাত্মক পরিণতি। ঠিক বাতাসে অক্সিজেন কম থাকলে আমাদের জন্য যেমন হতে পারে। সাগরে কিছু অংশ আছে, যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম। মাছ সেখানে বাঁচতে পারে না। এই স্থানগুলোকে অ্যানোক্সিক বা হাইপোক্সিক অঞ্চল বলা হয়, যা সাধারণত ‘মৃত অঞ্চল’ নামেই বেশি পরিচিত।

আরও পড়ুন

যদি পানির নিচে শ্বাস নেওয়া এত কঠিন হয়, তাহলে মাছ কেন আমাদের মতো বাতাস থেকে শ্বাস নেয় না? মূলত ফুলকার গঠন ঠিক রাখার জন্য পানি লাগে। ফুলকার পাতলা টিস্যুগুলোকে ভেঙে পরা থেকে বাঁচাতে পানির ওপর মাছ নির্ভরশীল। মানুষ যেমন পানির নিচে ডুবে যায় অক্সিজেনের অভাবে। মাছও একইভাবে বাতাসে এলে ফুলকাগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যদি এদের ফুলকাগুলো খুব বেশি সময় ধরে বাতাসের সংস্পর্শে থাকে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মাছের দম বন্ধ হয়ে যায়। এককথায়, মাছেরা পানির নিচের জীবনের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। ঠিক যেমন আমরা স্থলের জন্য।

তবে কিছু মাছ আছে, যারা পানির ওপরে এসে শ্বাস নেয়। এই বিশেষ মাছগুলোকে ল্যাবিরিন্থ মাছ বলা হয়। এদের মধ্যে সিয়ামিজ ফাইটিং ফিশ অন্যতম। এদের শরীরে একটি বিশেষ ফুসফুসের মতো অঙ্গ আছে, যা এদের সরাসরি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে। সাধারণত এই মাছগুলো এমন পরিবেশে বাস করে, যেখানে পানির ভেতরে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই বেঁচে থাকার জন্য এরা এমন ক্ষমতা অর্জন করেছে। যখন পানির ভেতরের অক্সিজেন কমে যায়, তখন এরা পানি বা মাটির ওপরে এসে এই বিশেষ অঙ্গের সাহায্যে সহজেই বাতাস থেকে শ্বাস নিতে পারে। এ ক্ষমতার কারণে এরা পানির বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, ওশান কনজারভেন্সি

আরও পড়ুন