অদ্রির অভিযান (পঞ্চম পর্ব)

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

অদ্রি মেসেঞ্জারে অদ্রিককে ১০ জায়গার নাম পাঠিয়েছে। এ জায়গাগুলোতেই স্পেসশিপ নেমেছে।

১. বাংলাদেশের বান্দরবানের বগা লেক

২. ভারতের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ

৩. ইতালির পোভেগ্লিয়া দ্বীপ

৪. যুক্তরাজ্যের নটিংহামের উলাটন পার্ক

৫. নরওয়ের স্পিটসবার্গেন দ্বীপ

৬. যুক্তরাষ্ট্রের এরিয়া ফিফটি ওয়ান

৭. ব্রাজিলের স্নেক আইল্যান্ড

৮. রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ

৯. অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ

১০. জাপানের ফুকুশিমার ওকুমা শহর

ভৌগোলিক স্থান এবং ইতিহাস বিষয়ে তালুতের জ্ঞান বেশি বলে তার কাছে বিজ্ঞানমনস্ক অদ্রিকের নানা প্রশ্ন। অদ্রিক তালুতকে জিজ্ঞেস করল, ব্রাজিলের স্নেক আইল্যান্ডের নাম এমন কেন?

তালুত উত্তর দিল, কারণ, এই দ্বীপে প্রতি বর্গমিটারে পাঁচটা করে সাপ আছে! এ কারণে দ্বীপটাতে কোনো মানুষ পা রাখার সাহস পায় না।

অদ্রিক বিস্মিত হয়ে বলল, প্রতি বর্গমিটারে পাঁচটা করে সাপ!

তালুত জবাবে বলল, ‘অনলাইনে একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম। সংখ্যাটা কমবেশি হতে পারে; কিন্তু দ্বীপটা সাপের রাজ্য!’

‘হুম।’

তালুত পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘রাশিয়ার কোন জায়গার কথা যেন বললি?’

অদ্রিক জানাল, রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ। রহস্যময় বরফঢাকা এই উপত্যকা অঞ্চলে কোনো প্রাণী ঢুকলে মৃত্যু নিশ্চিত। তবে কীভাবে প্রাণীগুলোর মৃত্যু হয়, সেই রহস্য উন্মোচিত হয়নি।

‘তুই এসব জানলি কীভাবে?’

অদ্রিক জবাবে বলল, ‘ওই অঞ্চলে প্রাণীদের রহস্যময় মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম। গত বছর ভেবেছিলাম, এ নিয়ে বার্ষিকীতে একটা লেখা দেব। কিন্তু পরে লেখার মতো তেমন কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারিনি।’ 

তালুত বলল, ‘ও আচ্ছা। আমি স্কুল বার্ষিকীতে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। তাই এটা সম্পর্কে আমার জানা আছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবালপ্রাচীর। মহাশূন্য থেকে পৃথিবী গ্রহের যে কটি বস্তু দেখা যায়, তার মধ্যে এই প্রবালপ্রাচীর অন্যতম।’

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ সম্পর্কে অদ্রিকের জানা থাকলেও তালুতের মুখে কথাগুলো শুনে সে খুশি হলো। তালুত আরও বলল, ‘জাপানের ফুকুশিমার নামও শুনেছি। ভূমিকম্প আর সুনামির ফলে সেখানে বিরাট পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটেছিল। কিন্তু ভারতের যে দ্বীপটির নাম দেখলাম, সেটার নাম আগে শুনিনি।’

অদ্রিক জানাল, ‘বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কথা নিশ্চয়ই শুনেছিস।’

‘হ্যাঁ, শুনেছি।’

সেখানকার একটা দ্বীপ হলো উত্তর সেন্টিনেল। ওই দ্বীপে সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগবিহীন এক উপজাতি বাস করে। আধুনিক পৃথিবীর মানুষ সেখানে যেতে চাইলে, তারা অত্যন্ত হিংস্রতার সঙ্গে তা দমন করে। ফলে দ্বীপটা পৃথিবীতে থাকলেও বিজ্ঞানের ছোঁয়া পায়নি; সেটাকে পৃথিবীবিচ্ছিন্ন বলা যেতে পারে।

তালুত মাথা নেড়ে বলল, এসব তথ্য জানা ছিল না।

অদ্রিক বলল, ‘উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ সম্পর্কে জেনেছি খুব বেশি দিন হয়নি। কিন্তু ইতালির দ্বীপটা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।’

এবারে তালুত বলল, ‘এ ব্যাপারে অবশ্য আমি বলতে পারব। ইতালির পোভেগ্লিয়া দ্বীপকে বলা হয় অভিশপ্ত দ্বীপ। ওই দ্বীপের রাস্তাঘাটে, বনজঙ্গলে এখনো পড়ে রয়েছে মহামারিতে মারা যাওয়া মানুষের হাড়গোড়। প্রায় আট শ বছর আগে ওখানে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল প্লেগ। দ্বীপটার ৫০ শতাংশ মাটিতে আছে মানুষের দেহাবশেষ।’

অদ্রিকের মুখ হাঁ হয়ে গেল। বলল, ‘পৃথিবীতে এমন জায়গা আছে; এটাই তো জানা ছিল না।’

‘পোভেগ্লিয়া দ্বীপ সম্পর্কে তোর জানার কথাও না; তবে লিস্টের আরেকটি স্থান আমেরিকার এরিয়া ফিফটি ওয়ান সম্পর্কে নিশ্চয়ই জানিস।’

অদ্রিক হেসে বলল, ‘তা জানি বৈকি। মূলত ওটা এয়ার ফোর্সের ঘাঁটি। তাই সংরক্ষিত এলাকা। এলাকাটি নিয়ে নানা গুজবও আছে। ওই সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে নাকি এলিয়েন আর স্পেসশিপ আছে!’

এবার তালুত হেসে বলল, ‘এখন কিন্তু এটাকে আর গুজব বলা যাচ্ছে না। একসময় মানুষ ভেবেছে, এলিয়েন নেই, স্পেসশিপ নেই; আজকে তো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি!’

‘হুম।’ বলে অদ্রিক কিছুটা অন্য মনস্ক হয়ে পড়ল। তালুতকেও চিন্তিত মনে হলো।

অদ্রিক বলল, ‘আমি যা ভাবছি, তুইও কি তাই ভাবছিস?’

তালুত বলল, ‘হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি!’

নিজেদের সম্মিলিত জ্ঞানভান্ডারের মাধ্যমে অদ্রিক ও তালুত অনেক কিছুই অনুভব করতে পারল। ১০টি স্থানের মধ্যে ৫টি পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। লিস্টের মধ্যে যে শুধু নিষিদ্ধ স্থান আছে, তা নয়; আছে দুর্গম স্থান, গোপন স্থান, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর স্থান, বিপজ্জনক স্থান। আবার মানুষের আবাসযোগ্য বা যাতায়াতযোগ্য স্থানও আছে। যেমন বান্দরবানের বগা লেক কিংবা যুক্তরাজ্যের নটিংহামের উলাটন পার্ক। তবে সব মিলিয়ে অদ্রিক ও তালুত বুঝতে পারছে, এসব স্থান এলিয়েনদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সুবিধাজনক স্থান এবং ১০টি স্থান পৃথিবীর এমন ১০ ভৌগোলিক অবস্থানে ছড়িয়ে আছে যে সেগুলো থেকে পৃথিবীজুড়ে আক্রমণ চালানো সম্ভব!

দুই বন্ধু সহজেই আঁচ করতে পারছে, এই বস্তু বা স্পেসশিপগুলো আসার পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য আছে। যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে এলিয়েন! দুজনের মন ভীষণভাবে বিষণ্ন হয়ে উঠল। এমন সময় দেখতে পেল, কয়েকটি হেলিকপ্টার বগা লেকের আকাশে চক্কর দিচ্ছে। হেলিকপ্টারগুলো থেকে নেমে এলেন বিপুলসংখ্যক ছত্রীসেনা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা নেমেই বিভিন্ন স্থানে পজিশন নিলেন। পাহাড়ি এলাকাবাসী বিভিন্ন রকম হাতিয়ার নিয়ে লেকের ধারে বসে আছেন। তারা হয়তো ঘুমাবেন না। কিন্তু অদ্রিক ও তালুতের ঘুমের প্রয়োজন। কারণ, সকালে অদ্রি এলে একসঙ্গে অভিযানে নামতে হবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে দুজন ভাড়া ঘরের দিকে হাঁটা ধরল।

অদ্রি হেলিকপ্টারযোগে বগা লেকে পৌঁছাল পরদিন দুপুরে। তার আগে ঢাকায় হোটেলের লবিতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সে কথা বলেছে। মানুষকে সহযোগিতা করতে অদ্রি উদগ্রীব; কিন্তু সে জন্য পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে যেতে রাজি হয়নি। স্পেসশিপ নেমেছে যে ১০টি স্থানে, সেগুলোর মধ্যে বগা লেকে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেছে অদ্রি। এতে অধিকাংশ বিদেশি প্রতিনিধি মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন; শুধু দুজন বিস্ময় বালিকার সফরের সঙ্গী হতে চেয়েছেন। তারপরই গোয়েন্দা মেহেরাজ তার টিমের তিনজন, বিদেশের দুই প্রতিনিধি, অদ্রি ও মিলিকে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে বগা লেকে পৌঁছেছেন।

পৃথিবীতে আসা স্পেসশিপগুলো থেকে এখন পর্যন্ত কোনো এলিয়েন বেরিয়ে আসেনি; তবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটছে নানা দুর্যোগ এবং প্রাণঘাতী ঘটনা! মহাকাশযানগুলো থেকে কোনো ভিনগ্রহী বেরিয়ে না এলেও মানুষের বুঝতে বাকি নেই, সেগুলোর ভেতরে বসে ভিনগ্রহীরাই ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। পৃথিবী থেকে জীবজগৎ বিলুপ্ত করে নিজেদের বসতি গড়ে তোলাই তাদের উদ্দেশ্য।

এলিয়েনদের বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করার জন্য রাশিয়া ইতিমধ্যে কামচাটকা উপদ্বীপের স্পেসশিপটি লক্ষ করে কয়েক শ মিসাইল, পরিশেষে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছে। পৃথিবীবাসী টেলিভিশনে লাইভ দেখতে পেলেন, ভূমি থেকে তিন ফুট উঁচুতে শূন্যে ঝুলে থাকা স্পেসশিপের ওপর বোমাবর্ষণের সেই দৃশ্য। পারমাণবিক বিস্ফোরণে পৃথিবীর পরিবেশেরই শুধু ক্ষতি হয়েছে; আগুন ও ধোঁয়া মিলিয়ে যাওয়ার পর দেখা গেছে এলিয়েনদের স্পেসশিপ একই রকম ঝকঝকে আছে! এত আক্রমণ, এত বিস্ফোরণ বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারেনি। 

পৃথিবীজুড়ে এলিয়েনদের ঘটানো জীবনসংঘাতী ঘটনাগুলো ভয়াবহ। আমাজন বনাঞ্চলসহ অনেকগুলো বনে দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত আগুনের ফলে শুধু গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে না; অনেক প্রাণী প্রাণ হারাচ্ছে। অন্যদিকে ভূমিকম্পের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে শতাধিক শহর। মারা গেছে অসংখ্য মানুষ। সমুদ্রে সৃষ্ট ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে অনেক জনপদ।

কিছু ঘটনা শুধু ভয়াবহ না; বিচিত্র ও অদ্ভুত! তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি শহরে। সেখানে টে নদীর তীরে একটি বাড়ির দোতলায় থাকেন গবেষক ম্যাক্স। তিনি প্রতিদিনই বাসার জানালার সামনে বসে বিকেলের নাশতা সারেন আর বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখেন। অদূরে টে নদীর ওপারে পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে হাজারো মানুষের বসতবাড়ি। এ ছাড়া তার বাসার সামনেই মূল সড়ক, সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ ঘরবাড়ি। প্রতিটি বাড়ির মাথায় বসে থাকে সাদা সি-গাল পাখি। বিকেলবেলায় সড়কটি ধরে অসংখ্য মানুষ অফিস থেকে বাড়ি ফেরেন। ম্যাক্স মানুষের চলাফেরা, সি-গালের ওড়াউড়ি, বাস-গাড়ির চলাচল অবলোকন করেন। স্থানীয় সময় বিকেলে তার চোখের সামনে ঘটল ভয়ংকর একটি ঘটনা!

নাশতা করতে করতে ম্যাক্সের মনে হলো, পরিবেশের মধ্যে নিঃশব্দে যেন কোনো আলোড়ন চলছে। আকস্মিকভাবে আশপাশের বাড়িঘরের ওপর বসে থাকা হাজার-হাজার সি-গাল পাখি ভয়াবহ হিংস্র হয়ে উঠল! হিংস্র সি-গাল রাস্তাঘাটে চলাচল করা গাড়ি, বাস, মানুষের ওপর দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সি-গাল পাখিগুলো তাদের লম্বা সরু ঠোঁট মানুষের মাথায়, চোখে, পেটে ছুরির মতো ঢুকিয়ে দিতে থাকল! কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল, রাস্তায় অসংখ্য মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় মরে পড়ে আছেন।

পাখিগুলোর উন্মত্ততা ক্রমেই বাড়তে থাকল। বিভিন্ন বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে তারা ঢুকতে শুরু করল। পরক্ষণেই ভেসে আসতে থাকল বাসায় থাকা মানুষদের চিৎকার ও আর্তনাদ। এসব দৃশ্য দেখে ম্যাক্সের হাত-পা অসাড় হয়ে পড়ল। তিনি পালাতে উদ্যত হওয়ার আগেই তার জানালার কাচ ভেঙে ঢুকে পড়ল একঝাঁক হিংস্র সি-গাল পাখি। কিছুক্ষণ পর ম্যাক্সের লাশ পড়ে রইল তার প্রিয় কক্ষে। ম্যাক্সের ঘরে কয়েকটি ফুলের গাছ এবং বনসাই উদ্ভিদ থাকার কারণে ট্রি-নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবরটি প্রথম জানতে পেরেছে অদ্রি।

ইতালির বোলজানো শহরের ঘটনা আরও ভয়াবহ। আল্পস পর্বতের আদরে-সোহাগে বহুকাল আগে গড়ে উঠেছে বেহেশতের মতো অপরূপ এই শহর! শহরটির পার্কে দেখা যায় পাহাড়ি ঝরনার নহর, বাগানে দেখা যায় থোকায় থোকায় ধরে আছে আঙুর আর আপেল। মানুষগুলো ভীষণ ভালো মনের। বছরের শুধু শীতকালগুলোতে তারা তুষারপাতের মতো কঠিন বাস্তবতা দেখেছেন; কিন্তু গতরাতে হঠাৎ যা ঘটল, তা কোনোকালেই দেখেননি বা শোনেননি। স্থানীয় সময় মাঝরাতে আকস্মিকভাবে শুরু হলো মুহুর্মুহু বজ্রপাত। বজ্রপাতের আতঙ্কে সবাই দালানের মধ্যে লুকিয়ে থাকলেন। কিন্তু তাতেও অনেকে রক্ষা পেলেন না। কয়েক হাজার দালানের ছাদ গুঁড়িয়ে দিল বীভৎস বজ্রপাত! ভবনগুলো দেখে মনে হতে পারে, বোমাবর্ষণ করে গেছে শত শত বোমারু বিমান। শুধু দালান নয়; বিধ্বস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পাহাড়, বিপর্যস্ত হয়েছে যাতায়াতব্যবস্থা। ঘরে ঘরে মৃত মানুষ, আহত মানুষের আহাজারি। পুরো শহরটি পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘটেছে ভয়ংকর বিপর্যয়। ওদিকটায় ৭০ শতাংশ অঞ্চল খরাক্রান্ত থাকে। কিন্তু স্থানীয় সময় বিকেলে সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়াসহ নেভাদা, অ্যারিজোনা ও আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে আকস্মিকভাবে আঘাত হেনেছে শ–খানেক হারিকেন! হারিকেনের তাণ্ডবে গুঁড়িয়ে গেছে ঘরবাড়ি, দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে গাড়িসহ অন্যান্য সম্পদ, ভেঙে পড়েছে নানা স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ভেসে আছে হাজার হাজার মানুষের লাশ।

আরেকটি ভয়াবহ খবর! প্রায় এক মিলিয়ন বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে জন্ম হয়েছিল যে হাওয়াই দ্বীপের, তা জনমানব ও সম্পদসহ ডুবে গেছে প্রশান্ত মহাসাগরে! অঙ্গরাজ্যগুলোর আবহাওয়া অফিসের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসব তাণ্ডবের কোনো পূর্বাভাস ছিল না। হঠাৎ করেই উদ্ভূত হয়েছে অসংখ্য হারিকেন। এটিকে তারা এলিয়েনদের ধ্বংসযজ্ঞ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের অভিমত, কৃত্রিমভাবে বায়ুর উপাদানসমূহের চাপ, তাপমাত্রা, ঘনত্ব এবং প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে কোনো দূর–নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির মাধ্যমে। এরিয়া ফিফটি ওয়ানে অবতরণ করা স্পেসশিপে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আক্রমণ চালায়নি। রাশিয়া স্পেসশিপে আক্রমণের পর তার ফলাফল দেখে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা আপাতত তাদের আক্রমণের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনায় আছেন।

বান্দরবানের বগা লেকে অদ্রি পৌঁছানোর আগেই সাংবাদিকেরা পৌঁছে গেছেন। তাই অদ্রিকে বেশ গোপনে নেওয়া হয়েছে বান্দরবানের ক্যাম্পে। পৃথিবীর নানা রকম আপডেট অদ্রি পাচ্ছে দুই উপায়ে—প্রথমত, ট্রি-নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত, গোয়েন্দা আঙ্কেলের কাছ থেকে।

অদ্রি ও তার মায়ের জন্য যে রুমটির ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটি দেখিয়ে দিলেন গোয়েন্দা মেহেরাজ। তিনি চলে যাওয়ার পর ক্যাম্পের রুম থেকে অদ্রিককে কল দিল অদ্রি। অদ্রিক বলল, ‘অদ্রি, মনে হচ্ছে আর দেরি করা ঠিক হবে না। যত দ্রুত সম্ভব, তোমাকে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসতে হবে।’

অদ্রি বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছ, অদ্রিক। বেশি দেরি হয়ে গেলে আমরা পৃথিবীর মানুষদের বাঁচাতে পারব না। আমাকে এখানে নজরবন্দী রাখা হয়েছে। কীভাবে পালাব, সেই উপায় খুঁজছি।’

অদ্রিক বলল, ‘বগা লেকের সামনের দিকে যতটা ভিড়, পেছনের দিকটা ততটাই জনশূন্য। আমি স্থানীয় এক ছেলেকে জোগাড় করেছি। ছেলেটি আমাদেরকে নৌকায় করে স্পেসশিপ পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। স্পেসশিপটা মৌচাকের মতো। বাইনোকুলার দিয়ে দেখেছি, স্পেসশিপের বাইরের অংশজুড়ে কুঠুরির মতো অসংখ্য প্রবেশপথ আছে। যেকোনো একটা প্রবেশপথ দিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারব।’

এ পর্যায়ে অদ্রিককে থামিয়ে দিয়ে অদ্রি বলল, ‘বাথরুম থেকে মা বের হচ্ছেন, কল রাখছি।’

অদ্রি তার মাকে বুঝিয়ে রুম থেকে বের হলো। মেহেরাজ আঙ্কেলের সঙ্গে সরাসরি দেখা করল। গোয়েন্দা আঙ্কেলকে জানাল, বগা লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে সে পরিস্থিতি দেখতে চায়। গোয়েন্দা এসি মেহেরাজ বিস্ময় বালিকার সঙ্গে পুলিশ সদস্য দিতে চাইলেন। অদ্রি রাজি হলো না। বলল, ‘আমি মুখে মাস্ক পরে হাঁটব। কেউ চিনতে পারবে না। বরং পুলিশের কেউ সঙ্গে থাকলে মানুষজন আমাকে চিনে ফেলবে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসব।’

গোয়েন্দা মেহেরাজ দ্বিতীয়বারের মতো চেষ্টা করলেন যেন পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে অদ্রি বের হয়, কিন্তু অদ্রি কিছুতেই রাজি হলো না। মুখে মাস্ক এঁটে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে গেল এবং দ্রুত হেঁটে বম পাড়ায় ঢুকে গেল। অদ্রিককে কল করে তার অবস্থান জেনে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো। শেষমেশ অদ্রির সঙ্গে দেখা হলো অদ্রিক ও তালুতের। পৃথিবীকে মহাবিপদ থেকে বাঁচানোর অভিযানে এখন থেকে তারা তিনজন বন্ধু।

চলবে...

আরও পড়ুন