বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমবাগান

আমাদের দেশে ফজলি সবচেয়ে বড় প্রজাতির আম। আর বিশ্বে সবচেয়ে বড় আমের নাম কেইট আম। এটা ১৯৩৯ সালে মিসেস জে এন কেইট নামের এক ভদ্রমহিলা বাগানে এই আমের চাষ শুরু করেন। তাঁর নাম থেকেই এই আমের নাম হয় কেইট আম। এটি বর্তমানে গড়ে প্রায় দুই কেজি ওজনের মতো হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আম এই কেইট প্রজাতির, যার ওজন ছিল ৪ দশমিক ২৫ কেজি। ২০২০ সালের ২৫ জুলাই এই আম কলম্বিয়ার গুয়াইতা অঞ্চলের বোয়াইকো এলাকার সান মার্টিন আমবাগানে পাওয়া যায়। যে বাগানের মালিক জার্মান অরলান্ডো নোভায়া বারেরা ও রেইনা মারেয়া মোররাকুইন।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের নাম মিয়াজাকি। এটি জাপানি আম। জাপানের মিয়াজাকি এলাকায় পাওয়া যেত বলে এর এই নামকরণ। জাপানে একে ‘টাইয়ো নো তামাঙ্গো’ নামে ডাকা হয়, যার মানে সূর্যডিম। জাপানে গড়ে মিয়াজাকি আমের কেজি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমমানের মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এই আমের প্রতিটির ওজন ৩৫০ থেকে ৫৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তার মানে, যদি তিনটি মিয়াজাকি আমে এক কেজি হয়, তাহলে প্রতিটি আমের দাম ১ হাজার ডলারও হতে পারে। সেই হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় একটি আমের দাম হবে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে জাপানে একজোড়া মিয়াজাকি আম বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ডলারের সমমূল্যে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আমের নাম আলফানসো। এটা ভারতের আম। পর্তুগিজ সেনাপতি আলফানসো ডে আলবুকার্কের নামে এই আমের নামকরণ করা হয়েছে, যিনি ১৫১০ সালে বিজাপুরের সুলতানের কাছ থেকে গোয়া ছিনিয়ে নিয়ে সেখানে পর্তুগিজ কলোনি স্থাপন করেন। পর্তুগিজ সেনাপতির পছন্দের আম থেকেই এই আমের এ নাম রাখা হয়েছে। এটি কেবল জনপ্রিয় এক আম নয়, সেই সঙ্গে বেশ দামি এক আম।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমবাগানটি কয়েক বিঘা বা কয়েক একরের নয়, এটি ১৬ দশমিক ৬৬ স্কয়ার কিলোমিটারের এক বাগান। এই বাগান চীনের ইয়ুনান প্রদেশের হুয়াপিং এলাকায় অবস্থিত। সিপিসি হুয়াপিং কাউন্টি কমিটি ও পিপলস গর্ভমেন্ট অব হুয়াপিং কাউন্টি এই বাগান দেখাশোনা করে। ১৯৭৭ সাল থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা এই বাগানে আমের চারা রোপণ করে যাচ্ছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত আমবাগানটি আর কারও নয়, ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপের মালিক ধীরুভাই আম্বানির। তাঁর এই আমবাগান ৬০০ একরের, আর এই আমবাগানের নাম লাখবাগ, যা বাদশাহ আকবরের লাখিবাগ আমবাগানের নামে করা হয়েছে। এই আমবাগান গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত। প্রায় ২০০ প্রজাতির আমগাছ রয়েছে এই আমবাগানে। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় আম রপ্তানিকারকের নামও ধীরুভাই আম্বানি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমগাছের আলাদা কোনো রেকর্ড করা না হলেও বাংলাদেশে একটি আমগাছ এই রেকর্ডের মালিক হতে পারে। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারীর সীমান্তে মণ্ডমালা গ্রামে এই আমগাছ অবস্থিত। সাধারণ হিসাবে এটি প্রায় এক একর বা তিন বিঘা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এর উচ্চতা ৭০ থেকে ৯০ ফুট। এর প্রায় ১৯টি শাখা রয়েছে। এই গাছের আনুমানিক বয়স ২০০ বছর। আর এখনো এই গাছে মাঝেমধ্যে আম ধরে।

আম সম্বন্ধে সবচেয়ে মিষ্টি কথাটি বলেছিলেন বিখ্যাত উর্দু কবি মির্জা গালিব। আম সম্বন্ধে তিনি যা বলেছিলেন, তার বাংলা মানে অনেকটা এ রকম।

আমের শুধু দুটি গুণ থাক,

এটাই কেবল চাওয়া।

মুধুর মতো মিষ্টি,

ও ইচ্ছেমতো খাওয়া।