দুষ্টু মেয়ের দল (ষষ্ঠ পর্ব)

অলংকরণ: তুলি

কাশেমপুর প্রাইমারি স্কুল চোট্টামি করছে। তারা সব বিভিন্ন জেলা থেকে ভালো ভালো খেলোয়াড় মেয়েদের হায়ার করে এনেছে।

মইন স্যারকে রাশেদা বলল, ‘স্যার, ওই মেয়েকে আমি চিনি। গতবার ঢাকায় গিয়া দেখা হইছে। এ তো রংপুরের মেয়ে। এর নাম ঝরনা। স্যার স্যার। ওই মেয়েটাকেও আমি চিনি। ও তো টাঙ্গাইলের মেয়ে। অর নাম কৃষ্ণা। স্যার স্যার, ওইটা তো রাঙামাটির মেয়ে। ওর নাম ক্রিস্টিনা।’

মইন স্যার বললেন,

‘ক্রিস্টিনা ক্রিস্টিনা,

নামটা খুব মিষ্টি কিনা,

খাচ্ছ কী?

মিষ্টি কিনা,

পড়ছে মাথায়

বৃষ্টি কিনা।’

রাশেদা বলল, ‘স্যার, আপনার ছড়া বলা আপনি থামাবেন?’

মইন স্যার বললেন, ‘আরে, ছড়া থামালেই কি সমস্যার সমাধান হবে নাকি?

আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত কমপ্লেইন করছি। কিন্তু খেলার সময় তোদের এই সব মনে রাখতে হবে না। তোরা বরং খেলার মধ্যে মন দে।

চল্, আমরা মাঠে নেমে ওয়ার্মআপ করি।’

উপজেলা সদরের হাইস্কুল মাঠে খেলা হচ্ছে। মাঠের এক পাশে শামিয়ানা টাঙিয়ে অতিথিদের বসার জায়গা বানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত হয়েছেন। উপজেলা মহিলা ক্লাবের সভানেত্রীও উপস্থিত। ইউএনওর স্ত্রীই সভানেত্রী। আজকের খেলায় যে দল জয়লাভ করবে, তাদের হাতে তিনিই কাপ তুলে দেবেন। আবার সবার গলায় তিনিই মেডেল পরাবেন। তিনি তাই বিউটি পারলার থেকে সেজে এসেছেন। গরমে তাঁর মেকআপ গলে পড়তে লাগল।

আরেকটা মারাত্মক সমস্যার কারণে খেলা শুরু হতে দেরি হচ্ছে। সভানেত্রী ম্যাডামের মাথার ওপর মৌমাছি ঘুর ঘুর করছে। তিনি আজকে বিউটি পারলার থেকে খোঁপা করে এসেছেন। সেই খোঁপা নকল খোঁপা। মনে হয় খোঁপায় কোনো সমস্যা হয়েছে। না হলে এত মৌমাছি কেন তাঁর মাথার ওপর ভনভন করছে?

উপজেলা চেয়ারম্যানও আসবেন কিছুক্ষণের মধ্যে। টেলিভিশনের ক্যামেরাও চলে এসেছে।

ইউএনও বললেন তাঁর স্ত্রীকে, ‘তোমার মাথার ওপরে এত মৌমাছি কেন?’

তাঁর স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগে একটা ছোট্ট আয়না আছে। তিনি সেই আয়না বের করে দেখলেন, সর্বনাশ, মাথার ওপর শুধু মৌমাছি ভনভন করছে।

আশপাশে কোনো অতিথি বসতে পারছেন না।

তিনি তাঁর মোবাইল ফোন বের করলেন। এই ফোনে একটা আজব জিনিস আছে। সেলফি তোলা যায়। তিনি সেলফি তুলতে গেলেন। মৌমাছি তার চোখে-মুখে বসতে লাগল।

ইউএনও সাহেব বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি বললেন, ‘ওগো শুনছ। আমার মনে হয়, সমস্যা আমি বুঝতে পেরেছি।’

‘কী বুঝলা?’

‘তোমার খোঁপার মধ্যে একটা রানি মৌমাছি ঢুকে পড়েছে। তাই সব মৌমাছি তোমার পিছে পিছে চলে এসেছে।’

‘অ্যাঁ, কী বলো!’

‘চলো, ওই দিকে চলো, তোমার নকল খোঁপাটা আমি খুলে দিই।’

‘ও মা, কী বলে! আড়াই শ টাকা দিয়ে সেজেছি।’

‘আড়াই শ টাকা না, আমি তোমাকে পাঁচ শ টাকা দেব। চলো, প্লিজ! উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের আসার সময় হয়েছে। তোমার এই খোঁপার কারণে আমাদের খেলা শুরু করা যাচ্ছে না। কেউ শামিয়ানার নিচে বসতে পারছে না।’

একটা মৌমাছি সভানেত্রীর নাকে বসতেই তিনি বললেন, ‘ও মা গো! আচ্ছা চলো...’

একটু আড়ালে গিয়ে ইউএনও সাহেব তাঁর স্ত্রীর খোঁপায় হাত দিলেন। তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলেন দীপা রানী। তিনি সুন্দরপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। দীপা রানী বললেন, ‘স্যার, আপনি সরেন। আপনি পারবেন না। বড় বড় ক্লিপ আমি খুলতে পারব।’

 খোঁপাটা খুলে ফেলা হলো। দীপা রানী খোঁপাটা তাঁর ব্যাগে রাখলেন। মৌমাছি সব ব্যাগটাকে ঘিরে ধরল।

সভানেত্রী তাড়াতাড়ি প্যান্ডেলের নিচে গিয়ে আসন নিলেন।

 তাঁর খোঁপাটা খুলে ফেলায় তাঁকে ভয়াবহ দেখাচ্ছে—তাঁর মনে হলো। আর তাঁর স্বামী বললেন, ‘এই তো তোমাকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে।’

দীপা রানী ব্যাগটা দূরে রেখে এসেছেন। ইউএনও সাহেবের কাছে এসে তিনি বললেন, ‘স্যার, ব্যাগটা আপনার গাড়ি করে নিয়ে যাবেন। খোঁপাটা বিউটি পারলারকে ফেরত দিতে পারবেন। আবার রানী মৌমাছিটাকে একটা বাক্সের মধ্যে রেখে লিচুগাছে বেঁধে রাখলে মৌমাছির চাষও করতে পারবেন।’

উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িও এসে গেল। মাঠের চারদিকে অনেক দর্শকও হয়েছে। একটা মাইক্রোফোনে খেলার ধারাবিবরণীও দেওয়া হচ্ছে। এলাকার একজন তরুণ ধারাভাষ্য দেবেন। তিনি আবার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফতকে নকল করে কথা বলছেন।

‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, কর্দমাক্ত মাঠ। বিপুলসংখ্যক দর্শক আজকে এই অসাধারণ ফুটবল ম্যাচটি উপভোগ করার জন্য হাজির হয়েছেন। যাকে বলে, গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। তিল ধারণের কোনো স্থান নেই। কাশেমপুর বিদ্যালয় বনাম সুন্দরপুর বিদ্যালয়ের মধ্যে আজকে এই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বের খেলা। উভয় দলের মেয়েরা মাঠে প্রবেশ করেছে। তারা গা গরম করছে, যাকে ইংরেজিতে বলে ওয়ার্মআপ।’

মইন স্যার একটা কাগজ নিয়ে গেলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে, ‘স্যার, আমার একটা অভিযোগ আছে।’

‘কী অভিযোগ?’

‘কাশেমপুরের প্লেয়াররা সব হায়ার করা স্যার। কেউ ওই স্কুলের মেয়ে না, স্যার।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘কাগজ রেখে যান। খেলা শেষে তদন্ত হবে। এখন কোনো কথা বলা যাবে না। এখন ভালোয় ভালোয় ম্যাচটা হয়ে গেলে বাঁচি।’

ধারাভাষ্যকার মাইকে ঘোষণা দিয়েই চলেছেন। খেলা শুরু হচ্ছে।

‘রেফারি মাঠের মাঝখানে। উত্তর দিকে সুন্দরপুর। দক্ষিণ প্রান্তে কাশেমপুর।

লাইনসম্যানরা প্রস্তুত।

বাঁশি বাজল। খেলা শুরু হয়ে গেল।

সুন্দরপুরের গোলের দিকে জোরে শট মারল কাশেমপুরের শেফালি, জার্সি নম্বর ১১। বল বহু ওপর দিয়ে মাটি কামড়ে চলে গেল মাঠের বাইরে।’

পাশে আরেকজন কথা বলছে, মাইকে তার কথা শোনা যাচ্ছে, ‘এই, মাটি কামড়ে বহু ওপর দিয়ে বল কীভাবে যায়? নিচ দিয়ে গেলে না ওই কথা বলতে হয়।’

শুনে দর্শক সবাই হেসে উঠল।

‘আক্রমণে সুন্দরপুর। মারিয়া, মারিয়া থেকে রাশেদা। রাশেদা থেকে রুনা, রুনা থেকে মারিয়া। রাশেদা আক্রমণে। একাই বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার তো মেসির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। গোলকিপারকে কাটিয়ে রাশেদা বল নিয়ে নেটে ঢুকে পড়েছে। গোল...গোল...১-০’

বীণা আপা মাঠে ঢুকে পড়েছেন। তিনি সোজা চলে গেলেন নেটের কাছে। রাশেদাকে কোলে তুলে নিয়ে তিনি সেন্টারে চলে আসছেন।

রেফারি বাঁশি বাজাচ্ছেন। মইন স্যার চিৎকার করছেন সাইডলাইন থেকে, ‘এই বীণা কী করেন? এই বীণা বের হন।’

 বীণা বের হয়ে এলেন। পুরো মাঠ দৌড়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে গেছেন। এখন হাঁপাচ্ছেন।

ধারাভাষ্যকার বলছে, ‘আমার খোদাবক্স মৃধা ভাই বিশ্বকাপের সেই খেলাটার কথা মনে পড়ছে, যেখানে একজন দর্শক দৌড়ে গিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে চুমু খেয়েছিল। ঢাকা স্টেডিয়ামে।’

‘সেটা বিশ্বকাপে নয়...’

‘ওই হলো...’

‘আবার আক্রমণ। এবার তহুরা। তহুরা থেকে রুনা। রুনা থেকে রাশেদা। রাশেদা থেকে মারিয়া গোল। ২-০...’

মোট ৮-০ গোলে জিতে গেল সুন্দরপুর।

 বীণা বললেন, ‘কাশেমপুর হায়ার করে এনেই ভুল করেছে। সবাই একসাথে প্র্যাকটিস না করলে কোনো দিন ভালো টিম হয় না। ট্রেনিংটা আসল।’

সুন্দরপুরের মেয়েরা আবার ঢাকায় যাচ্ছে। এটা তাদের দ্বিতীয়বার ঢাকাযাত্রা। গত বছরও তারা গিয়েছিল। কিন্তু গতবার তারা জাতীয় পর্যায়ে ভালো করতে পারেনি।

এবার কি তারা পারবে?

বাসের মধ্যে বীণা আপা বললেন, ‘এবার যদি তোমরা ভালো করো, তোমাদের সবাইকে আমি একটা করে মোবাইল ফোন কিনে দেব। তবে শর্ত আছে। সেটা তোমরা দেবে তোমাদের মাকে। বাবাকে না। মায়েদের হাতে একটা করে মোবাইল ফোন থাকা চাই। বলো, তোমরা আর কী চাও?’

মেয়েরা বলল, ‘আমরা এক বেলা পেট ভরে ভাত খেতে চাই।’

বাস চলছে। দুই দিকের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কাছের গাছগুলো ছুটে ছুটে পেছনে চলে যাচ্ছে।

বীণা বললেন, ‘একবেলা পেট ভরে ভাত? আরও কিছু চাও?’

মারিয়া বলল, ‘বেশি করে খাবার দিয়া দিবেন। আমরা বাড়িতে খাবার নিয়া যামু। বাড়ির সবাই মিলা একবেলা পেট ভইরা ভাত খামু।’

বীণা আপা চোখ মুছতে লাগলেন। বললেন, ‘আমি দোয়া করি, তোমরা চ্যাম্পিয়ন হও। তোমরা চ্যাম্পিয়ন হলে নিশ্চয়ই তোমাদের এমন ব্যবস্থা হবে যে তোমাদের সবার বাড়িতে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়া আসবে। দুই বেলা রান্না হবে।’ বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।

মইন স্যার গিয়ে তাঁর পাশের সিটে বসলেন, ‘বীণা আপা, আপিন কান্দেন ক্যান?’

বীণা আপা বললেন, ‘আপনি সরেন। কেন কাঁদি বোঝেন না?’

‘না, বুঝি না।’

‘আমাদের বাচ্চারা এখনো চায় পেট ভরে ভাত খেতে। আমাদের দেশটা এত গরিব কেন?’

বাস চলছে। খোলা জানালা দিয়ে বাতাস আসছে হুহু করে। বাতাসে বীণা আপার চোখের পানি শুকিয়ে গেল।

 মইন স্যার বললেন, ‘আমি আপনার দলকে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন বানাবই। আপনি আমাকে কী পুরস্কার দেবেন?’

বীণা আপা বললেন, ‘আপনাকে আমি একটা কোট বানিয়ে দেব। ব্লেজার। তাতে লেখা থাকবে, সুন্দরপুর ফুটবল টিম।’

মইন স্যার বললেন, ‘না। আমি কোট চাই না।’

‘তাহলে আপনি কী চান?’

‘আমি এখন বলব না। চ্যাম্পিয়ন হলে বলব।’

‘যদি চ্যাম্পিয়ন না হয়?’

‘তাহলে বলব না।’

‘আচ্ছা চ্যাম্পিয়ন হলে বলবেন।’

‘তখন কিন্তু না করতে পারবেন না।’

‘না। তখন না করবও না।’

ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে উঠেছে বাচ্চারা। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। এখানে বীণা আপাও তাঁদের সাথে আছেন, দীপা রানীও আছেন।

অলংকরণ: তুলি

তবে মইন স্যারকে থাকতে হচ্ছে হোটেলে। তিনি পান্থপথে একটা হোটেলে উঠেছেন।

হোটেলে যাওয়ার পথে তিনি দেখেন, একটা বাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছবি।

‘এইটা কী?’

‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।’

তিনি টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলেন। ঘুরে ঘুরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি দেখলেন। যেই সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়েছিল, সেই জায়গাটা কাচ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ডাইনিং টেবিল। পড়ার টেবিল। গুলিবিদ্ধ দেয়াল। আর সবার ছবি। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ছবি দেখলেন। শেখ রাসেলের ছবি দেখলেন।

তিনি ঠিক করলেন, খেলার আগেই মেয়েদের এই জাদুঘরটা দেখাতে নিয়ে আসবেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে, তা জানলে মেয়েরা খেলায় আরও মন দেবে।

তা-ই হলো। সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স থেকে হেঁটে হেঁটে মেয়ের দল চলে এল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে।

মেয়েরা লাইন ধরে পুরো বাড়ি ঘুরল।

তাদের মনে কত প্রশ্ন।

‘শেখ রাসেল তো আমাদের সমান ছিল। তাকে কেন গুলি করল?’

বীণা আপাও সঙ্গে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। পাকিস্তানি শাসকেরা তাঁকে বারবার জেলে নিত। তখন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সংসার চালিয়ে নিতেন। কোনো দিন তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলতেন না যে তাঁদের কষ্ট হচ্ছে। বরং বলতেন, তুমি দেশের কাজ করবে, এটাই আমরা চাই।’

খেলা শুরু হলো। খেলা হচ্ছে বিভাগে বিভাগে। আটটা বিভাগ, আটটা দল।

নকআউট পদ্ধতিতে খেলা।

প্রথমে তাদের খেলা পড়ল চট্টগ্রাম বিভাগের সঙ্গে। রাঙামাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মারিয়ার দল তাদের হারাল ৩-২ গোলে।

এরপর সেমিফাইনাল। খেলা পড়ল রংপুর বিভাগের সঙ্গে। মারিয়ার বাহিনী তাদের হারাল ৫-১ গোলে।

এবার ফাইনাল।

খেলা পড়েছে বরিশাল বিভাগের সঙ্গে।

মাঠে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খেলা সরাসরি দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে।

সুন্দরপুর গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। তাই বেশির ভাগ বাড়িতে টেলিভিশন নেই। কিন্তু কয়েকটা বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ আছে। সেই সব বাড়িতে টেলিভিশনও আছে। সবাই ভিড় করল সেই সব বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে।

খেলা শুরু হলো।

সুন্দরপুর স্কুল ১-০ গোলে চ্যাম্পিয়ন হলো। গোলদাতা মারিয়া।

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা মারিয়ার গাল টিপে দিলেন।

রাশেদা গেল তাঁর কাছে, ‘আন্টি আন্টি, আমারও গাল টিপে দেন।’

প্রধানমন্ত্রী মিষ্টি হেসে তারও গাল টিপে দিলেন।

টেলিভিশনে খেলা দেখে সুন্দরপুর গ্রামে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে একটা বিজয় মিছিল গেল। তিনি বললেন, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তিনি ৫০০০ টাকা করে দেবেন।

সারা রাত মেয়েরা ঘুমাতে পারল না।

তারা গান গাইল।

গানের মধ্যে আছে:

‘সোনারও পালঙ্কের ঘরে...’

‘যত দূরে যাও’

তারপর একজন শুরু করল জেমসের গান। মায়ের গান।

দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ, কষ্টের তীব্রতায় করেছে আমায় লালন, হঠাৎ কোথায় না বলে হারিয়ে গেল জন্মান্তরের বাঁধন কোথা হারাল? সবাই বলে ঐ আকাশে লুকিয়ে আছে... কোথায় আছে কেমন আছে মা...

এই গান শুনে সবাই কাঁদতে লাগল।

বীণা আপা বললেন, ‘এই তোরা কাঁদিস কেন?’

‘মায়ের কথা মনে পড়ছে।’

এ জন্যই তো তোদের সবাইকে মোবাইল ফোন কিনে দেব। সবাই মাকে উপহার দিবি।

সবাই হাততালি দিল।

ভোরবেলা। বীণার মোবাইলে কল বাজল।

মইন স্যার।

‘হ্যালো...!’ বীণা ঘুমজড়িত কণ্ঠে বললেন।

মইন স্যার বললেন, ‘আমি নিচে এসেছি। ঘুম আসছিল না। জগিং করতে করতে চলে আসলাম। আপনি নামেন। আপনার কাছে একটা জিনিস পাওনা আছে। সেটা চাইব।’

‘কী সেটা?’

‘নিচে আসেন।’

‘আচ্ছা, আপনি ১৫ মিনিট ওয়েট করেন।’

সুলতানা কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের হোস্টেলের নিচে মইন স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। ট্র্যাকস্যুট পরা।

বীণা আপা ঘরে পরা ড্রেস পরে আছেন। গায়ের ওপরে একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে রেখেছেন।

বীণা আপা বললেন, ‘কী?’

‘না করতে পারবেন না।’

‘আগে বলেন।’

‘মাইন্ডও করতে পারবেন না।’

‘আগে বলেন...’

‘না, বলব না। আপনি নিজে বুঝে নেন।’

‘কী বুঝে নেব?’

‘বুঝে নেবেন হলো...’

চলবে...

আরও পড়ুন