টি-রেক্স রহস্য (তৃতীয় পর্ব)

অলংকরণ: সাদাত

তিন

রাতে বাজের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। জানালা দিয়ে ঝড় দেখতে লাগল ও। বিজলি চমকালে টিরোনের কথা ভাবল—আঁধারে, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।

পরদিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ হাইস্কুলে হাজির হয়ে গেল কিশোর। মুখ তুলে তাকাল টিরোনের দিকে। নীল আকাশের নিচে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে বিশাল টির‌্যাননোসরাসটা। মুখ বন্ধ। দৃষ্টি দূরে প্রসারিত। রাতের ঝড়ের ফলে ঘাস এখনো ভেজা, সূর্যের তাপে মিশে যাচ্ছে কুয়াশা।

টনি, জন আর রয়কে আশপাশে দেখা গেল না। ট্রাকটার কাছে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল কিশোর। সিটের ওপর ছড়ানো জনের স্লিপিং ব্যাগ।

একটু পরে পৌঁছে গেল রবিন আর মুসা।

তার খানিক পরই, টিরোনের পাশে লাল গাড়িটা দাঁড় করাল রয়। বেরিয়ে এসে হেঁটে এল ছেলেদের উদ্দেশে।

‘মর্নিং,’ বলল রয়, ‘কী ঝড়টাই না হলো বাপ রে বাপ!’

মাটিতে বসে এক জোড়া স্যান্ডেল পরল ও। ওর ভেজা জুতো জোড়া একসঙ্গে ফিতেয় বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে গাড়ির অ্যান্টেনা থেকে।

টনি আর জন সেন্টার পার্কের ভেতর থেকে হেঁটে বেরিয়ে এল।

‘হাই,’ টনি বলল ছেলেদের উদ্দেশে, ‘রয়, তুমি দারুণ একটা নাশতা মিস করলে। ওই কেলি দুর্দান্ত ওয়্যাফল বানায়!’

মাথা ঝাঁকাল রয়।

‘যাক, ঠিক করতে পেরেছ, এ–ই বেশি,’ বলে উঠে দাঁড়াল টনি, ‘গরম লাগছে,’ যোগ করল, ‘আইসক্রিম খেলে কেমন হয়? সব গোছগাছ করার পর কেলির ওখানে যাব আমরা, কেমন?’

‘আমার বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছিল না।’

একে একে দর্শকেরা আসতে শুরু করেছে। মেরি চাচি, মিসেস আমান আর মিসেস মিলফোর্ডও এসেছেন।

দর্শক বাড়তে দেখে খুশি হয়ে উঠল টনি।

‘বাহ, চমৎকার!’ বলল ও, ‘জন, তুমি টিরোনকে রেডি করো, আমি আর রয় টাকা সংগ্রহ করি।’

টনি আর জন দর্শকদের কাছ থেকে এক ডলার করে তুলল। হাতভর্তি টাকা এসে গেলে ট্রাকের ক্যাবের ভেতর তালা মেরে রেখে দিল। ওদের দুজনকে দু-তিনবার করে কাজটা করতে হলো; এত দর্শক এসেছে।

‘খাইছে, ওরা বহুত টাকা কামাবে,’ বলল মুসা, ‘এখানে অন্তত দু শ মানুষ আছে।’

টনি ট্রাক বেডে উঠে পড়ল কর্ডলেস একটা মাইক্রোফোন হাতে।

‘আসার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ,’ জানাল ও।

সবাই চুপ করলে পরে টনি ব্যাখ্যা করল, কেন ওরা টাকা তুলছে।

‘আমাদের জাদুঘরটা গ্রীষ্মের মধ্যে বানাতে চাই। আশা করি, আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ ওটা দেখতে যাবেন,’ মাইকটা ডাইনোসরের দিকে তাক করল ও, ‘আপনারা আমার বন্ধু টিরোনের সঙ্গে পরিচিত হোন। টিরোন, তুই তোর সম্পর্কে দর্শকদের কিছু জানা।’

কিছুই ঘটল না। টিরোন নীরবে ঠায় দাঁড়িয়ে। মুখে টুঁ শব্দটি নেই।

‘টিরোন লজ্জা পাচ্ছে,’ বলল টনি, এবার জোরালো গলায় বলল, ‘টিরোন? বন্ধুদের হাই বলবি না? লেজটা একটু নাড়া না।’

কেউ কেউ হেসে উঠল, কিন্তু টিরোন নট নড়নচড়ন, নট কিচ্ছু।

ছোট দর্শকদের কেউ কেউ অসহিষ্ণু হয়ে উঠল। কিশোরের পেছনে বসা একটি ছেলে আওড়াল, ‘টাকা ফেরত পাব কি না, কে জানে।’

এবার হঠাৎই টিরোনের লেজটা ডান থেকে বাঁয়ে নড়ে উঠল। ওর সামনের ছোট দুই বাহু ওপরে-নিচে দুলে উঠল। মুখ হাঁ হয়ে গেল এবং টিরোন ভরাট কণ্ঠে বলে উঠল, ‘হাই!’

‘হাই, টিরোন!’ দর্শকেরা বিপুল সাড়া দিল।

‘আমি কী ধরনের ডাইনোসর, জানেন আপনারা?’ প্রশ্ন করল টিরোন। কিশোর চিনতে পারল, জনের কণ্ঠ আসছে টিরোনের মুখ দিয়ে।

সবাই হাত তুলল।

‘টির৵ানোসরাস!’ ছোট-বড় সবাই বলে উঠল।

‘ঠিক, আমি টির৵ানোসরাস রেক্স।’ বলল টিরোন, ‘আজ সকালে পেট পুরে নাশতা করেছেন কতজন?’

বেশির ভাগ মানুষ এক হাত ওঠাল।

‘ভালো,’ বলল টিরোন, প্রকাণ্ড মাথাটা নাড়ল, ‘প্রায় ৭০ মিলিয়ন বছর আগে, আমি অন্য ডাইনোসরদের দিয়ে নাশতা সারতাম।’

হেসে উঠল সবাই।

টনি ট্রাক থেকে লাফিয়ে পড়ে তিন বন্ধুর সঙ্গে বসল।

‘জন ভালো জমিয়ে ফেলেছে, তা–ই না?’ বলল ও।

‘টিরোন তো দেখছি দারুণ কথা বলে,’ বলল কিশোর।

মাথা ঝাঁকাল টনি।

‘হ্যাঁ, জন মেকানিক্যাল কিছু পেলে একেবারে জিনিয়াস। প্রথমটায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিল আমাকে। আমি তো ভেবেছিলাম, কম্পিউটারে গড়বড় হয়ে গেছে বুঝি।’

ডাইনোসরদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিল টিরোন। কী খেত, কীভাবে বাচ্চাদের বড় করত, এসব আরকি।

শো প্রায় আধঘণ্টা চলল।

‘আশা করি, আপনারা লাইব্রেরিতে গিয়ে ডাইনোসর সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানবেন,’ বলল টিরোন। খুদে খুদে বাহু নেড়ে বিদায় জানাল, ‘আগামী গ্রীষ্মে আপনাদের সঙ্গে আমাদের মন্টানায় দেখা হবে।’

শিশুদের অনেকেই চেঁচিয়ে উঠল, ‘বাই, টিরোন!’ লোকজন বিদায় নিতে শুরু করল।

‘খাইছে, দারুণ লাগল! আপনারা এখন পর্যন্ত কতগুলো স্কুলে গেছেন?’ জিজ্ঞেস করল মুসা।

মাথা চুলকাল টনি।

‘মনে নেই, গোটা পঞ্চাশেক হবে বোধ হয়। রয়ের কাছে হিসাব আছে। আমরা মন্টানায় ফিরে যাওয়ার আগে হয়তো আরও গোটা বিশেক স্কুলে শো করব।’

জন টিরোনের পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে এল।

‘দারুণ হয়েছে,’ সপ্রশংস কণ্ঠে বলল টনি, ‘কিন্তু শুরুতে কী হয়েছিল?’

শ্রাগ করল জন।

‘ল্যাপটপের একটা তার ঢিলা ছিল। কাজ করছিল না।’

‘যাক, ঠিক করতে পেরেছ, এ–ই বেশি,’ বলে উঠে দাঁড়াল টনি, ‘গরম লাগছে,’ যোগ করল, ‘আইসক্রিম খেলে কেমন হয়? সব গোছগাছ করার পর কেলির ওখানে যাব আমরা, কেমন?’

‘মুসার পোয়াবারো,’ বলল রবিন, ‘আমরা কি কোনো সাহায্য করতে পারি?’

পকেট থেকে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ বের করল টনি।

‘কাগজগুলো যদি কুড়াতে পারো ভালো হয়,’ বলল।

টনি যখন ট্রাকের দিকে এগোল, তিন বন্ধু ছড়িয়ে পড়ে কুড়াতে লাগল।

কিশোর দুমড়ানো–মোচড়ানো একটা ফ্লায়ার তোলার জন্য ঝুঁকছে, এমন সময় একটা চিৎকার শুনতে পেল। মুখ তুলে তাকাল ও। চিৎকারটা টিরোনের কাছ থেকে এসেছে, খোলা দরজার সামনে জড়ো হয়েছে টনি, জন আর রয়।

এক শ ফুট দূর থেকেও কিশোর শুনতে পেল টনির গলা, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না!’

আরও পড়ুন