অদ্রির অভিযান (অষ্টম পর্ব)

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

জিরোস্পেস গেটের কারণে রোবটদের হাত থেকে বাঁচতে পারলেও অদ্রিরা গেটটির অন্য পাশে পৌঁছে বেঁচে থাকার আশা একদম ছেড়ে দিল। কারণ, চোখের সামনে বিচিত্র অস্ত্র তাদের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছে এক এলিয়েন। অদ্রিদের হাতে প্রহরী রোবটদের অস্ত্র থাকলেও সেই অস্ত্রের ব্যবহার তারা জানে না। মৃত্যুর জন্য নিথরভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল পৃথিবীবাসী তিন বন্ধু। ঠিক তখনই স্পষ্ট বাংলায় চেঁচিয়ে উঠল এলিয়েন, ‘সরে দাঁড়াও, মানুষ। তোমরা সরে দাঁড়াও।’

অদ্রিরা সরে দাঁড়াতেই জিরোস্পেস গেটের ভেতর থেকে একে একে এসে হাজির হলো প্রহরী রোবট তিনটি। এলিয়েন তার অস্ত্র দিয়ে রোবটগুলোর মাথা উড়িয়ে দিল। তারপর পকেট থেকে একটি যন্ত্র বের করে কিছু টেপাটেপি করল। মিলিয়ে গেল জিরোস্পেস গেট। অদ্রিদের দিকে তাকিয়ে এলিয়েন বলল, ‘তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি ট্র্যাপিস্ট ওয়ান-বি গ্রহে। ভয় নেই, মানুষ। আমরা ট্র্যাপিজিন প্রজাতি। আমার নাম লুলুলু। আমার সঙ্গে এসো।’

অদ্রিরা মরুভূমির মতো একটি এলাকায় এসে পৌঁছেছে। তাপমাত্রা কম; বেশ ঠান্ডা। রাত হয়ে গেছে; তবু চারদিক জ্যোৎস্নায় প্লাবিত। এর কারণ, ভিনগ্রহটির আকাশে জ্বলজ্বল করছে ছয়টি চাঁদসদৃশ বস্তু; ঔজ্জ্বল্যে একটির চেয়ে আরেকটি বেশি। অদ্রি মরুভূমির চারপাশে তাকিয়ে কোনো গাছ দেখতে না পেলেও তার মাথার ভেতরে এখনো তরঙ্গায়িত হচ্ছে ট্রি-নেটওয়ার্কের কথামালা। গাছের মাধ্যমে অদ্রি জানতে পারল, মানুষকে রক্ষার জন্য লুলুলু নামের এই এলিয়েন কাজ করে যাচ্ছে অনেক আগে থেকে। অদ্রিকে এলিয়েনের পিছু নিতে দেখে অন্য দুজনও পিছু নিল। 

কিছুদূর হাঁটার পর অদ্রিরা দেখতে পেল লাটিম আকৃতির একটি যানবাহন। সবাই যানবাহনের ভেতরে বসার পর লুলুলু একটি স্ক্রিনে কিছু ইনপুট বসাতেই যানটি নড়েচড়ে উঠল। স্ক্রিনের স্টার্ট বাটন প্রেস করতেই বাহনটি জিরোস্পেস গেটের কারণে রোবটদের হাত থেকে বাঁচতে পারলেও অদ্রিরা গেটটির অন্য পাশে পৌঁছে বেঁচে থাকার আশা একদম ছেড়ে দিল। কারণ, চোখের সামনে বিচিত্র অস্ত্র তাদের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছে এক এলিয়েন। অদ্রিদের হাতে প্রহরী রোবটদের অস্ত্র থাকলেও সেই অস্ত্রের ব্যবহার তারা জানে না। মৃত্যুর জন্য নিথরভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল পৃথিবীবাসী তিন বন্ধু। ঠিক তখনই স্পষ্ট বাংলায় চেঁচিয়ে উঠল এলিয়েন, ‘সরে দাঁড়াও, মানুষ। তোমরা সরে দাঁড়াও।’

অদ্রিরা সরে দাঁড়াতেই জিরোস্পেস গেটের ভেতর থেকে একে একে এসে হাজির হলো প্রহরী রোবট তিনটি। এলিয়েন তার অস্ত্র দিয়ে রোবটগুলোর মাথা উড়িয়ে দিল। তারপর পকেট থেকে একটি যন্ত্র বের করে কিছু টেপাটেপি করল। মিলিয়ে গেল জিরোস্পেস গেট। অদ্রিদের দিকে তাকিয়ে এলিয়েন বলল, ‘তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি ট্র্যাপিস্ট ওয়ান-বি গ্রহে। ভয় নেই, মানুষ। আমরা ট্র্যাপিজিন প্রজাতি। আমার নাম লুলুলু। আমার সঙ্গে এসো।’

অদ্রিরা মরুভূমির মতো একটি এলাকায় এসে পৌঁছেছে। তাপমাত্রা কম; বেশ ঠান্ডা। রাত হয়ে গেছে; তবু চারদিক জ্যোৎস্নায় প্লাবিত। এর কারণ, ভিনগ্রহটির আকাশে জ্বলজ্বল করছে ছয়টি চাঁদসদৃশ বস্তু; ঔজ্জ্বল্যে একটির চেয়ে আরেকটি বেশি। অদ্রি মরুভূমির চারপাশে তাকিয়ে কোনো গাছ দেখতে না পেলেও তার মাথার ভেতরে এখনো তরঙ্গায়িত হচ্ছে ট্রি-নেটওয়ার্কের কথামালা। গাছের মাধ্যমে অদ্রি জানতে পারল, মানুষকে রক্ষার জন্য লুলুলু নামের এই এলিয়েন কাজ করে যাচ্ছে অনেক আগে থেকে। অদ্রিকে এলিয়েনের পিছু নিতে দেখে অন্য দুজনও পিছু নিল। 

হেলিকপ্টারের মতো মাটি থেকে অনেক ওপরে উঠে গেল; তারপর ছুটে চলল দ্রুতগতিতে। কয়েক মিনিটেই পার হয়ে গেল মরুভূমির মতো প্রান্তর।

অদ্রি, অদ্রিক ও তালুত হাঁ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকল। ভিনগ্রহের জগৎ কী বিচিত্র! রাতের আঁধারেও জ্বলজ্বল করছে আলোকমালায়। প্রতিটি অট্টালিকা কয়েক শ তলা এবং কাচের মতো স্বচ্ছ বস্তুতে তৈরি। এমনকি অট্টালিকাগুলোর ছাদও স্বচ্ছ। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ভেতরে হাজার হাজার এলিয়েন এই রাতেও কাজ করছে। প্রতিটি এলিয়েনের সামনে স্বচ্ছ স্ক্রিন; তাতে স্পর্শ করে করে তারা কাজ করছে। আবার, কোনো বিল্ডিংয়ে এলিয়েনরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনা করছে।

ট্র্যাপিস্ট ওয়ান-বি গ্রহের স্থলপথে ‘রাস্তা’ বলে কিছু নেই। যানবাহন সবই চলে আকাশপথে। একই রকম চালকবিহীন গাড়ি ছুটছে বিভিন্ন গন্তব্যে। গন্তব্যের স্থানাঙ্ক বা কো-অর্ডিনেট সেট করে দিলে কোনো রকম সংঘর্ষ ছাড়াই যানবাহনগুলো পৌঁছে যায় গন্তব্যে। এসব তথ্য জানাল লুলুলু। বন্ধুবৎসল লুলুলু বলল, ‘বুঝতেই পারছ, আমি তোমাদের সহযোগিতা করতে চাই।’

অদ্রি সরাসরি প্রশ্ন করল, ‘তোমার পরিচয় কী, জানতে পারি?’

লুলুলু উত্তর দিল, ‘আমি গ্রহের নিরাপত্তা শাখায় কাজ করি। মূলত, জিরোস্পেস গেট পরিচালনার কাজে নিযুক্ত। তবে জীবনে এই প্রথমবারের মতো দুই দিনের ছুটি নিয়েছি। ছুটি নেওয়ার কারণটি নিশ্চয় অনুমান করতে পারছ?’

অদ্রিক বলল, ‘না, অনুমান করতে পারছি না।’

লুলুলু বিস্তারিত বলল, ‘বর্তমানে আমাদের গ্রহের ক্ষমতা একজন যুদ্ধবাজের হাতে। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন গ্রহ দখল করছে ট্র্যাপিজিন প্রজাতি। পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহে প্রাণী নেই; তাই সেগুলো দখলে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু পৃথিবী গ্রহে মানুষ প্রজাতি আছে। তাদের নির্মূল করে গ্রহ দখলের ব্যাপারটি আমাদের গ্রহের বেশির ভাগ ট্র্যাপিজিন মেনে নিতে পারেনি। মেনে নিতে না পারলেও কারও কিছু করার নেই। আমি অবশ্য একটু উচ্চাশা করেছি। পৃথিবীকে কীভাবে বাঁচানো যায়, ছুটি নিয়ে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলাম এবং ঘরে বসেই পৃথিবী গ্রহ থেকে এই গ্রহে আসা-যাওয়ার মাধ্যম জিরোস্পেস গেট কীভাবে অকেজো করে দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটি গেট দিয়ে তোমরা তিনজন এই গ্রহে পৌঁছে গেছ! তারপর থেকেই তোমাদের ওপর নজর রাখছি। আমার পেতে রাখা গোপন অডিও ডিভাইসের মাধ্যমে বিচারকক্ষে তোমরা কী বলেছ শুনেছি; এমনকি বিচারকক্ষ থেকে বের হওয়ার পর তোমাদের কথোপকথন আমি শুনতে পেরেছি। সে সময় আমি পৃথিবীকে বাঁচানোর পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছিলাম ওই মরুভূমিতে এই ভেহিকেলে বসে। যখনই শুনতে পেলাম তোমরা ইমার্জেন্সি এক্সিট দিয়ে বের হবে, তখনই আমি তার রাউটিং পরিবর্তন করে আমার অবস্থানের স্থানটিতে নিলাম। তোমরা পৌঁছানোর পর রোবটগুলো মেরে ইমার্জেন্সি এক্সিটের রাউটিং আবার আগের ডেস্টিনেশনে করে দিয়েছি। এ ছাড়া আমার কার্যক্রমের সব লগ সার্ভার থেকে মুছে দিয়েছি।’

অদ্রি বলল, ‘ধন্যবাদ আমাদেরকে নিজের প্রাণ বাজি রেখে সহযোগিতা করার জন্য।’

‘ধন্যবাদ তোমাদেরও। কিন্তু পৃথিবীকে নিয়ে আমার শঙ্কা হচ্ছে। কারণ, ট্র্যাপিজিন নেতা তিন দিনের মধ্যে পৃথিবীর সব মানুষকে শেষ করতে চায়। আমাদের দ্রুত কিছু করতে হবে। যদিও আমাদের একদিন মানে পৃথিবী গ্রহের দেড় দিন।’

তালুত বলল, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

লুলুলু উত্তর দিল, ‘আমার বাগানবাড়িতে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। ছুটিতে আমি ওখানেই থাকি। আর বেশিক্ষণ লাগবে না।’

অদ্রিক বলল, ‘আচ্ছা, আমার মনে পড়ল, আমি ট্র্যাপিস্ট নক্ষত্রের কথা শুনেছি! পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছিলেন এই নক্ষত্রের পরিবার। সাতটি গ্রহের আবহাওয়া, ভূপ্রকৃতি পৃথিবীর মতো! তার মানে, আকাশে যে ছয়টি জ্বলজ্বলে বস্তু দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আসলে গ্রহ?’

লুলুলু বলল, ‘হ্যাঁ। ট্র্যাপিস্ট নক্ষত্রের পাঁচ গ্রহ নিয়ে আমাদের বাস। যে ছয়টি গ্রহ আকাশে দেখতে পাচ্ছ, তার চারটিতে ট্র্যাপিজিনরা আছে। আর বাকি দুটো গ্রহকে ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।’

অদ্রিক বিস্মিত হয়ে বলল, ‘গ্রহকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়?’

লুলুলু বলল, ‘মানুষ যেসব তত্ত্ব ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, আমরাও সেসব তত্ত্ব ব্যবহার করি, কিন্তু একটু অন্য আঙ্গিকে। যেমন মানুষ এখনো বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে জেনারেটরের মাধ্যমে। জেনারেটরে গতিশীল চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে পরিবাহী তার স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। অন্যদিকে, আমরা গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্র ব্যবহার করি। গ্রহ নিজেই একটি বিশাল চুম্বক; গতিশীল গ্রহের রয়েছে গতিশীল চৌম্বকক্ষেত্র। এই গতিশীল চৌম্বকক্ষেত্রকে আমরা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করি। সেসব গ্রহের পাশ দিয়ে বিশেষ উপায়ে পরিবাহী তার সঞ্চালন করে চলবিদ্যুৎ আমাদের গ্রহে আনা হয়।’

‘বাহ্, এ তো খুব সহজ ব্যাপার, কিন্তু কেন যে এত দিন মাথায় আসেনি!’

‘আসলে তত্ত্ব শুনে যত সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবায়ন করা তত কঠিন। এটা বাস্তবায়নের জন্য গ্রহের আকৃতি, বিভিন্ন প্রকৃতির গতি ইত্যাদি পরিমাপ করে সঠিক স্থাপনা নির্মাণ করতে হয়।’

অদ্রিক সাঁয় দিয়ে বলল, ‘তা তো অবশ্যই। এখানকার প্রযুক্তি দেখে আমি বিস্মিত। এমনকি তুমি কথা বলছ বাংলায়। এটা কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?’

লুলুলু বলল, ‘একধরনের লিঙ্গুইস্টিক কনভার্টার চিপের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। চিপের এক অংশ আমার মাথায় ভেতরে এবং আরেক অংশ মুখগহ্বরের তালুতে অস্ত্রোপচার করে বসিয়েছি। অন্যান্য গ্রহ নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও পৃথিবী গ্রহ নিয়ে আমাদের এখানে অনেক আগে থেকে গবেষণা চলছে। লিঙ্গুইস্টিক কনভার্টার চিপ পৃথিবী গ্রহের প্রধান ১০টি ভাষা আমাকে বুঝতে ও বলতে সহযোগিতা করে। আমি কথা বলছি আমাদের ভাষা ট্র্যাপিটো-তে কিন্তু তোমরা শুনছ বাংলায়। আবার তোমাদের বাংলা কথা আমি ট্র্যাপিটো-তে শুনতে পাচ্ছি।’ 

হঠাৎ তালুত চেঁচিয়ে উঠল, ‘কী অপূর্ব!’

অদ্রি ও অদ্রিক উড়ন্ত যান থেকে নিচে তাকিয়ে দেখল, স্বচ্ছ পানির লেক আলোকিত করা হয়েছে! লেকের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে ওপর থেকে পানির নিচের জলজ প্রাণীর চলাচল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে!

তিন দিকে পাহাড় এবং ছেড়ে আসা দিকটিতে শহর। পাহাড়জুড়ে জ্বলছে সেই মহাকাশযানের সুড়ঙ্গের মতো ফটো লুমিনিসেন্ট পদার্থের আলো। তিনটি পাহাড় তিন রঙে রঙিন। লুলুলু বলল, ‘পাহাড় তিনটিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তিন রকমের ফুল চাষ হচ্ছে। এই ফুলের একটা বিশেষত্ব আছে।’

বিশেষত্বের কথা বলায় অদ্রিরা তিনজনই তাকাল লুলুলুর দিকে। অদ্রিক বলল, ‘কী বিশেষত্ব?’

লুলুলু জবাব দিল, ‘ফুলগুলোতে কোনো মৌমাছি মুখ গুঁজে থাকে না; বরং মুখ গুঁজে থাকি আমরা। কারণ, ফুলের ভেতরে তৈরি হয় আমাদের খাবার। অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং দামি খাবার। অধিকাংশ ট্র্যাপিজিনের প্রিয় খাদ্য এটি। নাম ক্রোমোজোমিয়া। এই পাহাড়গুলোর পেছনে আরও অনেক পাহাড় আছে। আমার বাগানবাড়িতে পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না।’

লুলুলুর বাগানবাড়িতে পৌঁছাতে আসলেই বেশি সময় লাগল না। বাগানবাড়িটি দেখে অদ্রিরা বিমুগ্ধ। চারদিকে পাহাড়ঘেরা একটি স্থানে স্রোতস্বিনী পাথুরে নদীর ওপরে সাসপেনশন ব্রিজের মতো ঝুলে আছে সাসপেনশন বাগানবাড়ি! মাত্র চারতলা হলেও বাগানবাড়িটির সাপোর্টিং কাঠামো সুবিশাল। বাড়ির দুই প্রান্ত থেকে এক ডজন মজবুত কাঠামো গিয়ে আটকেছে দুই পাশের পাহাড়ে।

উড়ন্ত যান ঝুলন্ত বাগানবাড়ির টানা বারান্দায় অবতরণ করল। কাচের তৈরি হওয়ায় বাইরে থেকে বাড়ির ভেতরের সবকিছু দেখা গেলেও মেঝে স্বচ্ছ নয়। স্বচ্ছ হলে হয়তো গভীর তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রবল স্রোতের নদী চোখে পড়ে ভয় লাগত! তবে চারপাশ স্বচ্ছ হওয়ায় বাগানবাড়ির ভেতর থেকেই অদ্রিরা পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঝরনা দেখতে পেল। স্বচ্ছ ছাদ গলে আকাশের দিকে তাকালে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। মাথার ওপরে বিশালাকার ছয়টি গ্রহ! কাছের গ্রহটি এত বড় দেখা যাচ্ছে যে অদ্রিদের মনে হচ্ছে, গ্রহটির পৃষ্ঠদেশের নানা স্থাপনা ঝাপসাভাবে দেখতে পাচ্ছে। এসব দেখে অদ্রিক বলল, ‘কী ভীষণ সুন্দর!’ 

অদ্রি বলল, ‘এত সুন্দর গ্রহের জীবেরা এত নিষ্ঠুর কীভাবে হলো, বুঝতে পারছি না।’

তালুত বলল, ‘দুঃখজনক!’

লুলুলু টেবিলে নাশতার জন্য ক্রোমোজোমিয়া নিয়ে এল। বলল, ‘আসলেই দুঃখজনক। খারাপ ট্র্যাপিজিনদের কর্মকাণ্ডের জন্য কষ্ট পাই। আসলে আমাদের মধ্যে যারা এই খারাপ কাজগুলো করছে, তারা একদমই অনুভূতিহীন। অনেক বছর আগে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট এই ট্র্যাপিজিনরাই এখন ক্ষমতায়। আমরা যারা অনুভূতিসম্পন্ন, তাদের জন্য পৃথিবীর ওপর আক্রমণ মেনে নেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর।’

অদ্রিরা আর কথা না বাড়িয়ে ক্রোমোজোমিয়াতে মুখ দিল। তালুত চেঁচিয়ে উঠল, ‘ওয়াও, কী মজা!’ 

চলবে...

আরও পড়ুন