অদ্রির অভিযান (নবম পর্ব)

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

পৃথিবীর বিপৎসংকুল এ পরিস্থিতিতে জনসাধারণ ঘরবাড়ির মধ্যে লুকিয়ে আছে। রজারের বাসায় তার দুই মেয়ে এমি ও বেটি বেশ আতঙ্কিত। রজার মেয়েদের নিয়ে টেক্সাসে থাকলেও তার স্ত্রী পেশার কারণে থাকেন আইওয়া অঙ্গরাজ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অঙ্গরাজ্য টেক্সাসে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু না ঘটলেও দক্ষিণ-পশ্চিমের স্টেটগুলোয় হারিকেনের তাণ্ডবে জীবন ও সম্পদের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি।

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইতিমধ্যে অর্ধেকসংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে। সারা রাত চালু থাকা চ্যানেলগুলোর খবর শুনেছেন রজার। তার মেয়েরাও ঘুমায়নি। পৃথিবীবাসীর কাছে এখন এটি স্পষ্ট যে তাদের প্রিয় গ্রহ ভিনগ্রহীদের দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক যতক্ষণ ছিল, ততক্ষণ মিসেস রজার বারবার কল দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখন মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে রজার একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেট কার চালিয়ে স্ত্রীর কাছে যাবেন। কিন্তু টেলিভিশনের মাধ্যমে আশপাশের সব রকম যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার খবর শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

সকালে মন খারাপ করে এমি বলল, ‘বাবা, মায়ের যদি কোনো বিপদ ঘটে! আমরা এখন কী করব?’

এ প্রশ্নের উত্তর রজারের জানা নেই। তিনি তাকালেন ছোট মেয়ে বেটির দিকে। ক্লাস ফাইভে পড়ে। তার এই মেয়ে শান্ত; তবে পড়াশোনায় তুখোড়। স্কুলে সবাই তাকে সেরা ছাত্রী হিসেবে চেনে। খুব কম কথা বলে বেটি। আজ বলল, ‘বাবা, আমি বিজ্ঞানী হয়ে এলিয়েনদের প্রতিরোধ করব।’

দুই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন রজার। তারপর জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন। বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, আকাশে ভোরের আলো ফুটছে। ভাবলেন, আরেকটু সকাল হলেই মেয়েদের নিয়ে গাড়িতে রওনা দেবেন স্ত্রীর উদ্দেশে। পথে যত বাধাই থাকুক, হয়তো তিনি কোনো এক সময় আইওয়াতে পৌঁছবেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রজার এসব ভাবছেন, হঠাৎ খেয়াল করলেন আকাশে ধীরে ধীরে সৃষ্টি হলো বিশাল কালো গর্ত—অতি বিশাল কালো বস্তু; যার ভূমির দিকে হাঁ করা মুখে কণাসমগ্র প্রচণ্ড গতিতে ঘূর্ণমান! বস্তুটি দ্রুত ঢেকে ফেলতে থাকল আদিগন্ত আকাশ। আতঙ্কে রজারের বুক কেঁপে উঠল। তিনি দ্রুত জানালা বন্ধ করে দৌড়ে এসে মেয়েদের বুকের মধ্যে আগলে ধরলেন।

টেক্সাস অঙ্গরাজ্যজুড়ে কিছুক্ষণ শোনা গেল কালো বস্তুর ফোঁস ফোঁস গর্জন এবং ধ্বংসযজ্ঞের শব্দ। সমস্ত জীবন ও সম্পদ গিলে খেয়ে হঠাৎ আবির্ভূত কালো বস্তু। ধ্বংসযজ্ঞ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, কালো বস্তুটি ছিল কৃত্রিমভাবে তৈরি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর! ব্ল্যাকহোলটি উদ্ভূত হয়েছে টেক্সাসের আকাশে এবং কৃষ্ণগহ্বরের ইভেন্ট হরাইজন অঙ্গরাজ্যের সমস্ত কিছু গিলে খেয়েছে। তবে কীভাবে এই কৃত্রিম ব্ল্যাকহোল সৃষ্টি হলো, তার কোনো ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের। এমনকি টেক্সাসবাসীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা–ও তাঁরা বলতে পারছেন না। বিজ্ঞানীরা শুধু অভিমত জানিয়েছেন, ব্ল্যাকহোলের ভেতরে কোনো বস্তু গেলে তা আর কোনো দিনই এই মহাবিশ্বের কোথাও ফিরে আসে না! কোথায় হারিয়ে যায়, সে ধারণাও তাঁদের নেই। তাঁরা শুধু জানেন, ব্ল্যাকহোলের ভেতরে মৃত্যু কষ্টকর। কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর সবকিছু ততক্ষণ লম্বা হতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত অণু-পরমাণুতে বিভাজিত না হয় এবং শেষমেশ পতিত হয় সিঙ্গুলারিটিতে। তবে ওয়ার্মহোল হলে তা চলে যায় প্যারালাল মহাবিশ্বে!

এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র বসে থাকেনি। আধা ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালিয়েছে এরিয়া ফিফটি ওয়ানে অবস্থানরত এলিয়েনের স্পেসশিপে। স্পেসশিপ লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছে পারমাণবিক বোমা। বিস্ফোরণের ঝলকানিতে যুক্তরাষ্ট্রের এরিয়া ফিফটি ওয়ানের আকাশ জ্বলজ্বল করে উঠেছে। শেষমেশ দেখা গেছে, স্পেসশিপ একদম অক্ষত রয়ে গেছে কিন্তু ঝুলন্ত মহাকাশযানটির নিচে পড়ে আছে এলিয়েনের পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ। অবশ্য এলিয়েনের মৃতদেহ পাওয়ার খবরটি পৃথিবীবাসী জানতে পারেননি; কারণ মিডিয়াকর্মীদের সেখানে ঢুকতে দেওয়ার আগেই মৃতদেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গোপনীয়তার সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একটির পর একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার ফলে সবাই আতঙ্কিত। কোথাও দীর্ঘদিনের সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে হঠাৎ লাভা উদ্‌গিরণ হয়ে মারা গেছেন হাজার মানুষ, কোথাওবা প্রচণ্ড তুষারপাতে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেওয়াই সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ইতিমধ্যে পৃথিবীর এক–পঞ্চমাংশ মানুষ এলিয়েনদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

প্রতিটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য সৈন্য বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত; তবে তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। সশরীরে কোনো এলিয়েনকে আক্রমণ করতে দেখা যায়নি। কোনো ভিনগ্রহী অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি। তবে মানুষ মারার ক্ষেত্রে মৌচাকের মতো মহাকাশযানগুলোর ভেতর বসে থাকা ভিনগ্রহীদের ভূমিকা আছে, কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই মত দিয়েছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশ মহাকাশযানের ওপর হামলা চালিয়ে কোনো সুফল পায়নি। স্পেসশিপগুলো অক্ষত রয়ে গেছে; বরং হামলার ফলে শুধু প্রকৃতি ও পরিবেশেরই ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সরকার মহাকাশযানের ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের পরও সে দেশে ধ্বংসযজ্ঞ থামেনি; বরং তা একই গতিতে চলছে।

মিলি স্থানীয় সময় গতকাল বিকেলে টেলিভিশনে দেখেছে, অদ্রি দুই বন্ধুসহ বগা লেকের স্পেসশিপে ঢুকছে। তারপর তিনজনের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা আর জানা সম্ভব হয়নি। সারাটা রাত বগা লেকসংলগ্ন ক্যাম্পে মেয়ের অপেক্ষায় অসহায়ের মতো সময় কেটেছে মিলির। কয়েকবার গোয়েন্দা মেহেরাজকে কল দিয়েছেন। কোনো আপডেট নেই। মিলির মুঠোফোনে বিভিন্ন অচেনা নম্বর থেকে অসংখ্য কল আসছে। তিনি ধরছেন না। শুধু অদ্রিকের মায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন। তারাও দিশেহারা। কারও যে কিছু করার নেই। তবে আশপাশের গাছপালার দিকে তাকিয়ে মিলি এখনো শান্ত আছেন। তাঁর মেয়ের ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটলে গাছ কোনো না কোনো ইঙ্গিতে মিলিকে জানিয়ে দিত, এটি তার প্রবল বিশ্বাস।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা বান্দরবানের স্পেসশিপটিতে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, প্রবেশপথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে! অদ্রিরা যখন ঢুকেছিল, তখন স্পেসশিপটা ছিল মৌচাকের মতো; অথচ তার কিছুক্ষণ পরই তা হয়ে গেছে গোলকের মতো! বন্ধ হয়ে গেছে স্পেসশিপে ঢোকার পথ। বান্দরবানের বগা লেক এখন পর্যন্ত আক্রান্ত না হলেও বঙ্গোপসাগরের জলরাশি হঠাৎ ফুলেফেঁপে উঠছে। জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণ বাঁচাতে সবাই নিজ নিজ ঘরে আতঙ্কে সময় পার করছেন।

লুলুলুর বাগানবাড়ির দেয়াল কাচের মতো যেমন স্বচ্ছ বস্তুতে নির্মিত, তেমনি কোনো স্বচ্ছ বস্তু দিয়ে তৈরি টেবিলের চারপাশে অদ্রিরা বসেছে। লুলুলু বলল, ‘তোমরা জানো যে অতি উচ্চ পর্যায়ের ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সৃষ্ট ১০টি স্পেসশিপ পৃথিবীতে মিশন পরিচালনা করছে। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির জন্য...’

লুলুলুকে কথায় বাধা দিয়ে অদ্রি বলল, ‘আলোচনার আগে আমি একটা বিষয় জানতে চাই।’

‘বলো।’

‘টেলিপ্যাথির মাধ্যমে আমি পৃথিবীর মহাকাশযানে থাকা ট্র্যাপিজিনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমি গাছের সঙ্গেও এভাবে কথা বলতে পারি। গাছদের এক রকম ট্রি-নেটওয়ার্ক আছে, সেখানে তাদের কথামালা তরঙ্গায়িত হয়। সেসব আমি শুনতে পারি। তোমাদের কি এমন কোনো নেটওয়ার্ক আছে, যেখানে সব ট্র্যাপিজিনের কথা থাকে?’

লুলুলু বলল, ‘না, তেমন কোনো নেটওয়ার্ক আমাদের নেই। নেটওয়ার্ক থাকলে আমার কথাগুলো সহজেই অন্যরা জেনে যেত। ভয়ংকর বিপদ হতো তাহলে! তবে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কথা বলার ক্ষমতা আমাদের আছে। আর ট্রি-নেটওয়ার্ক সম্পর্কে থিওরির মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমরা জেনে গেছি। কিন্তু ট্রি-নেটওয়ার্কের কথামালা বোঝার প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কার করা ট্র্যাপিজিনদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে এখনো গবেষণা চলছে। তুমি গাছের কথা বুঝতে পারো; এমনকি তাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে পারো জেনে অবাক হয়েছি। এ বিষয়ে তোমার কাছ থেকে পরে বিস্তারিত শুনব।’

‘ঠিক আছে। এবার তাহলে আসল আলোচনা শুরু করো।’

‘যা বলছিলাম, এই গ্রহে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতে যে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা। তাই আমি নানাভাবে তাতে বাগ সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে সফল হতে পারিনি। প্রোগ্রামটা যে অপারেটিং সিস্টেমে ইনস্টল করা, তাতেও কোনো সিকিউরিটি হোল খুঁজে পাইনি। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহার করে পৃথিবী অধিগ্রহণের এই মিশন পরিচালনার জন্য যেসব সার্ভার ও যন্ত্রপাতি ট্র্যাপিজিনরা ব্যবহার করছে, তার তালিকা ও নকশা আমার কাছে আছে।’

কথাটুকু বলে লুলুলু কাচের টেবিলের উপরিতল স্পর্শ করতেই তাতে নানা রকম ফোল্ডার দেখা গেল। টাচস্ক্রিন টেবিলের একটি ফোল্ডারে ঢুকে তার একটি ফাইলে লুলুলু আঙুল দিয়ে টোকা দিতেই খুলে গেল ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি সৃষ্টিকারী সম্পূর্ণ স্থাপনার নকশা। অদ্রিক বলল, ‘বাহ্, নকশা দেখে ভালো লাগল! সার্ভার সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। এমনকি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে আমি কাজ করা শিখেছি।’

লুলুলু বলল, ‘পুরো সিস্টেমের সার্ভার আছে চারটি লোকেশনে। জিওগ্রাফিক্যাল রিডানডেন্সি নিশ্চিত করার জন্য এগুলো চার স্থানে রাখা হয়েছে।’

অদ্রিক বলল, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই।’

সবাই অদ্রিকের দিকে তাকাল। লুলুলু বলল, ‘বলো।’

অদ্রিক বলল, ‘লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সব ফাইল একবারে মুছে দেওয়ার কমান্ড আমার জানা আছে। সব ফাইল একবারে মুছে দিলেই তো সিস্টেম ক্র্যাশ করবে!’

তালুত অদ্রিকের কথায় ভীষণ খুশি হলো। কিন্তু লুলুলু বলল, ‘আসলে এটা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে নয়; ভিন্ন এক অপারেটিং সিস্টেমে। ট্র্যাপিজিনবিজ্ঞানীরা অপারেটিং সিস্টেমটা এমনভাবে বাছাই করেছে যেন এ ধরনের কমান্ড দিয়ে কোনো ফাইল মুছে ফেলা সম্ভব না হয়। তা ছাড়া আরও একটা সমস্যা আছে। ফাইলগুলো এনক্রিপ্টেড। আমি ডিক্রিপ্ট করতে পারি; তাতেও লাভ হয়নি।’

অদ্রিক ও তালুতের মুখ চুপসে গেল। অদ্রি জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে উপায়? আর কোনো উপায় কি আছে?’

লুলুলু বলল, ‘একটা উপায় আছে। এই ডিজাইনের দিকে দেখো।’

সবাই কাচের টেবিলের নকশার দিকে তাকাল। লুলুলু বলে চলল, ‘নকশা থেকে দেখতে পাচ্ছ, জিওগ্রাফিক্যাল রিডানডেন্সির জন্য সার্ভারগুলো রাখা হয়েছে চার স্থানে। তবে সব স্থানেই মূলত একই সার্ভার সেট। প্রতিটি স্থানে নিরাপত্তার জন্য মিরর সার্ভারও আছে; তবে সেটি বিবেচনায় না আনলেও হবে। কারণ, আমরা যদি এ চার স্থাপনা একসঙ্গে ধ্বংস করতে পারি, তাহলে সম্পূর্ণ সিস্টেম অকার্যকর হয়ে পড়বে। বুঝতেই পারছ, তোমরা তিনজন আসাতে কত বড় সুবিধা হয়েছে!’

তালুত বলল, ‘শুধু বলেন, কীভাবে সার্ভার ধ্বংস করব। আমার হাত নিশপিশ করছে।’

লুলুলু বলল, ‘আমরা চারজন নিফ্রাইট বিস্ফোরক নিয়ে জিরোস্পেস গেট দিয়ে চলে যাব চারটি লোকেশনে। তারপর একসঙ্গে ধ্বংস করব চার স্থাপনা। তবে একটা সমস্যা কিন্তু রয়ে যাবে।’

অদ্রি বলল, ‘সমস্যাটা কী, তা আমি ধরতে পেরেছি।’

তালুত জিজ্ঞাসা করল, ‘কী?’

অদ্রিক বলল, ‘আমিও ধরতে পেরেছি। আমার আব্বু ভীষণ রাগ করবে; মা কষ্ট পাবে।’

তালুত বুঝতে না পারায় অস্থির হয়ে উঠল। বলল, ‘কী সমস্যা, আমাকে খুলে বল।’

অদ্রিক উত্তর দেওয়ার আগেই অদ্রি উত্তর দিল, ‘আমরা আর কোনো দিন পৃথিবী গ্রহে ফিরে যেতে পারব না।’

অদ্রিক যোগ করল, ‘এসব সার্ভারেই আছে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির প্রোগ্রাম, যার মাধ্যমে সৃষ্ট “প্রায়বাস্তব স্পেসশিপ”গুলো আমরা পৃথিবীতে দেখেছি। সার্ভারগুলো ধ্বংস করলে স্পেসশিপগুলোও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমাদের ফেরার জন্য ডেসটিনেশন স্পেসশিপগুলো না থাকলে আমরা আর পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারব না! আর এই গ্রহে থেকে যাওয়া মানে মৃত্যু নিশ্চিত। খারাপ ট্র্যাপিজিনরা নিশ্চয় একসময় আমাদের খুঁজে বের করবে এবং মেরে ফেলবে।’

লুলুলু বলল, ‘এই গ্রহে তোমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কারণ, তোমাদের সুরক্ষার ভার এখন আমার হাতে। এই বাড়ির লোকেশন ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ জানে না। এখানেই তোমরা জীবন পার করতে পারবে।’

ঠিক এমন সময় কড়কড়ে আওয়াজে সবাই সচকিত হলো। লুলুলু এক পাশে তাকাল ভীতভাবে। চারজন যেখানে বসে ছিল, তার অদূরেই তৈরি হলো জিরোস্পেস গেট। অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে হাজির হলো ১০ এলিয়েন! তাদের কমান্ডার ক্রুদ্ধভাবে লুলুলুকে নির্দেশ করে ট্র্যাপিটো ভাষায় বলল, ‘বিশ্বাসঘাতক। ওই তিন প্রাণীর সঙ্গে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ।’

লুলুলু বসা থেকে উঠল এবং খানিক সামনে গিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পড়ল। তার দেখাদেখি অদ্রিরাও তার পেছনে দাঁড়াল। লুলুলু ট্র্যাপিটো ভাষায় বলল, ‘তোমরা এখানে!’

ট্র্যাপিজিন কমান্ডার বলল, ‘কী! আমাদের দেখে অবাক হচ্ছিস? কুকুচুকে তো চিনিস। তুই হচ্ছিস সিকিউরিটি কালপ্রিট আর কুকুচু হচ্ছে সিকিউরিটি এক্সপার্ট। ওই তিন আসামি এবং তাদের প্রহরী তিন রোবট উধাও হওয়ার পরই কুকুচু আমাদের জানায়, জিরোস্পেস গেটের রাউটিং চেঞ্জ করে তুই তাদেরকে নাকুচু মরুভূমিতে নিয়ে গেছিস। মনে করেছিস, লগ মুছে দিলেই কাজ হয়ে গেল! কুকুচুর নিজস্ব একটা সার্ভারেও একই লগ জেনারেট হতে থাকে। ওই লোকেশনে গিয়ে তোদের পাইনি ঠিকই, কিন্তু তোর যানবাহন বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর যে প্রকারের এবং পরিমাণের পরিবর্তন ঘটিয়েছে, তা অফিসে পাঠিয়ে তোদের জার্নি পাথওয়ে উদ্ধার করেছি। বুঝতেই পারছিস, তুই নিজেকে যতটা পণ্ডিত ভাবিস, তার চেয়েও বড় পণ্ডিত এই গ্রহে আছে।’

অদ্রিরা এলিয়েন কমান্ডারের কোনো কথা না বুঝলেও এটুকু বুঝতে পারল, তাদের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে। লুলুলু চোখ ঘুরিয়ে অদ্রিদের দিকে একবার তাকাল; হয়তো ক্ষমা চাওয়ার জন্য। অন্যদিকে, কমান্ডার এলিয়েন ট্র্যাপিটো ভাষায় চিৎকার করে উঠল, ‘সৈনিকগণ, অস্ত্র তাক করো।’

(চলবে...)

আরও পড়ুন