প্রজেক্ট অশ্বত্থামা

অলংকরণ: এস এম রাকিব

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ভেতর ঢুকলে প্রথমেই নজরে আসে বিশালাকৃতির একটা হলঘর। এই মুহূর্তে সেই হলঘরের ঠিক মাঝখানে নিজের ১২ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আরেফিন রহমান। হলঘরের জায়গায় জায়গায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময়ের অনেক বাঙালি ও বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর হলোগ্রাফিক ছবি, যাঁরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নানা অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের ছবির সামনে তাঁদের অবদানের নমুনা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

‘স্যার!’

১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে একজনের ডাক শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে তাকালেন আরেফিন রহমান। দেখলেন, তাঁর সেই শিক্ষার্থী জাদুঘরের প্রবেশপথের দিকে তাকিয়ে আছে।

‘হ্যাঁ, রুমি। বলো।’

‘স্যার,’ প্রবেশপথের আর্কওয়ে মেটাল ডিটেক্টরের ভেতর দিয়ে ঢুকতে থাকা এক লোকের দিকে আঙুল তাক করে রুমি বলল, ‘ওই লোকটা না মিউজিয়ামের মেইন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছিল?’

লোকটির দিকে তাকালেন আরেফিন। গায়ে ধূসর রঙের পুরোনো ও ময়লা একটা কোট আর মাথায় একটা ময়লা হ্যাট পরিহিত লোকটি ইতিমধ্যেই জাদুঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছেন। তাঁর কোটের আস্তিনের নিচ থেকে বেরিয়ে থাকা দুই হাত এবং মাথার হ্যাটের নিচে মুখমণ্ডলের যতখানি দেখা যাচ্ছে, পুরোটুকুই অসংখ্য দগদগে ঘায়ে ভর্তি। কিছু ঘা থেকে আবার পুঁজ বেরিয়ে আছে!

‘হ্যাঁ, এই লোকই বাইরে ভিক্ষা করছিল।’ লোকটির দিকে তাকিয়ে থেকেই গম্ভীর স্বরে বললেন আরেফিন। জাদুঘরে ঢোকার সময় লোকটির হাতে কিছু টাকা দিয়েছিলেন তিনি। দুজন শিক্ষার্থীও তাঁর দেখাদেখি কিছু টাকা দিয়েছিল। আরেফিন রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবার বললেন, ‘জানো, এই মিউজিয়াম যখন হয়েছে, তখন থেকেই লোকটাকে দেখছি আমি। মিউজিয়ামে এলেই দেখি, গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছে লোকটা। আবার যখন মিউজিয়ামের বাইরে তাকে দেখা যায় না, তখন তাকে পাওয়া যায় মিউজিয়ামের ভেতরে। আমি কয়েকবার কথাও বলার চেষ্টা করেছি লোকটার সঙ্গে। কিন্তু লাভ হয়নি।’

‘কেন লাভ হয়নি, স্যার?’ প্রশ্নটা করল পায়েল নামের এক ছাত্রী।

‘কথা বলতে পারে না বেচারা।’ আরেফিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

‘কিন্তু স্যার,’ রুমি আবার প্রশ্ন করল, ‘লোকটাকে মিউজিয়ামের কেউ কিছু বলে না?’

‘আগে বলত।’ আরেফিন আবার বললেন, ‘প্রথম প্রথম লোকটা ঢুকতে চাইলে গার্ডরা বাধা দিত, ঢুকতে দিত না। একবার তো ঢোকার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিল লোকটা! তখন গার্ডরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে বের করে দিয়েছিল।’

‘তারপর?’

‘তারপর আর কী? ব্যাপারটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নাড়া দেয় এবং তারা আন্দোলন শুরু করে লোকটার পক্ষ নিয়ে। টানা পাঁচ দিন চলেছিল সেই আন্দোলন! একপর্যায়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এর পর থেকে এই লোকের জাদুঘরে ঢোকা নিয়ে কেউ আর কোনো রকম আপত্তি করেনি। আসলে একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবি মানতে যে কেউ বাধ্য!’ কথাগুলো বলে কয়েক মুহূর্ত লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলেন আরেফিন রহমান। তারপর আবার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বললেন, ‘যাকগে! চলো, মিউজিয়ামটা ঘুরে দেখা যাক। আমি তো এখানে অনেকবার এসেছি, কিন্তু তোমাদের তো প্রথমবার।’

‘জি স্যার, চলুন।’

অতঃপর ছাত্রছাত্রীদের দলটিকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের প্রথম হলঘরটি ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আরেফিন রহমান। অবশ্য তেমন কষ্ট করতে হলো না তাঁকে। কারণ, বিজ্ঞানীদের হলোগ্রাফিক ছবিগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই ছবিগুলো কথা বলতে শুরু করে। প্রত্যেক বিজ্ঞানীর হলোগ্রাফিক ছবিই প্রথম ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের মধ্যে সেই বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত জীবনী বর্ণনা করে। তারপর হাতের ইশারায় সামনে রাখা সেসব বিজ্ঞানীর বিভিন্ন অবদান আর অর্জনের নমুনাগুলো দেখিয়ে সেগুলোরও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। আর সেটা এতটাই প্রাণবন্তভাবে যে মনে হয়, কোনো হলোগ্রাফিক ছবি নয়, স্বয়ং সেসব বিজ্ঞানী নিজেরাই নিজেদের জীবন ও কাজ সম্পর্কে বলছেন!

প্রথম হলঘর পুরোটা ঘুরে ফেলার পর আরেফিন রহমান সবাইকে নিয়ে দ্বিতীয় হলঘরের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল তাঁর এক ছাত্রী।

‘স্যার!’

‘হ্যাঁ কোয়েল, বলো।’ ছাত্রীটির দিকে তাকালেন আরেফিন।

এককোণে দাঁড়িয়ে থাকা একটি হলোগ্রাফিক ছবির দিকে ডান হাতের তর্জনী তাক করে কোয়েল বলল, ‘স্যার, আমরা তো ওনার কাছে গেলামই না!’

কোয়েল যেদিকে তার তর্জনী তাক করে রেখেছে, সবার দৃষ্টি ঘুরে গেল সেদিকে। সবাই দেখতে পেল, ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে ষাটোর্ধ্ব এক ভদ্রলোকের হলোগ্রাফিক ছবি। কোনো সন্দেহ নেই যে তিনিও একজন বিজ্ঞানী। কিন্তু এই বিজ্ঞানী সম্পর্কে কিছুই জানে না ১২ শিক্ষার্থীর একজনও! এমনকি তাঁর ছবিও কখনো দেখেনি তারা। যদিও তাদের শিক্ষক আরেফিন রহমান কিছুটা জানেন এই ভদ্রলোক সম্পর্কে। ৩০ বছর আগে এই ভদ্রলোকের একটা আবিষ্কার সারা দেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। আরেফিন তখন তাঁর এই শিক্ষার্থীদের বয়সী ছিলেন।

‘উনি কে, স্যার?’ প্রশ্ন করল জাওয়াদ নামের এক ছাত্র, ‘আমাদের কোনো বইতে বা অন্য কোথাও কখনো ওনার কোনো ছবি দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না!’

‘উনি ডক্টর অশ্বিন কর্মকার।’ হলোগ্রাফিক ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকেই গম্ভীর স্বরে জবাব দিলেন আরেফিন। তারপর সেদিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন, ‘চলো, তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিই ওনার সঙ্গে।’

আরও পড়ুন

‘চলুন স্যার।’

শিক্ষককে অনুসরণ করতে লাগল শিক্ষার্থীরা। ডক্টর অশ্বিন কর্মকারের হলোগ্রাফিক ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই নড়েচড়ে উঠল ছবিটা। তারপর মুখে একটা আন্তরিক হাসি ফুটিয়ে কথা বলতে শুরু করল।

‘নমস্কার। আমি ডক্টর অশ্বিন কর্মকার। আমার জন্ম ১৯৫৭ সালের ৮ এপ্রিল ঢাকায়। বেড়ে ওঠা...’

সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল অশ্বিন কর্মকারের হলোগ্রাফিক ছবিটির কথাগুলো। সেই সঙ্গে তারা এটাও খেয়াল করল, অন্যান্য বিজ্ঞানীর মতো তাঁর সামনে বিজ্ঞানের কোনো শাখায় তাঁর অবদানের কোনো নমুনা রাখা নেই। কারণটা অবশ্য খানিক বাদে হলোগ্রাফিক ছবিটাই বলে দিল, বিজ্ঞানীর শিক্ষাজীবন আর কর্মজীবন নিয়ে কথা বলা শেষ করার পর।

‘...আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর একসময় ছিল আমার পৈতৃক বাড়ি। আমার বাবা অরবিন্দ কর্মকার এই বাড়ি বানিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন পৌরাণিক চরিত্র অশ্বত্থামার ভক্ত, তাই অশ্বত্থামার সঙ্গে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলেন অশ্বিন। ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে অশ্বত্থামার গল্প শুনতে শুনতে আমিও চরিত্রটার ভক্ত বনে গিয়েছিলাম। হয়তো সেই ভক্তি থেকেই বড় হয়ে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করার সময় একদিন হঠাৎ একটা ভাবনা উঁকি দিয়েছিল মাথায়—কোনোভাবে যদি প্রাণীর দেহের কোষগুলোর ক্ষয় রোধ করা যায়, তাহলে তো যেকোনো প্রাণীই অমর হতে পারে। ঠিক অশ্বত্থামার মতো! এই ভাবনা থেকেই জন্ম নিয়েছিল “প্রজেক্ট অশ্বত্থামা”। আমি আমার সবটুকু ঢেলে দিয়েছিলাম এই প্রজেক্টের পেছনে। প্রায় ৩২ বছরের চেষ্টার পর অবশেষে আমি আবিষ্কার করি সেই ফর্মুলা, যেটা অনুসরণ করে এমন একটা সিরাম বানানো সম্ভব, যার সাহায্যে যেকোনো প্রাণীর দেহের সব কোষকেই পুনর্নির্মাণযোগ্য করে তোলা সম্ভব। অর্থাৎ যেকোনো আঘাত কিংবা বিষক্রিয়া কিংবা বয়সের ভারে ক্ষয় হতে থাকা প্রাণীদেহের কোষগুলো পুনর্নির্মিত হবে এই সিরামের প্রভাবে, যার ফলে প্রাণীর মৃত্যু হবে না! তবে আমার এই আবিষ্কারের আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আমি আমার এই আবিষ্কারের পেটেন্ট জমা দিতে গেলে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় থেকে আমার এই আবিষ্কারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তাদের ধারণা, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে পৃথিবী ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাতে অবশ্য আমি দমে যাইনি! বরং সিদ্ধান্ত নিলাম, ব্যক্তিগত ল্যাবরেটরিতে বসেই বানাব অশ্বত্থামা সিরাম!’ এ পর্যন্ত বলে ক্ষণিকের জন্যে থামলেন অশ্বিন কর্মকার। হঠাৎ করেই তাঁর মুখমণ্ডল ছেয়ে গেল গাম্ভীর্যের কালো মেঘে, দুচোখে ভেসে উঠল সীমাহীন যন্ত্রণা। কে বলবে, এ কেবলই এক নিষ্প্রাণ হলোগ্রাফিক ছবি? ছবিটি শোকার্ত স্বরে আবার বলতে লাগল, ‘আমি একটিবারের জন্যও ভাবিনি, অশ্বত্থামার অমরত্ব আশীর্বাদ ছিল না, ছিল অভিশাপ। যদি ভাবতাম, তাহলে হয়তো আজকের দিনটা দেখতে হতো না! বিজ্ঞান অভিশাপ বয়ে আনার জন্য নয়, আশীর্বাদ বয়ে আনার জন্য। তাই আমার প্রজেক্ট অশ্বত্থামা নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। মানবজাতির মঙ্গল হোক।’

থেমে গেল ডক্টর অশ্বিন কর্মকারের হলোগ্রাফিক ছবিটি। আরেফিন রহমানের ছাত্রছাত্রীরা এরপরও কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইল হতবাক হয়ে। তারপর তারা তাকাল আরেফিন রহমানের দিকে।

‘প্রথম দিকের কথাগুলো ওনার ডায়েরি থেকে নেওয়া,’ আরেফিন বললেন, ‘আর শেষের কথাগুলো আজ থেকে ৩০ বছর আগে উনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার আগে নিজের শেষ চিঠিতে লিখে রেখে গিয়েছিলেন।’

‘উনি কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন, স্যার?’ প্রশ্ন করল পায়েল।

‘সে সময়কার খবরের কাগজে পড়েছিলাম, বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের সেই নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে ওনাকে আর বাইরে কোথাও তেমন একটা দেখা যায়নি।’ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক বলতে লাগলেন, ‘ডক্টর অশ্বিন কর্মকার নিজের ব্যক্তিগত ল্যাবে বসে সেই অশ্বত্থামা সিরাম বানাচ্ছেন—এই সন্দেহে একদিন পুলিশ তাঁর বাসায়, অর্থাৎ এখনকার এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে রেইড করেছিল। কিন্তু তাঁর টেবিলের ওপর রাখা এই চিঠি ছাড়া আর কিছুই পায়নি তারা। ডক্টর অশ্বিনকেও আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক দিন পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেও যখন তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না, তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল যে প্রথমে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা জারি আর তারপর নিজের ল্যাবে বসে অশ্বত্থামা সিরাম বানানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার গ্লানি সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আর চিঠিটা ছিল তাঁর সুইসাইড নোট। যদিও তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়নি! সাত বছর পর সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’

‘আচ্ছা!’ রুমি বলে উঠল, ‘এই কারণেই তাহলে হলোগ্রাফিক ছবিটা ওনার জন্মতারিখ বললেও মৃত্যুর কোনো তারিখ বলেনি। তাই তো বলি, উনি এখনো বেঁচে থাকলে তো ওনার বয়স এক শর ওপর হওয়ার কথা!’

‘হুমম।’ মাথা দোলালেন আরেফিন রহমান। তারপর শিক্ষার্থীদের তাড়া দিয়ে বললেন, ‘যা–ই হোক, চলো এবার পরের হলরুমটায় যাওয়া যাক।’

‘জি স্যার, চলুন।’

আরও পড়ুন

আরেফিন রহমান দ্রুত হাঁটা ধরলে শিক্ষার্থীরাও দ্রুত কদমে তাঁর পেছন পেছন হাঁটতে লাগল। তাড়াহুড়ায় তারা খেয়ালও করল না, তাদের চেয়ে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগে এতক্ষণ তাদের কথাবার্তা শুনছিলেন সেই ভিখারি লোকটি।

আর কেউ না জানুক, তিনি জানেন যে কী হয়েছিল ডক্টর অশ্বিন কর্মকারের সঙ্গে।

নিজের ৩২ বছরের পরিশ্রমের ওপর বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় রীতিমতো পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছিলেন ডক্টর অশ্বিন। তিনি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, হয় এসপার, নয় ওসপার! তারপর দিনের পর দিন হাড়ভাঙা খাটুনি করে তিনি তৈরি করে ফেলেন অশ্বত্থামা সিরাম! সেটা তিনি ইনজেক্ট করলেন নিজের দেহেই। এরপর জিবে ঠেকালেন নিজের ডান হাতের তর্জনী, যাতে মাখানো ছিল ভয়ানক এক বিষ! আর তারপর...

প্রজেক্ট অশ্বত্থামা সফল!

প্রাণঘাতী কেমিক্যালের স্বাদ নিয়েও তিনি জীবিত।

কিন্তু এ কী! তার পুরো শরীর ভরে উঠছে দগদগে ঘায়ে! অশ্বত্থামা সিরাম তার দেহের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করছে বটে, কিন্তু বিকৃত রূপে! অশ্বিনের দেহে ঘায়ের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছিল, ক্রমাগত পুঁজ ঝরছিল সেসব ঘা থেকে। নিজের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য হেন চেষ্টা নেই, যা তিনি করেননি। কিন্তু লাভ হয়নি কোনো! একপর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে একটা চিঠি লিখে রেখে সবকিছু ছেড়ে পালান তিনি।

কোটের আস্তিনে চোখ মুছলেন ভিক্ষা করা লোকটি।

কেউ তো তাঁকে মনে রেখেছে! এটাই–বা কম কী?