পুরোনো টাওয়ার (সপ্তম পর্ব)

অলংকরণ: আরাফাত করিম

তেরো

‘রেড ডোবার নিজেই সব নষ্ট করে দিল। গয়না ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় শহর ছেড়ে কেটে পড়ার তালে ছিল। ব্যাপারটা টের পেয়ে যাই আমি, তখন পেছনে লাগি। ওদিকে পেছনে পুলিশও লেগে আছে, তাই প্লেনে বা বাসে পালানোর উপায় ছিল না ওর। কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লাফ মেরে এক মালগাড়ির বগিতে উঠে যায় সে।’

‘তখনো পিছে লেগে ছিলে তুমি?’

‘দুই–তিনবার হারিয়ে ফেললেও সৌভাগ্যক্রমে আবার ওর চিহ্ন পেয়ে যাই আমি। শহর ছেড়ে বেরিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের অন্য প্রান্তে চলে যায়। তারপরই ভাগ্যের ফেরে পড়ে। রেল পুলিশের এক গোয়েন্দা ওকে চিনে ফেলে। ধাওয়া করে। এ পর্যন্ত ওকে অনুসরণ করে যাচ্ছিলাম আমি। তখনো আশা ছিল, দাগি আসামির ছদ্মবেশে ওর আস্থা অর্জন করতে পারব। কিন্তু ব্যাপক ধাওয়া শুরু হয়ে গেলে অফিসারদের সঙ্গে যোগ দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকল না আমার।’

‘ডোবারকে তারা ধরে ফেলল?’

‘অত সহজে কি আর ধরা পড়ে! ঘটনাচক্রে ও আবার রেলেই কাজ করত একসময়। আরও অবাক ব্যাপার, ও যেখানে কাজ করত, সে জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয়। কোনোভাবে একটা রেলরোডের হ্যান্ডকার চুরি করে, আমাদের কাছ থেকে সরে পড়ল ও। কিন্তু খুব বেশি দূর যেতে পারল না। তার আগেই একটা বাঁকের কাছে এসে ওর হ্যান্ডকার ছিটকে পড়ে লাইন থেকে। ভালো চোট পায় ডোবার।’

‘মরে যায়নি তো?’ জিজ্ঞেস করল কিশোর।

‘না। এখন হাসপাতালে আছে। কিন্তু ডাক্তাররা বলছেন, বাঁচার আশা সামান্যই।’

‘ওকে কি গ্রেপ্তার করা হয়েছে?’

‘তা তো হয়েছেই। গয়নার দোকানে ডাকাতি আর অভিনেতার ড্রেসিংরুমে চুরির দায়ে অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে ওকে। তবে কোনোটারই জবাব দেওয়া মনে হয় সম্ভব হবে না ওর পক্ষে।’

‘তাহলে টাওয়ার ডাকাতির সঙ্গে ওর জড়িত থাকার কোনো সূত্রই পাওনি তুমি?’

‘কিচ্ছু না।’

হতাশ হয়েছে, তা চেহারায়ই প্রকাশ পেল ছেলেদের। স্বীকারোক্তি না দিয়ে যদি মারা যায় রেড ডোবার, ওর সঙ্গে সঙ্গে টাওয়ার রহস্যেরও মৃত্যু ঘটবে। মি. পিটারসনও কখনো রক্ষা পাবেন না চুরির দায় থেকে। জীবনভর এক বিশ্রী সন্দেহের কালো মেঘ খেলা করবে তাঁকে ঘিরে।

‘ডোবারের সঙ্গে কথা হয়েছে তোমার?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘সুযোগ পাইনি—ওর জ্ঞান ফেরেনি।’ জবাব দিলেন রাশেদ পাশা।

‘তাহলে আর স্বীকারোক্তি পাবে কী করে ওর কাছ থেকে?’ কিশোর বলল।

কাঁধ ঝাঁকালেন মি. পাশা। ‘বলা যায় না, পেতেও পারি। ডোবারের যদি জ্ঞান ফেরে, আর টের পায় যে বাঁচার আশা নেই, তাহলে হয়তো সব স্বীকার করে যেতেও পারে।’

‘কোথায় ওকে রাখা হয়েছে?’

‘মারবেনির এক হাসপাতালে। ওখানকার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারকে আমি আমার মিশনের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে এসেছি। তিনি কথা দিয়েছেন, জ্ঞান ফিরে, ডোবারের কথা বলার মতো অবস্থা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করে জানাবেন।’

‘এদিকেই আশপাশে কোথায় যেন কাজ করত রেড ডোবার, বললে?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।

‘হ্যাঁ। রেল কোম্পানিতে। রেলে থাকতেই কয়েকজন মালগাড়ি লুটেরার সঙ্গে খাতির হয় ওর। একবার জেল খেটে বেরিয়েই পেশাদার অপরাধীর খাতায় নাম লেখায়। আমার মনে হয়, এখানে আসার পেছনে ওর কারণ হলো, এদিকটা ওর চেনা।’

‘মিসেস পিটারসনকে আমি কথা দিয়েছিলাম, তুমি এলে জানাব তাঁকে,’ বলল কিশোর। ‘ডোবারের কথা বলব?’

‘বোলো। শুনলে হয়তে ভালো লাগবে ওর। তবে কাউকে বলতে নিষেধ করে দিয়ো।’

ফোন করল কিশোর। খানিকটা রেখেঢেকে ওর চাচার অভিযানের কথা জানাল মিসেস পিটারসনকে। শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন অভিযুক্তের স্ত্রী। অনেকটাই স্বস্তি পেলেন। কথা দিলেন, কাউকে কিছু বলবেন না।

কিশোর কথা শেষ করে ফোন রাখতে না রাখতেই ডোরবেল বেজে উঠল। দরজা খুলতে দেখল, ‘বিশিষ্ট’ প্রাইভেট ডিটেকটিভ জনাব ডগলাস ফ্রেড দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়।

‘তোমার চাচা বাসায়?’

‘হ্যাঁ। ভেতরে আসুন,’ লিভিংরুমে নিয়ে এল তাকে কিশোর।

যতই নিজেকে বিশিষ্ট গোয়েন্দা বলে পরিচয় দিক ফ্রেড, রাশেদ পাশার সামনে কেঁচো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নার্ভাস ভঙ্গিতে কাশল খুক খুক করে।

‘গুড আফটারনুন, ফ্রেড,’ নরম স্বরে বললেন মি. পাশা। ‘বসবে না?’

চেয়ারে বসতে পেরে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল গোয়েন্দা ফ্রেড। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে আনল ছেলেদের ওপর। ওদের সামনে কথা বলতে চাইছে না বুঝতে পেরে মি. পাশা বললেন, ‘তোমার কাজটা একান্ত ব্যক্তিগত না হলে ওদের সামনেই বলতে পারো।’

‘ইয়ে, মনে হচ্ছে সমস্যা নেই বলতে,’ বলল ফ্রেড। ‘শুনলাম এই বিলসন-কেসটায় কাজ করছেন আপনি।’

‘করতেও পারি।’

‘কয়েক দিন শহরের বাইরে ছিলেন আপনি,’ চতুরতার সঙ্গে বলল ফ্রেড, ‘তাতে ঠাহর করলাম, কেসের কাজেই গিয়েছিলেন!’

‘দারুণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছ,’ স্মিত হাসলেন মি. পাশা অতিথির দিকে তাকিয়ে।

উসখুস করে চেয়ারে নড়েচড়ে বসল ফ্রেড। ‘ইয়ে, আমিও তো কাজ করছি কেসটায়—ওই হাজার ডলার পুরস্কারটা জেতার ইচ্ছা আমার। না, না। পেলে অবশ্যই আপনার সঙ্গে ভাগ করে নেব। তাই বলছিলাম, কোনো সূত্রটুত্র পেয়েছেন কি না...।’

মুখের হাসি মিলিয়ে গেল মি. পাশার। বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘যদি পেয়েও থাকি, সেটা আমার ব্যাপার। আর টাওয়ার কেসে কাজ করি কি না, সেটাও। তোমার কাজ তুমি করোগে, ফ্রেড। আর টাকা ভাগাভাগির দরকার নেই আমার।’

‘ইয়ে, রাগ করবেন না মি. পাশা,’ আমতা আমতা করে বলল ফ্রেড। ‘আমি তো শুধু চাইছি, রহস্যটার একটা সুরাহা হোক। তাই ভেবেছিলাম, দুজন একসঙ্গে কাজ করতে পারলে সুবিধা হতো আরকি। শুনলাম, অফিসারদের সঙ্গে মিলে নাকি দুর্ধর্ষ অপরাধী রেড ডোবারকে ধাওয়া করে এসেছেন এদিকে।’

এবার নড়েচড়ে বসার পালা মি. পাশার। রেড ডোবারের আটকের সংবাদটা যে রকি বিচ পর্যন্ত চলে এসেছে, ধারণা ছিল না তাঁর। অনুমান করলেন, নিশ্চয়ই লোকাল পুলিশের কাছে সংবাদ এসেছে। সেখান থেকে কোনোভাবে খবরটা সংগ্রহ করেছে ফ্রেড।

‘তো, তাতে কী হয়েছে?’ স্বাভাবিক গলায় জানতে চাইলেন তিনি।

‘টাওয়ারে চুরির সঙ্গে কোনো যোগসাজস ছিল নাকি ডোবারের?’

‘আমি বলব কীভাবে?’

‘ওটাই না বের করতে গিয়েছিলেন আপনি?’

‘তোমাকে তো বললামই, সেটা আমার ব্যাপার।’

খানিকটা চুপসে গেল ডিটেকটিভ ফ্রেড। ‘হুঁ, বুঝতে পারছি, কোনো সহযোগিতা করতে চাইছেন না আপনি, মি. পাশা। ভাবছিলাম, কোন হাসপাতালে ডোবার আছে, সেখানে গিয়ে ওর সঙ্গে কেসের ব্যাপারে একটু কথা বলে আসব।’

ঠোঁট দুটো পরস্পরের সঙ্গে এঁটে বসল মি. পাশার। ‘তা তো করতে পারবে না, ফ্রেড। লোকটা অজ্ঞান হয়ে আছে। ডাক্তাররা দেখা করতে দেবেন না তোমাকে।’

‘চেষ্টা তো করে দেখি। একসময় না একসময় জ্ঞান ফিরবেই ডোবারের, তখন না হয় কথা বলব। ততক্ষণ ওখানেই থাকব আমি। ছয়টায় একটা প্লেন আছে। সাড়ে পাঁচটায় বাসা থেকে বেরোব আমি। আজ রাতেই কথা হচ্ছে আমার ডোবারের সঙ্গে,’ নিজের বুকে হাত রেখে বলল ফ্রেড। ‘চিন্তা করবেন না, কী কথা হয়, সব জানাব আপনাকে।’

‘যা ভালো বোঝো, করো,’ বললেন মি. পাশা। ‘তবে আমার উপদেশ শুনলে, হাসপাতালের ধারেকাছেও যেয়ো না তুমি। সবকিছু গুবলেট করে ফেলবে। সময় হলে আপনিই কথা বলবে ডোবার।’

‘তাহলে তো দেখছি, সত্যিই কোনো ব্যাপার আছে!’ বিজয়ীর সুর ফ্রেডের গলায়। ‘খুব ভালো। আজ রাতেই ওর স্বীকারোক্তি নিয়ে আসছি আমি!’ বলেই উঠে পড়ল ফ্রেড। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

ফ্রেড বেরিয়ে যাওয়ার পর ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন মি. পাশা। মুষড়ে পড়েছেন। ‘এই লোকটা...ও যদি কোনোভাবে রেড ডোবারকে প্রশ্ন করার সুযোগ পায়, নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নেবে ডোবার। কিছুই জানা যাবে না আর ওর কাছ থেকে।’

এই সময় ফোন বাজল। উদ্‌গ্রীব হয়ে মি. পাশার ফোনালাপ শুনতে লাগল ছেলেরা। ‘হ্যালো...জি, জি, ডাক্তার সাহেব...তাই নাকি?...আগামীকাল সকাল পর্যন্ত টেকার সম্ভাবনা আছে ডোবারের?...আমি দেখা করতে পারি...গুড...থ্যাঙ্ক ইউ। গুড বাই।’

রিসিভার নামিয়ে ছেলেদের দিকে ফিরলেন মি. পাশা। ‘ওই ছয়টার প্লেনটা ধরেই মারবেনি রওনা হব আমি। কিন্তু ফ্রেডও যদি যায়, সব ভণ্ডুল করে দিতে পারে সে। আগেভাগে ডোবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে মারবেনি পুলিশ আর আমাকে।’

‘ছয়টার পরের প্লেন আবার কয়টায়?’ জিজ্ঞেস করল কিশোর।

‘সাতটায়।’

‘তাহলে তো ওটা ধরেই যেতে পারে ফ্রেড। তোমাদের পরে ডোবারের সঙ্গে দেখা করতে পারে। চল তো রবিন, দেখি চাচাকে কোন হেল্প করতে পারি কি না!’

‘তোমরা দুজন আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে বসো না যেন,’ সতর্ক করে দিলেন মি. পাশা।

‘করব না।’

রবিনকে নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল কিশোর। হনহন করে হাঁটা শুরু করল রাস্তা দিয়ে।

‘তোমার পরিকল্পনাটা কী?’ রাস্তার কোনায় এসে জানতে চাইল রবিন।

‘যেভাবে হোক, ডিটেকটিভ ফ্রেডকে সাতটা পর্যন্ত রকি বিচে আটকে রাখতে হবে আমাদের।’

‘কিন্তু কীভাবে?’

‘এখনো জানি না। তবে কিছু একটা করতেই হবে। ব্যাটা আগেভাগে হাসপাতালে হাজির হয়ে চাচার স্বীকারোক্তি আদায়ের সুযোগটা নষ্ট করে দেবে, তা তো হতে দেওয়া যায় না। হাঁদাটার কর্মকালে আর কোনো দিন হয়তো রহস্যটার সমাধান করা যাবে না।’

‘ঠিকই বলেছ।’

নীরবে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগল ছেলেরা। বুঝতে পারছে, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। ঝড়ের গতিতে চিন্তা চলছে মাথায়। কীভাবে ডিটেকটিভ ফ্রেডকে ছয়টার প্লেন ধরা ঠেকানো যায়, ভাবছে! কিন্তু কোনো আশা দেখতে পেল না।

চৌদ্দ

‘চল, আমাদের দলবলের সঙ্গে দেখা করি গিয়ে,’ পরামর্শ দিল রবিন। ‘ওরা যদি কোনো উপায় বের করতে পারে।’

রকি বিচ হাইস্কুলের টেনিস কোর্টে পাওয়া গেল বন্ধুদের।

‘এই যে, দোস্তরা!’ ওদের আসতে দেখে হেঁকে উঠল মুসা আমান। ‘দেরি করে ফেলেছ। খেলা তো শেষ হয়ে গেছে। এতক্ষণ কোথায় ছিলে?’

‘জরুরি একটা কাজ ছিল,’ জবাব দিল কিশোর। ‘তবে তোমাদের সাহায্য দরকার এখন।’

‘কী ঘটনা?’ জানতে চাইল বিড ওয়াকার।

‘ডগলাস ফ্রেড হাজার ডলারের ওই পুরস্কারটা হাতাতে চাইছে। তার সঙ্গে আবার রকি বিচ পুলিশে নাম কামানোর জন্য চাচার একটা কেসেও নাক গলাতে শুরু করেছে,’ বলল কিশোর। ‘এর বেশি কিছু এখন বলতে পারব না তোমাদের। কিন্তু মূল কথা হলো, ওর ছয়টার প্লেন ধরা ঠেকাতে চাই আমরা। আমরা চাই না, ও সাতটার আগে প্লেনে উঠুক।’

‘তা আমাদের কী করতে বলছ?’ জিজ্ঞেস করল টমাস মার্টিন।

‘ফ্রেডকে কীভাবে সাতটা পর্যন্ত রকি বিচে আটকে রাখা যায়, তার একটা উপায় খুঁজে বের করো।’

‘এমনভাবে কাজটা করতে হবে যাতে কোনো অন্যায় কাজের দায়ে চিফ ফ্লেচার আমাদের গারদে পুরতে না পারে, তা–ই তো?’ বলল জিল জেসন।

‘হ্যাঁ। ওই হাঁদা ফ্রেডটা যদি চাচার আগে পৌঁছে যায়, তাহলে পুরো কেসটা একেবারে লেজেগোবরে করে ছাড়বে। আর তোমাদের বলতে বাধা নেই, কেসটার সঙ্গে বব পিটারসন জড়িত।’

শিস দিল মুসা আমান। ‘বুঝলাম! টাওয়ারের ব্যাপারস্যাপার। সে ক্ষেত্রে ফ্রেড যাতে ছয়টার প্লেন ধরতে না পারে, তার ব্যবস্থা করছি আমরা।’ এমনিতেই ফ্রেডের প্রতি আলাদা একটা রাগ আছে মুসার। অসময়ে সাগরে নামার জন্য ওর নামে একবার নালিশ করেছিল লোকটা।

‘এখন আমাদের কাজ হচ্ছে,’ ধীরেসুস্থে বলল জিরেমি, ‘নিজেদের ঝামেলায় না ফেলে, ফ্রেডকে এখানে আটকে রাখা।’

‘ঠিক।’

‘বেশ,’ জিল জেসন বলল। ‘চল তাহলে সবার মাথা এক করে একটা বুদ্ধি বের করে ফেলি।’

গোটা বারো পরিকল্পনার প্রস্তাব করা হলো। প্রত্যেকটা তার আগেরটার চেয়ে উদ্ভট। বত্রিশপাটি দাঁত বের করে টমাস মার্টিন ওর পরিকল্পনা পেশ করল। ডগলাস ফ্রেডকে ধরে আনা হোক। তারপর হাত-পা বেঁধে একটা নৌকায় তুলে ছেড়ে দেওয়া হোক খোলা সাগরে। ‘পরে না হয় উদ্ধার করে নেব,’ যোগ করল সে।

আইডিয়াটা এতটাই উদ্ভট যে হাসিতে ফেটে পড়ল সবাই।

জিরেমি গুডম্যান বুদ্ধি দিল, ফ্রেডের হাতঘড়িটা ঘণ্টাখানেক পিছিয়ে দেওয়া হোক। বুদ্ধিটা বেশ পছন্দ হলো কিশোরের। কিন্তু ডিটেকটিভের হাতঘড়িটা ওরা পাবে কীভাবে?

‘এক কাজ করলে কেমন হয়, আমরা ওকে ছয়টার প্লেন না ধরার জন্য সাবধানবাণী পাঠাই,’ প্রস্তাব করল বিড ওয়াকার। ‘সাবধানবাণীটায় মড়ার খুলির নিচে হাড়ের ক্রস আঁকা থাকবে!’

‘দারুণ আইডিয়া!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ‘চল, এটাই করি!’

‘এক মিনিট, দোস্তরা,’ বাধা দিয়ে বলল কিশোর। ‘ফ্রেড যদি কখনো টের পায় কাদের কাজ এটা, ঝামেলায় পড়ে যাব আমরা। অ্যারেস্টও হয়ে যেতে পারি সবাই!’

‘পেয়ে গেছি!’ সহসা তুড়ি দিয়ে চিত্কার করে উঠল রবিন। ‘আগে মনে এল না কেন! আর কাজটাও সহজ। এত সহজ কাজ!’

‘আরে বলো না কাজটা কী!’ তাড়া দিল কিশোর।

বলল রবিন, ‘ফলের দোকানের মালিক হুগু, রাতে যখন খাবার খেতে যায়, তখন আমি আর কিশোর মাঝেমধ্যে গিয়ে কর্মচারী সাজি সেখানে। রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে দোকান।’ ফ্রেডের বাসার পরের দোকানটাই হুগুর। আবার বলল রবিন, ‘ফ্রেড জানে যে প্রায়ই ওখানে যাই আমরা, কাজেই ওই এলাকায় আমাদের দেখলে সন্দেহ করবে না। এখন আমার প্ল্যানটা হলো, আমরা দল বেঁধে দোকানের সামনে আড্ডা দেব, যেন এমনিই এসেছি। তারপর একজন একজন করে গিয়ে গল্প জুড়ে দেব ফ্রেডের সঙ্গে। চাই কি, ওকে দোকানেও নিয়ে আসা যায়। তোমরা তো জানোই, কেমন পেটুক ফ্রেড।’

‘একবারেই রাজি হয়ে যাবে,’ বলল মুসা। ‘আমি ওকে একটা আপেল কিনে দিতে চাইব, প্লেনে বসে খাওয়ার জন্য।’

‘পনেরো মিনিট দেরি করিয়ে দিতে পারলেই কাজ হয়ে যাবে,’ বলল কিশোর।

‘আমার মনে হয় আইডিয়াটা ভালো,’ টম বলল। ‘আর আমি নিশ্চিত যে মি. হুগু-ও আমাদের সাহায্য করবেন।’

খুব পরিশ্রমী লোক হুগু। মাত্র বছর কয়েক আগে ইতালি থেকে এ দেশে এসেছে। সরল-সহজ, সাদালাপী ভদ্রলোক, কিশোরদের দারুণ পছন্দ করে।

দল বেঁধে হুগুর দোকানের সামনে হাজির হলো ছেলেরা। কিন্তু ভেতরে ঢুকল শুধু কিশোর আর রবিন। বাকি সবাই ছড়িয়ে পড়ে নজর রাখল ফ্রেডের ঘরের দরজার দিকে। যেকোনো সময় বাসা থেকে বের হবে সে। ছেলেরা প্রত্যেকেই যার যার ভূমিকা পালন করবে।

দোকানের ভেতর ঢুকতেই মি. হুগুর দেখা পেল কিশোর আর রবিন, কমলা গুছিয়ে রাখছে। হাসিমুখে বলল, ‘গুড ইভিনিং। আমার দোকান গোছানো কেমন হয়েছে?’

‘দারুণ লাগছে,’ জবাব দিল কিশোর। ‘নতুন নতুন ফলের টিন। লাইটিংও আগের চেয়ে ভালো। তা, আপনার পড়শি মি. ফ্রেডের কেমন লেগেছে আপনার দোকানের এই নতুন সাজসজ্জা?’

হাত নেড়ে বিরক্তি প্রকাশ করল হুগু। ‘আরে, ওর কথা আর বোলো না! যন্ত্রণার একশেষ করে ছাড়ে। আমি নাকি বেশি বেশি দাম রাখি। আমার নাকি দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আরও কত কী।’

‘ক্লান্ত লাগছে নাকি? আমার বউও তাই বলে। ও বলে, আমার একটু আগেভাগে দোকান বন্ধ করা উচিত,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফল ব্যবসায়ী। ‘খুব ভালো ছেলে তোমরা। তোমাদের কথাই শোনা উচিত। একটু জিরিয়ে নিয়ে আমি তাহলে সাড়ে ছয়টার ভেতর চলে আসব।’

কাজের পোশাক ছাড়তে ছাড়তে বলল হুগু, ‘উঠানে আবর্জনা জড়ো করে রেখেছি। পোড়াতে হবে। তোমরা একটু করে দেবে কাজটা?’

‘নিশ্চয়ই।’

উঠানে রাখা ময়লার স্তূপ দেখিয়ে দিল হুগু। তারপর চলে গেল। পাঁচ মিনিটের ভেতর রাস্তার দিক থেকে শিসের শব্দ ভেসে এল। জিলের সংকেত! দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিল কিশোর আর রবিন। ড্রাইভওয়ে দিয়ে গাড়ি ব্যাক করছে ফ্রেড। জিরেমি দৌড়ে গেল তাকে থামাতে।

খানিকক্ষণ তর্ক–বিতর্ক করতে দেখা গেল দুজনকে। কিন্তু এইটুকু দেরিতে সন্তুষ্ট হতে পারল না কিশোর আর রবিন। আলাপটা স্থায়ী হলো দুই মিনিটেরও কম। তারপরই আবার গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তায় উঠে পড়ল ফ্রেড।

‘এই কিশোর,’ বলল রবিন। ‘একটা বুদ্ধি এসেছে। ‘ওই আবর্জনাগুলোয় আগুন ধরিয়ে দাও। দাউ দাউ করে যেন জ্বলে!’

আর কিছু না বলে রাস্তার দিকে ছুটে গেল সে। রবিনের পরিকল্পনাটা বুঝে ফেলেছে কিশোর। একছুটে দোকান থেকে উঠানে নেমে এল সে। আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিল। দপ করে জ্বলে উঠল আবর্জনার স্তূপ।

রাস্তার ওমাথা থেকে তাকিয়ে দৃশ্যটা দেখছিল রবিন। এদিকে ফ্রেডের সঙ্গে এখন ‘সাক্ষাত্কার’ চলছে টমের। তার মধ্যে মুসা গিয়ে কিছু ফলমূল কিনে দিতে চাইল ফ্রেডকে। একমুহূর্ত ইতস্তত করল ডিটেকটিভ। তারপর মাথা নেড়ে মানা করে গাড়ি ছেড়ে দিল।

প্রয়োজনীয় ১৫ মিনিটের ভেতর পার হয়েছে মাত্র ৫ মিনিট! আর সময় নষ্ট করল না রবিন। রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে এক হাত তুলে দাঁড়াল চলন্ত গাড়ির সামনে।

‘জলদি আসুন, ডিটেকটিভ সাহেব!’ চেঁচিয়ে উঠল সে। ‘হুগুর দোকানে আগুন লেগেছে!’

‘তা তুমিই গিয়ে নেভাও না, আমার একটু তাড়া আছে!’ ঝাঁজালো কণ্ঠে বলল ডিটেকটিভ।

‘তাই বলে কি পুরো রকি বিচ জ্বলে গেলেও আপনার কিছু যায় আসে না?’ তাজ্জব হওয়ার ভান করল রবিন।

খানিকটা কুঁকড়ে গেল ফ্রেড। তারপরও নড়ার লক্ষণ দেখা গেল না। ‘বেশ,’ দোকানের দিকে পা বাড়িয়ে বলল রবিন। ‘আমি আর কিশোরই না হয় দেখছি ব্যাপারটা।’

‘কোথায় আগুন?’ চিত্কার করে উঠল ফ্রেড।

বলেই আর দ্বিধা করল না গোয়েন্দা। মনে মনে ভাবল, রকি বিচের লোকদের কাছে ‘হিরো’ হওয়ার এই একটা সুবর্ণ সুযোগ! চোখের পলকে গাড়ি নিয়ে চলে এল ফলের দোকানের সামনে।

‘আগুন লেগেছে কোথায়?’ চেঁচাতে চেঁচাতে দোকানে ঢুকতে গিয়ে, আরেকটু হলেই ধাক্কা লেগে যাচ্ছিল কিশোরের সঙ্গে। ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে সে।

‘আগুন—ওই যে—পেছনের উঠানে!’ হাঁপানোর ভঙ্গি করল কিশোর। ‘গিয়ে দেখেন কোনো অ্যালার্ম বাজাতে হয় কি না!’

একছুটে দোকানে ঢুকে গেল ফ্রেড। দৌড় দিল পেছনের উঠানে। ততক্ষণে বাদবাকি ছেলেরাও এসে জড়ো হয়েছে ফলের দোকানের সামনে। উত্তেজিত গলায় জানতে চাইছে কী হয়েছে।

‘কিশোর! রবিন!’ পেছনের উঠান থেকে গর্জন ভেসে এল ফ্রেডের। ‘হুগু কোথায়? বালতি! বালতি আন! পানি পাই কোথায়!’

‘হুগু তো নেই,’ ফ্রেডকে জানাল রবিন। ‘ওই যে পানি—ওই পেছনের সিঙ্কে। দমকলে খবর দেব?’

‘দরকার নেই। আমিই ম্যানেজ করতে পারব,’ বলল ডিটেকটিভ। ‘কিন্তু বালতি কোথায়?’

এক দৌড়ে পেছনের ঘরে গিয়ে সিঙ্কের নিচে একটা বালতি দেখতে পেল কিশোর। পানি ভরে বালতিটা ধরিয়ে দিল ফ্রেডের হাতে। সঙ্গে সঙ্গে উঠানে ছুটে গেল ডিটেকটিভ। আগুনের ওপর পানি ছুড়ে মারতে, হিসহিস, চড়চড় শব্দ করতে করতে নিভে গেল আগুন।

‘কিছু কিছু লোকের আক্কেলজ্ঞান বলতে নেই,’ বলল ফ্রেড। ‘আগুন জ্বেলে রেখেই চলে যায়! বাজি ধরে বলতে পারি, হুগুর কাজ এটা! আর তোমরা ছেলেরাও যে কী রকম—আমাকেই ডেকে আনতে হলো। একটা সাধারণ আগুন নেভানোর ক্ষমতাও নেই তোমাদের।’

‘ভাগ্যিস আপনি ছিলেন,’ চোখ বড় বড় করে বলল কিশোর। হাসি চাপতে কষ্ট হচ্ছে ওর।

‘হুঁ, তাই বাঁচোয়া,’ একমত হল ফ্রেড। ‘নিশ্চয়ই চিফ ফ্লেচারের কানেও যাবে কথাটা।’

‘না, না। আমাদের কথা কিছু বলবেন না চিফকে,’ ভয়ার্ত গলায় বলল রবিন। চোখ আধবোজা করে রেখেছে, যাতে দুষ্টুমির ঝিলিকটা লক্ষ না করে ফ্রেড।

‘আর ফ্লেচার যদি জানেই, জানবে কাজটা আমার...’ বলতে গেল কিশোর।

হঠাৎ যেন সংবিৎ ফিরে এল ফ্রেডের। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘হায় হায়রে! ছয়টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি! প্লেনটা আর ধরতে পারলাম না!’

‘আহা, বড়ই আফসোসের কথা,’ সহানুভূতি ঝরল কিশোরের গলায়। ‘থাক, অত চিন্তা করবেন না। সাতটায় আরেকটা প্লেন আছে মারবেনির। আশা করি, ইন্টারভিউটা সফল হবে আপনার।’

পনেরো

ঝড়ের বেগে ফলের দোকান থেকে বেরিয়ে গেল ফ্রেড। চলে গেল গাড়ি হাঁকিয়ে। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগল ছেলেরা। এক মহিলা কাস্টমার দোকানে ঢোকা অবধি চলতে লাগল সেই হাসি। কিশোর আর রবিন বাদে বাকি ছেলেরা বেরিয়ে গেল।

সাড়ে ছয়টায় হুগু ফিরে এসে দারুণ খুশি হলো। ওর অনুপস্থিতিতে যথেষ্ট বেচাকেনা করেছে ওরা। ‘আমার চেয়েও দেখি ভালো সেলসম্যান তোমরা!’ হেসে বলল সে।

বাড়ি ফিরে চলল কিশোর ও রবিন। আজকের কাজে দারুণ সন্তুষ্ট ওরা। ফ্রেডকে ছাড়াই রওনা দিয়েছে ছয়টার প্লেন। কিশোরের চাচাও মাথা মোটা ফ্রেডের বিরক্তিকর হস্তক্ষেপ এড়িয়ে নির্বিঘ্নে হাসপাতালে যেতে পারবেন।

ফিরতে ফিরতে পরদিন বিকেল হয়ে গেল মি. পাশার। স্কুল থেকে বাসায় এসে দুই গোয়েন্দা দেখল, তিনি ফিরেছেন। কিশোর আর রবিনকে দেখেই বললেন, ‘ডোবার মারা গেছে।’

‘স্বীকারোক্তি দিয়েছে?’

‘বেচারা লোকটার প্রতি তো দেখছি কোনো মায়াদয়া নেই তোমাদের, রবিন। হ্যাঁ, স্বীকারোক্তি দিয়েছে। কপাল গুণে, ওর সঙ্গে কথা বলার সময় ডগলাস ফ্রেড ছিল না আশপাশে।

দ্রুত একবার চোখাচোখি করল কিশোর আর রবিন। বিষয়টা লক্ষ করে হাসলেন মি. পাশা। বললেন, ‘আমার কাছে স্বীকার না করলেও বুঝতে পারছি, ফ্রেডের ব্যাপারটায় হাত আছে তোমাদের। যা–ই হোক, মারবেনি পুলিশ আর আমি নির্ঝঞ্ঝাটে কাজ সারতে পেরেছি। মরার আগে ডোবারের সঙ্গে দেখা হয় আমার। তখন টাওয়ার ডাকাতির কথাটা জিজ্ঞেস করি ওকে।’

‘সবকিছু স্বীকার করেছে ও?’

‘ডোবার জানিয়েছে, ডাকাতির উদ্দেশ্যে রকি বিচে আসে সে। একটা গাড়ি চুরি করে অ্যাকসিডেন্ট করলে মুসার গাড়িটা নেয়। তারপর টিকিট অফিসে গিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ওখানে ব্যর্থ হলে ঠিক করে, কয়েক দিন শহরে ঘোরাফেরা করবে। পরের টার্গেট হিসেবে বিলি ম্যানশনকে বেছে নেয় সে। গ্লাভস পরে লাইব্রেরিতে ঢোকে। সেফ খুলে গয়না আর সিকিউরিটি বন্ডগুলো নিয়ে নেয়।’

‘লুটের মালগুলো কী করেছে?’

‘আসছি সে কথায়। ডোবার যখন জানতে পারল যে ও মারা যাচ্ছে, শুধু তখনই টাওয়ারের ঘটনাটা স্বীকার করল। ও বলল, “হ্যাঁ জিনিসগুলো নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু তখনই বেচার সাহস হলো না। কাজেই লুকিয়ে ফেললাম। সহজেই ওগুলো পেয়ে যাবেন আপনারা। পুরোনো টাওয়ারে লুকিয়ে রেখেছি—।”’

‘ব্যস, এ পর্যন্ত বলেই আবার অজ্ঞান হয়ে গেল ডোবার। জ্ঞান আর ফেরেনি।’

‘ফ্রেড ওখানে গেল কখন?’ আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করল কিশোর।

‘ডোবার কোমায় যাওয়ার পর,’ জানালেন মি. পাশা। ‘আমরা দুজনই ওর বিছানার পাশে বসেছিলাম ওর জ্ঞান ফেরার আশায়। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের ভেতর মারা যায় ডোবার। পুরোনো টাওয়ারের কোথায় যে জিনিসগুলো লুকিয়েছিল সে, সেটা আর বলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি।’

‘ফ্রেড কি জানে, ডোবার কী বলে গেছে?’

‘না।’

‘লুটের মাল যদি বিলসনদের টাওয়ারে লুকিয়ে রাখে ডোবার, তাহলে তো চোখের পলকে বের করে ফেলতে পারব আমরা!’ উত্তেজিত হয়ে উঠছে কিশোর।

‘নতুন আর পুরোনো—দুটো টাওয়ার আছে ম্যানশনে,’ মনে করিয়ে দিল রবিন।

‘প্রথমে পুরোনোটায় খোঁজ করব আমরা।’

‘ওখানেই থাকার সম্ভাবনা বেশি,’ মন্তব্য করলেন মি. পাশা। ‘মৃত্যুশয্যায় শুয়ে মিথ্যা বলার কথা না ডোবারের। সম্ভবত চুরিটা করার পরপরই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে। তখন পুরোনো টাওয়ারে গিয়ে লুকায় নিরাপদে সটকে পড়ার অপেক্ষায়। কোনো সন্দেহ নেই, ওখানেই জিনিসগুলো লুকিয়েছে সে। ভেবেছিল, ঘটনার উত্তেজনা ফিকে হয়ে এলে পরে একসময় এসে নিয়ে যাবে।’

মাথা ঝঁকিয়ে সায় দিল রবিন। ‘এ কারণেই তো গয়না বা বন্ডের সূত্র ধরে খোঁজ মেলেনি ডোবারের! আসলে তো ওগুলো বাজারেই আসেনি—এতটা সময় ধরে পড়ে আছে পুরোনো টাওয়ারের কোনো ঘুপচিতে!’

‘আমি ওকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেছিলাম, টাওয়ারের ঠিক কোন অংশে ও জিনিসগুলো লুকিয়েছিল। কিন্তু আর কিছু বলার আগেই মারা যায় সে।’

‘ইশ!’ বলল কিশোর। ‘যাকগে, এখন যেহেতু সঠিক জায়গাটার খোঁজ পেয়েছি, মালগুলো বের করতে খুব বেশি খাটুনি হবে বলে মনে হয় না। হয়তো খুব বেশি সাবধানে লুকোয়নি ওগুলো ডোবার। আর যেহেতু বহুকাল ধরে টাওয়ারটার ওদিকে যায় না কেউ, কাজেই ছোঁক ছোঁক করে বেড়ানো লোকজনের হাত থেকে নিরাপদেই থাকবে ওগুলো।’

লাফ দিয়ে চেয়ার ছাড়ল রবিন। ‘আমার মনে হয়, এখুনি আমাদের কাজে নেমে পড়া উচিত। পুরোনো টাওয়ারটায় গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে আসি। বুড়ো বিলসনের গয়না আর বন্ড ফেরত দিয়ে আজ বিকেলের মধ্যেই হয়তো মি. পিটারসনকে বাঁচাতে পারি! চলো, চলো!’

চলবে...

আরও পড়ুন