পুরোনো টাওয়ার (দ্বিতীয় পর্ব)

অলংকরণ : আরাফাত করিম

তিন

বাড়ির সীমানার ভেতরে একটা পুরোনো ধাঁচের গোলাবাড়ি। সেটার পাশ কাটিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল ছেলেরা। গোলার একটা অংশকে জিমনেসিয়াম বানিয়ে নিয়েছে ওরা। স্কুলের পর আর সাপ্তাহিক ছুটির দিন কিশোর, রবিন আর ওদের বন্ধুবান্ধব মিলে ব্যায়াম করে ওখানে।

স্যালভিজ ইয়ার্ডের ব্যবসা ভালো চলছিল না, তাই ওটা ছেড়ে চলে এসেছেন কিশোরের চাচা রাশেদ পাশা, পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন পুরোনো পেশাটাকে, অর্থাৎ শখের গোয়েন্দাগিরিকে। একসময় আমেরিকান পুলিশ ফোর্সে ডিটেকটিভের কাজ করেছেন। সেটাকেই নতুন করে অাঁকড়ে ধরেছেন আবার। স্যালভিজ ইয়ার্ডটা বেচে দিয়ে পুরোনো আরেকটা বাড়ি কিনেছেন। বাড়িটা গাছগাছালিতে ঢাকা আর সামনে মস্ত একটা লন। হালকা সবুজ ঘাসের ভেতর দিয়ে মাথা তুলেছে ক্রোকাস আর খুদে খুদে নার্সিসাস।

রবিনের মা-বাবা দীর্ঘ সফরে ইউরোপ গেছেন। একা একা বাড়িতে থাকতে ভালো না লাগায় সাময়িকভাবে কিশোরদের বাড়িতে থাকতে চলে এসেছে রবিন। মেরি চাচিও সেটাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘চাচি!’ রান্নাঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল কিশোর।

টেবিলে ঝুঁকে প্রকাণ্ড একটা মুরগির রোস্ট সাজাচ্ছিলেন মেরি চাচি। মুখ তুলে তাকিয়ে হাসলেন।

‘চাচা কি ওপরে?’ জিজ্ঞেস করল কিশোর।

‘হ্যাঁ, স্টাডিরুমে।’

স্টাডিরুমটাই রাশেদ পাশার ওয়ার্কশপ। ওটার সঙ্গেই আছে একটা লাইব্রেরি। সেখানে খালি বই–ই নয়, আছে ছদ্মবেশীদের ফাইল, ক্রিমিনাল কেসের রেকর্ড আর হাজার হাজার কোডের অনুবাদ।

স্টাডিরুমে ঢুকে চাচাকে দেখে বলল কিশোর, ‘কাগজপত্রগুলো দিয়ে এসেছি, চাচা।’

‘খুব ভালো!’ বললেন মি. পাশা। তারপর রবিন আর কিশোরের মুখের দিকে তাকিয়ে খুঁজলেন কিছু। ‘আমার মনে হচ্ছে কাগজ দেওয়া ছাড়াও অন্য কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে তোমাদের।’

ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছে কিশোর, ওর বিচক্ষণ চাচার কাছ থেকে কিছু লুকানো প্রায় অসম্ভব। ওর ধারণা, ডিটেকটিভ হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ফোর্সে চাচার সাফল্যের পেছনে এটাও একটা কারণ। রকি বিচে আসার আগে তিনি সেখানেই কাজ করতেন।

‘দারুণ উত্তেজনা গেছে আমাদের!’ কিশোর বলল। তারপর চাচার কাছে খুলে বলল মুসার হারানো জেলপি থেকে শুরু করে বিধ্বস্ত একটা গাড়ি, আর ফেরিবোট অফিসে ডাকাতির কথা। বিধ্বস্ত গাড়ি যে চোরাই বলে সন্দেহ করছে ওরা, সে কথাও জানাল।

‘মুসা আশায় আছে আমরা ওর গাড়িটা উদ্ধার করে দেব।’ যোগ করল রবিন।

‘মানে পুলিশ যদি আগেভাগে বের করে না ফেলে আরকি।’ হাসল কিশোর।

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলেন মি. পাশা। তারপর বললেন, ‘আমার পরামর্শ চাইছ?’ মুচকি হাসলেন।

‘শুধু পরামর্শ না, সাহায্যও দরকার।’ জবাব দিল রবিন।

মি. পাশা জানালেন, কেসের একটা দিক তাঁর কাছে সবচেয়ে লক্ষণীয় মনে হয়েছে। সন্দেহভাজন লোকটাকে ছদ্মবেশ নিতে এক বা একাধিক পরচুলা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ‘সেগুলোর কোনো একটা সে রকি বিচ থেকেও কিনে থাকতে পারে। আমার পরামর্শ, তোমরা পরচুলা বিক্রি করে যেসব দোকান, সেগুলোতে ঢুঁ মেরে দেখো।’

মি. পাশার প্রকাণ্ড ডেস্কের ওপরে রাখা ঘড়িটার ওপর চোখ বোলাল ছেলেরা। তারপর কিশোর বলল, ‘রবিন, চলো, দোকানগুলো বন্ধ হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়ি!’

‘আঙ্কেল, পরচুলা বিক্রি করে কিসের দোকানে, জানেন?’ জিজ্ঞেস করল রবিন,

মিটিমিটি হাসলেন রাশেদ পাশা। ডেস্ক ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। লাইব্রেরিতে ঢুকে একটা ফাইল ড্রয়ার খুললেন। এক মুহূর্ত পর ‘উইগ: পরচুলা প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী ও খুচরা বিক্রেতা’ লেখা মোটা একটা ফোল্ডার টেনে বের করলেন।

‘ওরে বাবা, আঙ্কেল, আপনার কাছে এই সব তথ্য আছে জানতামই না!’ বলল রবিন।

মুচকি হাসলেন মি. পাশা। আঙুল দিয়ে পুরু কাগজের তাড়া ঘেঁটে নির্দিষ্ট একটা কাগজ টেনে বের করলেন।

‘রকি বিচ,’ পড়লেন তিনি। ‘আচ্ছা, তিনটি জায়গাকে এখনই বাদ দেওয়া যায়। এরা শুধু মহিলাদের উইগ বিক্রি করে। তাহলে বাকি রইল এই তিনটে। কিশোর, নাম লিখে নে। দা হারবিজ। দা কোয়ালিন। দা ব্রুম্যান।’

‘তিনটি দোকানের মধ্যে দা হারবিজই সবচেয়ে কাছে হবে।’ কিশোর বলল। ‘চল, আগে ওখানেই দেখে আসি, রবিন।’

এক দৌড়ে গিয়ে মোটরসাইকেলে উঠল দুই গোয়েন্দা, ছুটতে শুরু করল শহরতলির দিকে। হারবিজের দোকানে ঢুকতে বেঁটেখাটো, মোটাসোটা একটা লোক এগিয়ে এলেন হাসিমুখে।

‘এই যে ছেলেরা, একেবারে ঠিক সময়ে এসেছ তোমরা।’ বললেন তিনি। দেয়ালে ঝোলানো পুরোনো আমলের একটা ঘড়ির দিকে তাকালেন। ‘আজ রাতে একটু আগেভাগেই বন্ধ করতে যাচ্ছিলাম। বড় একটা চালান এসেছে আজকেই। আর দোকান বন্ধ না করে মালপত্র গুছিয়ে লিস্ট করার কোনো উপায় নেই কাস্টমারের যন্ত্রণায়।’

‘আমাদের কাজে খুব একটা দেরি হবে না।’ বলল কিশোর। ‘আমি ডিটেকটিভ রাশেদ পাশার ভাতিজা। জানতে এসেছি, ইদানীং আপনি কারও কাছে একটা লাল পরচুলা বিক্রি করেছেন কি না।’

মাথা নাড়লেন মিস্টার হারবিজ। ‘কয়েক মাসের ভেতরে তো বেচিনি। ভাড়াও দিইনি। আজকাল সবাই শুধু হয় সোনালি, নয় বাদামি কিংবা কালো চায়। তবে বুঝলে, পারতপক্ষে উইগ আমি বেচিই না, ভাড়া দিই।’

‘বুঝেছি।’ বলল কিশোর। ‘আমরা এক লোকের খোঁজ করছি, যে ছদ্মবেশ ধরতে লাল উইগ পরেছিল। ধারণা করেছিলাম, লোকটা হয়তো উইগটা এখান থেকে কিনেছে বা ভাড়া নিয়েছে, আপনি হয়তো তার নাম বলতে পারবেন।’

কাউন্টারের ওপর ঝুঁকলেন মিস্টার হারবিজ। ‘যার কথা বলছ তোমরা—লোকটাকে বেশ ইন্টারেস্টিং বলেই মনে হচ্ছে। উইগ নিতে আমার এখানে আসার সম্ভাবনা আছে তার। যদি আসে, তাহলে সানন্দে জানাব তোমাদের।’

দোকানদারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম করল ছেলেরা। ঠিক তখনই ডাকলেন মিস্টার হারবিজ। ‘এক মিনিট দাঁড়াও!’

গোয়েন্দারা আশা করল, হঠাৎ হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে পড়ে গেছে বিক্রেতার। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ওরা নতুন আসা কয়েকটা কার্টন খুলতে সাহায্য করতে পারবে কি না। আর নতুন কস্টিউমগুলোও একটু পরে দেখবে কি না।

‘ফ্যাক্টরির লোকেরা কখনো সাইজটা ঠিকমতো দেয় না।’ বললেন তিনি। ‘কয়েক মিনিট একটু সাহায্য করতে পারবে তোমরা? চিন্তা কোরো না, মজুরি দিয়ে দেব।’

‘আরে না, টাকা লাগবে না।’ বলল রবিন। ‘সত্যি বলতে কি, আপনার কস্টিউমগুলো দেখতে পারলে খুশিই হব।’

দোকানের সামনের দরজায় তালা দিয়ে দিলেন মিস্টার হারবিজ। তারপর ছেলেদের নিয়ে পেছনের একটা রুমে চলে এলেন। হাজারো রকমের কস্টিউম, নাটকের সাজসরঞ্জাম, সেই সঙ্গে অগুনতি কার্টন—সব মিলিয়ে তিল ধারণের জায়গা নেই ঘরে। বিস্মিত হয়ে ভাবল ছেলেরা, এর ভেতর কিছু খুঁজে পায় কী করে লোকটা!

‘এই যে আজকের চালানটা এখানে।’ বললেন মিস্টার হারবিজ, আঙুল তুলে দোকানের পেছনের দরজার কাছে গাদা করে রাখা ছয়টা কার্টন দেখালেন।

ছেলেদের সহায়তায় বাক্সগুলো কেটে খুলতে লাগলেন। একে একে বের হলো একটা রাজার আলখাল্লা, রানির মাথার মুকুট আর মেষপালকের পোশাক। হঠাৎ বললেন হারবিজ, ‘এই যে কঙ্কালের পোশাকটার গায়ে আটত্রিশ সাইজ লেখা। তোমাদের একজন কি একটু পরে দেখবে?’

কস্টিউমটা তুলে নিল কিশোর। পেছনের জিপার খুলে শরীর গলিয়ে দিল ওটার ভেতরে। কঙ্কালের পোশাকটা ওর শরীরে বড়ই উদ্ভট দেখাল। পাঁজরের হাড়গুলো ঢল ঢল করছে।

‘মনে হয় মোটা লোকের জন্য বানানো।’ বলল সে। পোশাকের দুই পাশ হাত দিয়ে মেলে ধরে দেখাল কতটা চওড়া।

ঠিক এই সময় সামনের দরজায় জোরে কয়েকটা টোকা পড়ল। উঠে খুলতে যাওয়ার কোনো তাগিদ দেখা গেল না মিস্টার হারবিজের মাঝে। ‘দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।’ বললেন তিনি, ‘টোকা দিতে থাকুক।’

হঠাৎ একটা কথা মনে হলো কিশোরের। এই কাস্টমার তো সেই উইগ পরা চোরটাও হতে পারে। হয়তো ইচ্ছে করে এত দেরিতে এসেছে, যাতে দোকানে অন্য লোকজনের সঙ্গে দেখা না হয়! কাউকে কিছু না বলে এক ছুটে দরজা পেরিয়ে দোকানে ঢুকে গেল কিশোর, ছুটে গেল সদর দরজার দিকে।

কোনো রকমে অস্পষ্টভাবে চোখে পড়ল, ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক। কিন্তু আগন্তুক একবার শুধু ওর লাফিয়ে আসা বেঢপ কঙ্কালদেহের দিকে তাকাল, তারপরই চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল। একই সঙ্গে কিশোরও হোঁচট খেয়ে পড়ল হাত-পা ছড়িয়ে।

পতনের আওয়াজ কানে যেতেই কী হয়েছে দেখার জন্য দৌড়ে এলেন মিস্টার হারবিজ আর রবিন। কঙ্কালের পোশাকে জটলা পাকিয়ে কেমন বোকার মতো পড়ে আছে কিশোর। হাত ধরে টেনে তোলা হলো তাকে। কী কারণে ও রকম হঠাৎ করে সদর দরজায় ছুটে এসেছিল সে, জানার পর বাকিরা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে কাজটা ঠিকই হয়েছে।

‘নিঃসন্দেহে তোমার এই উদ্ভট পোশাক দেখে ভয় পেয়ে গেছে লোকটা।’ হাসতে হাসতে বলল রবিন। ‘আর আসবে না!’

আধ ঘণ্টা ধরে মিস্টার হারবিজের কাজে সাহায্য করল ওরা। তারপর বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরে এল।

‘সোমবার বাকি দুই উইগের দোকানে অভিযান চালাব।’ বলল কিশোর।

লাঞ্চের পর চাচিকে বলল কিশোর, ‘মুসার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি আমরা। রাতের খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন আমাদের, মিসেস আমান।’

যাওয়ার পথে ট্রেসিকে তুলে নিল ওরা। ওরও দাওয়াত। মোটরসাইকেলে কিশোরের পেছনে উঠে বসল ট্রেসি।

‘শক্ত হয়ে বোসো কিন্তু, ট্রেসি।’ ঠাট্টা করল রবিন। ‘বেপরোয়া চালায় কিশোর।’

মুসাদের ফার্ম হাউসের দরজায় ওদের অভ্যর্থনা জানাল মুসার খালাতো বোন ফারিহা।

সন্ধ্যা নেমে আসতে, ছেলেমেয়েরা মুসাদের রান্নাঘরে জড়ো হলো রাতের খাবারের আয়োজন করতে। ভোজনবিলাসী মুসার ওপর প্রধান আয়োজকের দায়িত্ব। হামহুম করে সবার ভেতরে কাজ ভাগ করে দিতে লাগল সে। সব শেষ হলে বলল রবিন, ‘তা, তোমার কাজটা কী, দোস্ত?’

দাঁত বের করে হাসল মুসা। ‘আমি তোমাদের রান্নার বিচারক।’

হইহই করে উঠল বাকি সবাই। ‘তা হবে না। কাজ না করলে খাবার পাবে না।’ সাফ জানিয়ে দিল ফারিহা। ‘যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, সে কিছুই পাবে না।’

গালভর্তি হাসি নিয়ে বলল মুসা, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে যে বড় কাজ করবে, সে বেশি খাবার পাবে। তোমরা চাইলে বড় একটা খাবারই রান্না করে দিতে পারি আমি। মুরগির রোস্ট হলে কেমন হয়?’

‘পাস!’ সমস্বরে বলল সবাই। কাজে লেগে গেল মুসা।

ফার্ম হাউসের রান্নাঘরটা প্রকাণ্ড, এক কোনায় একসারি জানালা, পাশেই একটা টেবিল পাতা। ছেলেমেয়েরা ঠিক করল, ওখানে বসেই খাওয়ার পাট চুকাবে। মাত্র খেতে বসেছে ওরা, ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল। মুসা উঠে হলঘরে গেল ফোন ধরতে। এক মিনিটের ভেতর চোখ বড় বড় করে ফিরে এল।

‘কী হলো?’ জানতে চাইল ফারিহা।

‘আ-আমাকে হু-হুমকি দিল!’ তুতলে বলল মুসা।

‘হুমকি!’ চিৎকার করে উঠল বাকিরা। ‘কীভাবে?’

এত ভয় পেয়ে গেছে মুসা যে ঠিকমতো কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। তবে তার থেকেই যতদূর বুঝল বাকিরা, কোনো এক লোক ফোনে বলেছে, ‘তোমার জেলপি ফেরত পাওয়ার আশা নেই। আর আমাকে বা গাড়িটাকে খোঁজার চেষ্টা বাদ দাও। নইলে বিপদে পড়বে বলে দিলাম!’

‘তাই বলেছে!’ চেঁচিয়ে উঠল রবিন। ‘ব্যাপারটা দেখি সিরিয়াস দিকে মোড় নিচ্ছে!’

ট্রেসি আর ফারিহা ওদের গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল মুসার দিকে। কিছু বলতে গিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে গোলাঘরের দিকে চোখ গেল কিশোরের। মুহূর্তের জন্য ওর মনে হলো, দৃষ্টিবিভ্রম। কিন্তু, না! গোলাঘর থেকে চুপি চুপি একটা লোক বেরিয়ে গলি ধরে হাইওয়ের দিকে চলে যাচ্ছে।

‘এই!’ সহসা চেঁচিয়ে উঠল কিশোর, ‘এসো তো আমার সঙ্গে!’

চার

এক দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল কিশোর, রবিন আর মুসা। কিন্তু চোরটা ততক্ষণে চোখের আড়ালে চলে গেছে। ধারণা করল ওরা, লোকটা রাস্তা পার হয়ে মাঠের দিকে চলে গেছে। তিনজন তিন দিকে ছড়িয়ে পড়ে খুঁজতে শুরু করল ওরা। সোজা সামনের দিকে ছুটে গেল রবিন। একটু থেমে মাটিতে কান পেতে শুনল, পায়ের আওয়াজ শোনা যায় কি না। শোনা গেল না। খানিক বাদে আবার এক জায়গায় জড়ো হলো তিনজনে।

‘তোমার কী মনে হয়, লোকটা কি চোর?’ মুসাকে জিজ্ঞেস করল রবিন। ‘কী চুরি করতে এসেছে?’

‘কীভাবে বলি,’ জবাব দিল মুসা। ‘চলো গিয়ে দেখি।’

‘আমার বিশ্বাস, ওর হাতে কিছু ছিল। যদিও দেখিনি সেটা কী।’ বলল কিশোর।

গোলাঘরের দরজাটা তখনো রাতের মতো বন্ধ করা হয়নি। ওটা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ছেলেরা। মুসা আলো জ্বেলে দিতে, চারপাশে তাকাল ওরা।

‘দেখো!’ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।

গোলাঘরের টেলিফোন এক্সটেনশনের নিচে, মেঝের দিকে ইশারা করল সে। একটা ধূসর রঙের উইগ পড়ে আছে।

‘সেই লোকটার জিনিস!’ উত্তেজিত হয়ে উঠল রবিন।

‘তাই তো মনে হচ্ছে।’ সায় দিল কিশোর। ‘নিশ্চয়ই কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছিল। তাড়াহুড়া করে উইগটা ফেলেই পালিয়েছে।’

পরচুলাটা তুলে নিয়ে সাবধানে পরীক্ষা করল কিশোর। কোনো সূত্র পাওয়া যায় কি না দেখল। ‘শনাক্ত করার মতো কোনো চিহ্ন নেই। তবে একটা কথা মনে হচ্ছে লোকটা তোমাকে ফোন করেছিল এখান থেকেই, মুসা।’

‘তার মানে, এই লোকটাই আমাকে ফোন করেছিল?’ হাঁ হয়ে গেছে মুসা।

‘যদি জিজ্ঞেস করো কীভাবে, তাহলে বলব যে এক্সটেনশন থেকে যেভাবে নিজের নম্বরে ফোন করা যায়।’

‘তা ঠিক।’

অলংকরণ : আরাফাত করিম

মাথা চুলকাল মুসা। ‘বলতে চাইছ, এই এতদূর এসেছে লোকটা, শুধু ফোনটা ব্যবহার করে আমাকে ভয় দেখাতে? কেন?’

কিশোর আর রবিন একমত হলো যে শুধু ফোন করার জন্য লোকটা আসেনি। নিশ্চয়ই অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল। ‘কারণটা বের করতেই হবে, মুসা। তুমিই সবার চেয়ে ভালো বলতে পারবে তা। ভাবো। এই গোলায় কী ছিল বা আছে, যার কারণে ও রকম একটা লোক এখানে আসতে পারে?’

মাথা চুলকে ঘরের চারপাশে চোখ বোলাল মুসা। ‘গবাদিপশুর জন্য তো নয়ই।’ ধীরে ধীরে বলল সে। ‘কিংবা বিচালি বা পশুর খাদ্যের জন্যও নয়।’ হঠাৎ তুড়ি বাজিয়ে বলল মুসা, ‘মনে হয় উত্তরটা পেয়ে গেছি, দোস্তরা। এক মিনিট।’

খোঁয়াড় থেকে বেরিয়ে সোজা গ্যারেজের দিকে ছুটল সে। হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে কয়েক সেকেন্ডের ভেতর আবার বেরিয়ে এল।

‘পেয়েছি!’ চিৎকার করে জানাল ওখান থেকে। ‘জেলপির বাড়তি টায়ারের জন্য এসেছিল ব্যাটা!’

‘তোমার ওটা গায়েব?’ জানতে চাইল কিশোর।

মাথা ঝাঁকাল মুসা। ‘লোকটা মনে হয় দূরে কোথাও যায়নি। হয়তো আশপাশের কোনো শাখা রাস্তায় গাড়ি রেখে টায়ার পাল্টাচ্ছে। চলো, চলো! খুঁজে দেখি!’

বাকি দুজনের মনে হলো অযথাই খোঁজা হবে। তারপরও ওরা যেতে রাজি হলো। মুসা মোটরসাইকেলে রবিনের পেছনে বসল। এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তা, পুরো এলাকা তন্ন তন্ন করে চক্কর দিল। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা কোনো গাড়ি চোখে পড়ল না ওদের।

‘রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে টায়ার পাল্টেছে কেউ, সে রকম আলামতও তো দেখছি না,’ বলল কিশোর। ‘না পায়ের ছাপ, না যন্ত্রপাতির চিহ্ন, না কোনো টায়ারের দাগ।’

‘নিশ্চয়ই ব্যাটার সঙ্গে আর কেউ ছিল। এসে তুলে নিয়ে গেছে ওকে।’ উপসংহারে এল মুসা, হতাশায় ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

‘আরে, এত মন খারাপ কোরো না তো, মুসা।’ ফেরার পথে বন্ধুকে সান্ত্বনা দিল কিশোর। ‘ওই বাড়তি টায়ারের ব্যাপারটা ভালো একটা সূত্র হতে পারে এই কেসে।’

রান্নাঘরে ফিরে আসতে ওদের ছেঁকে ধরল উদ্বিগ্ন মেয়েরা। প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তুলল ছেলেদের।

‘ব্যাপারটা কী, একটা কথাও না বলে যে ছুট দিলে তোমরা সব?’ কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ট্রেসি।

‘হ্যাঁ, বলো তো কী ব্যাপার? আমাদের ভয়ে আধমরা বানিয়ে কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?’ উষ্মা প্রকাশ পেল ফারিহার কণ্ঠে। ‘প্রথমে মুসার কাছে এল ওই ফোনের হুমকি, তারপরই তিনজনে পাগলের মতো দৌড় দিলে!’

‘আরে, শান্ত হও।’ কোমল স্বরে বলল কিশোর। ‘একটা চোরকে দেখেছিলাম আমি। তার খোঁজেই গিয়েছিলাম তিনজনে। কিন্তু শুধু এটা পেলাম!’ ধূসর পরচুলাটা ছুড়ে দিল হলঘরের একটা চেয়ারে।

হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠল মুসা। ‘খাইছে, আমার রোস্ট! এতক্ষণে বারোটা বেজে গেছে ওটার!’

খিলখিল করে হেসে উঠল ফারিহা। ‘আরে, বোকা! তোমার কী ধারণা, ট্রেসি আর আমি মিলে অত লোভনীয় খাবারটাকে নষ্ট হতে দিই? এমনভাবে আঁচ কমিয়ে রেখেছি, যাতে একটুও নষ্ট না হয়।’

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল মুসা। সবাই একসঙ্গে বসে পড়ল খাবার টেবিলে। প্রচুর হাস্যরসের ভেতর দিয়ে খাওয়া চললেও, মূল আলোচনা ঘুরপাক খেতে লাগল মুসার চোরাই জেলপি আর উইগ পরা ছদ্মবেশধারী চোরকে কেন্দ্র করে।

উইগটা নিতে চাইল কিশোর। বাড়ি নিয়ে গিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে চায়। হয়তো ভেতরে কোথাও প্রস্তুতকারক বা ব্যবহারকারীর কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে। এককথায় রাজি হয়ে গেল মুসা।

কিন্তু খাওয়াদাওয়ার পর দুষ্টুমিভরা চোখে কিশোরকে খোঁচা দিল ট্রেসি, ‘তা দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা, উইগটা এখানেই একবার পরীক্ষা করে দেখো না কেন? তোমাদের দক্ষ, নিপুণ পদ্ধতিটা একটু নিজের চোখে দেখি?’

‘আচ্ছা, শুধু দেখানোর জন্যই কাজটা করছি আমি।’ সহাস্যে বলল কিশোর।

হলঘরের চেয়ার থেকে উইগটা নিয়ে এসে রান্নাঘরের টেবিলে রাখল সে। পকেট থেকে ছোট একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করে, সাবধানে উইগের লাইনিংয়ের প্রতিটি ইঞ্চি পরীক্ষা করল।

‘এখানে কিছু নেই।’ বলল সে।

এবার একটা একটা করে চুল ফাঁক করে ভেতরটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল, যদি শনাক্ত করার মতো কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়। কিন্তু কিছুই পেল না কিশোর।

‘ধ্যাত্তোরি, মনে হয় না কোনো কাজে আসবে এটা।’ বিরক্ত হয়ে বলল সে। ‘তারপরও দেখি, শহরের কয়েকজন পরচুলা বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে আনব।’

ওর কথা শেষ হতে না হতেই ফোন বেজে উঠল। ফারিহা গেল ধরতে। ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল মুসার মুখ, উসখুস করতে লাগল সে। সেই হুমকিদাতাই কি কল করল আবার? কী চায় লোকটা?

খানিক বাদে রান্নাঘরে ফিরে এল ফারিহা। কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। ‘একটা লোক, মুসা, তোমাকে চাইছে। নাম বলেনি।’

ত্রস্তপায়ে, ফোনের কাছে গেল মুসা। অন্যেরাও তার পেছনে গিয়ে ভিড় জমাল।

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি মুসা আমান। না, এখনো গাড়ি ফেরত পাইনি।’

ওপাশের লোকটা দ্রুত কথা বলে চলল।

অলংকরণ : আরাফাত করিম

মুসা বলল, ‘কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই।’ অবশেষে বলল মুসা। ‘আমি...ইয়ে, আচ্ছা, আমি জানাব আপনাকে।’

ফোন রেখে, ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল মুসা। অন্যরা সব প্রশ্নে প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল ওকে।

লম্বা শ্বাস টানল মুসা। তারপর বলল, ‘আমার জেলপি ফেরত পেতে পারি। কিন্তু ওটা কোথায় আছে সেই তথ্য বলার জন্য একগাদা টাকা দাবি করেছে লোকটা।’

‘খুব ভালো লাগছে শুনে যে তুমি ওটা ফেরত পাচ্ছ!’ হেসে বলল ট্রেসি।

‘কিন্তু অত টাকাই তো নেই আমার কাছে।’ গুঙিয়ে উঠল মুসা।

‘তা, লোকটা কে?’ চেপে ধরল রবিন।

উত্তর দেওয়ার আগে বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে রইল মুসা। কৌতূহলে যখন ফেটে পড়ার দশা সবার, তখন প্রত্যেকের মুখের ওপর দৃষ্টি বুলিয়ে এনে বোমাটা ফাটাল, ‘ফ্রেড। ডগলাস ফ্রেড!’

বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল সবাই। এ ধরনের কিছু শুনবে, কল্পনাই করেনি কেউ। জেলপি কোথায় আছে, সেই তথ্য বিক্রি করছে ফ্রেড স্বয়ং, যে নিজেকে গোয়েন্দা বলে দাবি করে!

‘এমন করল কেন গর্দভটা!’ রাগে ফেটে পড়ল রবিন।

মুসা ব্যাখ্যা করল, ফ্রেড বলেছে সে নাকি বেগার খাটার জন্য ব্যবসায় নামেনি, তারও খেয়েপরে চলতে হয়। গোয়েন্দা হিসেবে খাটাখাটনি করে যেসব তথ্য উদ্ধার করে, সেগুলোর জন্য নাকি তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রাপ্য।

কাঁধ ঝাঁকাল কিশোর। ‘সে ক্ষেত্রে মনে হয়, যুক্তিসংগত কথাই বলেছে ফ্রেড। তা, তথ্যটার জন্য কত চাইছে সে, মুসা?’

‘পাঁচ শ ডলার!’

‘কী?’ অাঁতকে উঠল সবাই।

দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যার যা সামর্থ্য দেবে ওরা। পাঁচ শ ডলার না হোক, যে কয় টাকাই উঠুক, তার বিনিময়ে মুসার গাড়িটা দেখিয়ে দিতে বলবে ফ্রেডকে।

‘তবে একটা কথা খেয়াল রেখো।’ মুসাকে সতর্ক করে দিল কিশোর। ‘গাড়িটা যদি তোমার জেলপি না হয়, একটা আধলাও দেবে না ফ্রেডকে।’

ফ্রেডের বাড়িতে ফোন করল মুসা। ঠিক যেমনটা আশা করেছিল ওরা, এক শ ডলার নিতে প্রথমে গাঁইগুঁই করল সে। তবে শেষ পর্যন্ত তাতেই রাজি হলো। বলল যে আধা ঘণ্টা পর ওদের তুলে জায়গামতো নিয়ে যাবে।

ইতিমধ্যে মুসার বাবা-মা ফিরে এলেন। হাসিখুশি, সুদর্শন চেহারার ভদ্রলোক মিস্টার আমান। আগে সিনেমায় কাজ করতেন। এখন ফার্ম হাউস চালাচ্ছেন।

মিসেস আমানও বেশ হাসিখুশি। চটপটে আর আমুদে। কিন্তু এখানে ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনা যখন তাঁর কানে গেল, আর শুনলেন যে ছেলেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তখন দারুণ উদ্বিগ্ন হলেন।

‘তোমরা সাবধানে থাকবে কিন্তু, ছেলেরা।’ উপদেশ দিলেন তিনি। ‘ওই লাল-চুলো চোরটা সহজেই ফ্রেডকেও বোকা বানিয়ে দিতে পারে। কাজেই হুঁশিয়ার!’

সাবধানে থাকবে, কথা দিল মুসা।

‘গুড লাক!’ বাইরে গাড়ির হর্ন শোনা যেতে হেঁকে উঠল ট্রেসি। ‘আর, আসতে দেরি করো না যেন। খবরটা শুনেই বাসায় ফিরতে চাই।’

কোথায় চলেছে সে ব্যাপারে ফ্রেডের মুখ থেকে একটা শব্দও বের করতে পারল না কিশোর, রবিন আর মুসা। মনে হলো নিজের ভূমিকাটা বেশ আনন্দের সঙ্গেই উপভোগ করছে লোকটা।

‘জানতাম, পারলে আমিই পারব কেসটা সমাধান করতে।’ সগর্বে বলল ফ্রেড।

ফ্রেডকে খোঁচা দেওয়ার লোভ সংবরণ করতে পারল না রবিন। ‘গাড়ির পাশাপাশি চোরটাও ধরে দিচ্ছেন নাকি?’

বিব্রতভাব ফুটে উঠল ফ্রেডের চেহারায়। আমতা আমতা করে স্বীকার করল, রহস্যের এই অংশটুকু এখনো সমাধান করতে পারেনি সে। ‘তবে খুব বেশি দেরি লাগবে না আমার চোরটাকে ধরতে।’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল।

অনেক কষ্টে মুখের ভাব স্বাভাবিক রাখল ছেলেরা। শুধু আশা করছে, লোকটার সঙ্গে যাওয়াটা যেন শেষ পর্যন্ত বিফল না হয়।

মিনিট বিশেক পর একটা পুরোনো গাড়ির পার্কিং লটে এসে থামল ফ্রেড। স্টার্ট বন্ধ করে বলল, ‘তো বন্ধুরা, এসে পড়েছি আমরা। টাকা দেওয়ার জন্য রেডি হয়ে যাও, মুসা।’

দায়িত্বে থাকা অ্যাটেনডেন্টের উদ্দেশে মাথা ঝাঁকাল ফ্রেড। তারপর ছেলেদের নিয়ে লম্বা একটা গলি ধরে, একটার পর একটা গাড়ির সারি পার হয়ে চলে এল একেবারে পেছনে। কয়েকটা জেলপি দাঁড় করিয়ে রাখা বেড়ার ধারে। ওখান থেকে আবার বাঁয়ে ঘুরল সে। অবশেষে যে গাড়িটার সামনে এসে থামল, সেটা একটা উজ্জ্বল লাল রঙের গাড়ি!

‘এই যে তোমাদের জিনিস!’ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল ফ্রেড। ডান হাতটা বাড়িয়ে ধরল মুসার দিকে। ‘আমার টাকাটা, প্লিজ।’

কিশোর, রবিন, মুসা, প্রত্যেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল গাড়িটার দিকে। এটা যে মুসার মডেলেরই গাড়ি, দেখতেও ওটার মতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

‘চোর ব্যাটা লাল রং করে লুকাতে চেয়েছে গাড়িটাকে,’ ব্যাখ্যা করল ফ্রেড।

‘আপনার তাই ধারণা?’ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল কিশোর।

ভুরু কোঁচকাল ফ্রেড। ‘তা ছাড়া আর কী?’ বলল সে।

‘সে ক্ষেত্রে লাল রঙের নিচে হলুদ রং থাকার কথা,’ বলল কিশোর। ‘চলেন তো, দেখে শিয়োর হয়ে নিই।’

পরিষ্কার বোঝা গেল, ব্যাপারটা মনঃপূত হচ্ছে না ফ্রেডের। ‘তাহলে আমার কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না তোমাদের, অ্যাঁ?’

‘ভুল তো সবারই হতে পারে,’ কিশোর বলল তাকে। ‘হ্যাঁ, মুসা, কাজ শুরু করা যাক।’

মুখ হাঁড়ি করে দাঁড়িয়ে থাকল ডিটেকটিভ। পকেট থেকে পেননাইফ বের করল কিশোর, খুঁচিয়ে রং ওঠাতে লাগল ফেন্ডারের এক কোনা থেকে।

(চলবে...)

আরও পড়ুন