তেরো থেকে উনিশ বছর বয়সীদের দিনে কত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত
তুমি যদি একরাত ঠিকঠাক না ঘুমাও, তাহলে পরদিন কী হবে জানো? ক্লান্তি আর ঘুম ঘুম ভাবের ব্যাপারটা হয়তো আন্দাজ করতে পারছো। ক্লাসে মনোযোগ দিতেও অসুবিধা হবে। চোখজোড়া ব্যথাও করতে পারে। হুট করে বিগড়ে যেতে পারে মেজাজটা। দীর্ঘদিন যদি ঘুমের সমস্যায় ভুগতে থাকো তুমি, তাহলে এসব সমস্যা দেখা দেবে বারবার। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও ব্যাহত হতে পারে। ঘুমের ঘাটতি কারও কারও ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ন্ত বয়সে ঘুমের অভাবে দেহের বৃদ্ধিও বাধা পেতে পারে। বুঝতেই পারছ, ভালো ঘুম কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে নানা কারণেই ঠিকঠাক ঘুম হয় না। কৈশোরে হতেই পারে ঘুমের ঘাটতি। কারও হয়তো পড়ালেখা শেষ করতে দেরি হয়ে যায়। কারও আবার রাতের অনেকটা সময় কেটে যায় রিল দেখে। কেউ রাত জেগে দেখে সিনেমা-সিরিজ, কেউ আবার এসব কিছু দূরে সরিয়ে রেখে বিছানায় গিয়েও ঘুমাতে পারে না। অথচ একটা সতেজ ও সুন্দর দিনের জন্য এবং ভালো থাকার জন্য ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে কথা হলো ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ্ নূরের সঙ্গে।
কখন ঘুম চাই, কতটা ঘুম চাই
ঘুমের সেরা সময় রাত। তোমরা অনেকে হয়তো জানো, ঘুমের মধ্যেই একাধিক ধাপ পার হই আমরা। ধাপগুলো মিলিয়ে ঘুমকে একটা চক্রের মতো ধরতে পারো তুমি। এক রাতে এই চক্র চলে ৪-৫ বার। একেকটি চক্র হয় ৯০ থেকে ১২০ মিনিটের। কার ঘুমের চক্র ঠিক কতটা সময়ের হবে, তা আবার অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সব হিসাব-নিকাশ করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, তেরো থেকে উনিশ বছর বয়সীদের জন্য রোজ সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কারও কারও দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে। তবে রাতের ঘুম ঠিকঠাক রাখতে দিনে না ঘুমানোই ভালো। নিতান্তই প্রয়োজন হলে দুপুরে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমানো যেতে পারে।
যেভাবে ঠিক রাখবে সময়
ঘুমের সময় ঠিক রাখতে রোজ একসময়ে ঘুমানো ও ওঠার অভ্যাস করা জরুরি। সকালে যে সময় তোমার উঠতে হয়, তার সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় ঘণ্টা আগেই ঘুমাতে যেতে হবে তোমাকে। আরও যেসব বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন—
• সকালের আলোয় সময় কাটাবে রোজ কিছুটা সময়। এ অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে রাতে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন নিঃসরণ হয় ঠিকঠাক। ফলে রাতে ঘুম ভালো হয়।
• ঘুমের আগে ডিজিটাল স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলোয় সময় কাটালে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
• ঘুমের ঠিক আগে আগে ব্যায়াম করতে নেই। তা ছাড়া ঘুমের আগে এমন কোনো বই বা ভিডিও দেখতে নেই, যা বেশ উত্তেজনাপূর্ণ।
• বিকেলের পর চা, কফি, চকলেট না খাওয়াই ভালো। কারণ, এগুলোতে থাকে ক্যাফেইন। অনেকেই ক্যাফেইনের প্রভাবে ঘুমাতে পারেন না।
• ঘুমের আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে। তা ছাড়া শিথিলায়ন ব্যায়ামও করা যেতে পারে।
যদি থাকে বিশেষ কোনো সমস্যা
এতসব নিয়ম মেনে চলার পরেও কারও কারও ঘুমের সমস্যা হয়। কেন, জানো? কেউ ভোগে মানসিক চাপে। কেউ ভোগে শারীরিক সমস্যায়। যেমন ধরো, ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূতি নিয়ে ঘুমানো কঠিন। প্রায়শই যদি এমন কোনো সমস্যায় ভুগতে হয়, তাহলে এর পেছনের মূল কারণ খুঁজে বের করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ঘুমানোর সময় কারও কারও খুব জোরে নাক ডাকে। কাছের মানুষের মনে হতে পারে, ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য বুঝি তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সমস্যা একটি রোগের লক্ষণ হতে পারে। রোগটির নাম অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া। এ রোগে আক্রান্ত হলে লম্বা সময় ঘুমানোর পরেও সতেজ হয়ে ওঠা যায় না। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেও চিকিৎসা প্রয়োজন। মানসিক চাপে ভুগলে কাছের মানুষদের সহায়তা নাও। মন খুলে কথা বলো তাঁদের সঙ্গে। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নাও। এ বিষয়ে ঘরে বসেই বিনা মূল্যে দিকনির্দেশনা পেতে পারো মনতরঙ্গের মতো কোনো ওয়েবসাইট থেকেও। মনতরঙ্গ এ দেশেরই ছেলেমেয়েদের গড়া এক ওয়েবসাইট। বাস্তব দুনিয়ায় হোক কিংবা ভার্চ্যুয়াল, সাহায্য নাও সঠিক জায়গা থেকে।