পিরিয়ডে সুরক্ষিত থাকতে কী করব

আপনার ঘরের নরম আলো শুধু ঘুম নয়, হৃদয়কেও রাখবে সুরক্ষিত ও প্রশান্ত

পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এই দিনগুলো একটু আলাদা। তবে আলাদা হলেও এ সময় পড়ালেখা, খেলাধুলা সবই স্বাভাবিকভাবে চলবে নিঃসন্দেহে। কেবল নিজের একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে এ কয়েকটা দিন। সুস্থ থাকতে ব্যক্তিগত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নইলে হতে পারে সংক্রমণ।

পিরিয়ডের সময় মনে জমতে পারে বিষণ্নতার মেঘ। বিশেষ করে কৈশোরে এমনটা হতেই পারে। তবে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে নিজের যত্ন নিলে তুমি এই সময়ও সুস্থ থাকবে। নইলে এই দিনগুলোয় ভেজা ভাব ও দুর্গন্ধ তোমার সঙ্গী হতে পারে। মনে রাখবে, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার নিয়মকানুন মেনে না চললে যোনিপথ ও এর আশপাশের ত্বক ও জরায়ুমুখের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে জরায়ুতে, এমনকি জরায়ুর পাশে থাকা নালিতেও।

বুঝতেই পারছো, বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকার কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. নূরুন নাহার।

আরও পড়ুন

সুস্থ থাকতে চাই স্যানিটারি ন্যাপকিন

পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উচিত। এর বিকল্প হিসেবে কাপড় ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত। কারণ, এই কাপড় জীবাণুমুক্ত করা খুব কঠিন কাজ। তাই কাপড়ের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

কেউ কেউ আবার স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেজা ভাব কমাতে এর ওপর টিস্যু পেপার বিছিয়ে নেয়। এই অভ্যাসটিও ক্ষতিকর। ভেজা ভাব কমাতে বরং যোনিপথের আশপাশটা শুকনা রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে।

আধুনিক যুগে কেউ কেউ ট্যাম্পন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করেন। তবে কৈশোরে ব্যবহারের জন্য এগুলো খুব একটা সুবিধাজনক নয়। অবশ্য রিইউজেবল পিরিয়ড প্যান্টি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ভালোভাবে ধুয়ে পরা হলে ক্ষতির ঝুঁকি নেই।

স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যা খেয়াল রাখতে হবে

স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হয়।

কোনো অবস্থাতেই একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন ছয় ঘণ্টার বেশি সময় রাখা যাবে না। রক্তক্ষরণ কম হলেও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর রক্তক্ষরণ বেশি হলে সেটি আরও দ্রুত বদলে ফেলতে হবে।

ব্যবহারের পর টয়লেট পেপার বা কাগজ দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে ঢাকনাযুক্ত ময়লার বিনে ফেলতে হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিন যে কাগজে মোড়ানো থাকে, সেটিও এই কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনোই বাথরুমে, ড্রেনে বা জলাশয়ে ফেলা যাবে না।

মেয়াদোত্তীর্ণ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা যাবে না।

আরও পড়ুন

যোনিপথের পরিচ্ছন্নতা

যোনিপথ ও এর আশপাশের ত্বক শুকনা রাখতে হবে। পানি ব্যবহারের পর এই অংশ খুব ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। আরামদায়ক কাপড়ের পোশাক পরতে হবে, যাতে এখানে বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকে। অন্তর্বাস ধুয়ে ফেলতে হবে রোজ।

যোনিপথ ও এর আশপাশের ত্বকে কখনোই সাবান, শ্যাম্পু, জীবাণুনাশক দ্রবণ বা অন্য কোনো রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করতে নেই। এতে যোনিপথের স্বাভাবিক অম্লতা (অ্যাসিডিক পিএইচ) নষ্ট হয়। দেহের এই অংশের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বজায় রাখতে এই পিএইচ থাকা জরুরি। তাই কেবল পানি দিয়েই এই অংশ পরিষ্কার করা উচিত। এই অংশের লোম ছোট করে পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন।

প্রয়োজনে সপ্তাহে দু–এক দিন কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে এ জায়গাটি পরিষ্কার করা যায়। আড়াই লিটারের একটি মগে কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে নিলেই তা দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজটি সেরে ফেলা যায় সহজে।

জীবন থাকুক স্বাভাবিক

পিরিয়ডের সময় তো বটেই, কৈশোরজুড়েই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। পিরিয়ডের দিনগুলোয় পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। প্রতিদিন গোসল করতে হবে এবং পোশাকই বদলে ফেলা উচিত। খেলাধুলা বা শরীরচর্চা করলে পিরিয়ডের ব্যথা সামলানো সহজ হয়। এতে শরীর ও মন ফুরফুরে থাকে।

আরও পড়ুন