স্কুলে মুঠোফোন নিষিদ্ধ করলে কি শিক্ষার্থীরা আরও ভালো রেজাল্ট করবে
ক্লাসে টিচার পড়াচ্ছেন, আর পেছনের বেঞ্চে বসে হয়তো কয়েকজন স্মার্টফোনে স্ক্রল করছে। এমন দৃশ্য এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তব। তাই প্রশ্ন উঠছে, স্কুলে ফোন নেওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলে কি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় আরও বেশি মনোযোগ দেবে?
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাঞ্জেলা ডাকওয়ার্থ ঠিক এই প্রশ্নের উত্তরটাই খুঁজছিলেন। তিনি এবং তাঁর দল আমেরিকার ২০ হাজারেরও বেশি স্কুলশিক্ষকের ওপর একটি বিশাল জরিপ চালান। কয়েক মাসের গবেষণার পর ফলাফল যা এসেছে, তা এককথায় পানির মতো পরিষ্কার। নিয়ম যত কড়া, ফলাফল তত ভালো!
শিক্ষকেরা কী বলছেন
গবেষকেরা দেখেছেন, যেসব স্কুলে ঢোকা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত ফোন ব্যবহার পুরোপুরি নিষেধ, সেখানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাপারে ডাকওয়ার্থ বলেন, ‘আমরা একটা পরিষ্কার প্যাটার্ন দেখছি। নিয়ম যত কঠোর, শিক্ষকেরা তত খুশি। আর নিয়ম কঠোর হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগও বাড়ে।’
বিদেশের অনেক স্কুলে নিয়ম আছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফোন ব্যবহার করবে কি না, তা সেই ক্লাসের শিক্ষক ঠিক করবেন। কিন্তু এটাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন একটা ফাঁদ। কারণ, একা একজন শিক্ষকের পক্ষে ক্লাসের ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব।
শিক্ষকেরা জরিপে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের সাহায্য দরকার। আমরা একা পারব না। পুরো স্কুলের জন্য একটা অভিন্ন ও কড়া নিয়ম দরকার।’
এই ফোন নিষেধাজ্ঞার ফল শুধু পড়াশোনাতেই আটকে নেই, এটা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলছে। গবেষকেরা দেখেছেন, আগে টিফিনের সময় ক্যাফেটেরিয়ায় পিনপতন নীরবতা থাকত! কারণ, সবাই এক হাতে খাবার মুখে দিত, অন্য হাতে স্ক্রল করত ফোন। কারও দিকে তাকানোর সময় নেই, কথা বলা তো দূরের কথা। কিন্তু ফোন নিষিদ্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আবার একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে। হারিয়ে যাওয়া সেই আড্ডা আর বন্ধুত্ব আবার ফিরে এসেছে।
কিশোরদের নিয়ে দুশ্চিন্তা
তবে একটা ভয়ের ব্যাপারও আছে। জরিপে দেখা গেছে, ছোটদের স্কুলগুলোর তুলনায় হাইস্কুলগুলোতে ফোনের নিয়ম বেশ শিথিল। প্রতি চারটি হাইস্কুলের মধ্যে মাত্র একটিতে কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে। অধ্যাপক ডাকওয়ার্থ এখানেই চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘কিশোর বয়সে প্রলোভন থাকে সবচেয়ে বেশি। ঠিক এই সময়েই ওদের গাইড করা সবচেয়ে জরুরি। অথচ ঠিক এই বয়সটাতেই আমরা তাদের হাতে অবারিত স্বাধীনতা তুলে দিচ্ছি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই গবেষণা এখনো চলছে। লক্ষ্য হলো ১ লাখ শিক্ষকের মতামত নেওয়া। গবেষকেরা চাইছেন, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য এমন একটা বিজ্ঞানসম্মত নীতিমালা তৈরি করতে, যা শিক্ষার্থীদের কেবল ভালো ছাত্রই নয়, বরং সুস্থ সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
প্রযুক্তি ভালো, কিন্তু ক্লাসরুমে ফোনের চেয়ে বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা ও শিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী পড়াশোনা করা বেশি জরুরি। এই গবেষণা সেটাই আবার প্রমাণ করল।
সূত্র: নলেজ অ্যাট ওয়ার্টন