পিরিয়ডের দিনগুলোয় কী খেয়ে ভালো থাকা যায়
পিরিয়ডের দিনগুলো একটু অন্য রকম। এ সময় মনমেজাজেও খানিকটা বদল আসতে পারে। তবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, আরামদায়ক পোশাক, সঠিক খাবারদাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও নিয়মমাফিক শরীরচর্চায় এ সময়টাও হয়ে ওঠে সহজ। দেহ ও মনের সুস্থতায় খাবারদাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান বলছিলেন, ‘এ দেশে এমন বহু কিশোরী আছে, রক্তক্ষরণের ফলে যাদের আয়রনের ঘাটতি হয়। আয়রনের ঘাটতি হলে যে কেউ অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করতে পারে। মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যাও দেখা দেয়। নখ হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। রক্তক্ষরণের কারণে পানিশূন্যতায়ও ভোগে অনেকেই। অত্যধিক ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও দুর্বলতার এটাও একটা কারণ। পানিশূন্যতায় ত্বক–চুলও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। আয়রনসমৃদ্ধ ও তরল খাবার এ সময়ের জন্য ভীষণ জরুরি। তা ছাড়া এ সময়ের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো সামলাতে উপকারে আসবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস।’
তবে একেবারে ডায়েট চার্ট তৈরি করে ফেলতে হবে, তেমনটাও কিন্তু নয়। রোজকার খাবারেই মিটবে প্রয়োজন। তবে জানা থাকতে হবে কোনটা বেশি প্রয়োজন, আর কোনটা একটু কম খাওয়া ভালো। বিস্তারিত জেনে নাও এই পুষ্টিবিদের কাছ থেকেই।
তরল খাবার
পিরিয়ডে রক্তক্ষরণ হয় বলে পানির চাহিদা বাড়ে। পানি ছাড়াও অন্যান্য তরল খেতে পারো। তবে পানীয়তে চিনি যোগ না করাই ভালো; করলেও খুব কম পরিমাণে। প্যাকেটজাত ও বোতলজাত পানীয়তে বাড়তি চিনি থাকে। এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। চিনি খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে খুব দ্রুত। আবার তা কমেও যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। এভাবে চট করে গ্লুকোজ কমে বা বেড়ে যাওয়াটা স্বাস্থ্যকর নয়। হুট করে মনমেজাজ বিগড়ে যাওয়ার সঙ্গেও এর সম্পর্ক থাকতে পারে। অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবারও বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয় ঠিক এ কারণেই। ঘরে তৈরি ফলের রস ভালো। লেবুর শরবত, বেলের শরবত প্রভৃতি খেতে পারো। পিরিয়ডের দিনগুলোয় আদা-চা খেলে স্বস্তি পাবে। তবে অতিরিক্ত চা-কফি খেলে পানিশূন্যতা ও মাথাব্যথা হতে পারে। চা-কফি খেলে তা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অন্তত ঘণ্টা দুই আগে বা পরে খাওয়া উচিত, নইলে সেই আয়রন দেহে ঠিকভাবে শোষণ হবে না।
মাছ-মাংস-কলিজা-ডিম-দুধ
মাছ, মাংস, কলিজা, ডিম ও দুধে আমিষ ছাড়াও পাবে আয়রন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। দুধ খেতে ভালো না লাগলে দই বা টক দইও খেতে পারো। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। এই বয়সের আয়রনের চাহিদা মেটাতে এসব প্রাণিজ উপাদান আবশ্যক।
ফলমূল, শাকসবজি ও ডাল
গাঢ় সবুজ শাকসবজি, খেজুর, পেয়ারা, নাশপাতি ও আপেলের মতো কিছু ফলমূল এবং ডালেও কিছুটা আয়রন পাবে। ডালে আমিষও পাবে। উদ্ভিজ্জ বিভিন্ন খাবার বেশি পরিমাণে খাবে। এগুলো থেকেই ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাবে। তাতে সুস্থ ও সতেজ থাকবে তুমি। সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে। উদ্ভিজ্জ খাবারের আয়রন আমাদের দেহের কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি পাবে বিভিন্ন টক ফল থেকে। তাই সবজি বা ডাল দিয়ে ভাত খাওয়ার সময় লেবু নিতে পারো। মজার ব্যাপার হলো, লেবুর রসের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায় এর খোসায়। তাই ভাতের সঙ্গে লেবুর খোসার খানিকটা অংশ চিবিয়ে নিলে আরও ভালো। তবে মনে রাখবে, তাপে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আচার বা চাটনি টক হলেও তাতে ভিটামিন সি পাবে না।
আরও যা
ঢেঁকিছাঁটা চাল, লাল আটা, ওট, কিনোয়া, যব অর্থাৎ গোটা শস্যের (হোল গ্রেইন) তৈরি খাবার খেতে পারো। এসব খাবার আমাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা হুট করে বাড়ায় না, তাই দেহ ও মনের জন্য ভালো।
গোটা শস্য, বাদাম আর বীজে পাবে নানান খনিজ উপাদান।
ডার্ক চকলেট এই সময়ের জন্য ভালো।
তবে বাড়তি লবণ ও অতিরিক্ত মসলা দেওয়া খাবার খেলে অস্বস্তি বাড়তে পারে।