খাবারের প্যাকেটে লেখা মেয়াদ শেষ হলেই কি আর খাওয়া যাবে না

খাবার থেকে কোনো দুর্গন্ধ আসছে কি না, এর রং বদলে গেছে কি না, বা এতে ছত্রাক পড়েছে কি না, পরীক্ষা করে দেখো। মডেল: রাহনুমা তিথিছবি: কবির হোসেন

সকালের নাশতাখেতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। রুটি এনে রেখেছিলাম। প্যাকেট খুলতে গিয়ে দেখি গতকাল মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। এখন রুটি কি খাব নাকি খাব না, দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এই অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই। খাবার এনে রাখা হয়েছে, খাওয়া হয়নি। পরে যখন খেতে চাইল, দেখল মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করবে? মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও কি খাবার খাওয়া যাবে? 

উত্তরটা সহজে দেওয়া যায় না। খাবারের প্যাকেটে লেখা তারিখ দিয়ে বোঝায়, খাবারটির স্বাদ কত দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে। অনেকে মনে করে মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেই বুঝি খাবার খাওয়াটা অনিরাপদ হয়ে যায়। বিষয়টি তা নয়। শুধু শিশুদের ফর্মুলার ক্ষেত্রে এই তারিখ বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হবে, সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে। অন্য সব ক্ষেত্রে তারিখের লেবেল মূলত মান বা স্বাদের অবনতি কখন শুরু হবে, তা নির্দেশ করে। এর ফলে প্রচুর খাবার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেই ফেলে দেওয়া হয়। মেয়াদের বিষয়টি নিয়ে জানা না থাকার কারণে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০০ কোটি পাউন্ড খাবার ফেলে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

ভুল–বোঝাবুঝির কারণ কী

উনিশ শ দশকের মাঝামাঝি খাবার কেনার ধরন প্রথম বদলে যেতে শুরু করে। মানুষ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা খাবার ছেড়ে প্যাকেটজাত পণ্যের দিকে ঝোঁকে। তখন কিছু কোম্পানি পণ্যের টাটকা ভাব নিশ্চিত করতে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বসিয়ে দেয়। 

এই তারিখ বসানোর কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একেক কোম্পানি একেক রকম নিয়ম অনুসরণ করে। যেমন কোনো কোম্পানি হয়তো গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে অনুমান করে, কখন খাবারের মান কমতে শুরু করবে। আবার কেউ কেউ পণ্যকে উচ্চ তাপমাত্রা বা আর্দ্রতায় রেখে পরীক্ষা করে। এমনকি কিছু কোম্পানি তাদের পণ্যে ছত্রাক, ইস্ট বা ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবাণু প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালায়। আবার কেউ অনুমান করে বসিয়ে দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে একই দিনে উৎপাদিত দেখতে প্রায় একই রকম দুটি পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ আলাদা হতে পারে। এই জটিলতা আরও বেড়ে যায়, যখন বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকে। এক অঞ্চলের খাবার যখন অন্য অঞ্চলে বাজারজাত করা হয়, তখন সেখানকার নিয়ম আলাদা হলে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন

মেয়াদ দেখে কখন ফেলে দেব, কখন খাব

খাদ্যবিশেষজ্ঞরা বলেন, তারিখের এ লেবেলগুলো তোমাকে বোকা বানানোর জন্য দেওয়া হয় না। কোনো কোম্পানি তোমাকে বেশি করে পণ্য কিনতে বাধ্য করার জন্য কৌশল খাটাচ্ছে না। এটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকার ফল। বেশির ভাগ খাবারের ক্ষেত্রে তারিখ পার হয়ে গেলেও খাবারটি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।  

প্যাকেটের গায়ে লেখা কয়েকটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে পড়ো। ‘ইউস বাই’ বা ‘এক্সপায়ার অন’ যদি প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে, তবে বুঝবে এটি নিরাপত্তার বিষয়টি জানানোর জন্য লেখা হয়েছে। বিশেষ করে দ্রুত নষ্ট হয়, এমন খাবারে এটি লেখা থাকে। মাংস, সামুদ্রিক খাবার, কাঁচা দুধ বা চিজের ক্ষেত্রে এটি লেখা থাকে। ‘আবার বেস্ট ইফ ইউসড বাই’ দিয়ে বোঝানো হয়, সময়ের মধ্যে খেলে সবচেয়ে ভালো স্বাদ ও গুণগত মান পাওয়া যাবে। তারিখ পেরিয়ে গেলেও এটি খাওয়া নিরাপদ। তবে স্বাদ কিছুটা বদলে যেতে পারে। আর ‘সেল বাই’ লেবেলটি আসলে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য। এর মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, কখন দোকানে নতুন পণ্য আনতে হবে।

আরও পড়ুন

আমাদের কী করার আছে

এই প্যাঁচের মধ্যে না পড়ে তুমি কিছু সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করতে পারো। খাবার থেকে কোনো দুর্গন্ধ আসছে কি না, এর রং বদলে গেছে কি না, বা এতে ছত্রাক পড়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখো। তবে কিছু খাবার নিয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকবে। বিশেষ করে কাঁচা মাংস এবং সামুদ্রিক খাবারের ক্ষেত্রে এই তারিখগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এগুলো দ্রুত নষ্ট হয়। মাংস ছাড়া অন্য খাবার যেমন, ফ্রোজেন খাবার সাধারণত এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। খোলা হয়নি এমন সস, তেল বা টিনজাত খাবার অনেক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। রেফ্রিজারেটরে রাখা ডিম তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। দুগ্ধজাত পণ্য খোলার পর এক থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। তুমি এই সহজ নিয়ম মেনে চললে খাবার অপচয় করা থেকে বাঁচতে পারবে।

আরও পড়ুন