সর্দি হলেই কি ভিটামিন সি খেতে হবে

সবার মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, ভিটামিন সি খেলে সর্দি-কাশি দূরে থাকে।ছবি: প্রথম আলো

একটু কাশি বা সর্দির লক্ষণ দেখলেই পরামর্শ শুনতে হয়, লেবু খাও, কমলা খাও। গলা একটু খুসখুস করলে বা নাক ঝরতে শুরু করলে সবার ক্ষেত্রেই এমন দেখা যায়। অনেকেই আবার ভিটামিন সি ট্যাবলেটের দিকে হাত বাড়ায়। কমলার রস, লেবুর শরবত, সাপ্লিমেন্ট, সব মিলিয়ে ধারণা তৈরি হয়েছে, ভিটামিন সি খেলে সর্দি-কাশি দূরে থাকে।

বিজ্ঞান কী বলে?

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের লাইফ সায়েন্সেস বিভাগের প্রধান ড্যানিয়েল এম ডেভিস বলছেন, না, এটি আসলে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোর একটি। তাঁর মতে, ‘ভিটামিন সি শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষ রক্ষা করে, আয়রন শোষণে সাহায্য করে, কোলাজেন তৈরি করে। কিন্তু সর্দি প্রতিরোধ বা দ্রুত সারানোতে ভিটামিন সি খুব বেশি কিছু করতে পারে, এমন প্রমাণ নেই।’

আরও পড়ুন

এত বছর ধরে মানুষ কেন এটি বিশ্বাস করে?

এর পেছনে আছে বিজ্ঞানের ইতিহাসের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, দুবারের নোবেলজয়ী লিনাস পাউলিং। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রসায়নবিদ তিনি। ভিটামিন নিয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। ভিটামিন সির রোগ নিরাময়ক্ষমতা নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে তাঁর লেখা বই ভিটামিন সি অ্যান্ড দ্য কমন কোল্ড প্রকাশের পর পুরো বিশ্বে অনেক আলোড়ন ওঠে। এত বিখ্যাত হয় যে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট তৈরির জন্য নতুন নতুন কারখানা বানাতে হয়েছিল তখন।

তখন থেকে হাজারো মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল, ভিটামিন সি-ই হলো সর্দির ওষুধ। কিন্তু পরবর্তী গবেষণা থেকে দেখা গেছে ভিন্ন ছবি। যারা নিয়মিত ভিটামিন সি খায়, তারা যেমন সর্দিতে আক্রান্ত হয়, যারা খায় না তারাও ততটাই আক্রান্ত হয়। পার্থক্য শুধু এক জায়গায়, ভিটামিন সি খেলে সর্দির সময়কাল অল্প একটু কমতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রায় ৮ শতাংশ। ২ দিন ধরে সর্দি থাকলে আট শতাংশ সময় খুব কম সময়। চার ঘণ্টারও কম সময়। এটুকুই মোট প্রভাব। তারপরও এটি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কারণ, যারা নিয়মিত সাপ্লিমেন্ট খান, তাঁরা সাধারণত জীবনযাপনেও বেশি সচেতন।

তাই সর্দি কমাতে ভিটামিন সি–ই সমাধান, এমন দাবি করার মতো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই।

আরও পড়ুন

সর্দি কমাতে ভিটামিন সির বদলে ভিটামিন ডির দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় ভিটামিন ডির ভূমিকা অনেক বেশি। বিশেষ করে শীতকালে যখন সূর্যের আলো কম থাকে, তখন এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শীতের এই সময়ে অনেকেরই ভিটামিন ডির অভাব হয়। সর্দি-কাশি ভালো হতে চায় না।

ভিটামিন সি সর্দি না কমালেই এটি কিন্তু অনেক কাজ করে। লেবু-কমলা আমাদের কাছে সব সময় ‘রোগের বন্ধু’ হয়ে থাকবে। সর্দির সঙ্গে লড়াই করতে হলে ভিটামিন সির ভূমিকা যাই থাকুক, এর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্যাপ্ত ঘুম, ভিটামিন ডি, আর সুস্থ জীবনযাপন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন