তুমি কতটা এআই-নির্ভর

খুব ভয়ের একটা বিষয় ঘটেছে এআই নিয়ে। তোমাদের মতো স্কুলে যারা পড়ে, তাদের মধ্যে অনেকে এআইকে থেরাপিস্টের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। ধরো, কারও মন খুব খারাপ। বা সে কারও থেকে প্রত্যাখ্যান পেয়ে বেশ হতাশ। একাকিত্ব, উদ্বেগ আর মন খারাপের গল্প কাউকে বলতে না পেরে মনের কথা খুলে বলছে এআইয়ের কাছে। এর পেছনে কারণ হলো, তোমার পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, ডিজিটাল এই সঙ্গী সব সময় তোমার পাশে থাকবে। তোমাকে জাজ করবে না (উই লিসেন অ্যান্ড উই ডোন্ট জাজ)। এর বড় বিপদ আছে। এআই এখনো এ বিষয়ে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত নয়। থেরাপিস্ট হিসেবে সব এআইকে ট্রেনিং দেওয়া হয়নি। ফলে তোমাকে এআই এমন পরামর্শ দিতে পারে, যার ফলে তোমার নিরাপত্তা ভেঙে পড়তে পারে। তাই এআই এখনো প্রফেশনাল বা ডাক্তারের সাহায্যের বিকল্প হতে পারেনি। সমস্যা হচ্ছে, প্রফেশনালরাও এখন মানসিক সমস্যা সমাধান করতে এআইয়ের দেওয়া পরামর্শের দিকে ঝুঁকছেন। পুরো ব্যবস্থাতেই একটা ভজঘট পাকিয়ে আছে।

গত মাসে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার ৭২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এআই চ্যাটবটকে বন্ধু হিসেবে ব্যবহার করেছে। এদের মধ্যে প্রায় এক-অষ্টমাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫২ লাখ কিশোর-কিশোরী এই প্রযুক্তি থেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সাহায্য নিয়েছে। তোমরা যারা এআই ব্যবহার করো, তোমাদের গল্পটা খুব আলাদা হবে বলে মনে করি না। তোমরা নিশ্চয়ই অনেক ক্ষেত্রে এআই চ্যাট ব্যবহার করো। তোমাদের যেকোনো দরকারে এআই থেকে সাহায্য নাও। নিজেকে জানোর এই পর্বে আমরা জানতে চাই, তুমি কতটা এআই ব্যবহার করো। এআইয়ের ওপর তুমি কতটা নির্ভরশীল।

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে জেনে নাও, তুমি কতটা এআই-নির্ভর।

১. ক্লাস টেস্ট চলছে। ক্লাসরুম থেকে শিক্ষক বের হয়েছেন। তোমার পকেটে ফোন আছে। তুমি যে প্রশ্নের উত্তর পারো না, সেটা লেখার জন্য কী করবে?

ক. আমার কাছে পরীক্ষা মানেই নিজের পড়াশোনাকে যাচাই করা। আমি মনে করি, নকল করে ভালো নম্বর পাওয়াটা একধরনের আত্মপ্রতারণা। তাই এআইয়ের কথা চিন্তাই করব না।

খ. পরীক্ষার সময় খুব কঠিন কোনো প্রশ্ন এলে বা কোনো সংজ্ঞা ভুলে গেলে, তখন একটা অস্থিরতা কাজ করে। তখন ভাবি, ইশ্‌! যদি এআই থেকে উত্তরটা দ্রুত দেখে নেওয়া যেত!

গ. আমি তো পরীক্ষার আগের রাতেই এআইকে দিয়ে একটা পুরো ‘সমাধান’ তৈরি করে পড়ে এসেছি। এআইকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘কোন প্রশ্নগুলো বেশি আসার সম্ভাবনা আছে?’ সেই অনুযায়ী আমার প্রশ্নগুলো কমনই পড়েছে।

আরও পড়ুন

২. হোমওয়ার্ক করার ক্ষেত্রে তোমার এআই ব্যবহারের অভ্যাস কেমন?

ক. হোমওয়ার্ক মানে চ্যালেঞ্জ। আমি নিজের হোমওয়ার্ক নিজে করি। কারণ, এতে অনেক কিছু শেখা যায়। এআই দিয়ে হোমওয়ার্ক করার কোনো মানে হয় না। এমন কথা আমার মাথায়ও আসে না।

খ. যখন কোনো একটা বিষয় বুঝতে খুব সমস্যা হয়, তখন আমি এআইকে একধরনের টিউটর হিসেবে ব্যবহার করি। যেমন ‘অমুক টপিকটা আমাকে সহজ করে বুঝিয়ে দাও।’ এভাবে বুঝে তারপর নিজে হোমওয়ার্ক করি।

গ. হোমওয়ার্কের প্রশ্নটা আমি সরাসরি এআইতে বসিয়ে দিই। তারপর যা উত্তর আসে, তা থেকে শুধু নাম আর ক্লাস নম্বরটা বদল করে জমা দিয়ে দিই। আমার মনে হয়, এআই যখন আছে, তখন এত কষ্ট করার কী দরকার!

৩. বড় কোনো অ্যাসাইনমেন্ট করার সময় তুমি কোন পদ্ধতিতে কাজ চালাও?

ক. আমি অ্যাসাইনমেন্ট করতে ভালোবাসি। নিজে মূল বই পড়ি। ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করি। তারপর আমার নিজের ভাষায় সেটা লিখি। এটা আমার কাছে একধরনের সৃষ্টিশীল কাজ।

খ. অ্যাসাইনমেন্ট শুরু করার আগে একটা আউটলাইন তৈরি করার জন্য এআইয়ের সাহায্য নিই। তবে মূল লেখাটা পুরোপুরি আমার নিজের।

গ. আমি এআইকে দিয়ে সহজেই অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করিয়ে নিতে পারি। লেখার বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে লেখার ধরন, সবটাই এআই আমাকে সাহায্য করে। লেখা ঠিক করে দেয়। আমি শুধু জমা দেওয়ার জন্য ফাইলটা ঠিকঠাক করে নিই।

আরও পড়ুন

৪. জ্বরের জন্য স্কুলে যাওনি দুই দিন। একটা দরখাস্ত জমা দিতে হবে। কী করবে তুমি?

ক. দরকার হলে নিজে হাতেই লিখি। আমার মনে হয়, নিজের প্রয়োজনটা নিজের মতো করে লেখাই ভালো। এআইকে দিয়ে দরখাস্ত লিখিয়ে নেওয়ার কথা আমি ভাবতেই পারি না।

খ. দরখাস্তের ভাষা কেমন হবে বা কোনো কিছু লেখার সময় কী কী নিয়ম মানা উচিত, এসব ব্যাপারে এআইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিই। তারপর নিজে গুছিয়ে লিখে ফেলি।

গ. ‘জ্বরের জন্য প্রধান শিক্ষক বরাবর দুই দিনের ছুটি চেয়ে একটি দরখাস্ত লিখে দাও’ এইটুকু প্রম্পট দিলেই এআই আমাকে সুন্দর করে পুরো দরখাস্ত লিখে দেয়। আমি শুধু নিজের নাম আর তারিখ বদলে দিই। এআই থাকতে এত কষ্ট করব কেন?

৫. ছবির ক্যাপশন লিখতে হবে বা বন্ধুদের কাছ থেকে এমন মেসেজ পেলে, যার উত্তর তোমার জানা নেই। এমন পরিস্থিতিতে কী করো?

ক. ছবির ক্যাপশন মাথায় যা আসে লেখি। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি মন থেকে যা আসে তাই বলি। স্মার্টনেস দেখানোর জন্য এআইয়ের কাছে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

খ. ক্যাপশন নিজে লিখে এআই দিয়ে ঘষামাজা করে নিই। আর মাঝেমধ্যে যদি এমন কোনো মেসেজ আসে, যার উত্তর দেওয়াটা একটু কঠিন বা স্পর্শকাতর, তখন এআইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করি, ‘এই মেসেজের কী রিপ্লাই দিলে ভালো হবে?’

গ. ক্যাপশন হোক বা মেসেজ, এআইয়ের চেয়ে ভালো উত্তর কেউ দিতে পারে না। আমি এসব ক্ষেত্রে এআইকে ভরসা করি, এআইয়ের ওপর নির্ভর করি।

আরও পড়ুন

৬. গুগলে কিছু সার্চের বদলে তুমি এখন এআইকে যেভাবে ব্যবহার করো—

ক. আমি গুগলে সার্চ করেই অভ্যস্ত। দরকারি তথ্য বা ছবি খোঁজার জন্য গুগলের বিকল্প কিছু হতে পারে, এমনটা আমি এখনো বিশ্বাস করি না।

খ. সাধারণ তথ্যের জন্য আমি গুগলই ব্যবহার করি। তবে কোনো কঠিন বা গভীর বিষয় নিয়ে জানতে হলে এআইকে জিজ্ঞেস করি। এআইকে জিজ্ঞেস করলে বিস্তারিত সাজানো উত্তর পাওয়া যায়।

গ. আমি কিছু জানার জন্য গুগল সার্চ করি না, সরাসরি এআইয়ের কাছে যাই। আমার কাছে এআই হলো একধরনের ‘নতুন গুগল’, যেখানে প্রশ্ন করলেই একটা রেডিমেড উত্তর পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

৭. কাউকে মনের কথা বলা বা কোনো বক্তৃতা তৈরি করার জন্য তোমার মুখে ভাষা না থাকে, তখন তুমি কী করো?

ক. আমি যেমন, তেমনই থাকি। অন্যকে মনের কথা বলার জন্য আমার ভান করার প্রয়োজন নেই। আবার কোনো স্পিচে যদি নিজের মনের কথা বলতেই না পারি, তবে সেটা করার দরকার কী?

খ. চট করে কবিতা বা সুন্দর কিছু কথা এআইকে জিজ্ঞেস করি। আবার কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে এআইকে জিজ্ঞেস করি, ‘এই পরিস্থিতিতে কিছু চমৎকার কথা বলতে চাই, সাহায্য করো।’ তবে আসল কথা বলার সময় নিজের মতো করে বলি।

গ. সামাজিক অনুষ্ঠানে বা বন্ধুদের আড্ডায় কোনো কথা বলার আগে আমি এআইকে জিজ্ঞেস করি, ‘কী বললে আমার বলাটা ঠিকঠাক হবে? আমাকে বোকা মনে করবে না কেউ। মজার কিছু কথা বলো।’ এআই থাকতে এত কষ্ট করার মানে নেই।

৮. তোমার ব্যক্তিগত সমস্যায় তুমি এআইকে যেভাবে ব্যবহার করো—

ক. আমার সমস্যার কথা আমি কোনো বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করি। আমার মনে হয়, মানুষই পারে মানুষের সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে।

খ. কোনো ব্যাপারে খুব মন খারাপ হলে বা একা লাগলে আমি মাঝেমধ্যে চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলি। এটা অনেকটা ডায়েরি লেখার মতো, আমার মনকে হালকা করে।

গ. আমার যদি শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা হয়, আমি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বা বন্ধুকে না বলে এআইয়ের কাছেই সমাধান খুঁজি। আমার কাছে এআই–ই সেরা বন্ধু। খুব ভালো পরামর্শ দেয় এআই।

আরও পড়ুন

৯. ইংরেজি শেখা বা ট্রান্সলেশনের জন্য আমি এআই যেভাবে ব্যবহার করি।

ক. আমি ইংরেজি শেখা বা সাধারণ অনুবাদ করার জন্য নিজে নিজে চেষ্টা করি। এতে আমার শেখা হয়।

খ. কোনো জটিল বাক্য বা পুরো প্যারাগ্রাফ অনুবাদের জন্য আমি এআই ব্যবহার করি। সহজ শব্দ জানা বা বাক্য অনুবাদ আমি নিজে করি।

গ. ইংরেজি থেকে বাংলা করা বা প্যারাগ্রাফ বোঝার জন্য আমার হাতে সময় থাকে না। আমি এআইকে মূল টেক্সটা দিলে চট করে অনুবাদ করে দেয়। আমার এতে ঝামেলা কম হয়। অন্য কাজে মন দিতে পারি।

১০. কিআতে গল্প বা চিঠি লেখার জন্য তুমি কি এআই ব্যবহার করো?

ক. চিঠি মানেই আবেগ। কিআ আমার আবেগের জায়গা। আমি নিজের মতো করে গল্প লিখতে পছন্দ করি। নিজের হাতে চিঠি লিখি। এআই ব্যবহার করলে আন্তরিকতা থাকে না।

খ. যখন কোনো বিশেষ অনুভূতি প্রকাশ করতে সঠিক শব্দ খুঁজে পাই না, তখন এআইকে জিজ্ঞেস করি। গল্পের প্লট বা শেষ খোঁজার জন্য এআইয়ের সাহায্য নিই।

গ. আমি এআইকে বলি, ‘কিআতে আমার মতো করে একটি চিঠি লিখে দাও।’ লেখার ধরন, শব্দচয়ন, সবই এআই আমার মতো করে করতে পারে। আমি এভাবে লিখেছি। কেউ বুঝতে পারেনি।

নম্বর

ক. ০ খ. ৫ গ. ১০

আরও পড়ুন

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৪০: তুমি সত্যিকারের ক্রিয়েটিভ মানুষ

তোমার জন্য এআই মানেই একটি নতুন জগৎ। তুমি তোমার কাজগুলো নিজেই করো। তোমার চিন্তাভাবনার ওপরে তোমার ভরসা বেশি। তুমি নিজের মেধা ও সৃজনশীলতার ওপর বিশ্বাস রাখো। তবে মনে রেখো, এআই শুধু একটি যন্ত্র। এটি তোমার ব্যক্তিগত কাজের বা সৃজনশীলতার বিকল্প নয়। তবে তুমি কিছুটা এআইয়ের সাহায্য নেওয়া শুরু করতে পারো। এআই ব্যবহার শিখলে তোমার নতুন কিছু করার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

৪১–৭০: তুমি ভারসাম্য রেখে কাজ করতে পারো

তুমি জানো কখন এআইকে ব্যবহার করতে হবে আর কখন নিজেকে কাজটা করতে হবে। তোমার কাছে এআই একটি টুল। এই টুল তোমার কাজকে সহজ করে। তুমি এর ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। এটি কীভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে, তুমি জানো। তুমি নিজের বুদ্ধিমত্তার ওপর ভরসা রাখো, কিন্তু প্রয়োজনের সময় এআইয়ের সাহায্য নিতে দ্বিধা করো না।

৭১–১০০: তুমি হয়তো এআইয়ের জগতে পুরোপুরি ডুবে গেছ

তোমার জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এআইয়ের সাহায্য প্রয়োজন হয়। তুমি হয়তো বুঝতেও পারছ না, তুমি নিজের চিন্তা করার ক্ষমতা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছ। নিজেকে এআইয়ের জগৎ থেকে একটু ছুটি দাও। বই পড়ো, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করো বা নতুন কিছু শেখো। এভাবে তুমি নিজেকে ফিরে পাবে। তোমার নতুন কাজে দক্ষতা তৈরি করতে এটি জরুরি। জীবনে এআই-ই সবকিছু নয়।

আরও পড়ুন