ক্রকস কীভাবে এত জনপ্রিয় হলো
জুতাটির নাম ক্রকস (Crocs)। নামটা যেমন অদ্ভুত, দেখতেও ঠিক তেমন। অনেকে এই ক্রকস পরা দেখলে হেসে ফেলেন। কেউ কেউ মজা করে বলেন, ‘এই বিদঘুটে জুতাটা কেন মানুষ পরে?’ দেখতে মোটেই স্টাইলিশ নয়, বরং অনেকে একে ‘প্লাস্টিকের নৌকা’ বলেও ঠাট্টা করেন।
অথচ সেই ক্রকস আজ বিশ্বের প্রায় সব তারকার পায়ে, বড় বড় ফ্যাশন শোতে দেখা যায়। ছোট থেকে বড়, সবার পায়ে এই জুতা। ক্রকস পায়ে সবখানে চলাফেরা করছেন সবাই।
ক্রকস কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করছে। যে ক্রকস জুতা একসময় শুধু জেলেদের জন্য তৈরি হয়েছিল, সেটাই কীভাবে বিশ্বের জেনজিদের ফ্যাশন ট্রেন্ড হয়ে উঠল? কেন–ই বা সবাই এখন ক্রকস পরতে পছন্দ করছেন?
আসলে সবাই এখন কেন ক্রকস পরেন, সেই কারণটা জানার আগে আমাদের জানা দরকার এই জুতার জন্ম হলো কীভাবে? আমেরিকান তিন বন্ধু স্কট সিম্যানস, লিন্ডন হ্যানসন ও জর্জ বোডেকার জুনিয়র নৌকায় ঘুরে বেড়াতে খুব ভালোবাসতেন। নৌকায় থাকার সময় তাঁরা দেখতেন তাঁদের পায়ের জুতা বারবার ভিজে যাচ্ছে। আর একবার ভিজে গেলে সেই জুতা শুকাতে অনেক সময় লাগত। এই সমস্যা দেখে তাঁদের মাথায় এক দারুণ বুদ্ধি এলো। তাঁরা ভাবলেন এমন একটা জুতা তৈরি করতে হবে, যা হবে পানির জন্য একদম উপযুক্ত।
সময়টা ছিল ২০০২ সাল। তাঁরা এমন একটা জুতা বানাতে শুরু করলেন, যেটা নৌকার ওপর পরলে পিছলে যাবে না। পানিতে ভিজে গেলেও সহজেই শুকিয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা পরতে হবে অবিশ্বাস্য আরামদায়ক। তখন তাঁরা একটি কানাডিয়ান কোম্পানির কাছ থেকে ‘ক্রসলাইট’ (Croslite) নামে একধরনের বিশেষ ফোম উপাদানের রাইট কিনে নেন। কেননা, এই ফোমটা খুব হালকা আর পায়ের আকার অনুযায়ী নরম, যা ক্রকসের জন্য সেরা উপাদান।
তাঁরা তাঁদের প্রথম বানানো মডেলটির নাম দেন ‘দ্য বিচ’ (The Beach), যা দেখতে ছিল অনেকটা ছোট্ট প্লাস্টিকের নৌকার মতো। এই বিদঘুটে জুতা নিয়ে তাঁরা গেলেন ফ্লোরিডার এক বোট শোতে। সেখানে মাত্র ২০০ জোড়া জুতা তৈরি করা হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, জুতাগুলো এত আরামদায়ক আর কাজের ছিল যে শো শেষ হওয়ার আগেই সব জুতা বিক্রি হয়ে গেল।
কারণ যে সমস্যার কথা ভেবে এই জুতা তৈরি করা হয়েছিল, তা প্রায় পানির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি পেশার মানুষের জন্যই তখন খুব দরকারি ছিল। প্রথম দিকে এটা ছিল শুধু জেলে, মাঝি বা বোটচালকদের জন্য। কিন্তু সেই ‘প্লাস্টিকের ভেলা’ দেখতে জুতাটিই যে একদিন ফ্যাশন জগতের আইকন হয়ে উঠবে, তা হয়তো সেই তিন বন্ধুও কল্পনা করেননি। এভাবেই জন্ম নিল আমাদের আজকের জনপ্রিয় ক্রকস।
জুতাটির নাম ক্রকস (Crocs) রাখার পেছনে একটি দারুণ কারণ আছে। নামটি এসেছে কুমির (Crocodile)–এর নাম থেকে। আমরা জানি, কুমির যেমন ডাঙা ও পানি—দুই পরিবেশেই খুব সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। তেমনি এই জুতাও তৈরি হয়েছে একই উদ্দেশ্যে। ক্রকস কেবল নৌকা চালানো বা পানিতে কাজের সময়ই কাজে আসে, এমন নয়। এটি সাধারণ ব্যবহারেও সমান উপযোগী। এই উভচর গুণের জন্যই জুতাটির নাম রাখা হয় ক্রকস।
মূলত ক্রকস জুতা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণও এর এই অবিশ্বাস্য আরাম ও অন্য রকম ডিজাইন। এর পাশাপাশি এটি সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় এটি ছোট থেকে বড় সবার কাছেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রথম দিকে অনেকেই ক্রকসের ডিজাইনকে বিদঘুটে বললেও এর স্বাচ্ছন্দ্য ও নানা কাজে ব্যবহার করার সুবিধা এটিকে এত দ্রুত জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
এসব সুবিধার জন্যই এই জুতা চিকিৎসক, নার্স, শেফদের মতো দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা পেশার মানুষ সবাই পরতে শুরু করেন। এরপর যখন এর ফুটোগুলোতে ‘জিকিটজ’ (Jibbitz) চার্ম ব্যবহার করে এটিকে ব্যক্তিগতভাবে সাজানোর সুযোগ এলো, তখন জেনজি প্রজন্ম এটিকে এক নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসেবে গ্রহণ করে। এ ছাড়া বিখ্যাত তারকা ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সঙ্গে ক্রকসের সফল কোলাবরেশন ও মহামারীর সময় বাড়িতে থাকার কারণে আরামদায়ক জুতার চাহিদা বৃদ্ধি এসব কিছু মিলে ক্রকসের জনপ্রিয়তাকে শিখরে নিয়ে যায়।
সূত্র: দ্য স্টাইল হিস্টোরিয়ান, হিস্ট্রি অব সিম্পল থিংস, বিবিসি