ফোন ব্যবহার করতে দিলেই শিশুরা বিগড়ে যায় না

শিশুদের ফোন বা ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার থেকে দূরে রাখা কঠিনছবি: রয়টার্স

বর্তমানে অনেক শিশু জন্মের এক বছরের মধ্যে ফোন হাতে পায়। পরিবারের সদস্যদের ফোন ধরে দেখতে পারে, দূরে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে ভিডিও কলে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেন মা–বাবা। এভাবে শিশুরা ফোনের সংস্পর্শে আসে। জেনারেশন জেড, জেনারেশন আলফার মতো নতুন প্রজন্ম খুব কম বয়সে ফোন হাতে পেয়েছে।

সব শিশু অবশ্য ফোন ব্যবহার করছে না। অনেক শিশুর জন্য পারিবারিকভাবে ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। অনেক কিশোর-কিশোরী পড়াশোনার সুবিধার জন্য নিজেরাই অফলাইনে থাকে।

ফোন হাতে রাখা নিয়ে অনেক মা–বাবা দুশ্চিন্তায় থাকেন। শিশুদের হাতে ফোন তুলে দিয়ে ভয়ে থাকেন। শিশুকে কি খুব কম বয়সে ফোন ধরিয়ে দিলাম? খুব কম বয়সে শিশুকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে দিয়ে ‘নষ্ট’ করে ফেললাম? যোগাযোগবিশেষজ্ঞ কারা আলাইমো বলছেন, কম বয়সে শিশুর হাতে ফোন তুলে দিলে শিশু নষ্ট হয়ে যায় না। ডিজিটাল হিউম্যানিটিজের অধ্যাপক ড. কেটলিন রেগেয়ারও এ কথা জোর দিয়ে বলেছেন। তাঁর নতুন বই ‘স্মার্টফোন নেশন: বিল্ডিং ডিজিটাল বাউন্ডারিজ হোয়েন অফলাইন ইজন্ট অ্যান অপশন’। এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন, ঠিক কীভাবে শিশুদের স্ক্রিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর মনোযোগ নষ্ট করে, তাই তার হাতে মুঠোফোন বা ট্যাব দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে
প্রথম আলো

অধ্যাপক রেগেয়ার নিজের গল্প তুলে ধরেছেন বইয়ের শুরুতে। পাঁচ বছরের মেয়ে যখন ফোন চাইল, তিনি ভাবনায় পড়ে গেলেন। তিনি চান, তাঁর সন্তানেরা যখন কিশোর হবে, তখনকার পৃথিবী যেন আজকের মতো অসুস্থ ডিজিটাল অভ্যাসের ওপর দাঁড়িয়ে না থাকে। তাই তিন বছরের সন্তানের সঙ্গে তিনি ‘স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাস’ করা শুরু করেছেন।

স্বাস্থ্যকর ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলার কিছু উপায় আছে। এর মধ্যে প্রধান কাজটা হলো, স্ক্রিন দিয়ে কখনো শিশুকে শান্ত করার জন্য বসিয়ে রাখা যাবে না। খুব ছোটদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম মানে, একসঙ্গে কিছু একটা দেখা। শিশুর সঙ্গে আলোচনার উপায় বের করা। মা–বাবা যদি শিশুর সঙ্গে বসে ডেভিড অ্যাটেনবরোর প্রকৃতির ডকুমেন্টারি দেখেন, সেটা শিশুর সক্রিয়ভাবে শেখার উপায় হবে। শিশুকে আলাদা করে ইয়ারফোন দিয়ে ইউটিউব ছেড়ে দিলে এটি কাজ করবে না।

আরও পড়ুন

অধ্যাপক রেগেয়ারের মতে, অ্যালগরিদমকে আমাদের বা শিশুদের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেওয়া যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কী দেখব, তা ঠিক করে সফটওয়্যারের ফর্মুলা। কিন্তু আমরা চাইলে এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। তাঁর মতে, ‘আমরা যা খাই, যা পরি, যেখানে যাই, এগুলোর কোনো সিদ্ধান্তই আমরা অ্যালগরিদমের ওপর ছেড়ে দিই না। তাহলে কেন আমরা যা দেখি, যা আমাদের মগজে ঢুকে যায়, এমন কনটেন্ট অ্যালগরিদমের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেব?’

শিশুর স্ক্রিনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার জন্য শিশুদের সঙ্গে ‘ওয়াকথ্রু মেথড’ ব্যবহার করার কথা বলেছেন এই গবেষক। গবেষকেরা যে পদ্ধতিতে অ্যাপ বিশ্লেষণ করেন, ঠিক এইভাবে ফোন খুলে শিশুর ব্যবহার করা অ্যাপগুলো স্ক্রল করে দেখে নেওয়া, ঠিক কী দেখছে সে। আরেকটি বিকল্প উপায় আছে, পরিবারের মধ্যে সাপ্তাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা। পরিবারের সবাই তিনটি জিনিস এই সভায় অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করবে। কোন কনটেন্ট ভালো লেগেছে, কোনটা খারাপ লেগেছে আর কোনটার ব্যাপারে মাথায় প্রশ্ন এসেছে। এই আলোচনা দিয়ে শিশুরা কী দেখছে, তা নিয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব।

আরও পড়ুন

অধ্যাপক রেগেয়ার বলেছেন, অনেকে রাতে সন্তানের টিকটকে গিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ভিডিও সার্চ করে অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষণ দেন। এটা কাজ করে। কিন্তু এর চেয়ে শিশুকে শিখিয়ে দিলে ভালো হয়, কীভাবে নিজেই নিজের ডিজিটাল পরিবেশ সাজাতে হয়।

অধ্যাপক রেগেয়ার অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ডিভাইসগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যেন ব্যবহারকারী এতে আসক্ত হয়ে পড়ে। আমাদের সময়, মনোযোগ, ইচ্ছাশক্তি সবকিছু টেনে নিতে চায়। এটা বুঝতে পারলেই আমরা প্রতিরোধ তৈরি করতে পারব। নিজের পছন্দে সার্চ করা, অপ্রয়োজনীয় কনটেন্ট না দেখা, কী দেখলে ভালো লাগে, তা খুঁজে বের করলেই স্ক্রিনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া যাবে।

সূত্র: সিএনএন

আরও পড়ুন