গ্রামসুদ্ধ মানুষকে মেজবান খাওয়াবে

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

হুট করেই মেজবানের দাওয়াতটা পেয়ে গেলাম।

আমার দুই বন্ধু চট্টগ্রামের। এর বাইরে ওদের আরও একটি বিশেষত্ব আছে। ওদের দুজনেরই পায়ের পাতা উল্টো দিকে মুখ করে রাখা। জন্মগত বৈশিষ্ট৵ সম্ভবত, কী অদ্ভুত! ওদের দুজনের যেমন এক সমস্যা, বাড়িও একই জায়গায়। আমার দাদি আমাকে ছোটবেলায় গল্প শোনাতেন। তাঁর মতে, পায়ের পাতা উল্টো দিকে হলেই বুঝতে হবে এরা মানুষখেকো দানো। আমি অবশ্য জানি এগুলো গ্রামীণ কুসংস্কার।

চট্টগ্রামের বন্ধুরা হঠাৎ গত পরশু আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ‘দোস্ত, দাওয়াত আছে।’

‘কিসের দাওয়াত?’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

‘একজন মারা গেছে। গ্রামসুদ্ধ মানুষকে মেজবান খাওয়াবে। তুই চলে আয়। তবে গরু অনেক বড় সাইজের।’

ওরা বলল, বাসস্টেশন থেকে পিকআপ করবে আমাকে। আমি বাসের টিকিট করে রওনা দিয়ে দিয়েছি। নন এসি বাস। জানালা দিয়ে মৃদু বাতাস আসছে। বাস চলার শব্দ আর ঝিঁঝির ডাক ছাড়া কিছু কানে আসছে না। রাত নয়টার বাস, ঘুটঘুটে অন্ধকার। উঁচু–নিচু রাস্তা। ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

আরও পড়ুন
জন্মগত বৈশিষ্ট৵ সম্ভবত, কী অদ্ভুত! ওদের দুজনের যেমন এক সমস্যা, বাড়িও একই জায়গায়। আমার দাদি আমাকে ছোটবেলায় গল্প শোনাতেন।

রাত দুইটা। চলে এসেছি। দুই বন্ধু হাজির, করমর্দন, কোলাকুলি, কথাবার্তা, হাসাহাসি হলো। দুজনের মাঝখানে বাইকে চেপে দে ছুট। রাতদুপুরে ফাঁকা রাস্তায় শাঁ শাঁ করে বাইক ছুটছে। জংলা একটা জায়গায় এসে পৌঁছলাম। কোনো বাড়িঘর চোখে পড়ল না। অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে। চারদিক চোখ মেলতেই শিউরে উঠলাম।

চোখ আর চোখ। এক শর বেশি। জ্বলজ্বল করছে গাছপালা ও ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে।

‘ক-ক্কই নিয়ে এলি আমাকে? মেজবান কই? মড়ার বাড়ি কই? তুই না বললি মরছে?’ আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

‘মরছে তো।’ সবাই সমস্বরে বলল।

‘কে?’ ঘামছি আমি।

‘আমরা সবাই।’ বলল তারা, ‘গতকাল আমরা আর একজনকে স্বাগত জানিয়েছি।’

‘তু-ত্তুই বলছিলি গরু অনেক বড় সাইজের!’ কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললাম।

‘দোস্ত,’ দাঁত কেলাল আমার বন্ধু, ‘বেঁচে থাকতে তোকেই আমরা গরু ডাকতাম।’

লেখক: চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২৫

আরও পড়ুন