কিআ, তুমি যুগ যুগ জিও

ছোটদের কোনো কাজ করাতে চাইলে আমরা প্রায়ই লোভ দেখাই—‘এই কাজটা করলে চকলেট পাবে’, কিংবা ‘এটা করলে আইসক্রিম খাওয়াব।’ ছোটবেলায় আমার কাছে কিশোর আলো ছিল সেই চকলেট-আইসক্রিমের মতোই প্রিয়। পড়াশোনা ঠিকমতো শেষ করলে আম্মু আমাকে কিশোর আলো কিনে দিত। ক্লাস সিক্স থেকে, অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে আমি নিয়মিত কিশোর আলো পড়তে শুরু করি। কিআ হাতে পেলে একবার পড়ে থেমে যেতাম না। পুরোটা কিআ পড়তাম দুই-তিনবার করে। আজ কিশোর আলোর এক যুগ পূর্তিতে ফিরে তাকালে মনে পড়ছে, সেই ছোট্ট কিআ-ভক্ত আমি থেকে ধীরে ধীরে কিআর নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ওঠার গল্প।

ছোটবেলা থেকেই আমি বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি। খেলনা কেনায় অনেক সময় বাধা থাকলেও মা কখনো বই কিনতে মানা করত না। একদিন মা বলল, পরীক্ষার জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়লে আমি একটি উপহার পাব। উপহারটা কী আমি জানতাম না। কৌতূহল থেকে মন দিয়ে পড়াশোনা করলাম, আর ভালো ফল করার পর মা আমাকে উপহার হিসেবে দিল কিশোর আলো। সেই একটা রঙিন ম্যাগাজিন হাতে পেয়ে যে কেন এত খুশি হয়েছিলাম, তা এই মুঠোফোনের যুগে বোঝানো কঠিন।

আরও পড়ুন

আমার হাতে প্রথম আসে কিশোর আলোর ২০১৭ সালের জানুয়ারি সংখ্যা। প্রচ্ছদ ছিল সায়েন্স, কমার্স নাকি আর্টস—এসব বাছাই করা নিয়ে। তখনো অবশ্য আমার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। তবু ভীষণ আগ্রহ নিয়ে কিআ পড়ে শেষ করলাম। তখন থেকেই আমি কিশোর আলোর পাঠক। যখনই কিশোর আলোতে কোনো লেখা বা আঁকা ছবি পাঠানোর ডাক আসত, আমি নিজের কাজ পাঠানোর জন্য মায়ের পিছু লেগে যেতাম। এ নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতাও আছে। কিশোর আলোর একটি আঁকাআঁকির বিভাগ ছিল, যা ছয় মাস অন্তর প্রকাশিত হতো। সেখানে একটি থিম দেওয়া থাকত, আর সেই থিম অনুযায়ী ছবি আঁকতে হতো। একবার থিম ছিল—‘বন্ধু ভূত’। সেই থিমে আমি অনেক পরিশ্রম করে একটি ছবি এঁকে চিঠির সঙ্গে পাঠিয়েছিলাম কিশোর আলোতে। ছবিটা আঁকতে কত দিন যে খাটাখাটনি করেছি! কিন্তু ছয় মাসের অপেক্ষার পরও সেইবার আমার ছবি প্রকাশিত হয়নি। তখন আবার ফোনের তেমন প্রচলন ছিল না, তাই স্মার্টফোনে ছবির কোনো কপিও নেই। এখন কিশোর আলোর মাসিক সভা, কিআড্ডায় বসে যখন অন্যদের দেখি—কেন তাদের লেখা বা আঁকা ছবি ছাপা হচ্ছে না এই নিয়ে অভিযোগ করছে—তখনই আমার সেই ‘বন্ধু ভূত’-এর কথা মনে পড়ে যায়।

আরও পড়ুন

২০২১ সালে আমার প্রথম কিশোর আলো অফিসে যাওয়া হয়। যদিও আমি ঢাকায়ই বড় হয়েছি, তবু এর আগে আমাকে কিআর অফিসে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ না থাকায় আমার কিশোর আলোতে যাওয়া হয়নি কখনো। অথচ ২০১৭ সাল থেকেই আমার ভীষণ ইচ্ছা ছিল কিআড্ডায় যাওয়ার। ২০২১ সালে আমি কিআর অফিসে প্রথমবার যাই ঢাকা কিশোর আলো বুক ক্লাবের ইন্টারভিউ দিতে। ফেসবুকে ফরম দেখে আমি আবেদন করেছিলাম বুক ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য। আবেদনের প্রথম ধাপ পেরিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়াটাই আমার জন্য বিশাল ব্যাপার ছিল। আর যখন জানলাম যে আমি সত্যিই বুক ক্লাবের সদস্য হয়েছি, তখনকার খুশিটা যেন ভাবনারও বাইরে! ঢাকা কিশোর আলো বুক ক্লাবের আমাদের সেশন চলেছিল তিন মাস ধরে। অফলাইন ইন্টারভিউ হলেও, করোনা পরিস্থিতির কারণে বুক ক্লাবের মিটিংগুলো হতো অনলাইনে। লেখালেখির টাস্ক, টিমওয়ার্ক, মিটিংয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া—সবকিছু মিলিয়ে বুক ক্লাব ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। এই বুক ক্লাবের মাধ্যমেই আমার অসাধারণ কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, তাই আজও আমার কাছে বিশেষ স্মৃতি হয়ে আছে ঢাকা কিশোর আলো বুক ক্লাবের সেই অনলাইন সেশন।

আরও পড়ুন

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পুনরায় কিআড্ডা শুরু হয়। তখন থেকেই আমি নিয়মিত কিআড্ডায় যাওয়া শুরু করি। সেখানেই মিটিং মিনিটস লিখতে লিখতে ধীরে ধীরে আমার লেখালেখির শুরু। কিশোর আলোর ১০০তম সংখ্যায় প্রথমবারের মতো আমার একটি অণুগল্প প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে অনলাইনে কিশোর আলোর জন্য বেশ কিছু ফিচার লিখেছি। লেখালেখির হাতেখড়ি থেকে শুরু করে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারা, সবার সঙ্গে কথা বলতে শেখা—এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে কিশোর আলোর হাত ধরেই। শুধু তা–ই নয়, আমি কিশোর আলোর নানা আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি, বিভিন্ন কলেজে গিয়েছি কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবক হয়ে। এই যাত্রায় আমি অনেক নতুন বন্ধুও পেয়েছি। কিশোর আলোর কাছ থেকে আমার পাওয়ার তালিকা যেন শেষ হয় না। সামনে লেখালেখি হোক বা অন্য যেভাবেই হোক, আমি চাই কিশোর আলোর পাশে থাকতে।

সবশেষে যা বলতেই হয়, শুভ জন্মদিন কিশোর আলো! কিআ, তুমি যুগ যুগ জিও!

আরও পড়ুন