ভূতের সঙ্গে অঙ্কের খেলা: মৌলিক সংখ্যার রহস্য
অধ্যায় তিন
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোহান সংখ্যার ভূত দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেল। এমনকি সে এখন উপভোগ করতে শুরু করেছে। অপেক্ষা করে ভূতটার জন্য। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ভূতটার ওই সবজান্তা ভাব আর কথায় কথায় মেজাজ দেখানো রোহানের ভালো লাগে না। ভূতটা কখন যে রেগে গিয়ে চিৎকার করে উঠবে, তার ঠিক নেই। কিন্তু সেই জঘন্য মাছের পেটে যাওয়া কিংবা কালো গর্তে অনন্তকাল ধরে পিছলে পড়ার চেয়ে এটা হাজার গুণ ভালো।
তা ছাড়া রোহান মনে মনে ঠিক করেছে, সে এবার ভূতটাকে বুঝিয়ে দেবে যে সে বোকা নয়। ওর মতো লোকদের উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার; ঘুমানোর আগে ভাবল রোহান। নিজেকে খুব বড় কিছু ভাবে, তা–ও একটা শূন্যের জন্য! আসল কথা হলো, ও নিজেও একটা শূন্য ছাড়া আর কিছুই নয়। ঘুম ভেঙে গেলেই তো উধাও হয়ে যায়!
কিন্তু তাকে উচিত শিক্ষা দিতে হলে আগে তার স্বপ্ন দেখতে হবে। আর স্বপ্ন দেখতে হলে ঘুমাতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, আজ রোহানের কিছুতেই ঘুম আসছে না। জীবনে প্রথমবারের মতো সে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে লাগল।
‘এত এপাশ-ওপাশ করছ কেন?’
রোহান হঠাৎ খেয়াল করল, তার বিছানাটা এখন একটা গুহার ভেতর। পাথরের দেয়ালে অদ্ভুত সব প্রাণীর ছবি আঁকা, কিন্তু সেগুলো ভালো করে দেখার সময় পেল না। কারণ, ভূতটা তার সামনে দাঁড়িয়ে লাঠি ঘোরাচ্ছে।
‘ওঠো রোহান, সকাল হয়ে গেছে!’ সে বলল। ‘আজ আমাদের ভাগ করার দিন।’
‘উঠতেই হবে?’ জিজ্ঞেস করল রোহান। ‘অন্তত আমি ঘুমানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতে। তা ছাড়া আমি ভাগ করা ঘৃণা করি।’
‘কেন?’
‘যোগ, বিয়োগ বা গুণ করলে অঙ্কটা মিলে যায়। কিন্তু ভাগ করতে গেলেই যত ঝামেলা। ওই ভাগশেষ থেকে যায়।’
‘প্রশ্ন হলো কখন।’
‘কী কখন?’
‘কখন ভাগশেষ থাকে আর কখন থাকে না। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়, ওগুলো সমান ভাগে ভাগ করা যাবে।’
‘ঠিক। যেমন জোড় সংখ্যা, ওগুলো সব দুই দিয়ে ভাগ করা যায়। কোনো সমস্যা নেই। আমি তিন দিয়েও ভালো ভাগ করতে পারি:
৯ ÷ ৩
১৫ ÷ ৩
এ রকম আরও অনেক ভাগ আমি পারি। এটা গুণের উল্টো:
৩ × ৫ = ১৫
এই গুণটাই ভাগ হয়ে যায় এভাবে:
১৫ ÷ ৩ = ৫
এর জন্য আমার কোনো ভূত-টুত দরকার নেই। আমি একাই পারি।’
কথাটা বলা উচিত হয়নি রোহানের। সংখ্যার ভূতের গোঁফ কাঁপতে শুরু করল, নাক লাল হয়ে গেল। আর মাথাটা বড় হতে হতে সে রোহানকে বিছানা থেকে হ্যাঁচকা টানে নামাল।
‘তুমি কী জানো হে?’ ভূতটা চিৎকার করে উঠল। ‘নামতা শিখেছ বলে ভাবছ সব জেনে গেছ? আসলে তুমি কিচ্ছু জানো না! কিচ্ছু না!’
এই রে, আবার শুরু হয়েছে, ভাবল রোহান। প্রথমে আমাকে বিছানা থেকে টেনে তুলল, আর এখন আমি ভাগ পারি শুনেই গেল ক্ষেপে।
‘দয়া করে নিজ ইচ্ছায় একটা আনাড়িকে কিছু শেখাতে এলাম, আর মুখ খোলার আগেই সে আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে!’
‘তোমার মনের দয়া!’ রোহান চেঁচিয়ে উঠল। অন্য সময় হলে সে উঠে চলে যেত, কিন্তু স্বপ্ন থেকে উঠে চলে যাওয়া যায় কীভাবে? সে গুহার চারপাশটা ভালো করে দেখল, কিন্তু বের হওয়ার কোনো পথ পেল না।
‘কী খুঁজছ?’
‘বের হওয়ার রাস্তা।’
‘তুমি যদি এখন যাও, তবে আর কোনোদিন আমাকে দেখবে না! তোমাকে মিস্টার বাকেরের ওই পচা রুটির অঙ্কে পচে মরার জন্য বা ক্লাসে একঘেয়েমিতে মরার জন্য রেখে যাব।’
রোহান বুঝল সে ফেঁসে গেছে। ‘আমি দুঃখিত,’ সে বলল। ‘আমি তোমাকে রাগাতে চাইনি।’
‘ভালো,’ বলল ভূতটা। তার রাগ যেমন হুট করে এসেছিল, তেমনি হুট করে চলেও গেল। ‘এবার উনিশ। ১৯ দিয়ে চেষ্টা করো। দেখো তো এটাকে কোনো ভাগশেষ ছাড়া ভাগ করতে পারো কি না।’
রোহান অনেকক্ষণ ভাবল।
‘একটাই উপায় আছে,’ সে বলল, ‘সেটা হলো উনিশ দিয়ে ভাগ করা। মানে উনিশটা সমান ভাগে ভাগ করা।’
‘ওটা হবে না,’ ভূতটা উত্তর দিল। ‘ওটা বেশি সহজ।’
‘অথবা শূন্য দিয়ে ভাগ করা।’
‘অসম্ভব।’
‘অসম্ভব? কেন?’
‘কারণ, ওটা নিষিদ্ধ। শূন্য দিয়ে কোনো কিছু ভাগ করা যায় না। কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।’
‘আমি ভাগ করলে কী হবে?’
‘তাহলে গণিতের সবকিছু তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে!’
সে আবারও রেগে যাচ্ছিল, কিন্তু কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল।
‘বলো তো,’ ভূতটা বলল, ‘উনিশকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে তুমি কী পাবে?’
‘আমি জানি না। হয়তো এক শ। অথবা শূন্য। এর মাঝামাঝি কিছুও হতে পারে।’
‘তুমি না একটু আগেই তিন দিয়ে ভাগ করার সময় বললে, ভাগ হলো গুণের উল্টো? যদি তাই হয়, তবে
৩ × ৫ = ১৫ মানে হলো ১৫ ÷ ৩ = ৫। এখন উনিশ আর শূন্য দিয়ে ওটা চেষ্টা করো।’
‘উনিশ ভাগ শূন্য ধরলাম ১৯।’
‘আর উল্টো করলে?’
‘১৯ গুণ শূন্য... ১৯ বার শূন্য গুণ করলে হবে শূন্য।’
‘দেখলে? তুমি যে সংখ্যাই নাও না কেন, সব সময় শূন্যই পাবে। তার মানে তুমি কখনোই কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করতে পারবে না।’
‘ঠিক আছে,’ রোহান বলল, ‘আমি হার মানলাম। কিন্তু এই উনিশ নিয়ে আমি কী করব? আমি একে যা দিয়েই ভাগ করি না কেন—দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট বা নয়—সব সময় ভাগশেষ থেকেই যাচ্ছে।’
‘একটু কাছে এসো,’ সংখ্যার ভূত রোহানকে বলল, ‘তোমাকে একটা গোপন কথা বলি।’ রোহান এতটাই কাছে গেল যে ভূতের গোঁফ ওর কানে সুড়সুড়ি দিল।
‘দুই ধরনের সংখ্যা আছে,’ ভূতটা ফিসফিস করে বলল। ‘এক হলো সাধারণ সংখ্যা। এগুলোকে সমান ভাগে ভাগ করা যায়। আর বাকিগুলোকে সমান ভাগে ভাগ করা যায় না। আমি শেষের দলটাকে বেশি পছন্দ করি। কেন জানো? কারণ, ওরা হলো নাকউঁচু স্বভাবের। শুরু থেকেই ওরা গণিতবিদদের প্রচুর জ্বালিয়েছে। দারুণ সব সংখ্যা ওগুলো! যেমন এগারো, তেরো বা সতেরো।’
সংখ্যার ভূতের চেহারা দেখে রোহান অবাক হয়ে গেল। মনে হচ্ছে তার মুখে যেন চকলেট গলে পড়ছে, এমনই সুখের ভাব।
‘এখন বলো তো বাছা, প্রথম নাকউঁচু সংখ্যাগুলো কী কী?’
‘শূন্য,’ ভূতটাকে একটু রাগানোর জন্য বলল রোহান।
‘শূন্য নিষিদ্ধ!’ ভূতটা লাঠি উঁচিয়ে চিৎকার করে উঠল।
‘ঠিক আছে, তাহলে এক।’
‘এক গোনার মধ্যে পড়ে না। তোমাকে কতবার বলতে হবে?’
‘আচ্ছা আচ্ছা,’ বলল রোহান। ‘শান্ত হও! তাহলে শুরুটা দুই দিয়ে। কারণ, সব নাকউঁচু বা প্রিমা ডোনার মতো একেও শুধু এক এবং নিজেকে দিয়েই ভাগ করা যায়। এরপর তিন। অন্তত আমার তাই মনে হয়। চার নয়, ওটা আমরা আগেই দেখেছি। পাঁচ অবশ্যই হবে; পাঁচকে কোনো কিছু দিয়েই ভাগ করা যায় না। আর...আর এভাবে চলতেই থাকবে।’
‘হ্যাঁ! এর মানে কী?’ হাত ঘষতে ঘষতে সে বলল।
এটা নিশ্চিত যে তার মাথায় কোনো ফন্দি আছে।
‘নাকউঁচুদের মজার ব্যাপার হলো, কেউ জানে না এদের চলার প্যাটার্ন কী এবং ‘এভাবে চলতেই থাকবে’-র শেষ কোথায়। একমাত্র আমি জানি। আর আমি কাউকে বলব না।’
‘এমনকি তোমার বন্ধুদেরও না?’
‘কাউকে না! কক্ষনো না! আসল সমস্যা হলো, তুমি একটা সংখ্যার দিকে তাকিয়ে বুঝতেই পারবে না সেটা নাকউঁচু কি না। পরীক্ষা না করে কোনো সাধারণ মানুষ সেটা বলতে পারবে না।’
‘আর পরীক্ষাটা করে কীভাবে?’
‘দেখবে এখন,’ এই বলে সে তার লাঠি দিয়ে গুহার দেয়ালে আঁকিবুঁকি কাটতে শুরু করল। লেখা শেষ হলে দেয়ালটা এমন দেখাল:
‘এবার আমার লাঠিটা নাও, ছোকরা। যেসব সংখ্যা নাকউঁচু নয়, সেগুলোতে টোকা দাও। দেখবে ওগুলো উধাও হয়ে গেছে।’
‘কিন্তু এখানে তো শূন্য নেই,’ রোহান অভিযোগ করল, ‘এক-ও নেই।’
‘তোমাকে আর কতবার বলব! ০ আর ১ অন্য সব সংখ্যার মতো নয়। ওরা নাকউঁচুও নয়, আবার সাধারণ সংখ্যাও না। তোমার মনে নেই একদম শুরুতে তুমি কী স্বপ্ন দেখেছিলে? কোন কোন সংখ্যা ১ থেকে আসে? আর তারপর আমরা দেখলাম শূন্যের কত দরকার।’
‘তুমি যা বলো,’ বলল রোহান। ‘যা-ই হোক, প্রথমে আমি জোড় সংখ্যাগুলোতে টোকা দেব; কারণ, ওগুলো সব দুই দিয়ে ভাগ করা যায়। এটা সহজ।’
‘সব জোড় সংখ্যা, কিন্তু দুই ছাড়া,’ ভূতটা তাকে সাবধান করে দিল। ‘ভুলে যেও না, দুই একটা নাকউঁচু সংখ্যা।’
রোহান লাঠিটা তুলে নিল আর চোখের পলকে দেয়ালটা এমন হয়ে গেল:
‘এবার তিনের পালা। তিন একটা নাকউঁচু সংখ্যা, কিন্তু তিনের নামতার বাকি সব সংখ্যা নাকউঁচু নয়; কারণ, ওগুলোকে তিন দিয়ে ভাগ করা যায়।’ রোহান যখন তিনের কাজ শেষ করল, তখন এই সংখ্যাগুলো বাকি রইল:
‘এবার চার,’ বলল রোহান। ‘না, না। চার দিয়ে ভাগ হওয়া সংখ্যাগুলো নিয়ে আমাদের ভাবার দরকার নেই। ওগুলো সব চলে গেছে; কারণ, চার নাকউঁচু নয়, চার হলো ২ × ২। কিন্তু পাঁচ, পাঁচ একটা নাকউঁচু সংখ্যা। দশ নয়; কারণ, ওটা আগেই চলে গেছে যেহেতু ওটা ২ × ৫।’
‘আর তুমি ওইসব সংখ্যায় টোকা দিতে পারো যেগুলোর শেষে পাঁচ আছে।’
‘ঠিক।’
রোহান এখন বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। ‘আমরা ছয়কে বাদ দিতে পারি; কারণ, ছয় হলো ২ × ৩। কিন্তু সাত একটা নাকউঁচু বা প্রিমা ডোনা সংখ্যা।’
‘শাবাশ!’ ভূতটা চেঁচিয়ে উঠল।
‘এগারোও।’
‘আর বাকিগুলো?’
‘দারুণ করেছ, রোহান,’ ভূতটা তার পাইপ ধরাতে ধরাতে বলল। নিজের মনেই সে মিটিমিটি হাসছে।
‘এত হাসির কী হলো?’ জিজ্ঞেস করল রোহান।
‘পঞ্চাশ পর্যন্ত গিয়ে থামলে ব্যাপারটা বেশি কঠিন না,’ সে একটু ব্যঙ্গ করে হেসে বলল। তারপর আয়েশ করে বাবু হয়ে বসল। ‘কিন্তু যদি সংখ্যাটা এমন হয়—১০,০০০,০১৯ অথবা ১৪১৪২১৩৫৬২৩৭৩০৭ এমন? এটা কি নাকউঁচু সংখ্যা? তুমি যদি জানতে কত গণিতবিদ এটা নিয়ে মাথার চুল ছিঁড়েছে! এমনকি বড় বড় সংখ্যার ভূতেরাও এটা নিয়ে ঘোল খেয়েছে।’
‘কিন্তু আমি তো ভাবলাম তুমি বলেছ তুমি জানো নাকউঁচুদের শেষ কোথায়। শুধু আমাকে বলতে চাইছ না।’
‘আসলে, আমি হয়তো একটু বাড়িয়ে বলেছি।’
‘যাক, তুমি যে স্বীকার করলে তুমি নিখুঁত নও, তাতেই আমি খুশি,’ বলল রোহান। ‘মাঝেমধ্যে তোমাকে সংখ্যার ভূত না মনে হয়ে সংখ্যার স্বৈরাচারী মনে হয়।’
‘বোকা সংখ্যার ভূতেরা বিশাল সব কম্পিউটার ব্যবহার করে। ওরা মাসের পর মাস ধরে ওগুলো চালিয়ে রাখে। তোমাকে যে কৌশলটা শেখালাম—আগে দুই, তিন আর পাঁচ দিয়ে ভাগ করা—ওটা আসলে পুরোনো কৌশল। এমন না যে ওটা কাজ করে না, কিন্তু যখন সংখ্যাগুলো সত্যিই বড় হতে থাকে, তুমি বলতে পারবে না এদের শেষ কোথায়। আমরা শুধু যোগ, গুণ আর পাওয়ার ব্যবহার করে সংখ্যাগুলোকে মহাবিশ্বের চেয়েও বড় বানাতে পারি। এখন অনেক আধুনিক পদ্ধতি আছে, কিন্তু সেগুলো যতই ভালো হোক না কেন, খুব বেশি দূর এগোতে পারে না। এটাই তো নাকউঁচু সংখ্যাদের আরও বেশি ইন্টারেস্টিং করে তোলে, তাই না?’
এই বলে সে তার লাঠিটা মহা আনন্দে ঘোরাতে লাগল।
‘হ্যাঁ, কিন্তু এসবের মানেটা কী?’ রোহান জিজ্ঞেস করল।
‘তুমি বড্ড বোকা প্রশ্ন করো! সংখ্যার জগৎটা তোমার মিস্টার বাকের বা মিস্টার রুটিওয়ালার মতো এত পচা বা ভ্যাপসা নয়। ভাগ্যিস আমি আছি, তোমাকে কিছু গোপন রহস্য শেখানোর জন্য। যেমন ধরো, একের চেয়ে বড় যেকোনো একটা সংখ্যা নাও আর সেটাকে দুই দিয়ে গুণ করো।’
‘২২২?’ বলল রোহান। ‘গুণ দুই মানে ৪৪৪।’
‘প্রথম আর দ্বিতীয় সংখ্যার মাঝখানে সব সময় অন্তত একটা নাকউঁচু সংখ্যা থাকবেই। তা ছাড়া আমি যখন বলেছি, থাকতেই হবে!
‘তুমি নিশ্চিত?’
‘৩০৭,’ বলল ভূতটা। ‘এটা বড় সংখ্যার ক্ষেত্রেও কাজ করে।’
‘তুমি এসব শেখো কোথায়?’
‘তুমি তো এখনো কিছুই দেখোনি!’ রোহানের কৌতূহল দেখে সে বলল।
এখন তাকে আর থামানো যাবে না।
‘যেকোনো একটা জোড় সংখ্যা নাও। যেকোনোটা নিতে পারো, শুধু সেটা দুইয়ের চেয়ে বড় হতে হবে। আর আমি এমন দুটি নাকউঁচু সংখ্যা খুঁজে বের করব যা যোগ করলে ওই সংখ্যাটা পাওয়া যাবে।’
‘আটচল্লিশ,’ বলল রোহান।
‘একত্রিশ যোগ সতেরো,’ চোখের পলক না ফেলে ভূতটা বলল।
‘চৌত্রিশ,’ বলল রোহান।
‘উনত্রিশ যোগ পাঁচ,’ মুখের পাইপ না সরিয়েই সে বলল।
‘এটা কি সব সময় কাজ করে?’ রোহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। ‘কেন কাজ করে? কীভাবে করে?’
‘সত্যি বলতে,’ ভূতটা বলল, তার কপালে ভাঁজ পড়ল আর সে ওপরের ধোঁয়ার রিংগুলোর দিকে তাকাল, ‘আমি যদি জানতাম! আমার চেনা প্রায় সব সংখ্যার ভূত এটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। এটা সব সময় কাজ করে, কিন্তু কেউ জানে না কেন।’
বেশ দারুণ তো, ভাবল রোহান। সে হেসে বলল, ‘বাহ, আমার তো দারুণ লাগছে।’ কিন্তু আসলে তার যেটা বেশি দারুণ লাগছিল, সেটা হলো সংখ্যার ভূত তাকে ভেতরের খবরটা দিয়েছে।
কিছুক্ষণের জন্য ভূতটার মুখে কেমন যেন খিটখিটে ভাব দেখা দিল (যখন সে বুঝতে পারে না কী করবে, তখনই এমন হয়)। কিন্তু রোহানের হাসি শুনে সেও হেসে ফেলল এবং আবার পাইপ টানতে শুরু করল।
‘দেখতে যতটা মনে হয়, তুমি ততটা বোকা নও, বাছা। তোমাকে ছেড়ে যেতে আমার খারাপ লাগছে, কিন্তু আজ রাতে আরও কয়েকজন গণিতবিদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। ওদের একটু ভোগাতে আমার বেশ মজা লাগে।’
এই বলে সংখ্যার ভূতটা পাতলা হতে শুরু করল। না, ঠিক পাতলা নয়, স্বচ্ছ হতে লাগল। আর হঠাৎ তার বলতে শুধু ধোঁয়া আর দেয়ালের আঁকিবুঁকিটুকুই অবশিষ্ট রইল। তারপর দেয়ালটা রোহানের চোখের সামনে দুলতে লাগল এবং গুহাটা কম্বলের মতো নরম আর উষ্ণ মনে হলো। নাকউঁচু সংখ্যার মধ্যে দারুণ এমন কী ছিল, তা মনে করার অনেক চেষ্টা করল রোহান, কিন্তু তার সব চিন্তা তুলা পাহাড়ের মতো সাদা আর মেঘলা হয়ে গেল। সে খুব কমই এমন ভালো ঘুমিয়েছে।
……
আর তুমি? হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। তোমাকে একটা শেষ কৌশল দেখাই; যদি না তুমিও রোহানের মতো ঘুমিয়ে পড়ো! এটা জোড় এবং বিজোড়, সব সংখ্যার ক্ষেত্রেই খাটে। একটা সংখ্যা ভাবো, যেকোনো সংখ্যা; শুধু সেটা পাঁচের চেয়ে বড় হতে হবে। ধরো পঞ্চান্ন, বা সাতাশ।
তুমি এমন নাকউঁচু সংখ্যা খুঁজে পাবে যা যোগ করলে ওগুলো পাওয়া যাবে, তবে দুইটার বদলে তোমার তিনটা সংখ্যা লাগবে। চলো পঞ্চান্ন দিয়ে উদাহরণ দিই। ৫৫ = ৫ + ১৯ + ৩১। এখন নিজে সাতাশ দিয়ে চেষ্টা করো। এটা সব সময় কাজ করে। যদিও আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না কেন!
হান্স ম্যাগনুস এনজেন্সবার্গারের ডের সালেন-টয়ফেল অবলম্বনে