সময় সবকিছু বদলে দেয়
বেলা গড়াচ্ছে। কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছিলাম, আজ থেকে আর কেউ আমায় ডেকে বলবে না, ‘ইমান, কাল টিফিনে ফুটবল খেলবি তো?’ বলবে না, ‘দোস্ত, অঙ্কের হোমওয়ার্কটা দে তো!’
এত দিন যে জায়গাটাকে বিরক্তিকর ক্লাস আর কঠিন পরীক্ষার মাঠ ভেবেছি, আজ সেই ইবনে তাইমিয়া এক অপূর্ব অনুভবের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারপাশটা কেমন সুনসান লাগে। ক্লাস টেন শেষ, এসএসসি পরীক্ষাও দিয়ে ফেলেছি। এখন আমি ‘সাবেক’ ছাত্র।
স্কুলের প্রতিটা দিন যেন একটা করে গল্প আর আমি ছিলাম সেই গল্পের চরিত্র। প্রথম ক্লাসে ঢোকার ভয়, প্রথম পুরস্কার হাতে পাওয়ার উচ্ছ্বাস, বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া করে রাগ করে সরে দাঁড়ানো, আবার দুই মিনিট পরই একসঙ্গে হেসে ফেলা—সবই চোখে ভাসে। একদিন ক্লাসে হঠাৎ ফ্যান খুলে পড়েছিল। পুরো ক্লাস ছুটে গিয়েছিল বাইরে, এমনকি স্যারও। তার পর থেকে ওই ক্লাসে আমাদের নতুন নাম ছিল ‘অ্যাভেঞ্জার ব্যাচ’। আর ছিল আমাদের ‘রোলকল চিটিং গ্রুপ’, যেখানে ক্লাসে কারও নাম ডাকলেই সবাই একসঙ্গে ‘প্রেজেন্ট স্যার’ বলে দিত! এখন এসব মনে পড়লে হেসে ফেলি, আবার চোখটাও ভিজে ওঠে।
আমি জানি, সময় সবকিছু বদলে দেয়। বন্ধুরা যার যার জীবনের পথে হাঁটবে—কেউ হবে লেখক, কেউ শিক্ষক, কেউ সফটওয়্যার ডেভেলপার...আর আমি? আমি হব সেই ছেলে, যে তার স্কুলের স্মৃতিকে কখনো ভুলতে পারবে না।
স্কুল শুধু একটা ভবন নয়। ওটা একটা সময়, যা আর ফিরবে না। ওটা কিছু হাসি, যা শুধু তখনই ছিল সত্যি।
ওটা কিছু বন্ধু, যারা চিরদিন মনে থাকবে। আজ স্কুলের শেষ ঘণ্টা বেজে গেছে আমার জীবনে। কিন্তু মনে হচ্ছে, সেই ঘণ্টার ধ্বনি দিয়েই নতুন কোনো গল্প শুরু হতে চলেছে।
লেখক: এসএসসি পরীক্ষার্থী ২০২৫, ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুমিল্লা