আমার জাদুর বাক্স

হুমায়ূন আহমেদছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, সাল ২০১৮। বোঝাই যাচ্ছে বয়স খুবই কম। যতদূর মনে পড়ে, তখন কেবল রূপকথার বই পড়তাম, জাফর ইকবাল তখনো মনে ধরেনি। বাসায় যেসব বই ছিল, সেগুলো পড়তে দেখে বাবা এই রূপকথার বইগুলো এনে দিতেন। প্রত্যেকবার ঢাকা থেকে আসার সময় বই আনতে হতো আমার জন্য। এমনই একদিন কিশোর আলো নামে একটা পত্রিকার অস্তিত্ব খুঁজে পাই। মলাট খুলে দেখি হরেক রকম ছোট ছোট গল্প, কার্টুন, কবিতা, কত কিছু! এ যেন এক জাদুর বাক্সের মতো ছিল আমার কাছে; খুললেই কত কিছু পাওয়া যায়, জানা যায়, শেখা যায়।

তারপর থেকে শুরু হলো আমার প্রতি মাসে কিআ নেওয়ার বায়না। এমনকি বিগত মাসগুলোর সংখ্যাও সংগ্রহ করা শুরু করলাম। ধীরে ধীরে এক পাহাড়সমান কিআর সংগ্রহ গড়ে উঠল আমার। যখনই সেগুলোর দিকে তাকাতাম, নিজেকে তখন বেশ বড়লোক মনে হতো। মূলত কিআর হাত ধরেই আমার পাঠ্যবইয়ের বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচয়। পড়াশোনায় কাজে লাগে এমন তথ্য বাদে বাকি অংশগুলোর প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল।

আরও পড়ুন

প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের পরিচয়টাও কিআর কাছ থেকেই। সম্ভবত কোনো এক বছরের নভেম্বর মাসের সংখ্যায় হুমায়ূন আহমেদের একটা ছোট গল্প পড়েছিলাম, যেখানে বজ্রপাতে মৃত এক ব্যক্তির লাশ চুরি হয়ে যায়। তারপর সেই গল্প কতজনকে যে স্কুলে শুনিয়েছি! ঠিক তখন থেকেই ‘হুমায়ূন আহমেদ’ নামের লেখককে খুঁজে বের করে এক এক করে তাঁর বই পড়তে শুরু করি।

তখন মাঝেমধ্যে কিআয় ভ্রমণ-সম্পর্কিত গল্প ছাপা হতো। সেগুলো পড়েই ভ্রমণপিপাসু হয়ে ওঠা। ছোট ছোট যে কার্টুনগুলো ছাপা হতো, তা দেখে নিজেরও কিছু কার্টুন চরিত্র তৈরি করেছিলাম। কত কিছু যে করেছি কিআ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে! ছোটোবেলা থেকে খুব ঘরকুনো স্বভাবের হওয়ায় কিআই ছিল আমার বন্ধু।

কিন্তু সময়ের চাপে, পড়াশোনার ভারে কখন যেন এই বন্ধুটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। না, ঠিক হারাইনি আমাদের বন্ধুত্ব এখনো আছে, তাই তো লিখছি। তবে নিয়মিত এই বন্ধুর খোঁজখবর না নিলেও স্মরণ অবশ্যই করি। ইদানীং আবার নতুন করে পড়া শুরু করেছি।

ছোটবেলায় খুব ইচ্ছা ছিল কিআকে লিখব, কিন্তু সুযোগ আর সাহস কোনোটাই হয়ে ওঠেনি। তাই আজ অবশেষে বন্ধুকে লিখেই ফেললাম!

আরও পড়ুন