পৃথিবীর সবচেয়ে বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট, পরের নির্বাচনেও কেন জিততে চান

ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়ানিউইয়র্ক টাইমস

মধ্য আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়া। যার বয়স এখন ৯২ বছর। তিনিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে তিনি ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। এত লম্বা সময় ধরে দেশটি শাসন করার পরও তিনি বলছেন, আগামী নির্বাচনেও তিনি লড়তে চান। এবারও শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই তাঁর সাধ মিটবে না, আবারও প্রেসিডেন্ট হতে চান তিনি। যদি এবার, ২০২৫ সালের এই নির্বাচনে জয়ী হন, তবে এটি হবে তাঁর অষ্টম মেয়াদ। এই মেয়াদ শেষ হতে হতে তাঁর বয়স হবে প্রায় ৯৯ বছর।

ক্যামেরুনের অর্থনীতি এখন কঠিন সময় পার করছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর প্রতি বিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। একরকম বিদ্রোহ করে বসে আছে তারা। তবু বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক এই রাষ্ট্রপ্রধান আরও একটি মেয়াদে জয়ী হতে চান। রীতিমতো লড়াই করছেন তিনি। জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুনর্নির্বাচিত হলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাবেন। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব কমাবেন। বিশেষ করে যুব বেকারত্ব মোকাবেলা করবেন। দারিদ্র্য দূরীকরণের মতো বিষয়গুলোও সমাধান করবেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি কখনই এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করব না...। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, সেরাটা দেওয়া এখনও বাকি আছে।’ এই বার্তা দিয়ে তিনি দেশের ভোটারদের আস্থা ধরে রাখতে চাইছেন। বিশেষ করে তাঁর ঐতিহ্যবাহী সমর্থকদের মন যোগানোর চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পথটা প্রেসিডেন্টের জন্য তেমন কঠিন হবে না। তবে অপ্রত্যাশিত কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও তাঁকে হতে হচ্ছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট বিয়ারের পক্ষে কাজ করছে। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মরিস কামতোকে ক্যামেরুনের নির্বাচন বোর্ড বিতর্কিতভাবে ভোটে অংশ নিতে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ক্যামেরুনের নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন ক্ষমতার পালাবদল সহজে না হয়। বিরোধীরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট বিয়ার বিচারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন। নির্বাচন কমিশনকেও নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

আমি কখনই এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করব না...। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, সেরাটা দেওয়া এখনও বাকি আছে।
প্রেসিডেন্ট পল বিয়া

এই প্রথম প্রেসিডেন্ট বিয়ারের বিরোধিতা করছেন তাঁর সাবেক সহযোগীরা। তাঁর সাবেক মুখপাত্র ইসা চিরোমা বাকারী পদত্যাগ করে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ছেন। তাঁরও বাড়ি দেশিটির উত্তরাঞ্চলে। এই অঞ্চল প্রেসিডেন্ট বিয়ারের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তাই এটি প্রেসিডেন্টের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন
এই মেয়াদ শেষ হতে হতে প্রেসিডেন্ট পল বিয়ার বয়স হবে প্রায় ৯৯ বছর
নিউইয়র্ক টাইমস

ক্যামেরুনের নাগরিকদের গড় বয়স এখন ১৭ থেকে ৪০-এর মধ্যে। এখন ৪২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের 'প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা' তৈরি হয়েছে। জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার মান কমে গেছে। এ কারণে তরুণরা ক্ষুব্ধ। কেনিয়া, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘটা জেনারেশন জেডের বিপ্লব ও অভ্যুত্থান দেখে ক্যামেরুনের তরুণরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তরুণ ভোটাররা এখন পুরাতন রাজনীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করছেন। তারা ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন।

মজার ব্যাপার হলো, প্রেসিডেন্ট বিয়ারের ২৭ বছর বয়সী কন্যা ব্রেন্ডা বিয়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণদের বলেছেন, ‘আমার বাবাকে ভোট দেবেন না’। এ থেকে বোঝা যায়, পরিবারের মধ্যেও বিভেদ রয়েছে।

আরও পড়ুন

এই নির্বাচন ক্যামেরুনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। বিশ্বব্যাংকের মতে, আগামী ১৫ মাসের মধ্যে ক্যামেরুনের প্রতি চারজনের একজন চরম দারিদ্র্যে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের পশ্চিম ও দূর উত্তর অঞ্চলে দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘাত রয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠির সহিংসতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

প্রেসিডেন্ট বিয়া আবারও নির্বাচিত হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছেন, তাঁর বয়স একটি বড় অসুবিধা। আবার তাঁর পরে কারা নেতৃত্ব দেবেন এমন কোনো পরিকল্পনাও তাঁর নেই। সবকিছু মিলিয়ে দীর্ঘদিনের শাসনকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট বিয়া। অন্যদিকে তরুণদের চাওয়া পুরোপুরি বিপরীত। তাই এখানেও জেন-জিদের বিপ্লব হয় কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন