মিরাজ কেমন অধিনায়ক হবেন
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে পরিবর্তন এসেছে আরেক দফা। বোর্ড সভাপতির পর বদলে গেছে অধিনায়কও। আগামী এক বছরের জন্য বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে দেখা যাবে মিরাজকে। এ নিয়ে আবারও তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের যুগ শুরু হলো বাংলাদেশের। আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেও অধিনায়ক হিসেবে আগেও দায়িত্ব পালন করেছেন মিরাজ। দুই দফায় বাংলাদেশকে ছয় ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে কেমন ছিলেন মিরাজ? তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎই-বা কেমন?
বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৬ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন মিরাজ। এর মধ্যে রয়েছে ৪টি ওয়ানডে ও ২টি টেস্ট। ফলাফল তাঁর পক্ষে নয়। ৪টি ওয়ানডের ৪টিতেই হেরেছেন বাজেভাবে। জয় বলতে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে তাদের টেস্টে হারানো। তবে তাঁর অধিনায়কত্বের মধ্যে ছিল বেশ কিছু ইতিবাচক দিক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ইনজুরিতে পড়ায় প্রায় দুই মাসের জন্য দলের নেতৃত্ব পান মিরাজ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের লড়াই দিয়ে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথমে ব্যাট করে ২৪৪ রান করে বাংলাদেশ। চারে নেমে ১১৯ বলে ৬৪ রানের ইনিংস দলকে ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে বাঁচালেও ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল প্রচুর। আফগানরা সে রান টপকে গিয়েছিল ১০ বল হাতে রেখেই। বল হাতে ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
ওয়ানডে অধিনায়কত্বের শুরুটা ভালো না হলেও টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে চমকে দিয়েছিলেন মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ হেরেছিল ২০১ রানে। বড় ব্যবধানে হারলেও সে ম্যাচে নজর কেড়েছিল অধিনায়ক মিরাজের সিদ্ধান্ত। ৪৫০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে উইন্ডিজ। জবাবে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ২৬৯ রান করেই সিদ্ধান্ত নেয় ইনিংস ঘোষণা করার। চতুর্থ দিনের শুরুতে দল তখনো ১৮১ রানে পিছিয়ে। মিরাজের সিদ্ধান্ত ভরকে দিয়েছিল অনেককে। মিরাজ চেয়েছিলেন দিনের শুরুতে পিচকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত উইন্ডিজের কিছু উইকেট তুলে নিতে। মিরাজের সাহসী সিদ্ধান্ত সফলও হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে উইন্ডিজ গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মাত্র ২ সেশনে, বোর্ডে ১৫২ রান ছিল তাদের সংগ্রহ। তাসকিন নিয়েছিলেন ৬ উইকেট, মিরাজ ২টি। ৩৩৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে রীতিমতো একা টিকে ছিলেন মিরাজ। ১৩২ রানের ইনিংসে ৪৫ রান ছিল তার। কিন্তু তাঁর সাহসী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন অনেকে।
এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ছিলেন বিপিএল দলের অধিনায়ক। তবে পুরো মৌসুম অধিনায়কত্ব করেছেন দুবার—২০১৯ বিপিএলে রাজশাহী কিংসের ও ২০২৫ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের। প্রথমবার দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চম স্থানে, নেট রানরেটে পিছিয়ে থেকে সুযোগ হয়নি পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার।
দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০১ রানে হারিয়ে সিরিজ ড্র করে টাইগাররা। সে ম্যাচেও মিরাজের অধিনায়কত্ব নজর কেড়েছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে আগ্রাসী ব্যাটিং করা, দ্রুত বোর্ডে রান জমা করে ইনিংস শেষ করা। এমনকি চতুর্থ ইনিংসে তাঁর বোলিং পরিবর্তনগুলোও ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় কোনো জুটি গড়ে উঠতে দেননি, বরং নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে তুলে নিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম জয়। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ ছিল একেবারে বিপরীত। তিন ম্যাচের একটিতেও বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ২৯৪ ও ৩২১ রানের বিশাল পুঁজি নিয়েও কোনো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে পারফর্ম করলেও বল ও নেতৃত্ব—দুই জায়গাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তিনি।
মিরাজ প্রথম নজর কেড়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক হিসেবে। ২০১৪ ও ২০১৬—দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও ২০১৬ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। দেশের মাটিতে তৃতীয় স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিল বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে মোট ৪৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। এর মধ্যে মোট জয় ৩০টি। পরাজয় ১৭ ও একটি ম্যাচে আসেনি কোনো ফলাফল। ৪৮ ম্যাচে ছিল ৯টি হাফ সেঞ্চুরি ও ১ বার নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ছিলেন বিপিএল দলের অধিনায়ক। তবে পুরো মৌসুম অধিনায়কত্ব করেছেন দুবার—২০১৯ বিপিএলে রাজশাহী কিংসের ও ২০২৫ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের। প্রথমবার দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চম স্থানে, নেট রানরেটে পিছিয়ে থেকে সুযোগ হয়নি পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার। কিন্তু ২০২৫ সালে খুলনা টাইগার্সকে নিয়ে ঠিকই এলিমিনেটর পর্ব পার হয়েছিলেন মিরাজ। চিটাগং কিংসের কাছে শেষ বলে না হারলে হয়তো অধিনায়ক হিসেবে ফাইনাল খেলাটা হয়ে যেত তাঁর।
সব মিলিয়ে অধিনায়ক হিসেবে মিশ্র যাত্রা মেহেদী মিরাজের। গত বছর অধিনায়কত্ব করেছিলেন শান্তর ইনজুরির সুবাদে। এখন নতুন করে সব গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, দলও সাজাতে পারবেন নিজের মতো। আগামী এক বছরের জন্য দায়িত্বটা তাঁর কাঁধেই। দেখা যাক বাংলাদেশ দলের এই দুঃসময়ে কতটা হাল ধরতে পারেন তিনি।