টেস্টে কোহলির সেরা ইনিংসগুলো

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৫টি শতক আছে বিরাট কোহলিরইসিবি

নিঃসন্দেহে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন বিরাট কোহলি। শুধু সাদা বলেই নয়, টেস্ট ক্রিকেটেও তিনি তাঁর দাপট দেখিয়েছেন। বিশ্বের সেরা বোলার আর দলগুলোর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের দক্ষতা। বিদেশের মাটিতে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে নেতৃত্ব দেওয়াই হোক কিংবা চাপের মুখে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া সেঞ্চুরি—সব জায়গাতেই ছিলেন দলের ভরসা। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ১২ মে, সোমবার টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর সেরা কিছু ইনিংসের গল্প বলব এ লেখায়।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৯ ও ৯৬

২০১৩ সালে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। সেবারই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, টেস্ট ক্রিকেটেও রাজত্ব করতে এসেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স মাঠে দুই ইনিংসে ১১৯ ও ৯৬ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পেস আর বাউন্সি উইকেটে ডেল স্টেইন, ভারনন ফিল্যান্ডার ও মরনি মর্কেলের মতো বিশ্বসেরা পেসারদের সামলানো সহজ ছিল না। তাঁদের আগুনঝরা বোলিংয়ের সামনে কোহলি দাঁড়িয়ে ছিলেন দুর্দান্ত টেকনিক আর ধৈর্য নিয়ে। সে ম্যাচে ভারত হেরে গেলেও কোহলির পারফরম্যান্স ছিল মনে রাখার মতো।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৫ ও ১৪১

২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে প্রথমবার ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামেন বিরাট কোহলি। ধোনি চোট পাওয়ায় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ আসে কোহলির সামনে। সে ম্যাচে ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। দুই ইনিংসে করলেন দুটি সেঞ্চুরি—১১৫ আর ১৪১।

প্রথম ইনিংসে ফ্ল্যাট পিচে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ওপর দাপট দেখিয়ে তুলে নেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তাঁর আসল রূপ দেখা যায় দ্বিতীয় ইনিংসে। ভারত তখন জয়ের জন্য ৩৬৪ রান তাড়া করছিল। এমন অবস্থায় আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন কোহলি। এদিকে তাঁর সঙ্গীরা একেকজন আসছেন আর আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু তবুও কোহলি ড্রয়ের জন্য না খেলে ম্যাচ জেতার জন্য একাই লড়াই চালিয়ে যান। অবশ্য তাঁর ১৪১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসও সেবার যথেষ্ট ছিল না। কোহলি আউট হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভারতকে হারতে হয় ৪৮ রানে। তবে সে ম্যাচে সাহসী ব্যাটিং আর নেতৃত্বের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন কোহলি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৫

২০১৬ সালে ভারত সফরে আসে ইংল্যান্ড। সেই সিরিজের চতুর্থ টেস্ট আয়োজিত হয় মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। বিরাট কোহলি খেলেছিলেন নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস—২৩৫। পরে অবশ্য এই রেকর্ডও ভেঙেছেন। স্পিন সহায়ক পিচ হলেও কোহলি তা ভালোভাবেই সামলে নেন। তাঁর এই ইনিংসে ৬৩১ রানের বিশাল স্কোর তোলে ভারত। সে ম্যাচ ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিলেন কোহলিরা।

প্রায় নয় ঘণ্টা মাঠে থেকে ৩৪০ বলে ২৫টি চার আর একটি ছক্কায় ২৩৫ রান করেন কোহলি। তবে এটা কিন্তু তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ছিল না। এ ম্যাচের আগেই সে বছরে আরও দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৯

এ ইনিংসটিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে এবার আর নিজের দেশে নয়, ইংল্যান্ডের এজবাস্টনে কোহলি খেলেন ১৪৯ রানের এক ইনিংস। ওটাই ছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি।

সেই ম্যাচে জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের সুইং সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল ভারতের ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে ৫৪ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ভারত যখন ধুঁকছে, তখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন কোহলি। প্রায় একাই লড়াই চালিয়ে যান। সেই ইনিংসে ছিল ২২টি চার আর একটি ছক্কা। ম্যাচটি ৩১ রানে হেরে যায় ভারত। কিন্তু কোহলির ওই ইনিংসকে ধরা হয় বিদেশের মাটিতে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের অন্যতম সেরা সেঞ্চুরি হিসেবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫৩

একই বছর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সেঞ্চুরি করেন বিরাট কোহলি। মরনি মর্কেল, কাগিসো রাবাদা আর ভারনন ফিল্যান্ডারের আগুনে বোলিংয়ে ভারত করে ৩০৭ রান। তার মধ্যে কোহলি একাই করেন ১৫৩ রান। বাকি কেউই ৫০ রানের ঘরও ছুঁতে পারেননি। সে ম্যাচও ভারত হেরে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন কোহলি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৫৪*

বিরাট কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস ২৫৪*। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে গড়েছিলেন এই কীর্তি। ভারতের পুনেতে সে ম্যাচে শুরুটা ভালোই করেছিলেন ওপেনাররা। ১৩৬ রানে দুই উইকেট পড়ে গেলে মাঠে আসেন কোহলি। এরপর তিনি প্রায় আট ঘণ্টা উইকেট আগলে ছিলেন। ৩৩টি চার আর ২টি ছক্কায় সাজানো ছিল তাঁর অপরাজিত ২৫৪ রানের ইনিংসটি। ভরপুর এই ইনিংসটি ছিল চোখজুড়ানো, সেবারও দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনআপে ছিলেন কাগিসো রাবাদা, ভারনন ফিল্যান্ডার আর অভিষেক হওয়া আনরিখ নরকিয়া। কিন্তু কেউই কোহলির রক্ষণভাগে ফাটল ধরাতে পারেননি। কোহলির অপরাজিত এই ডাবল সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ভারত ইনিংস ঘোষণা করে ৬০১/৫ রানে। আর সেই ম্যাচ ভারত জিতেছিল ইনিংস ও ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।

সূত্র: আইসিসি

আরও পড়ুন