বিশ্বকাপের বলই বলবে অফসাইডের সিদ্ধান্ত

বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতে বাকি আর মাত্র আট মাস। নতুন অনেক কিছুই থাকছে এবারের বিশ্বকাপে। যেমন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল আসরে খেলবে ৪৮ দল, তেমনই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আসর বসবে তিন দেশ মিলে। প্রতিবারের মতো তাই বিশ্বকাপের বল নিয়েও রয়েছে জল্পনা–কল্পনা। সবকিছু ছাপিয়ে নতুন বল উন্মোচন করল ফিফা। ২০২৬ বিশ্বকাপের বলের নাম ‘ত্রিয়োন্দা’।

বরাবরের মতোই বিশ্বকাপের বল তৈরি করেছে অ্যাডিডাস। আর অনুপ্রেরণা হিসেবে বেছে নিয়েছে তিন স্বাগতিক দেশকে। স্প্যানিশ শব্দ ‘ত্রিয়োন্দা’ মূলত দুটি শব্দের মিশেল। ‘ত্রিও’ অর্থ তিন আর ‘ওন্দা’ অর্থ ঢেউ। দুইয়ে মিলে হয় তিনটি ঢেউ। এই বলে দেখা যাবে ঢেউয়ের মতো ডিজাইন করা তিন দেশকে। লাল, নীল আর সবুজ—তিন রং দিয়ে বোঝানো হয়েছে তিন দেশকে। লাল দিয়ে কানাডা, নীল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আর সবুজ দিয়ে বোঝানো হয়েছে মেক্সিকোকে। এমনকি তিন দেশের প্রতীকও আছে বলের মধ্যে। কানাডার আইকনিক ম্যাপল পাতা, যুক্তরাষ্ট্রের তারকা আর মেক্সিকোর ইগল।

শুধু তিন দেশের প্রতীক নয়, বিশ্বকাপের ছোঁয়াও আছে বলে। তিনটি রংকে আলাদা করা হয়েছে সোনালি এক লাইন দিয়ে। বিশ্বকাপের স্বর্ণখোচিত শিরোপাকে যেন তুলে ধরা হয়েছে বলের মধ্য দিয়েই।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপের বল বলে কথা, এখানে কারিকুরি থাকবে না, তা কি হয়? অ্যাডিডাস তাই নিজের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বিশ্বকাপের বল তৈরিতে। যে কারণে গত বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপের বল ডিজাইনের প্রতিযোগিতা। গত বিশ্বকাপের বল ‘আল রিহলা’ থেকেও প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকবে ‘ত্রিয়োন্দা’। কী কী থাকছে এই বলে?

তিন দেশের প্রতীক এক বলে।
ছবি: ফিফা

বলের হার্টবিট

জড়বস্তুর আবার হার্টবিট থাকে নাকি? কিন্তু এবারের বিশ্বকাপের বলে আলাদা করে থাকছে হার্টবিট। চার প্যানেলের বলটির ভেতরে থাকছে ৫০০ হার্জের মোশন ডিটেক্টর সেন্সর। মাঠের প্রতিটি প্রান্ত থেকে যা ট্র্যাক করা যাবে। আর এতে লাভ? নির্ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে প্রতিটি মুহূর্তে।

আরও পড়ুন

এর মানে ভিএআর নিয়ে থাকবে না কোনো চিন্তা। লিগের খেলায় যেমন কয়েক মিনিট ধরে অপেক্ষা করতে হয় সিদ্ধান্তের, গোলের পর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় উদ্‌যাপনের জন্য। তার কোনোটাই হবে না বিশ্বকাপে। গোল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া যাবে, অফসাইড হয়েছে কী হয়নি। খেলোয়াড়ের পজিশন থেকে শুরু করে টাচ—সবকিছুর রেকর্ড থাকবে বলে। সেমিঅটোমেটেড অফসাইড ডিসিশন আর লাইন্সম্যান কিংবা রেফারি নয়, নিয়ে নেবে বল নিজেই।

বলের ভেতরে থাকা সেন্সর।
ছবি: ফিফা

একই কথা প্রযোজ্য হ্যান্ডবলের ক্ষেত্রেও। এই সেন্সর দিয়ে প্রতিটি স্পর্শ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ফলে হ্যান্ডবল হলেও তা ধরে ফেলা যাবে সহজেই। কোনো বাড়তি রিভিউ দেখারও প্রয়োজন হবে না।

আরও পড়ুন

তবে এবারের বল বানানো নিয়ে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অ্যাডিডাসকে। কারণ, তিন দেশের তিন আবহাওয়া। মেক্সিকোর গরমের সঙ্গে রয়েছে কানাডার তীব্র শীত। যুক্তরাষ্ট্রের একেক স্টেটে একেক আবহাওয়া। সবকিছু মিলিয়ে বলকে মানিয়ে নিতে হতো প্রতিটি পরিবেশের সঙ্গেই। নইলে ২০১০ বিশ্বকাপের ‘জাবুলানি’ কাণ্ড ঘটলেও ঘটতে পারে।

নতুন বলের সঙ্গে লিওনেল মেসি।
ছবি: এক্স

‘ত্রিয়োন্দা’ বলের পারফরম্যান্স কেমন হবে, তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কারণ, বিশ্বকাপের আগে কোথাও এই বল ব্যবহার করা হবে না। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অভিষেক হবে নতুন বলের। দেখা যাক, নতুন বল কী চমক রাখে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য।

আরও পড়ুন