যে পাঁচটি খেলা খেললে আইকিউ বাড়ে

দাবাপ্রতীকী ছবি: রয়টার্স

পড়াশোনার বাইরেও কিছু কাজ রয়েছে যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। আমেরিকান একাডেমি অফ নার্সিংয়ের ফেলো, পিএইচডি শাহিন লক্ষ্মণ জানিয়েছেন, ‘আমাদের মস্তিষ্কটা ঠিক একটা পেশির মতোই। ব্যায়াম করলে যেমন শরীরের পেশি শক্তিশালী হয়, তেমনি মস্তিষ্কের অনুশীলন করলে এটি আরও কার্যকর হয়। একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি ব্রেন গেম অর্থাৎ মস্তিষ্কের খেলার দারুণ ক্ষমতা দেখে খুব অবাক হই। এই খেলাগুলো আমাদের বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউও বৃদ্ধি করে। এগুলো চিন্তাভাবনার শক্তি বাড়ায়, মস্তিষ্কের যে অংশগুলো আমরা কম ব্যবহার করি সেগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে আমাদের জ্ঞান, মনোযোগ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি—সবই বাড়ে।

তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি খেলার কথা যেগুলো স্মৃতিশক্তি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও আইকিউ বাড়াতে সাহায্য করবে।

১. দাবা (Chess)

দাবাকে বলা হয় ‘রাজাদের খেলা’। এটা শুধু একটা খেলা নয়, মস্তিষ্কের জন্য একটা দারুণ ব্যায়াম। দাবার প্রতিটা চাল দেওয়ার সময় গভীরভাবে ভাবতে হয়, নিখুঁত পরিকল্পনা করতে হয় ও বিপক্ষের খেলোয়াড় কী চাল দিতে পারে সেটা আগে থেকে অনুমান করতে হয়। নিয়মিত দাবা খেললে কোনো সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা, যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে তা আগে থেকে আন্দাজ করার দক্ষতাও বাড়ে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, যারা নিয়মিত দাবা খেলে তাদের আইকিউ (IQ) স্কোর অন্যদের চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ দাবা খেলার সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে কাজ করে।

কীভাবে দাবা খলতে হয় জানতে পড়তে পারো এখান থেকে: দাবা খেলা।

আরও পড়ুন

২. সুডোকু (Sudoku)

সুডোকু
পেক্সেলস

সুডোকু হলো সংখ্যা দিয়ে খেলা একটি খুব জনপ্রিয় পাজল। এটি যুক্তি খাটিয়ে সমস্যা সমাধান ও কোনো কিছুকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাকে পরীক্ষা করে। সুডোকু খেলার সময় প্রতিটি খালি ঘরে সঠিক সংখ্যা বসাতে হয়। এর জন্য খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবতে হয় এবং কোন সংখ্যাগুলো বসানো যাবে না সেগুলো বাদ দিতে হয়। এই খেলাটা মস্তিষ্কের সেই অংশকে কাজে লাগায় যেটা গণিত ও বিভিন্ন প্যাটার্ন বা নকশা চিনতে সাহায্য করে। নিয়মিত সুডোকু খেললে মনোযোগ ও একাগ্রতা অনেক বাড়ে। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে আইকিউ বাড়াতে সাহায্য করে।

সুডোকু কীভাবে মেলাতে হয় জানতে চাইলে সুডোকুর জট খুলবে কী করে লেখাটি পড়তে পারও। এছাড়াও, নিজেকে আরও ঝালিয়ে নিতে প্রতিদিনের পত্রিকায় চোখ রাখতে পার অথবা কাজী আকাশের ‘বুদ্ধির খেলা সুডোকু’-এর মতো বই থেকে খেলতে পার।

আরও পড়ুন

৩. পাজল গেমস (Puzzle Games)

বিভিন্ন ধরনের পাজল গেমস যেমন, জিগস পাজল, রুবিক্স কিউব অথবা শব্দজট মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ সাহায্য করে। জিগস পাজল খেলার সময় কোনো জিনিস কোথায় আছে বা দেখতে কেমন তা বোঝার ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং ধৈর্য বাড়ায়। রুবিক্স কিউব স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের সঙ্গে হাতের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আর শব্দজটের মতো খেলা শব্দভান্ডার ও সাধারণ জ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই গেমসগুলো মস্তিষ্কের নানা অংশকে একসঙ্গে কাজ করতে উৎসাহ দেয়। যার ফলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়।

আরও পড়ুন

৪. ভিডিও গেমস (Video Games)

মাঠের বাইরে ভিডিও গেমস টানে বার্সেলোনার পোলিশ তারকা রবার্ট লেভানডফস্কিকে। ভিডিও গেমস খেলার এক ফাঁকে ক্যামেরাবন্দী লেভা
ইনস্টাগ্রাম

ভিডিও গেমকে খারাপ চোখে দেখা হলেও কিছু নির্দিষ্ট ভিডিও গেম কিন্তু আইকিউ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, স্ট্র্যাটেজি গেম মানে কৌশলগত গেমস, পাজল গেমস ও রোল-প্লেয়িং গেম খেললে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ও একসঙ্গে অনেক কাজ করার দক্ষতা বাড়ে। এই গেমগুলো জটিল পরিস্থিতি দ্রুত বুঝতে ও ভালো পরিকল্পনা তৈরি করতে শেখায়। তবে, একটা কথা মনে রাখবেন গেম খেলার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি ভালো নয়। তাই পরিমিত পরিমাণে খেলা জরুরি।

আরও পড়ুন

৫. কুইজিং (Quizzing)

কুইজিং আইকিউ বাড়ানোর একটি দারুণ উপায়। এটি মজার সঙ্গে সাধারণ জ্ঞান, স্মৃতিশক্তি ও দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতাকেও বাড়াতে কাজ করে। কুইজের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য মনে রাখতে হয় ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এতে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। কুইজিং একটি বড় সুবিধা হলো এর জন্য নিজের পছন্দের বিষয়ের বাইরেও অনেক কিছু জানতে হয়। উত্তর খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। একটি ছোট্ট তথ্য খুঁজতে গিয়ে পুরো একটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। কুইজে যেহেতু কুইজ মাস্টার প্রশ্ন করেন, তাই অনেক সময় কোনো ঘটনার পেছনের কাহিনি, অজানা তথ্য যা সাধারণত কারও মনে আসার কথা না এমন অনেক কিছুও জানতে হয়। সঙ্গে রয়েছে দারুণ দলগত কাজ। সব মিলিয়ে কুইজিং মনোযোগ, জানার আগ্রহ, বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা ও কোনো কিছুর গভীরে গিয়ে জানার ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

সূত্র: হেলথ লাইন, এভরি ডে হেলথ

আরও পড়ুন